শিখা রঙ্গন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার আলংকারিক গুল্ম

গুল্ম

শিখা রঙ্গন

বৈজ্ঞানিক নাম: Ixora coccinea L., Sp. Pl.: 110 (1753). সমনাম: Ixora grandiflora Ker (1816), Ixora bandhuca Roxb. (1820), Ixora obovata Heyne (1821), Pavetta coccinea Blume (1826), Pavetta incarnata Blume (1826), Ixora bandhuca Miq. (1857). ইংরেজি নাম: Flame of the Woods. স্থানীয় নাম: শিখা রঙ্গন, রবাই (মগ)।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots বর্গ: Gentianales পরিবার: Rubiaceae গণ: Ixora প্রজাতি: Ixora coccinea

ভূমিকা: শিখা রঙ্গন (বৈজ্ঞানিক নাম: Ixora coccinea) হচ্ছে রুবিয়াসিস পরিবারের আইক্সোরা গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই গুল্মটি বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে।

বর্ণনা: শাখান্বিত গুল্ম, ৩ মিটার এর কাছাকাছি উঁচু হয়। কান্ড তুলনামুলকভাবে বলিষ্ঠ, মসৃণ, বাকল হালকা ধূসর। পত্র অবৃন্তক, উপপত্রযুক্ত, উপপত্র সরুভাবে ত্রিকোণাকার, তীক্ষ্মাগ্র, একটি লম্বা পাতলা বিন্দুতে পরিণত, ৫-৮ মিমি লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার বা বিডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র, ৪-৯ × ২-৫ সেমি, স্থূলা বা গোলাকার এবং সামান্যভাবে সূক্ষ্ম খবা, গোড়া হৃৎপিন্ডাকার বা গোলাকার, উভয় প্রান্ত মসৃণ, নিম্নভাগ ফ্যাকাশে তবে স্পষ্ট শিরাযুক্ত।

পুষ্পবিন্যাস অবৃন্তক, খুবই ঘন, স্বল্প-পুষ্পক, ৪-৭ x ৪-৮ সেমি, শাখাপ্রশাখা শল্কপত্রাকারে রোমশ, মঞ্জরীপত্র প্রশস্ত ত্রিকোণাকার, ৩ মিমি পর্যন্ত লম্বা। পুষ্প অবৃন্তক, বৃহৎ, উজ্জ্বল রক্ত লাল, হাইপ্যানথিয়াম ১.৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ।

বৃতি দন্তক ত্রিকোণাকার, ১.৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা, নল ২ মিমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ, খন্ডক  ৮-১০ x ৪-৫ মিমি, কুঁড়িতে পাকানো, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, সূক্ষ্মাগ্র, ছড়ানো। পরাগধানী ৩ মিমি লম্বা, পুষ্প প্রস্ফুটিত হওয়ার ঠিক পরে বিদারী যখন গর্ভমুন্ড অপরিণত। গর্ভমুন্ড ২ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড বহির্মুখী, ৪ মিমি পর্যন্ত লম্বা। [১] ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ ।[২]  

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বাগানে আবাদী।  বীজ এবং কান্ডের শাখা কলম দ্বারা নতুন চারা জন্মায়। ফুল ও ফল ধারণ সারা বর্ষব্যাপী শিখা রঙ্গনের ফুল ধরে। ফল গোলাকার, ৭-৮ মিমি চওড়া, বৃতি দন্তক দ্বারা মুকুটের ন্যায়। বীজ ২টি, সমোত্তল, অমসৃণ, শল্কপত্রাকার।

আরো পড়ুন:  মালতী লতা বাংলাদেশে জন্মানো আলংকারিক ও ভেষজ উদ্ভিদ

বিস্তৃতি:  শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমার। বাংলাদেশের সর্বত্র বাগানে আবাদ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বর দিক: মূল ভেষজভাবে ব্যবহৃত এবং উদ্যানতাত্বিক গুরুত্ব রয়েছে (Nazimuddin and Qaiser, 1989)। উদ্ভিদটি অনিয়মিত রক্তস্রাব, অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা, রেচক, দাত ব্যথা, মাড়ীতে উদ্ভূত ফোড়ার যন্ত্রনা, দন্তজনিত আলসারের কারণে মাড়িতে উদ্ভুত ব্যথাযুক্ত ফোড়ায় বেদনাহীনতায় ব্যবহৃত।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শিখা রঙ্গন প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে শিখা রঙ্গন সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে এর সৌন্দর্যের কারণে।[৩]

তথ্যসূত্র:                             

১. এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮৩ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.  

৩.এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস প্রাগুক্ত, প. ৮৩  

Leave a Comment

error: Content is protected !!