
বৈজ্ঞানিক নাম: Channa barca (Hamilton, 1822)
সমনাম : Ophiocephalus barca Hamilton, 1822, Fishes of the Ganges, pp. 67, 367; Ophicephalus nigricans Valenciennes, 1831, Hist. Nat. Poiss. 7: 431; Channa barca Menon, 1974, Inland Fish. Soc. India Spl. Publ. 1: 88.
ইংরেজি নাম: Barca Snakehead.
স্থানীয় নাম: পিপলা, তিলা শোল, তিলা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii
বর্গ: Anabantiformes
পরিবার: Channidae
গণ: Channa
প্রজাতি: C. barca
বর্ণনা: তিলা শোলের দেহ সম্মুখে। প্রায় চোঙাকৃতির এবং পশ্চাতে পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। সম্মুখ নাসারন্ধ্র নালীর ন্যায় প্রসেস তৈরি করে। মস্তকের গর্তগুলি সরল প্রকৃতির, চোখের চারপার্শ্বে ৮টি এবং বাঁকিগুলি মাথার পৃষ্ঠতলে অবস্থিত। ম্যান্ডিবলে একটি ছিদ্র বিদ্যমান (Rahman, 2005)। চোখ মধ্যম আকৃতির, এর ব্যাস মাথার দৈঘ্যের ৭ থেকে ৭.৫ ভাগ (Talwar and Jhingran, 1991)। মুখ বড় ও গভীর চির বিশিষ্ট। এ চোয়ালের দাঁত ভিলি আকৃতির, ভোমারে প্রায় ৪টি ছেদন দাঁত থাকে এবং তালুর দাঁত বড় ও সংখ্যায় ৪ থেকে ৬টি। ম্যান্ডিবলের বহিঃস্থ র্যামাচে (ramus) অল্প সংখ্যক দাঁত বিদ্যমান, পিছন দিকে ছেদন দন্তের ন্যায়। জিহ্বা গোলাকার। পার্শ্বরেখা অঙ্গ ২১ থেকে ২৩টি আঁইশ পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে, একটি আইশ নিচে নেমে সোজা পুচ্ছপাখনা ভিত্তির মধ্য পর্যন্ত অগ্রসর হয়। মাথা প্লেটের ন্যায় বড় বড় আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে; অক্ষিকোটর এবং প্রাক অক্ষিকোটর এর মাঝখানে ১০টি আঁইশ, কিন্তু তুন্ড থেকে পৃষ্ঠীয় পাখনার উৎপত্তি পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬টি আঁইশ বিদ্যমান (Rahman, 2005)। শ্রোণীপাখনা, বক্ষপাখনার প্রায় ৪০ ভাগ। পুচ্ছপাখনা গোলাকার। দেহের উপরে গাঢ় বাদামী কিন্তু নিচের দিকে বাদামী বর্ণের। আঁইশ বিন্দুর ন্যায় দাগাঙ্কিত, দেহের উপরের অর্ধাংশে বিন্দু সদৃশ দাগের সংখ্যা সর্বাধিক কিন্তু পেটে কোনো দাগ থাকে না। পৃষ্ঠীয়, পায়ু এবং পুচ্ছপাখনা কালচে বর্ণের এবং কালো ফোঁটার ন্যায় দাগযুক্ত। পাখনার কিনারা লাল, বক্ষপাখনা লালচে ও প্রচুর কালো কালো দাগযুক্ত।
স্বভাব ও আবাসস্থল: এদের তলদেশ এবং পানির উপরিতল উভয় স্থানেই দেখা যায়, এদের অভিপ্রায়ণ মিঠাপানি থেকে মিঠাপানিতেই ঘটে। এরা মাংসাশী জীবিত। খাদ্য পছন্দ করে কিন্তু অদ্ভুদ স্বভাব হলো, সরিষার ফুল খেতে এরা সরিষা ক্ষেতে চলে যায়। অন্যান্য সর্পমাথা প্রজাতির ন্যায় এরা জলাশয়ের তীরবর্তী স্থানে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে বাসা তৈরী করে ভাসমান পানিতে ডিম পাড়ে এবং নিষেকের পর ডিমগুলি পানির উপরিতলে চলে আসে। পুরুষ বা স্ত্রী মাছ বা উভয়ই নিষিক্ত ডিমগুলির কড়া প্রহরায় থাকে। এরা নদী, বিল ও হাওড়ের তীরবর্তীস্থানে গর্তে বসবাস করে (Rahman, 2005)।
বিস্তৃতি: এই প্রজাতির মাছ ভারত এবং বাংলাদেশের গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র বিধৌত অববাহিকায় পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এটি সর্পমাথা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিরল মাছ। শুষ্ক মৌসুমে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওড় অববাহিকায় খুব অল্প পরিমাণে ধরা পড়ে। বাজারে এই মাছ বিরল।
বাস্তুসংস্থানিক ভূমিকা: এই প্রজাতি অন্যান্য সর্পমাথা মাছের ন্যায় আগ্রাসী ধরনের। পরিণত মাছ মাংসাশী, শিকারী, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্য হিসেবে অন্যান্য মাছ পছন্দ করে। এবং কিছু কিছু মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রজাতির মাছকে তাদের রাক্ষুসে ও মাংসাশী। স্বভাব এবং অন্যান্য মাছের ধ্বংস সাধনের জন্য আপোদ বলা হয় ।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এই প্রজাতির মাছ সাম্প্রতিককালে বিরল এবং জেলেদের জালেও তেমন একটা ধরা পরে না। IUCN Bangladesh (20)) এর লাল তালিকায় এটি মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। বাসস্থান ধ্বংসই এই প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। তাই আবাসস্থল সংরক্ষণ ও এর সংস্কারই এই মাছ সংরক্ষণের সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।
মন্তব্য: এই মাছ প্রায় ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। পার্শ্বরেখা অঙ্গে আইশের সংখ্যা একেক মাছে একেক রকম থাকে। সুনামগঞ্জের দেখার হাওড়ে প্রাপ্ত একটি মাছে একদিকে ৭০টি কিন্তু অপরদিকে ৬৫টি আঁইশ ছিল (Rahman, 2005)। ভারতে এই প্রজাতির ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৩৮টি পাওয়া গিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১. এ কে আতাউর রহমান, ফারহানা রুমা (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৫–৩৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0