পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃষ্টিনন্দন দশটি চোখ জুড়ানো পাখি

পৃথিবীতে দশ হাজার একশ মতো পাখির প্রজাতি আছে এবং সেসব প্রজাতির সবগুলোর নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা তাঁদেরকে অনন্য করে তুলেছে। আমরা এখানে সুন্দর বলতে মানুষের চোখে রঙিন হিসেবে দেখছি, যা অন্যান্য প্রাণীর চোখে সুন্দর নাও হতে পারে। এই পৃথিবীর অনন্য যে পাখি তাঁদেরকে বাঁচিয়ে রাখা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। নিচে বিভিন্নজনের দৃষ্টিতে দেখা সবচেয়ে সুন্দর দশটি পাখির সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও ১টি করে আলোকচিত্র দেয়া হলো।

১০. হায়াসিন্থ ম্যাকাও

হায়াসিন্থ ম্যাকাও, আলোকচিত্র: Andrew Magill

হায়াসিন্থ ম্যাকাও ১০০ সেমি দৈর্ঘ্যের একটি চিত্তাকর্ষক পাখি, হায়াসিন্থ ম্যাকাও হচ্ছে উড়তে পারে এমন টিয়াপাখিদের ভেতর সবচেয়ে বড়। তারা উত্তর ব্রাজিলের আধা-খোলা সাভানা তৃণভূমিতে বাস করে। গত কয়েক বছরে তাদের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এখন ৫ হাজারেরও কম হায়াসিন্থ ম্যাকাও পৃথিবীতে টিকে আছে। বাসস্থান হারানো এবং শিকার হায়াসিন্থ ম্যাকাওয়ের জন্য প্রধান হুমকি।

বৃহৎ আকারের পাশাপাশি, হায়াসিন্থ ম্যাকাও তাদের আকর্ষণীয় কোবল্ট নীল পাখনার জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এদের চোখের চারপাশে উজ্জ্বল হলুদ রিং আছে যা দারুণ দেখতে। এই অত্যাশ্চর্য বর্ণের কারণে, হায়াসিন্থ ম্যাকাও ‘নীল ম্যাকাও’ নামেও পরিচিত। তারা একটি সুন্দর লম্বা লেজ এবং শক্তিশালী এবং বাঁকা কালো ঠোঁট আছে।

৯. কেঠো হাঁস

ছেলে কেঠো হাঁস, আলোকচিত্র: Magica

কেঠো হাঁস বা ক্যারোলিনা হাঁস সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক রঙিন হাঁস। ছেলে পাখির একটি ধাতব, নীল-বেগনি- সবুজ মাথা এবং ঝুঁটি আছে। তাদের পেট সাদা এবং বুক গাঢ় লাল রঙের। ঘাড় বরাবর, তাদের আকর্ষণীয়, সংকুচিত সাদা ডোরা আছে। তাদের ডানা ছন্দোবদ্ধ নীল এবং কালো রঙের।

মেয়ে কেঠো হাঁস ছেলে হাঁসের মতো রঙিন নয়। মেয়েগুলো ধূসর-বাদামী মাথা, সাদা পেট এবং সাদা দাগী বুকের হয়। প্রজনন ঋতুতে ছেলে হাঁস মেয়েদেরকে আকর্ষণ করার জন্য রঙিন পাখনা ব্যবহার করে।

৮. ভবঘুরে মোমপাখালী

ভবঘুরে মোমপাখালি, আলোকচিত্র: Andreas Nilsson

ভবঘুরে মোমপাখালী একটি মাঝারি আকারের গায়কপাখি, যাদের দর্শনধারী ঝুঁটিওয়ালা মাথা এবং কালো মুখোশগুলির জন্য বিখ্যাত। তারা সামগ্রিকভাবে বাদামী-ধূসর রঙের এবং পাখায় সাদা এবং হলুদ কিনার আছে। এইভাবে, ভবঘুরে মোমপাখালী বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পাসারিন পাখির মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

আরো পড়ুন:  দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত বড় আকারের পাখি

ভবঘুরে মোমপাখালী বেশিরভাগই কানাডা ও আলাস্কাতে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ায় বোরোয়াল বনের মধ্যে বসবাস করে। শীতকালে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বড় আকারে পরিযায়ন করে। তারা বৃক্ষ শাখার উপরে বাসা বানায়। উভয় ছেলে এবং মেয়ে ভবঘুরে মোমপাখালী তাদের উচ্চনাদে ডাকার জন্য পরিচিত হয়। তারা প্রধানত পোকামাকড় এবং জাম জাতীয় ফল খেয়ে বাঁচে।

