হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Leiopicus mahrattensis সমনাম: Picus mahrattensis Latham, 1801, Dendrocopos mahrattensis বাংলা নাম: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি ইংরেজি নাম: Yellow-crowned Woodpecker. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Leiopicus; প্রজাতি/Species: Leiopicus mahrattensis (Latham, 1801)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Leiopicus গণে বাংলাদেশে এবং পৃথিবীতে রয়েছে এর ১টি মাত্র প্রজাতি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি।

বর্ণনা: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি সাদাকালো ছোপে ভরা ছোট কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ৩৫ গ্রাম, ডানা ১০ সেমি, ঠোঁট ২.৪ সেমি, পা ১.৮ সেমি, লেজ ৬ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনিতে সাদা ছোপ ও লেজের মধ্য পালকে সাদা ডোরা রয়েছে; থুতনি ও গলা সাদা এবং কালচে ডোরাসহ দেহতল পীতাভ; পেটের তলদেশে ক্ষুদ্র উজ্জ্বল লাল পট্টি; লেজতল-ঢাকনি সাদাটে; কপাল ও মাথার সামনের ভাগ হলদে, চোখ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি হরিদ্রাভ-বাদামির ডোরা এবং ঘাড়ের উভয় পাশে হরিদ্রাভ-বাদামির পট্টি রয়েছে। এর ঠোঁট ফ্যাকাসে ও চোখ বাদামি থেকে লালচে-বাদামি; পা,পায়ের পাতা ও নখর শিঙ-ধূসর। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে: ছেলেপাখির চাঁদির পিছন ও ঘাড় উজ্জ্বল লাল এবং মেয়েতে তা সোনালী-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ্বল দেহ ও পেটের মোটা ডোরা ছাড়া দেখতে মেয়েপাখির মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে D. m. mahrattensis বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি খোলা বন, বাগান, আমবাগান ও চারদিকে ছড়ানো গাছপালায় বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা ছোট পারিবারিক দলে থাকে। গাছের বাকলে আঘাত করে ও ফাটলে ঠোঁট দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, লার্ভা, পিঁপড়া, উইপোকা, মথ, গোবরে পোকা, শুয়ো পোকা, শক্ত খোলকওয়ালা গোবরে পোকা, ফড়িং, নরম ফল ও ফুলের মধু। পরিবারের পাখিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য এরা কিছুক্ষণ পর পর ডাকে: চাক .. চাক ..; ভয় পেলে ডাকে: ক্লিক, ক্লিক বা ক্লিকার-র-র-র..। ফেব্রুয়ারি-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের ডালে ঘা দিয়ে এরা মৃদু শব্দে ড্রাম বাজায়: ডর-র-র-র-র…; এবং গাছের ছোট ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে অথবা কোনো পুরোনো বাসায় ঢুকে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩টি; মাপ ২.২ × ১.৬ সেমি।

আরো পড়ুন:  বড় হলদেকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামাঞ্চলে দেখা গেছে বলে দুটি তথ্য রয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত। মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনামের সীমানায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]।

বিবিধ: হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মারাঠি কাঠুরে (গ্রিক : dendron = গাছ, kopos = চূর্ণ; mahrattensis = মারাঠার , ভারত)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Leiopicus mahrattensis“, http://www.iucnredlist.org/details/22681092/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!