কাঁটা গোলাপ টব বা বাগানের চাষযোগ্য শোভাবর্ধনকারী এশিয়ান ফুল

ভূমিকা:  কাঁটা গোলাপ (বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa chinensis, ইংরেজি: Tea Rose, China rose,  Chinese rose)  হচ্ছে রোজেসি পরিবারের রোজ গণের  একটি সপুষ্পক গুল্ম। গোলাপের এই প্রজাতিটি চাষ বেশি।  এখনকার বাগান শিল্প, বেলকনি, ছাদের, ব্যক্তিগত পুষ্প সংগ্রহের তালিকায় কাঁটা গোলাপের বেশ চাহিদা আছে।

বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa chinensis Jacq., Obs. Bot. 3: 7 (1768).  সমনাম: Rosa indica L. (1853).  ইংরেজি নাম: Tea Rose, China rose,Chinese rose. স্থানীয় নাম: কাঁটা গোলাপ, কাট গোলাপ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; বর্গ: Rosales; পরিবার: Rosaceae;  গণ: Rosa ; প্রজাতি: Rosa chinensis.

বর্ণনা:

বর্ণনা: কাঁটা গোলাপ ছোট আকারের ছড়ানো চিরহরিৎ গুল্ম। এই গাছের ডালে কাঁটা থাকলেও শাখা-প্রশাখা মসৃণ এবং লোমমিশ্রিত থাকে না। কাঁটা গোলাপের পাতা পাতলা ও কিনারা করাতের দাঁতের মতো খাঁজ কাঁটা থাকে। উপরের পাতা খুবই সরু ও শীর্ষের কাছাকাছি যুক্ত থাকে। এই প্রজাতির গোলাপ ফুল বড়ো হয় এবং সাদা, গোলাপী, রক্ত- বেগুনি বা হলুদ বর্ণের। ফুল লম্বা পুষ্পবৃন্তে ফুটে ও প্রচন্ড সুগন্ধি। বৃতি খন্ডক পুষ্পবৃন্তে সম্পূর্ণভাবে বাঁকা, বৃতি-নল বিডিম্বাকার। পাপড়ি দ্বিগুণ ও কিছুটা একক।

ফুলের পুংকেশর চাকতির মতো হয়ে থাকে এবং এদের সংখ্যাও অনেক। গর্ভপত্রও অনেক, গর্ভমুন্ড স্থুল ডিম্বক একল। এরা সাধারণত অন্য গোলাপের চেয়ে বেশি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং এদের বীজ ছোট আকারের হয়।[১]

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী শীতকাল থেকেই ফুল ধরা শুরু করে তবে কাঁটা গোলাপ নভেম্বর থেকে মার্চ, কখনো সারা বর্ষব্যাপী। বাড়ির বা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বর্ধনে জন্য লাগানো হয়। এই উদ্ভিদ আংশিকভাবে আবাদী এবং ভারতীয় উপমাহাদেশে আবহাওয়া এই গোলাপ চাষে উপযুক্ত।

কাঁটা গোলাপের বীজ বা শাখাকলম করে এর বংশ বিস্তার করা হয়। যেকোনো সময়ে চারার জন্য কলম করা যায় তবে অক্টোবর থেকে নভেন্বর মাস একাজের জন্য উপযোগী। কলম করার জন্য পরিপক্ক ডাল থেকে ২০-২৫ সেমি লম্বা ও পেন্সিলের মতো মোটা কান্ড নেওয়া উচিত।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

কাঁটা গোলাপের ক্রোমোসোম 2n = ২৮, ৪২.[৩]

বিস্তৃতি:

কাঁটা গোলাপের আদি নিবাস চীনে অর্থাৎ স্বদেশ এবং ভারত পরিবেশ এর জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশে ঢাকা শহরের মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যান এবং বলধা গার্ডেনে আবাদী (Dey, 2006).

অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব:

কাঁটা গোলাপের অপরিণত শীর্ষ এবং পুষ্পের কুঁড়ি পট বীরুৎ হিসেবে খাওয়া হয়। এই প্রজাতির ফুল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রুম সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুগন্ধের কারণে অনেকে শখের বশে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে।[২]

ভেষজ ব্যবহার:

চীনে কাঁটা গোলাপের ফল ক্ষত, মচকানো, আঘাত এবং মারাত্মক আলসারে প্রয়োগ করে থাকে (Chopra et al., 1956).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বাঁধা গোলাপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বাঁধা গোলাপ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে এর সৌন্দর্যের কারণে।[২]

তথ্যসূত্র:

১.  এম কে মিঞা(আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৫ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ফুলের চাষ প্রথম সংস্করণ ২০০৩ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 984-483-108-3

৩. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.  

আরো পড়ুন:  দামেস্ক গোলাপ-এর গুণাগুণ, উপকারিতা ও প্রয়োগ

Leave a Comment

error: Content is protected !!