৭. নীল জে

নীল জেয়, আলোকচিত্র: Ken Thomas

নীল জে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং সুন্দর পাখি। তারা পূর্ব ও মধ্য উত্তর আমেরিকার বন জুড়ে পাওয়া যায়। নীল জেদের মধ্যে রয়েছে নীল, সাদা এবং কালো পাখনা। এই গায়ক পাখিদের সবচেয়ে বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা শোরগোল ‘জেয় জেয়’ ডাক দেয়। তারা পাখির অন্যান্য প্রজাতির ডাকও অনুকরণও করতে পারে।

আকর্ষণীয় চেহারা ছাড়াও, নীল জেয়রা তাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য বিখ্যাত। তারা অন্য পাখির ডিম এবং বাসার জিনিস চুরি করতে পারে। ব্লু জেয়রা অন্যান্য পাখিদেরকে প্রতারিত করার জন্য ইগলদের কণ্ঠস্বরকে অনুকরণ করে। এটি বলা হয় যে বন্দী নীল জেয়রা এছাড়াও মানুষের কথা এবং অন্যান্য পোষা প্রাণীর কণ্ঠস্বর অনুকরণ করতে পারে।

৬. আটলান্টিক পাফিন

আটলান্টিক পাফিন, আলোকচিত্র: Erik Christensen

আটলান্টিক পাফিন একটি ছোট, ভাল অভিযোজিত সমুদ্র সৈকত পাখি যা উত্তর আমেরিকার উপকূল ও পূর্ব কানাডা জুড়ে পাওয়া যায়। আটলান্টিক পফিনগুলি তাদের বিশাল, বহুরঙা ঠোঁট এবং পেঙ্গুইনের মত রঙের কারণে ‘সমুদ্র টিয়া’ নামেও পরিচিত। আটলান্টিক পফিনরা সমুদ্রের উপর তাদের অধিকাংশ জীবন ব্যয় করে। তাদের জল প্রতিরোধী পালক সাঁতার কাঁটার সময় তাদের শরীর গরম রাখে। তারা জলের নিচে বা উপরে সাঁতার কাঁটার সময় ডানা ভাঁজ করে রাখে।
আটলান্টিক পাফিনদের চমৎকার ডাইভিং ক্ষমতা আছে। ডাইভিং এ তারা ৬০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তারা সাধারণত বালি ইল, ক্যাপেলিন এবং হেক শিকার করে। আটলান্টিক পাফিনরা  দারুণ উড়তে পারে। তারা প্রতি মিনিটে ৪০০ বার পর্যন্ত ডানাগুলিকে ফাঁক করে এক ঘন্টায় ৫৫ মাইল গতিতে পৌঁছতে পারে।

আরো পড়ুন:  দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত বড় আকারের পাখি

৫. উল্টোঠোটি টাউকান

উল্টোঠোটি টাউকান, আলোকচিত্র: Ken Thomas

বিশ্বের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঠোঁটের পাখি হচ্ছে উল্টোঠোটি টাউকান। তাদের বিশাল, বহু রঙের ঠোঁট আছে যা ২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের পর্যন্ত হয়। তাদের রঙিন ঠোঁটের কারণে, উল্টোঠোঁটি টাউকানদের রঙধনুরঙা টাউকান বলা হয়। তাদের পশম সবুজ, লাল এবং হলুদ রঙের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে।

ভারী চেহারা সত্ত্বেও, উল্টোঠোঁটি টাউকানরা এর ঠোঁট হয় ফাঁপা এবং হালকা। এটি কেরেটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন দিয়ে গঠিত। এই ঠোঁট রক্ষাকবচ অস্ত্র হিসেবে এবং প্রজনন ঋতুতে মেয়ে পাখিকে আকর্ষণ করার জন্য তারা কাজে লাগে।

৪. দেশি ময়ূর

দেশি ময়ূর, আলোকচিত্র: Acabashi

দেশি ময়ূর আসলে ময়ূর পরিবারের ছেলে পাখি। বিশ্বের তিন ধরনের ময়ূর আছে – দেশি বা ভারতীয়, কঙ্গো এবং সবুজ ময়ূর। ভারতীয় ময়ূর হচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া সাধারণ ময়ূর। ছেলে ময়ূর তাদের প্রজ্বলিত পালকের রংয়ের প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত।

ময়ূর ৫ ফুট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা বিশ্বের বৃহত্তম উড়ন্ত পাখিগুলির মধ্যে একটি। প্রকৃতপক্ষে, একটি ময়ুরের দৈর্ঘ্য তার মোট দৈর্ঘ্যের ষাট শতাংশ। ময়ূরের রঙিন লেজ প্রদর্শন সম্ভবত পাখি পরিবারগুলির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক প্রদ্রস্ন প্রবণতা।

