নীলদাড়ি সুইচোরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Nyctyornis athertoni সমনাম: Merops athertoni Jardine and Selby, 1830 বাংলা নাম: নীলদাড়ি সুইচোরা, ইংরেজি নাম: Blue-bearded Bee-eater. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Meropidae গণ/Genus: Nyctyornis, Jardine and Selby, 1830; প্রজাতি/Species: Nyctyornis athertoni (Jardine and Selby, 1830)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Nyctyornis গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এবং আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে নীলদাড়ি সুইচোরা।

বর্ণনা: নীলদাড়ি সুইচোরা নীল কপাল ও গলার সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৬ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ১৪ সেমি., ঠোঁট ৫.২ সেমি., পা ২ সেমি., লেজ ১৩.৫ সেমি.)। নীল কপাল ছাড়া পিঠ সবুজাভ। লম্বা পালক সমূহ দাঁড়ির মত গঠন লাভ করে এবং গলা ও বুক কালচে নীল। হলুদাভ-পীতাভ ডোরাসহ পেট ও বগল সবুজ। বর্গাকার প্রান্তদেশসহ লেজের বাইরের পালক পীতাভ রঙের। ওড়ার সময় লেজ ত্রিকোণাকার ও ডানার নিচের কোর্ভাট হলুদাভ-পীতাভ দেখায়। ঠোঁট বাঁকা ও শিঙ-বাদামি এবং নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালী-কমলা ও মুখ ধূসরাভ-পাটল বর্ণের। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে হলুদাভ-সবুজ এবং নখর শিঙ-বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে কোন দাঁড়ি থাকে না। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে N. a. athertoni বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: নীলদাড়ি সুইচোরা আর্দ্র পাতাঝরা ও অপ্রধান চিরসবুজ বন, বনের স্রোতধারা ও বনের আবাদযোগ্য জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু জায়গা থেকে বাতাসে ওড়ে শিকার ধরে। খাবার তালিকায় বোলতা, মৌÍমাছি, গুবরে পোকা, ফড়িং ও ফুলের মিষ্টি রস রয়েছে। সচরাচর কর্কশ গলায় ডাকে:কর-র-র,কর-র-র…। ফেব্রুয়ারি-আগস্ট মাস প্রজনন ঋতু। বনের জলধারার খাড়া পাড়ে বা পাহাড়ের পলি মাটিতে ৫-৬ সেমি. ব্যাস ও ১.৫-৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এবং মেয়েপাখি ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, মাপ ৩.০ × ২.৮ সেমি.।

আরো পড়ুন:  নীললেজ সুইচোরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: নীলদাড়ি সুইচোরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: নীলদাড়ি সুইচোরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই নীলদাড়ি সুইচোরাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: নীলদাড়ি সুইচোরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ এ্যাথার্টন-এর গুপ্ত-পাখি (গ্রীক: nux = গুপ্ত, রহস্যময়, ornis = পাখি; athertoni = লেফটেন্যান্ট জে. এ্যাথার্টন, ভারতীয় ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা, ১৭৯৭-১৮২৭)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Nyctyornis athertoni“, http://www.iucnredlist.org/details/22683664/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!