বড় কাঠঠোকরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Chrysocolaptes lucidus সমনাম: Picus lucidus Scopoli, 1786 বাংলা নাম: বড় কাঠঠোকরা ইংরেজি নাম: Greater Goldenback (Greater flameback). জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Chrysocolaptes, Blyth, 1843; প্রজাতি/Species: Chrysocolaptes lucidus (Scopoli, 1786)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Chrysocolaptes গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ও আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে বড় কাঠঠোকরা।

বর্ণনা: বড় কাঠঠোকরা তস্করের মত চোখে কালো পট্টি বাঁধা পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৪.৮ সেমি, পা ৩.২ সেমি, লেজ ৯.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ও দেহতলে সাদা ও কালো চিতি রয়েছে; পিঠের উপরিভাগে সাদা চিতিসহ কালো; পিঠের শেষাংশ ও কাঁধ-ঢাকনি সোনালী-হলুদ; লেজের নিচে উজ্জ্বল লাল এবং লেজ ও লেজ-উপরি-ঢাকনি কালো। এর ঠোঁটের গোড়া সরু কালো রেখায় ঘেরা প্রশস্থ সাদা ডিম্বাকার চিহ্ন থাকে; গলার কেন্দ্রভাগের নিচে ও সাদা ফুটকি সমেত কালো পেটে একটি কালো রেখা চলে গেছে। ফ্যাকাসে ঠোঁটের সঙ্গমস্থল ও ঠোঁটের নিচের ভাগের গোড়া সমেত ঠোঁট শিঙ-বাদামি বর্ণের; চোখ হালকা পীত ও কমলায় মেশানো; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-ফ্যাকাসে এবং নখর শিং-বাদামি। পাখির মাথার চাঁদি ও ঝুটি ছেলেপাখির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল লাল আর মেয়েপাখির ক্ষেত্রে কালোর মধ্যে সাদা তিলা। মেয়ে ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা অভিন্ন। ১৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. l. guttacristatus বাংলাদেশে আছে।

স্বভাব: বড় কাঠঠোকরা প্যারাবন, চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, বাগান ও লোকালয়ে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা পারিবারিক দলে থাকে। পোকায় জর্জরিত গাছে, বিশেষ করে মৃত গাছে, হাতুড়ির মত আঘাত করে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পোকামাকড়, পোকার ছানা ও ফুলের মিষ্টি রস। মার্চ-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখিরা ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রাম বাজানোর মত আওয়াজ করে এবং উঁচু পর্দায় ধাতব কণ্ঠে ডাকে: কি-কি-কি-কি -কি -কি..। গাছের ডালের নিচের দিকে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ৩.০´২.২ সেমি। ১৪-১৫ দিনে ডিম ফোটে ও ২৪-২৬ দিনে ছানারা বাসা ছেড়ে যায়।

আরো পড়ুন:  তিলা কুটিকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: বড় কাঠঠোকরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বনে আছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও চিনসহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বড় কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিবিধ: বড় কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সোনালী কাঠঠোকরা (গ্রীক : khrusos = সোনা, colaptes = কাঠঠোকরা; ল্যাটিন: lucidus = উজ্জ্বল)।

আলোকচিত্রের ইতিহাস: আলোকচিত্রে ব্যবহৃত বড় এক জোড়া কাঠঠোকরার ছবি তুলেছেন কোর্গ, কর্ণাটক থেকে শ্রীকান্ত রাও জুলাই ২০১৪-তে। বামে ছেলে, ডানে মেয়ে।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Chrysocolaptes lucidus“, http://www.iucnredlist.org/details/22726539/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!