কালো ছিটকি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার গুল্ম

গুল্ম

কালো ছিটকি

বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus urinaria. সমনাম: Phyllanthus leprocarpus Wight (1852). ইংরেজি নাম: Chamber Bitter. স্থানীয় নাম: হাজারমণি, কালো ছিটকি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae অবিন্যাসিত: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malpighiales পরিবার: Phyllanthaceae গোত্র: Phyllantheae উপগোত্র: Flueggeinae গণ: Phyllanthus প্রজাতি: Phyllanthus urinaria.

বর্ণনা: কালো ছিটকি সহবাসী, বর্ষজীবী বা কখনও বহুবর্ষজীবী, ঋজু বা আরোহী রোমশ বিহীন বা অণুরোমশ বীরুৎ। এরা প্রায় ৫০ সেমি উঁচু। কান্ড অতিশয় শাখান্বিত, ক্ষুদ্র শাখা ৩-১০ সেমি লম্বা, চ্যাপ্টা, পক্ষল । পত্র একান্তর, উপপত্র ডিম্বাকার-ভল্লাকার,প্রায় ১.৫ মিমি লম্বা, দীর্ঘা, মূলীয় অংশ কর্ণসদৃশ অভিক্ষেপ যুক্ত, বৃন্ত অতিশয় খাটো, ০.৫ মিমি লম্বা, পত্রফলক রৈখিক বা দীর্ঘায়ত থেকে দীর্ঘায়ত বিডিম্বাকার, ৫-২০ x ২-৯ মিমি, কখনও সামান্য কাস্তে আকৃতি বিশিষ্ট, শীর্ষ স্থলাগ্র বা সূক্ষ্মাগ্র, মূলীয় অংশ জুলাগ্র এবং কখনও অপ্রতিসম, পার্শ্বীয় শিরা ৪-৬ জোড়া, নিচের পৃষ্ঠ উজ্জ্বল। পুষ্প কাক্ষিক।

পুংপুষ্প: সবৃন্তক, বৃন্ত ০.৫ মিমি লম্বা, উপরের অংশ কর্ণসদৃশ বৃত্যংশ ৬টি, হলুদাভ-সাদা, ০.৩- ০.৬ x ০.২-০.৪ মিমি, উপবৃত্তাকার থেকে দীর্ঘায়ত বিডিম্বাকার, স্থলাগ্র, রোমশ বিহীন, চাকতি গ্রন্থি ৬টি, সবুজ, বৃত্যংশের সাথে একান্তর, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড সম্পূর্ণ যুক্ত, পরাগধানী অবৃন্তক, ঋজু, অনুদৈর্ঘ্য বিদারী।

স্ত্রীপুষ্প: একল, কাক্ষিক, বৃন্ত ০.৫ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৬টি, অর্ধ সমান, ০৭-১.১ x ০.২-০.৪ মিমি, দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার, স্থলাগ্র বা সূক্ষ্মাগ্র, অর্ধরোমশবিহীন, হলুদাভ, মধ্যশিরা লালাভ, চাকতি বর্তুলাকার, চ্যাপ্টা, অখন্ড গর্ভাশয় অর্ধগোলাকার, আড়াআড়ি ১ মিমি, গর্ভদন্ড ৩টি, মুক্ত, ২খন্ডিত, খন্ড বক্র। ফল ক্যাপসিউল, গোলাকার, ব্যাস ৪ মিমি। বীজ ত্রিকোণাকার, ১.০-১.২ x ০.৮-১০ মিমি, অনুপ্রস্থ খাঁজযুক্ত, পেছনে ও পাশে ১২-১৫ টি খাজ হালকা। ধূসর বাদামী ।ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৫২ (Gill et al., 1973).

চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: কালো ছিটকি শুষ্ক মাঠ, পথিপার্শ্ব, পতিত জমি এবং অরণ্যের প্রান্ত জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ কাল এপ্রিল-অক্টোবর। বীজে বংশ বিস্তার হয়। 

আরো পড়ুন:  লতামহুরী বা নানভান্তুর বাংলাদেশে জন্মানো ভেষজ গুল্ম

বিস্তৃতি: কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, যশোর, রাজশাহী ও রাঙ্গামাটি জেলায় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: উদ্ভিদ মূত্র বর্ধক, শোথ রোগ, গনোরিয়া জননেন্দ্রিয় ও মূত্র সংক্রান্ত পীড়ায় ব্যবহার করা হয়। ফল কটু, অম্ল ও শীতলতাদায়ী এবং পিপাসা ও শ্বাসনালীর প্রদাহ, কুষ্ঠ, পেত্তিক সমস্যা ও হাপানিতে উপকারী। গাছটি মাছের খামারে বিষ প্রয়োগেও ব্যবহার করা হয় (Chopra et al., 1956)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: কম্বোডিয়ায় গাছটি পেশি সঙ্কোচক ও জ্বর নিবারক রূপে ব্যবহৃত। উদ্ভিদ সিক্ত পানি দ্বারা যকৃত ও উদরাময় রোগের চিকিৎসা করা হয়। ভারতের ছোট নাগপুরে শিশুদের অনিদ্রা রোগে মূলের ব্যবহার প্রচলিত (Kirtikar et al., 1935)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৬ম খণ্ডে  (আগস্ট ২০১০)  কালো ছিটকি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কালো ছিটকি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।   

তথ্যসূত্র:

১.রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: RaffiKojian

Leave a Comment

error: Content is protected !!