শীতকালীন মৌসুমী ফুল হিসাবে তারাফুল বা স্টার ফ্লাওয়ারের চাষ ও পরিচর্যা পদ্ধতি

তারাফুল বা স্টার ফ্লাওয়ার আমাদের দেশে শীতকালে চাষোপযোগী একটি সুন্দর ফুল। তারাফুল দেখতে ছোট ও গোলাকার অনেকটা তারার মতো এবং নানা রঙ ও গড়নের হতে দেখা যায়। এই ফুলের বোটা লম্বা ও অনেকদিন প্রস্ফুটিত অবস্থায় থাকে বিধায় গৃহে ফুলদানী সাজাতে ভালো। সৌখিন ও ব্যবসায়ী উভয় ভাবেই চাষ হয়। টব ও জমি উভয় স্থানেই চাষ সম্ভব।

তারাফুলের জাত: 

বেশ কয়েকটি জাতের তারাফুল দেখা যায়। যেমন ক্রোগো, অস্ট্রিপুম, পাউডারপাফ, চালিক্লক, সামস্টারস প্রিন্সেস মিক্সড, ক্যালিফোর্নিয়ান জায়েন্ট ইত্যাদি জাত অন্যতম। গাছের উচ্চতা জাতভেদে বেটে জাত ৪০-৬০ সেঃ মিঃ এবং লম্বা জাত ৬০-৯০ সেঃ মিঃ হতে দেখা যায়। বেটে জাত টবে এবং লম্বা জাত জমিতে লাগানো হয় ।

জমি প্রস্তুত:

চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপ পদ্ধতিতে বীজ তলা ও চারা লাগানোর জমির মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। তবে সার গোবর সামান্য কম পরিমাণ হলেও চলবে। জমির আকার প্রয়োজন অনুপাতে ছোট বড়ো হতে পারে।

তারাফুলের চারা তৈরী ও লাগানো:

এস্টার বা তারাফুলের চারা সাধারণত: বীজ থেকে উৎপাদন বা তৈরি করা হয়ে থাকে।

ক. ভালো ভাবে প্রস্তুত করা বীজতলাতে ছিটিয়ে বীজ বপন করতে হবে। সমতল ভূমিতে সেপ্টেম্বর মাসে এবং পাহাড়ী অঞ্চলে মার্চ মাসের প্রথম দিকে বীজ বপন করতে হবে।

খ. বীজ বপন করার পর মাটি সমান করে হালকা ভাবে পানি ছিটিয়ে দিলে ভালো হয়। এই সময় থেকে চারা বড় হওয়া পর্যন্ত পশুপাখি যেনো মাটি নাড়িয়ে চারার ক্ষতি করতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

গ. মাটি শুকিয়ে গেলে প্রয়োজনে হালকা ভাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ভারী বৃষ্টিপাত হলে জমির মাটি যেনো উল্টা পাল্টা বা ধ্বসে না যায় সেজন্যে বীজতলায় কলাপাতা বা যেকোনো উপায়ে ঢেকে দিতে হবে।

ঘ. চারায় ৩-৪টি পাতা গজালে স্থায়ীভাবে টবে বা পূর্বে প্রস্তুত করা জমিতে লাগাতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব জাতভেদে ২৫-৩৫ সেঃ মিঃ রাখা যেতে পারে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০-৪৫ সেঃ মিঃ রাখাই ভালো।

তারাফুল পরিচর্যা ও যত্ন:

এস্টার বা তারাফুলের ফুল পেতে ৩-৫ মাস সময় লাগবে। এই সময় কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নিতে হবে। যেমন—

ক. গাছের চারা ১৫-২০ সেঃ মিঃ উচু হলে গাছ যাতে বাতাসে নুয়ে পড়তে না পারে সেজন্য গাছে খুটি দিতে হবে।

খ. মাটি শুষ্ক হয়ে গেলে সামান্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে পানি যাতে সামান্য পরিমানেও কাদার সৃষ্টি বা জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গ. পানি সামান্য বেশি হলেই জলচসা রোগ হতে পারে। তাই গাছের চারা অবস্থায় বা কুড়ি আসার সময় যাতে জল বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘ. চারা অবস্থায় যেনো প্রখর রোদ না লাগে সেজন্যে কোনো কোনো সময় আচ্ছাদন দিতে হবে।

ঙ. এস্টার বা তারাফুলের শিকড় উপরের দিকে চলে আসে বিধায় কুড়ি ধরার সময় ৩-৪ সেঃ মিঃ উচু করে জাপান সার দিতে হবে ।

চ. মাসে মাসে সামান্য তরল সার দিতে হবে। তরল সার, গোশালার আবর্জনা, পাতা পচা সার ইত্যাদি এ গাছের জন্যে খুবই উপযোগী।

ছ. রোগ দেখা দেবার সাথে সাথেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে রোগ যাতে না হয় সেলক্ষ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম।

ফুল সংগ্রহ:

নিজস্ব প্রয়োজনে বা বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে বিক্রির জন্যে বোটাসহ ফুল সংগ্রহ করতে হবে। এ ফুল বেশ ক’দিন তাজা থাকে বিধায় ফুলদানীতে রাখার উপযোগী বলে দূরে পাঠানো সম্ভব। বাজারে পাঠানো এবং বিপনন করাও সহজ। শীতকালে এস্টার বা তারাফুল বেশ সুপরিচিত। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ফুলের চাষ সম্ভাবনাও অনেক।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ৯৮-১০০। আইএসবিএন 984-461-128-7

আরো পড়ুন:  দোপাটি ফুল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত ও পরিচর্যা পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!