৩. ফ্লেমিঙ্গো

ফ্লেমিঙ্গো, আলোকচিত্র: Noyolcont

ফ্লেমিংগো সম্ভবত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বীকৃত হাঁটা পাখি। অত্যাশ্চর্য লাল-বেগুনি রঙ্গিঙ পাখনার এই পাখি নিজেকে পাখির মধ্যে বিশেষ করে তুলেছে। পৃথিবীতে ৬টি বিভিন্ন প্রজাতির ফ্লেমিঙ্গো রয়েছে। তারা এন্টার্কটিকা ব্যতীত প্রত্যেক মহাদেশে পাওয়া যায়।

একটি পূর্ণবয়স্ক ফ্লেমিংগো দৈর্ঘ্য ৪-৫ ফুট এবং ওজন ৩.৬ কেজি পর্যন্ত হয়। তাদের ঘাড় দীর্ঘ এবং ক্ষীণ এবং একটি স্বতন্ত্র নিম্নগামী বাঁকানো গলা আছে। ফ্লেমিঙ্গোর পা খুব দীর্ঘ, ৩০ থেকে ৫০ ইঞ্চি মধ্যে পরিমাপে হয়। দীর্ঘ পা এবং বিশেষভাবে অভিযোজিত গলা তাদেরকে কাদা থেকে ছোট মাছ, লার্ভা এবং প্ল্যাঙ্কটন খেতে সাহায্য করে।

২. স্কারলেট ম্যাকাও

স্কারলেট ম্যাকাও, আলোকচিত্র: Peter

স্কারলেট ম্যাকাও ম্যাকাও পরিবারের সবচেয়ে সুন্দর এবং বৃহত্তম সদস্য। তারা মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে আর্দ্র চিরস্থায়ী বনের মধ্যে বসবাস করে। তারা তাদের রঙিন পাখনার জন্য বিখ্যাত। তাদের একটি নীল পিঠের সঙ্গে উজ্জ্বল লাল পালক আছে। তাদের উপরের ডানা হলুদ এবং ডানায় সবুজ রঙের কিনার আছে।

আরো পড়ুন:  দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত বড় আকারের পাখি

স্কারলেট ম্যাকাওদের শক্তিশালী, বাঁকা ঠোঁট আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এর উপরের অংশটি সাদা এবং টিপটি কালো। একটি পূর্ণবয়স্ক স্কারলেট ম্যাকাওয়ের দৈর্ঘ্য ৮০-৯০ সেমি এবং ১.৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। তারা চমৎকার দীর্ঘ সময় উড়তে পারে। একটি পাখি ঘণ্টায় ৩৫ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। এরা দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে। তাদের ৪০-৫০ বছরের জীবদ্দশায কাল হয়ে থাকে। এরকম বলা হয় যে বন্দিদশায় একটি ম্যাকাও ৭৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

১. সোনালি মথুরা

সোনালি মথুরা, আলোকচিত্র: Terry Love

সোনালি মথুরা তাদের উজ্জ্বল রঙিন পাখনার জন্য বিখ্যাত। তারা একটি সুন্দর সোনালি-হলুদ লাল টিপের ঝুঁটি আছে। এই পাখিটির গায়ে সোনালি, কমলা, লাল, কালো ইত্যাদি অনেক রঙের সমাহার লক্ষ্য করা যায়। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এদের চকচকে সুন্দর পালকগুলো।  

ছেলে সোনালি মথুরা মেয়েদের চেয়ে বেশি রঙিন। তাদের লাল রঙের বুক আছে এবং কিনার বিশেষ ধরনের। তাদের কেন্দ্রীয় লেজের পালকে কালো দাগ আছে।

2 thoughts on “পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃষ্টিনন্দন দশটি চোখ জুড়ানো পাখি”

  1. ধন্যবাদ অনুপ সাদি এত সুন্দর আর্টিকেল লেখার জন্য। পাখিরা আসলেই দৃষ্টীনন্দন এবং চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশেষ করে ফ্লেমিংগো পাখি খুবই সুন্দর এবং অসাধারন দেখতে। দারুন হয়েছে।

    Reply
  2. সুন্দর পাখিদের ব্যাপারে আমাদের সকলের মন্তব্য প্রায় একই ধরনের । কেননা এরা আকর্ষনীয় দেখায় অনেক মানুষের চোখে ভাল লাগে।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!