বাতাবি কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Dendrocopos macei সমনাম: Picus macei Vieillot, ১৮১৮ বাংলা নাম: বাতাবি কাঠকুড়ালি ইংরেজি নাম: Fulvous-breasted Woodpecker, (Fulvous-breasted Pied Woodpecker). জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Dendrocopos, Koch, 1816; প্রজাতি/Species: Dendrocopos macei (Vieillot, 1818)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Dendrocopos গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি তিনটি হচ্ছে; ১. মেটেটুপি বাটকুড়ালি, ২. বাতাবি কাঠকুড়ালি ও ৩. হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে বাতাবি কাঠকুড়ালি।

বর্ণনা: বাতাবি কাঠকুড়ালি কালো কাঁধ-ঢাকনি পড়া পাকরা কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৯ সেমি, ওজন ৪৫ গ্রাম, ডানা ১০.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৩ সেমি, পা ১.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতল কালচে সরু ডোরা সমেত পীতাভ লাল-বাদামি; কাঁধ-ঢাকনি কালো; ডানা-ঢাকনিতে সাদা কালো ডোরা আছে; বুকে ও লালচে অবসারণীতে আবছা কালো ডোরাসহ ঘাড়ের উপরিভাগ ও গলা একই রকম ফ্যাকাসে লাল-বাদামি দেখায়। এর চোখের ও ঘাড়ের মাঝের ডোরা কালো; ঠোঁটের রঙ দু’রকমের: ঠোঁটের উপরের অংশ শিঙ-বাদামি ও নিচের ভাগ ফ্যাকাসে-স্লেট, আগা কালচে; চোখ লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-স্লেট এবং পায়ের তলা সাদা। ছেলে ও মেয়েপাখিতে বড় পার্থক্য মাথার চাঁদিতে: ছেলেপাখির চাঁদি লাল ও মেয়েপাখির চাঁদি কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ফ্যাকাসে ও অবসারণী পাটল বর্ণের। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে D. m. macei বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: বাতাবি কাঠকুড়ালি খোলা বন, বনপ্রান্ত, পত্রবহুল খোলা বন, লোকালয় ও রাস্তার ধারের গাছে বিচরণ করে; সাধারণত একটিমাত্র ছোট গাছেই সপরিবারে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। গাছের বাকলের ফাঁক থেকে এরা আহার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় আছে পোকা, পিউপা, বিছা, পিঁপড়ার ডিম, ফুলের মধু, বাকলের রস, ইত্যাদি। খাওয়ার সময় এরা কোমল সুরে ডাকে: পিক…পিক..; প্রতিবাদ করার জন্য জোরে ডাকে: পিক-পিপিপিপিপিপিপিপিপি..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতুতে ছেলেপাখি মেয়েপাখির পাশে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে ও ঘাড় দু পাশে নাড়ায়; এবং ছোট গাছে বা শাখায় গর্ত খুঁড়ে বাসা বানালে মেয়েপাখি ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি, মাপ ২.২ × ১.৬ সেমি।

আরো পড়ুন:  হিমালয়ী কাঠঠোকরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: বাতাবি কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের খোলা বন, গ্রাম ও শহরে পাওয়া যায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বাতাবি কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]।

বিবিধ: বাতাবি কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ম্যাসি’র কাঠুরে (গ্রিক : dendron = গাছ, kopos = চূর্ণ; macei = এম. ম্যাসি, ১৭৫০ সালে ভারতে ভ্রমণকারী ফরাসি নাগরিক)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Dendrocopos macei“, http://www.iucnredlist.org/details/22726376/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!