হলুদ আমরুল শাক ভেষজ গুণ সম্পন্ন বাংলার উদ্ভিদ

বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক প্রদেশে এই হলুদ আমরুল শাক বা আমরুল জন্মে। মূলত ফুলের রঙ হলুদ হয়, তবে গাছটির একটি বাদামী জাত বা ভ্যারাইটি আছে। এটি দেখতে সরু ও লতানো। নিম্নে আমরুল শাকের লৌকিক ব্যবহার ও ভেষজ গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো।

আমরুল একটি টক স্বাদযুক্ত শাক

লক্ষ্যভেদের মতো প্রথমেই বিচার্য বিষয়। হলুদ আমরুল শাক শরীরের যেকোনো স্রোতের উপর কাজ করে। আমাদের পূর্বসুরিগণের সমীক্ষায় এটির উপযোগিতা রসবিহ স্রোতের উপর। আর একটা বিষয়ও জেনে রাখা দরকার শিশুদের রসবহ স্রোত বিকৃত হয় প্রাকৃতিক কারণে, আর বিকৃত হতে পারে মায়ের রসবহ স্রোত যদি বিকারগ্রস্ত হয় তবেই। যেহেতু এরা স্তন্যপায়ী।

১. সার্দি বসে গেলে: শিশুদের বুকে সর্দি বসে গিয়েছে অথবা অল্প কাসছে, সেক্ষেত্রে মূল সমেত আমরূল শাকের রস এক চা চামচ একটু গরম করে খাওয়াতে হয়, দরকার হলে দুই বেলাই খাওয়ানো যায়, এটাতে জমা সর্দি উঠে যায়। আরও ভালো হয় যদি সরষের তেলে আমরূলের রস মিশিয়ে গরম করে অথবা রোদে দিয়ে গরম করে ঐ তেল বুকে পিঠে মালিশ করা যায়। অনেক সময় শিশুদের দুধে শ্বাস হয়। অর্থাৎ স্তন্যপানের পর হাঁপের মতো টানতে থাকে, সেক্ষেত্রে এই রস খাওয়ালে কাজ হয়।

২. অম্লপিত্ত রোগ: যাঁরা অম্লপিত্ত রোগে ভুগছেন তারা একটুও টকের স্বাদ নিতে ভয় পান। অথচ খাওয়ার জন্য মনটা আকুপাঁকু করে, এর দ্বারা কিন্তু একটা দোষের সৃষ্টি হয় পরিণামে আসে অরুচি, একেবারে এই অঞ্চল রসকে বর্জন করলেও তাঁদের দেহে ক্ষারধর্মিত্ব বেড়ে যেতে থাকে, আবার খেলেও জ্বালা; ‘মারীচ বধের’ অবস্থার মতো টক আর অম্লপিত্ত রোগের সম্পর্ক। সেক্ষেত্রে এই ভেষজটি, যার মধ্যে আছে মধুর, অম্ল, কষায় এই তিনটি রসের সমন্বয়, যা কোনো ভেষজেই নেই, তাই অম্লপিত্ত রোগীর এই আমরূল শাকটি রোগ না বাড়িয়ে অতৃপ্ত রূচিকে রক্ষা করে থাকে।

আরো পড়ুন:  কাঁটানটে বা কান্টানুটিয়া উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের ভেষজ বিরুৎ

৩. কটিতে ব্যথা: একে অনেকে ফিক ব্যথাও বলেন। স্ফিক অস্থি যেখানে থাকে, সেখানে ব্যথা হয় বলেই সেইটাই ফিক ব্যথা। ঐস্থান ভিন্ন অন্য জায়গার ব্যথাকে ফিক ব্যথা বলা ঠিক হবে না। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে রোগালোকের বড় একটা এ ব্যথা হয় না, আর আমদোয় যার না আছে তারও হয় না; তবে রোগা লোকের আমদোষ থাকলে তাঁরও হতে পারে। ।

এইসব লোকের আমরূল শাকের রস ২চা চামচ একটু গরম করে দুই বেলা খাওয়ার অভ্যোস করা খুব ভালো। এ রোগ যার কিছুতেই সারছে না, এটাতে নিশ্চয়ই সেরে যাবে।

৪. মূত্রগ্রহ রোগ: কোনো রকম কসরতে সুবিধে হয় না, এমন কি সুড়সুড়ি দিলেও হয় না; তখন শল্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন অনেককেই হতে হয়; এটা কিন্তু সে ব্যাপারই নয়, এরকম একটা ক্ষেত্র উপস্থিত হলে আমরূল শাকের রস ২ চা চামচ করে বা ১০ মিলিলিটার প্রতিদিন চার বার আধা কাপ জল মিশিয়ে খেতে হয়, এর দ্বারা ঐ অসুবিধাটার সেরে যাবে।

৫. চুলকানি রোগ: গায়ে হয়েছে, সেটা চাপড়া হয়ে যাচ্ছে মনে হয় যেন দাদ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরূল শাকের রস গায়ে মাখলে ওটার উপশম হবে; এমনি কুষ্ঠর পূর্ববাস্থায়ও প্রাচীন বৈদ্যগণ ব্যবহারের উপদেশ দিতেন।

৬. আম রোগ: পেটে বেঁধে বসে আছে আমাশয়; ইচ্ছে হয় বেশি লবণ ঝাল দিয়ে তরকারি খাওয়ার অথচ এদিকে পা দুটো একটু রাসা রসা ও চিকচিকে। তাঁরা আমরূল বেটে পায়ে লাগাতে হবে আর তার সঙ্গে এর রস একটু করে খাবেন। এটায় কমবে বটে, তবে সেটা হবে মেক-আপ’ (Make-up) দেওয়া; আসলে এখানে ভালভাবে আমদোষের চিকিৎসা করা দরকার।

রাসায়নিক গঠন

Oxalic acid and potassium salt of oxalic acid.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের শাক হচ্ছে প্রায় শতাধিক মানব ভক্ষণযোগ্য উদ্ভিদের তালিকা

তথ্যসূত্রঃ  

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৯৩-১৯৫।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dalgial

Leave a Comment

error: Content is protected !!