মেটেমাথা কুরাঈগল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক এবং বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত পাখি

ভূমিকা: মেটেমাথা কুরাঈগল বা মাছমুরাল বা উখস (বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus ichthyaetus)হচ্ছে এসিপিট্রিডি পরিবারের ইচথোফাগা গণের এক প্রজাতির পাখি। এই গণে পৃথিবীতে দুই প্রাজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশের পাখির তালিকায় রয়েছে তার একটি প্রাজাতি যার নাম মেটেমাথা কুরাঈগল বা মাছমুরাল বা উখস

Kingdom:Animalia
Phylum:Chordata
Class:Aves
Order:Accipitriformes
Family:Accipitridae
Genus:Haliaeetus
Species:H. ichthyaetus

বর্ণনা: মেটেমাথা কুরাঈগল ধূসর মাথা ও হলুদ চোখের মাছ-শিকারি পাখি। এর দৈর্ঘ্য ৭৪সেমি, ডানা ৪৮.৫ সেমি, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৯.৫ সেমি, লেজ ২৬.৫ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ধূসর বাদামি পিঠ ও সাদা পেট ছাড়া দেহের নিচের দিক লালচে বাদামি; মাথা ও ঘাড় ধূসর; পিঠের উপরের দিকটা হালকা বাদামি; ডানা কালচে বাদামি ও সাদা লেজের উপপ্রান্তীয় ফিতা কালো; বুক ফিকে বাদামি; এবং বগল, তলপেট ও অবসারণী সাদা। এর ঠোঁট শিঙ-বাদামি; চোখ সোনালি-হলুদ; পা ও পায়ের পাতা হলদে-ধুসর। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ভ্রুরেখা ফিকে; মাথা, ঘাড় ও বুকের ডোরা ফিকে; ফিকে লেজে বাদামি ডোরা ও ডানায় অস্পষ্ট বাদামি দাগ থাকে। তরুণ পাখির ফিকে বাদামি দেহতলে প্রশস্ত সাদা ডোরা রয়েছে।

স্বভাব: মেটেমাথা কুরাঈগল হ্রদ, ধীরবহমান নদী, জলাধার, জোয়ারীয় লেগুন ও প্যারাবনে বিচরণ করে; সচরসচর একা অথবা জোড়ায় থাকে। সচরাচর গাছেবসে পানিতে আহার খোঁজে ও হঠাৎ ছোঁ মেরে নখর দিয়েএরা শিকার ধরে খায়; খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, সাপ, পাখিও ছোট স্তন্যপায়ি প্রাণি। মাঝে মাঝে গাছে বসে এরা চিৎকারকরে ডাকেঃ ক্রাহ…..ক্রাহ……ক্রাহ……; এবং প্রজনন ঋতুতে উড়ে উড়েডাকে। নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রজননকালে বড় গাছের মগডালে ডাল পালা দিয়ে মাচার বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৩ টি, মাপ ৬.৯×৫.২ সেমি। ২৮-৩০ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি: মেটেমাথা কুরাঈগল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বিল ও পুকুরে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিকবিস্তৃতি রয়েছে।

আরো পড়ুন:  ল্যাঞ্জা রাতচরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

অবস্থা: ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে বিপদমুক্ত ও বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত ও বলে উল্লেখ করা হলেও বর্তমানে এটি বাংলাদেশেও প্রায়-বিপদগ্রস্ত। বিশেষ করে মাছ চাষিরা এটিকে শত্রু গণ্য করে এটির উপর অত্যাচার করে বা এটিকে হত্যা করে। যদিও পাখিটি  ব্যাঙ ও সাপ শিকার করে প্রতিনিয়ত মাছচাষিদের উপকার করে চলেছে।

আমরা ৫ এপ্রিল, ২০১২; দুপুরে মরিচাখালি, ডৌহাখোলা, গৌরিপুর, ময়মনসিংহে এক জোড়া মেটেমাথা কুরাঈগলের ছবি তুলি। আলোকচিত্রকরঃ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ। সে গ্রামের মাছের খামারিরা গুলি করে এই ঈগল মেরে ফেলে বলে আমরা সেদিন জেনেছিলাম। আমরা কী এই পাখিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারি না।

1 thought on “মেটেমাথা কুরাঈগল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক এবং বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত পাখি”

  1. রাজশাহী বিভাগেও এদের পাওয়া যায়। আমি নাটোরে এদের ছবি তুলেছি।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!