সন্ধ্যামালতী বা কৃষ্ণকলি বা সন্ধ্যামণির পাঁচটি রোগ সারবার ভেষজ গুণাগুণ

সন্ধ্যামালতী, কৃষ্ণকলি বা সন্ধ্যামণি (বৈজ্ঞানিক নাম: Mirabilis jalapa) (ইংরেজি:4 O’clock Plant, Marvel of Peru, Beauty of the Night) হচ্ছে নিকটাগিনাসি পরিবারের মিরাবিলিস গণের  একটি সপুষ্পক ঝোপজাতীয় বীরুৎ। এদের পাঁচটি রোগ সারবার ভেষজ গুণাগুণ আছে। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই বীরুৎটি বাড়ির বা বাগানের শোভাবর্ধন করে মুলত বিকেলের শেষ থেকে। কৃষ্ণকলি গাছটি সাধারণত সাদা, কালো, লাল, সাদালাল ও হলুদ এ পাঁচটি রং যুক্ত ফুলের জন্যে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। কৃষ্ণকলি গাছের শিকড় গোলাকার এবং লম্বা। তবে ভিতরটা সাদা ও সামান্য সবুজ রঙের। পুরোনো শিকড় শুকিয়ে গেলে শক্ত হয়ে যায়। নতুন শিকড় চামড়ার মতো।

পাতাগুলে দেখতে অনেকটা পানের মতো। লম্বায় দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি হয়। হৃদপিণ্ডের মতো ফুলের ধারাগুলো কাটা থাকে, পাপড়ি অবিভক্ত। পুষ্পদল প্রায় এক মতো হয়। পাপড়ি থাকে চার থেকে পাচটি।

আরো পড়ুন: সন্ধ্যামালতী বাগানের জনপ্রিয় আলংকারিক ফুল

বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার:

অর্শ রোগে: কৃষ্ণকলি গাছের টাটকা শিকড় ত্রিশ গ্রাম একটা মাটির পাত্রে রেখে ১৫০ মিলিলিটার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আঁচে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে ত্রিশ চল্লিশ মিলিলিটার পরিমাণ হলে পাত্র আঁচ থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা পানি সিদ্ধ করা। শিকড় খেলে অর্শ রোগে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।

সর্দি ও কাশিতে: কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা মূল মিহিভাবে গুড়া করে তিন গ্রাম দু-চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল একই পরিমাণে খেলে সর্দি ও কফ কাশি সরে যায়। ওষুধটি চার পাঁচদিন খেতে হবে।

পেট পরিষ্কার করতে: কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা বীজ তিন থেকে চার গ্রাম। ভালোভাবে গুঁড়া করে, সে গুঁড়া রাতে খাওয়া দাওয়ার পর শোয়ার সময় এক গ্লাস ঠাণ্ডা। পানির সাথে খেলে সকালে পায়খানার সাথে সমস্ত জমে থাকা মল বেরিয়ে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:  ঝিঙ্গা বা ঝিংগা-র লতা, মূল, ফলের নানা ভেষজ গুণ

পুষ্টির অভাবে: শরীরে পুষ্টির অভাব হলে কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা শিকড় গুড়া দশ থেকে পনের গ্রাম এক চামচ গাওয়া ঘি দিয়ে ভেজে, সেটা দিনে একবার করে কিছুদিন খেলে দেহে পুষ্টির অভাব পূরণ হয়ে যায়।

ফোঁড়া ও বাগী ফাটাতে: ফোড়া থেকেও বাগী প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। বাগী কুঁচকির নিচে হয়। গরম পানির সেঁক দিলেও বাগী ফাটতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কৃষ্ণকলি গাছের পাতা পঞ্চাশ গ্রাম একটা মাটির পাত্রে বাটিতে রেখে তাতে ১০০ মি.লি. পানি দিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে। পানি কমে ১০ থেকে ১৫ মি.লি হলে আঁচ থেকে নামাতে হবে। সে পানিতে তুলা ভিজিয়ে ফেঁড়া এবং বাগীর ওপর পুলটিস দিলে দু’তিন দিনের মধ্যে ফোঁড়া বা বাগী পেকে যায়। তাছাড়া পুলটিস দিলে যন্ত্রণাও অনেক কম হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ৭০-৭২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!