দাগি তামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Cacomantis sonneratii সমনাম: Cuculus sonneratii (Latham, 1790) বাংলা নাম: দাগি তামাপাপিয়া ইংরেজি নাম: Banded Bay Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Cacomantis, Muller, 1843; প্রজাতি/Species: Cacomantis sonneratii (Latham, 1790)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Cacomantis গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৮টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. করুণ পাপিয়া, ২. মেটেপেট পাপিয়া ও ৩. দাগি তামাপাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে দাগি তামাপাপিয়া।

বর্ণনা: দাগি তামাপাপিয়া স্পষ্ট বাদামি ডোরা ও সাদা ভ্রু-ওয়ালা পাখি (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি., ডানা ১২ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ১.৭ সেমি., লেজ ১১.৫ সেমি.)। পিঠ কালচে বাদামি ডোরাসহ লালচে বাদামি। মাঝখানের পালকের কালচে শরসহ লেজ লালচে। কানের কোর্ভাট কালচে বাদামি, ভ্রু-সাদা এবং মাথা ও ঘাড়ের পাশ সাদা। এগুলোর সবতেই কালচে সরু ডোরা থাকে। দেহতল থুতনি থেকে শুরু করে অবসারণী পর্যন্ত সুক্ষ্ণ বাদামি ডোরায় ঢেউ খেলানোসহ সাদাটে রঙের। চোখ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-সবুজ এবং নখর শিঙ-বাদামি। শিঙ-বাদামি ঠোঁটের নিচের ঠোঁটের গোড়া জলপাই ও ধূসরে মেশানো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনে কিছু পীতাভ ডোরা এবং দেহতলে বেশ প্রশস্ত ও বিক্ষিপ্ত ভাবে ঢেউ খেলানো ডোরা থাকে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. s. sonneratii বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: দাগি তামাপাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তদেশ ও খোলা বনভূমিতে দেখা যায়। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। বনের চাঁদোয়ার পাতা ওয়ালা শাখা ও উঁচু গুল্মলতায় খাবার খায়। খাবারের মধ্যে প্রধানত শুঁয়োপোকা ও ছারপোকা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি-আগস্ট প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি ভোরে ও গোধূলিতে গাছের মগডাল থেকে ডাকে। ২টি পুনরুক্তিক উচ্চ স্বরে ডাকে: পে-টার…। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো এমনকি ছানার যত্নও নেয় না। মেয়েপাখি ফটিকজল, বুলবুল, ছাতারে, সাহেলির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়। ডিম বেগুনে-বাদামি ছোট দাগসহ সাদা থেকে পাটল বর্ণের হয়, মাপ ১.৯×১.৫ সেমি.।

আরো পড়ুন:  মেটে মালকোআ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত পরিযায়ী পাখি

বিস্তৃতি: দাগি তামাপাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও চিনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: দাগি তামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই দাগি তামাপাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: দাগি তামাপাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সনের‍্যাট-এর অশণিসঙ্কেত (গ্রীক:kakos = অশণিসঙ্কেত, mantis = মহাপুরুষ; sonneratii = পিয়ার সনের‍্যাট, ফ্রান্সের প্রকৃতিবিদ ও সংগ্রাহক, ১৭৪৮-১৮১৪)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Cacomantis sonneratii“, http://www.iucnredlist.org/details/22683917/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!