চাকুন্দা গাছের ফুল, পাতা, ফল ঔষধি গুণ সম্পন্ন

চাকুন্দা গ্রামের অনেকের কাছে পরিচিত একটি গাছ। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Senna Tora. আগাছা হিসাবে পরিচিত হলেও এই গাছের ফুল, পাতা, ফল দিয়ে বাচ্চারা খেলে থাকে। এটি একধরনের গুল্ম। এর নানা ঔষধি গুণ আছে।

 চাকুন্দা দক্ষিণ এশিয়ার গুল্ম

১. বিষাক্ত পোকার কামড়: অনেক সময় আমাদের ঘুমন্ত অবস্থায় কিংবা চলার পথে কোনো পোকায় কামড়ে দিয়ে থাকে, কিন্তু কোনো কিছু দেখাও গেল না। দুই এক দিন বাদে দেখা যাচ্ছে সেখানটায় ফুলেছে এবং তার আশপাশের গাঠগুলিতে ব্যথা হচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, কোনো বিষাক্ত কীট দংশনের ফলেই এটি বিসর্পিত হয়েছে। এক্ষেত্রে এই চাকুন্দে বীজের গুঁড়ো আধ গ্রাম থেকে এক গ্রাম পর্যন্ত মাত্রায় বা ৪ রতি থেকে ৮ রতি পর্যন্ত সকালে ও বিকালে দুবার জলসহ খেতে হবে। এটাতে দুই একদিনের মধ্যে বিষটা কেটে যাবে। কোনো দাগ যদি নজরে পড়ে, তা হলে ওখানে ঐ বীজ বেঁটে লাগিয়ে দিতে হবে।

২. স্নায়ুগত বাত: যাকে আমরা চলতি কথায় ঝিনঝিনে বাত বলি। এ রোগের সাধারণ লক্ষণ হলো চোখের পাতা নাচে, পা নাচানো অভ্যোস, মাঝে মাঝে কানে ঝি ঝি পোকা ডাকার শব্দ শোনা যায়, একটু বসে থাকলেই পায়ে ঝিঝি ধরে, অনেক সময় হাতের বা পায়ের পেশীগুলি নাচতে থাকে; এও দেখা গেছে পেটের উপরটায় মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে, একটা হাত দিয়ে চেপে দিলেই ঐ কাঁপাটা থেমে যায়; একে হালকা করে ভাবলে চলবে না। এটাকে উপেক্ষা করলে পরিণামে চোখের অসুখ হবেই। তাই এটাকে নিরাময় করার উপদেশ আয়ুর্বেদের মনীষীগণ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ঔষধ হলো চাকুন্দের বীজের গুঁড়ো এক গ্রাম, আধা কাপ গরম জলে ফেলে, আধা ঘণ্টা বাদ তাকে ছেঁকে নিয়ে, থিতিয়ে গেলে সকালে একবার করে খেতে হবে; এটা একদিন অন্তর খাবেন, তবে অন্তত  মাসখানেক খেতে হয়, তারপর সপ্তাহ ১ দিন করেও কিছুদিন খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  মটর হচ্ছে কলাই বা ডাল জাতীয় ভেষজ খাদ্যশস্য

৩. রক্তগুল্ম: অরুচি থেকে আরম্ভ করে গর্ভের লক্ষণ সবই হবে এবং গর্ভের স্পন্দন দুটাতেই হবে, তবে গর্ভসঞ্চারে শূলের মতো কোনো ব্যথা হবে না। রক্তগুল্মে এই ব্যথাটা থাকবে। তবে বর্তমানে অনেক সহজ পদ্ধতিতে এটা গর্ভ কিনা তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চাকুন্দের বীজ এক গ্রাম ও মূলের ছাল ২ গ্রাম দুই কাপ জলে ফুটিয়ে নিয়ে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, প্রতিদিন সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে; এর দ্বারা স্রাবও হয়ে যাবে, আর গুল্মের যন্ত্রণাও চলে যাবে।

