
ভূমিকা: ফরাসি গাঁদা (বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes patula, ইংরেজি: French Marigold) এস্টারেসি পরিবারের টাগেটেস গণের গুল্ম। এটি অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।
বর্ণনা: এই ফুল ঋজু, সভঙ্গ, রোমশ, একবর্ষজীবী বীরুৎ, অনূর্ধ্ব ৮০ সেমি বা ততোধিক উঁচু হতে পারে। পত্র পক্ষবৎ অতিখন্ডিত, পত্রক বল্লমাকার, সূক্ষ্মাগ্র, সূক্ষ্ম দস্তুর।
পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, অসম জননকোষী, দীর্ঘ পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, ১৮ x ১০ মিমি, একল, রে-বিশিষ্ট, একক বা দ্বিতীয়, মঞ্জরী পত্রাবরণ বেলনাকার। মঞ্জরীপত্র ১-স্তরে বিন্যস্ত, নিম্নাংশে যমক হয়ে একটি নল সৃষ্টি করে, মসৃণ, পুষ্পধার উত্তল, উন্মুক্ত, কূপযুক্ত। প্রান্ত পুষ্পিকা জিহ্বা-আকৃতি, ১ থেকে বহু-স্তরে বিন্যস্ত, স্ত্রী। মধ্য পুস্পিকা বহু-স্তরে বিন্যস্ত, উভলিঙ্গ। প্রান্ত পুষ্পিকার দলমণ্ডল হলুদ বা মরিচা-লাল, ২-৩ খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট, মধ্য পুষ্পিকার দলমণ্ডল নলাকার, সমাঙ্গ, ৫-খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট হলুদ, অভ্যন্তর রোমশ। পরাগধানী উপাঙ্গযুক্ত, নিম্নাংশ বাণাকার, দীর্ঘ পুংদন্ডবিশিষ্ট। প্রান্ত পুষ্পিকার গর্ভদন্ডীয় বাহু দীর্ঘায়িত, সূচ্যগ্র, মধ্য পুষ্পিকার গর্ভদন্ডীয় বাহু আয়তাকার, সূক্ষ্ম তুলিতুল্য।
ফল সিপসেলা, সংনমিত, ৮.০ X ১.৫ মিমি, রৈখিক, মূলীয় ক্যালাস বিশিষ্ট, নিম্নাংশ সরু, পরিপক্ক অবস্থায় কাল, ঈষৎ রোমশ, বৃতিরোম ৪-৫টি, শূকযুক্ত শুষ্ক বিশিষ্ট, কুচবৎ, ৩টি শূক সদৃশ।
ফুল ও ফল ধারণ: এই ফুল শীতকালে ফোটে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময়।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪৮ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বাগানের জন্য এই গাছ বেশি লাগানো হয়। নরম মাটিতে ও সামান্য যত্ন নিলে গাছ ও ফুল দুটোই ভালো হয়। বীজ এবং কাণ্ড কাটিং দ্বারা নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি: মেক্সিকোতে স্থানীয়ভাবে জন্মে। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি সর্বত্র আবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: উদ্ভিদটির ফুলে হলুদ রঙের কুয়ারসেটাগেটিন এবং বীজে তেল থাকে। পাতার রস রক্তপাত বন্ধ করে, যদি তা কাটা ও ঘায়ে প্রয়োগ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: স্থানীয়ভাবে কাটা ও ঘায়ে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ফ্রান্স গাঁদা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ফ্রান্স গাঁদা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন এক্স-সিটু পদ্ধতি, বিশেষত ইহার ব্যাপক পরিমাণ আবাদের জন্য মাইক্রো-প্রপাগেশন পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0