বেগুনি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Chrysococcyx xanthorhynchus সমনাম: Cuculus xanthorhynchus Horsfield, 1821 বাংলা নাম: বেগুনি পাপিয়া ইংরেজি নাম: Violet Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Chrysococcyx, Boie, 1826; প্রজাতি/Species: Chrysococcyx maculatus (Gmelin, 1788)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Chrysococcyx গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. এশীয় শ্যামাপাপিয়া ও ২. বেগুনি পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে বেগুনি পাপিয়া।

বর্ণনা: বেগুনি পাপিয়া ছোট অরণ্য পাখি, ছেলেপাখি বেগুনি ও মেয়েটি ব্রঞ্জ রঙের হয় (দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি., ডানা ১০ সেমি., ঠোঁট ১.৬ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৭ সেমি.)। ছেলেপাখির পিঠ চকচকে বেগুনি। মাথা, ঘাড়, থুতনি, গলা ও বুক বেগুনি রঙের। পেট ও অবসারণীতে একটির পর আরেকটি এমনভাবে সাদা ও বেগুনে-বাদামি ফেটা সজ্জিত থাকে। কালচে লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকের প্রান্তদেশে সাদা ডোরা আছে। ঠোঁট উজ্জ্বল কমলা। মেয়েপাখির পিঠে তামার পরিলুপ্তিসহ সবুজাভ-ব্রঞ্জ রঙের ও দেহতলে মুখসহ পর্যায়ক্রমে সাদা ও সবুজাভ-ব্রোঞ্জের ফেটা থাকে। সবুজাভ লেজের আগা সাদা। ঠোঁট অনুজ্জ্বল হলুদ। ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই চোখ লাল, লাল পাড়সহ চোখের পাতা সবুজ এবং পা ও পায়ের পাতা বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি মেয়েপাখির মত হলেও লালচে মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনে প্রশস্ত কালচে সবুজ ডোরা থাকে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. x. xanthorhynchus বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: বেগুনি পাপিয়া চিরসবুজ বন, অপ্রধান বন ও ঘেরা বাগানে বিচরণ করে। সাধারণত একা, জোড়ায় বা ৪-৬টি পাখির ছোট দলে থাকে। উঁচু জায়গা থেকে গাছের আগায় শিকার পর্যবেক্ষণ করে ও হঠাৎ শিকারকে ছোঁ মারে। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা, ছারপোকা ও অন্যান্য কোমল পোকামাকড় রয়েছে। সচরাচর কোন ডালে পশুর মত শুয়ে অবস্থান করে। দ্রুত উড়তে পারে এবং বারবার সামান্য ওড়ে আবার নিজ অবস্থানে ফিরে আসার কারণে কখনও ক্লান্ত হয় না। গ্রীষ্মে প্রজনন ঋতুতে ছেলেপাখি সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ‘‘গান’’ গায়। উচ্চ শব্দে ও দ্রুত কম্পিত গলায় ‘গান’ গায়: চি-উইক। বাসা তৈরি করে না। মেয়েপাখি মৌটুসি ও মাকড়মারের বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম উজ্জ্বল বাদামি বা লালচে-বাদামি ফসকুড়িসহ সাদাটে, মাপ ১.৭ × ১.২ সেমি.।

আরো পড়ুন:  পাকরা পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি
বেগুনি পাপিয়া, মেয়ে, আলোকচিত্র: Pritam Dey

বিস্তৃতি: বেগুনি পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। পূর্ব ভারত ও ভুটান থেকে চীনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।

অবস্থা: বেগুনি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই এশীয় শ্যামাপাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: বেগুনি পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলুদঠোঁট সোনাপাপিয়া (গ্রীক: khrusos = সোনা, cuculus = পাপিয়া; xanthos = হলুদ, rhunkhos = ঠোঁট)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Chrysococcyx xanthorhynchus“, http://www.iucnredlist.org/details/22684003/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!