মেটে কাঠমৌর বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]বৈজ্ঞানিক নাম: Polyplectron bicalcaratum সমনাম : Pavo bicalcaratum Linnaeus, 1758 বাংলা নাম : মেটে কাঠমৌর, কাট-মোর (অ্যাক্ট), কাঠমৌর (আলী) ইংরেজি নাম : Grey Peacock-Pheasant জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Phasianidae গণ/Genus: Polyplectron, Temminck, 1813; প্রজাতি/Species: Polyplectron bicalcaratum (Linnaeus, 1758)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Polyplectron গণে ১টি প্রজাতি রয়েছে এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৭টি প্রজাতির পাখি। আমাদের আলোচ্য পাখি মেটে কাঠমৌর।

বর্ণনা: মেটে কাঠমৌর বা কাঠ ময়ূর বাহারি লেজের ধূসর ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৫৬ সেমি, ওজন ৭৩০ গ্রাম, ডানা ২১ সেমি, ঠোঁট ২.১ সেমি, পা ৭.২ সেমি, লেজ ৩১ সেমি)। ছেলেপাখির চেহারা ও আকার মেয়েপাখি থেকে কিছুটা আলাদা। ছেলেপাখির মাথা ও ঘাড় বাদামি পীতাভ; মাথার চূড়ার পালক ছোট ও খাড়া; পিঠে ধূসর বাদামি ফোঁটা; কোমর ও লেজের উপরের পালকে সাদা ডোরা; ডানার পালকে ও লেজের প্রান্তে বেগুনি ও সবুজ রঙের চক্র আছে; থুতনি ও গলা সাদাটে; এবং দেহতলের বাকি অংশে সাদা ডোরা থাকে। মেয়েপাখি ছেলেপাখির থেকে ছোট ও অনুজ্জ্বল; মাথায় খাটো চূড়া; ডানা ও লেজে অস্পষ্ট চক্র। ছেলে ও মেয়েপাখি উভয়ের সাদা চোখ; হলুদাভ মুখের চামড়া; হালকা পীত বর্ণের ঠোঁট, ঠোঁটের আগা ও মধ্যভাগ কালো; পা ও পায়ের পাতা মলিন স্লেট-রঙ বা কালচে। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখি দেখতে মেয়েপাখির মত। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ২টি বাংলাদেশে রয়েছে। অতি হালকা পীতাভ P. b. bicalcaratum সিলেট বিভাগে ও অতি ধূসর এবং পাতার মত পীতাভ P. b. bakeri চট্টগ্রাম বিভাগে আছে।[১]

স্বভাব: মেটে কাঠমৌর চিরসবুজ বনতলের ঘন ঝোপঝাড়ে ও বনের প্রান্তে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় দেখা যায়। এরা ঝোপের নিচে ও খোলা মাঠে চুপিসারে লতাপাতা থেকে কুড়িয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্যদানা, ফল, পোকামাকড়, শামুক বা ক্ষুদ্র প্রাণী। এরা মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে:অক-কক-কক-কক..; মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ছেলেপাখি ঘন ঘন ডাকে। ঝোপের নিচে মাটির প্রাকৃতিক গর্তে শুকনো পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা পাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ থেকে চকলেট-পীতাভ, সাদা তিলা আছে, সংখ্যায় ২-৫ টি, মাপ ৪.৬-৩.৬ সেমি। মেয়েপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২১ দিনে ডিম ফোটে। ডিম ফোঁটার পর ছানারা বাসা ছেড়ে যায় ও মায়ের পাশে হেঁটে নিজেরা খাবার খুঁটে খায়।

আরো পড়ুন:  দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত বড় আকারের পাখি

বিস্তৃতি: মেটে কাঠমৌর বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

অবস্থা: মেটে কাঠমৌর বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]

বিবিধ: মেটে কাঠমৌর পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নখরধারী কাঠমৌর (গ্রিক: polu = বহু, plektron = গজালের মত খাড়া নখর, ল্যাটিন: bicalcaratum = গজালের মত খাড়া দুই নখর)।

তথ্যসূত্র:

১. সাজেদা বেগম, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -০০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!