৪. ক্রিমিতে: অনেক সময় মুখ দিয়ে জল ওঠে, বমি বমি ভাব করে, যাকে আয়ুর্বেদে বলে বিবমিষা। এটা যে ক্রিমির জন্যই সেটা মনে করা উচিত নয়, কারণ অম্লপিত্তেও তো এমন হয়। আবার মলদ্বার চুলকোলেই যে ক্রিমি, এটা ভাবাও ঠিক নয়, কারণ অর্শ থাকলেও তো মলদ্বার চুলকায় এই রকম ক্ষেত্রে এর বীজ চূর্ণ আধ গ্রাম মাত্রায় সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে।

৫. প্রবল হাঁপানিতে: যাঁদের একজিমার সঙ্গে হাঁপানি অথবা অর্শের রক্ত বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি প্রবলাকার ধারণ করেছে কিংবা অন্য কোনো কারণে রক্তদৃষ্টি হয়ে এক সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে চাকুন্দে বীজ ১ গ্রাম একটু থেঁতো করে, এক কাপ জলে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে খেতে হবে প্রয়োজন বোধে সকালে ও বিকালে ২ বার দুই একদিন খাওয়ার পর কয়েকদিন একবার করে খেতে হয়।

৬. ছুলিতে: এ রোগ দীর্ঘদিন শরীরে বসে থাকলে কারও কারও এ থেকে শ্বেতি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মনে রাখা উচিত যে, এই রোগ যাঁদের হয়, তাঁদের সাবান বা ক্ষারজাতীয় কোনো জিনিস গায়ে মাখা উচিত নয়। এই ছুলির ক্ষেত্রে চাকুন্দের কাঁচা ফল  গোমূত্র দিয়ে বেঁটে লাগাতে হয়, তারপর এক ঘণ্টা বাদে ধুয়ে ফেলতে হয়; কাঁচা না পেলে ৪ থেকে ৫ গ্রাম বীজ নিয়ে, সেই বীজ গোমূত্রে বেটে লাগালেও হবে। এটি ব্যবহারে কয়েক দিনের মধ্যেই এগুলি সেরে যাবে।

আরো পড়ুন:  চাকুন্দা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুণসম্পন্ন গুল্ম

৭. দাদ: যাকে সাধুভাষায় দদ্রু বলে। এই দদ্রু শব্দটির বিন্যাস করা হয়েছে, দদ + রুক, এর অর্থ হচ্ছে ছোট ছোট দানা যেগুলি হবে, সেগুলো একটু চেরা দাগ আরও লম্বা হয়, আর ঐ জায়গাটা একটু পুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চাকুন্দের বীজ জলে বেঁটে, একটু গরম করে ঘষে ঘষে লাগাতে হয়। প্রতিদিন একবার করে ২ থেকে ৩ দিন লাগালে উল্লেখযোগ্য উপকার হবে; তারপর মাঝে মাঝে লাগালে ওটা সেরে যাবে।

দাদে এই চাকুন্দে বীজ ব্যবহারের সহজ পদ্ধতি হলো এই চাকুন্দের বীজকে লেবুর রসে বেটে ওখানে লাগাতে হবে, তবে একটু জ্বালা করবে। এখানে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বিশেষ কোমল অঙ্গে লেবুর রসে বাটা চাকুন্দে না লাগানোই ভালো।

৮. আধকপালে মাথা ব্যথায়: একে আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে ‘অধবিভেদক’ রোগ, এ রোগে চাকুন্দের বীজ ভাতের আমানিতে বেঁটে কপালে লাগাতে হবে। আমনি হলো ভাত দুই থেকে তিন দিন ভিজিয়ে রাখলে যে টক জলটা তৈরি হয় সেইটাই । এই রোগকে হালকা ভাবা উচিত নয়, পরিণামে এ থেকে কঠিন চোখের অসুখ আসতে পারে। এমন কি শঙ্খক রোগও হতে পারে।

৯. অর্শ রোগ: চাকুন্দের বীজ আন্দাজ এক গ্রাম চন্দনের মতো করে বেঁটে অল্প মাখন মিশিয়ে অর্শের বলি বা তার চারপাশে লাগাতে হবে। এর দ্বারা যন্ত্রণার উপশম হবে।

রাসায়নিক গঠন

(a) Emodin, glycoside, a pleasant smelling fixed oil. (b) Tannic acid, chrysophanic acid. (c) Flavonoid constituents.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ      

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,১৫১-১৫৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Aruna.

Leave a Comment

error: Content is protected !!