আখ বা ইক্ষু নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের জনপ্রিয় ও অর্থকরী ফসল

অর্থকরী ফসল

আখ

বৈজ্ঞানিক নাম: Saccharun officinarum L., Sp. Pl.: 54 (1753). সমনাম: জানা নেই। ইংরেজী নাম: Sugarcane. স্থানীয় নাম: আখ, ইক্ষু, গেন্ডারি, হাসেল, কাজুলি, কুশা, কুশিয়ার। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots বর্গ: Commelinids পরিবার: Poaceae গণ: Saccharum প্রজাতি: Saccharun officinarum

ভূমিকা: আখ বা ইক্ষু (বৈজ্ঞানিক নাম: Saccharun officinarum, ইংরেজি নাম: Sugarcane) পোয়াসি পরিবারের Saccharum গণের বিরুৎ। আঁখের রস মিষ্টি ও সেই রস থেকে গুড় ও চিনি তৈরি করা হয়। স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় দেশে আঁখ বেশ  জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বর্ণনা: আখ বা ইক্ষু গুচ্ছাকৃতি বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, কান্ড খাড়া, ৩-৬ মিটার লম্বা, ২-৫ সেমি ব্যাসযুক্ত, পর্বমধ্য বিভিন্ন বর্ণের, সবুজ, হলুদ, বাদামী, লাল, বেগুনি লাল বা বিভিন্ন রঙের ডোরাকাটা, প্রায়শ মোম সদৃশ সাদা, রসালো, মিষ্টি, রোমশবিহীন। পত্রফলক রৈখিক-ভল্লাকার, ১০০-২০০ x ৩-৬ সেমি, শীর্ষ দীর্ঘা, গোড়া সরু, রোমশবিহীন। অনুফলক খাটো, ঝিল্লিযুক্ত, আবরণ রোমশবিহীন বা রোমশ, পুরাতন অনুফলক পর্ণমোচী, প্রায়শ কর্ণসদৃশ। অভিক্ষেপযুক্ত, পরিঘাতকলা বড়, রোমশবিহীন বা চাপা রোমশ।

পুষ্পবিন্যাস বড় পেনিকেল, ডিম্বাকৃতি-পিরামিড আকার, ৫০-১০০ সেমি লম্বা, বিস্তৃত, ঘন, মঞ্জরীদণ্ড রোমশবিহীন, কখনো কোমল দীর্ঘ রোমশ, পর্ব শ্মশ্রুমন্ডিত, প্রাথমিক শাখা ৫-১০ সেমি লম্বা, গৌণ শাখা রসালো, ব্যবধানবিশিষ্ট, পর্বমধ্য ভঙ্গুর, বৃন্ত রোমশবিহীন।। স্পাইকলেট রৈখিক-ভল্লাকার, ২.৬-৪.০ মিমি লম্বা, ফ্যাকাশে বা বাদামী, পরিঘাতকলাধারী রেশমী রোমশ, ৫ থেকে ১৫ মিমি লম্বা। নিচের গ্লম ২.৮-৪.০ মিমি লম্বা, কাগজবৎ, সূক্ষ্মাগ্র, অস্পষ্ট শিরাল বা শিরাবিহীন, উপরের ঘুম ভল্লাকার, ২.৫-৪.০ মিমি লম্বা, কাগজবৎ, সূক্ষ্মাগ্র, অস্পষ্ট শিরাল বা শিরাবিহীন, উপরের ঘুম ভল্লাকার, ২.৫-৪.০ মিমি লম্বা, কোমল, ১-৩ শিরাল, রোমশবিহীন। নিচের পুষ্পিকা শূন্য, উপরের পুষ্পিক উভলিঙ্গ। নিচের লেমা ভল্লাকার, ২.৫৩.৫ মিমি লম্বা, সূক্ষ্মাগ্র, স্বচ্ছ, শিরা বিহীন বা ২-শিরাল, উপরের লেমা হ্রাসপ্রাপ্ত বা অনুপস্থিত। পেলিয়া ভল্লাকার, ০.৫-২.১ মিমি লম্বা। সূক্ষ্মাগ্র বা গভীরভাবে ২-খন্ডিত। লডিকিউল কদাচিৎ স্বল্প সিলিয়া যুক্ত, আকার পরিবর্তনশীল । পরাগধানী ১.০-১.৮ মিমি লম্বা, হলুদাভ। গর্ভমুন্ড বেগুনি লাল। ফুল ও ফল ধারণ: আগস্ট-অক্টোবর।

আরো পড়ুন:  গুড় বাংলাদেশের সহজলভ্য ও প্রচলিত মিষ্টান যাতে আছে নানা গুণ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৬০, ৮০ (Fedorov, 1969)।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: নিম্নভূমিতে জন্মে থাকে। শাখাকলমে বংশ বিস্তার করা হয়। আঁখ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।

বিস্তৃতি: সম্ভবত আদিনিবাস নিউগিনি, বর্তমানে উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের সবদেশে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: গাছটির কাণ্ড থেকে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়, কান্ডের রস ক্লান্তি অবসান করে এছাড়া কুষ্ঠরোগ, অন্ত্রের সমস্যা, রক্তস্বল্পতা ও আমাশয়েও ইক্ষুরস উপকারী।[১] আখের রস রক্তপিত্ত দূর করে, বলপ্রদ, মৈথুনশক্তি বাড়িয়ে দেয়, রস তথা পাকে মধুর, স্নিগ্ধ, ভারী, মূত্রবর্ধক, ঠাণ্ডা বা শীতবীর্য।[২] গুড় থেকে বাণিজ্যিকভাবে ইথেল এলকোহল তৈরী করা হয়। গুড় খাদ্যরূপে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। গাছের পত্রবহুল শীর্ষাংশ গবাদি পশুর খাদ্য। রস নিষ্কাষিত কান্ড বা ছোবরা দ্বারা কাগজ, কার্ডবোর্ড, ফাইবার বোর্ড ও ওয়ালবোর্ড তৈরি করা হয় (Purseglove, 1968)। আরো পড়ুন

আখ বা ইক্ষুর ১২টি ঔষধি গুনাগুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় আখের রস জন্ডিস, টিউমার, পাকস্থলীর পীড়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে (Bor, 1960)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আখ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শীঘ্র এদের সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আখ সংরক্ষণ নির্ভরশীল অবস্থায় আছে। এটি চাষাবাদের মাধ্যমে বেঁচে থাকবে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি সর্বপ্রকার উপজাতকে জীবিত জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৮-৩১৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,৪৪-৪৫।

আরো পড়ুন:  তেন্দু বা টেন্ডুপাতা বাংলাদেশ ভারত শ্রীলংকার অর্থকরী দারুবৃক্ষ

Leave a Comment

error: Content is protected !!