কামরাঙা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় ফল

ফল

কামরাঙা

বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa carambola বাংলা নাম: কামরাঙা, ইংরেজি নাম: Carambola Apple, Chinese Gooseberry, Coromandel Gooseberry. আদিবাসি নাম: Sewra (খুমি)
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants উপরাজ্য: Tracheobionta – Vascular plants অধিবিভাগ: Spermatophyta – Seed plants বিভাগ: Magnoliophyta – Flowering plants শ্রেণী: Magnoliopsida – Dicotyledons উপশ্রেণি: Rosidae বর্গ: Geraniales পরিবার: Oxalidaceae – Wood-Sorrel family গণ: Averrhoa Adans. – averrhoa প্রজাতি: Averrhoa carambola L.

ভূমিকা: কামরাঙা (বৈজ্ঞানিক নাম:Averrhoa carambola) ইংরেজি নাম: Carambola, Star Fruit) অক্সিলাডাসি পরিবারের এভারোয়া গণের একটি সপুষ্পক ফলদ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এদের স্বাদ টক-মিষ্টি। কামরাঙা ও এর ঘনিষ্ঠ বিলিম্বি (বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa bilimbi) সম্ভবত দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার মালয় উপদ্বীপ হতে ইন্দোনেশিয়ায় উৎপন্ন। এটি চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এরা চিরসবুজ, গড়ন লম্বাটে, মাথা ঝোপাল, সুশ্রী, শাখা ঝুলন্ত, পাতা পক্ষ যৌগিক।

কামরাঙা-এর বর্ণনা:

কামরাঙা মাঝারি আকারের বৃক্ষ, শাখা-প্রশাখা সচরাচর ঝুলন্ত। পাতা বৃন্তক, একান্তর, পক্ষল যৌগিক, সচূড় পক্ষল, পত্রক ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার-ভল্লাকার, অখন্ড, তীক্ষাগ্র, কিছুটা তির্যক, প্রায় প্রতিমুখ, উপরের পৃষ্ঠ চকচকে এবং নিম্নপৃষ্ঠ অণুরোমাবৃত।

পুষ্প সচরাচর কাক্ষিক যৌগিক মঞ্জরীতে, বৃন্তক, উভলিঙ্গ। বৃত্যংশ ৫টি, ০.৪ সেমি (প্রায়) লম্বা, পাদদেশে যুক্ত, উজ্জ্বল লাল বর্ণ, পাপড়ির দৈর্ঘ্যের অর্ধেক, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত থেকে ত্রিকোণাকৃতি, তীক্ষাগ্র থেকে তির্যক খাতাগ্র, প্রায় মসৃণ। পাপড়ি ৫টি, ০.৯ সেমি পর্যন্ত লম্বা, বিডিম্বাকার থেকে ভল্লাকার, পাদদেশে যুক্ত, বেগুনি-গোলাপী, বাইরের পৃষ্ঠ মসৃণ। সাধারণত কচি ডালে বা পুরানো ডালে থোকা থোকা ফুল ফুটে। ফুলগুলি অসম পুংদণ্ডধর (heterostylous) এবং গাছ আংশিক স্ববিষমধর্মী (self-incompatible)|

বৃহদাকৃতির পুংকেত্রগুলো ০.৩-০.৪ সেমি লম্বা, সচরাচর সবগুলোই পরাগধানীবিশিষ্ট, খর্বাকারগুলো ০.১ সেমি (প্রায়) লম্বা, পরাগধানীবিহীন, পুংদন্ডগুলো তুরপুন আকার, প্রায়শই খর্বাকার ও স্ফীত পাদদেশবিশিষ্ট। গর্ভাশয় ৫টি, ০.২০.৩ সেমি লম্বা, সাধারণত কোণা বরাবর অণুরোমাবৃত, বৃহদাকার গর্ভদন্ডগুলো ০.২ সেমি (প্রায়) লম্বা, খর্বাকারগুলো ০.১ সেমি (প্রায়) লম্বা অথবা প্রায় অস্পষ্ট।

আরো পড়ুন:  অশোক গাছের ছাল, বীজের দশটি ওষধি গুণাগুণ

ফল ১২ X ৭ সেমি পর্যন্ত, ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তীয়, ধারালো ৫-কোণীয় বা খন্ডিত। প্রস্থচ্ছেদ তারকাকৃতি, তাই ইংরেজিতে একে স্টারফ্রুটও (star fruit) বলে। উভয়প্রান্ত খাঁজকাটা কিন্তু অগ্রভাগের দিক অধিক খাজকাটা। বীজ ১.০-১.২ x ০.৫সেমি, ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তীয়, বীজোপাঙ্গবিশিষ্ট। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২, ২৪ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:

সমভুমি এবং সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকা। বীজের সাহায্যে নতুন চারা জন্মে। ক্লোন পদ্ধতিও জনপ্রিয়। বাংলাদেশ এ বরিশাল বিভাগে এর উৎপাদন বেশি হলেও অন্যান জেলায় ও এর চাষাবাদ বাড়ছে। চারা লাগানোর ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে দুটি জাত রয়েছে, একটি টক, তাতে পর্যাপ্ত অক্সালিক এসিড থাকায় কাঁচা খাওয়ার অযোগ্য, তবে জ্যাম, জেলি, আচার ও শরবৎ তৈরি করা যায়; অন্যটি মিষ্টি বা টক-মিষ্টি, তাজা ফল সুস্বাদু। তারকাকৃতি টুকরাগুলি সৌন্দর্যগুণের জন্য ফলের সালাদে ও কেকে ব্যবহার করা হয়।

কামরাঙা-এর বিস্তৃতি:

আদিনিবাস ভারতীয় উপমহাদেশের উষ্ণ অঞ্চল। বর্তমানে ইহার উপযোগী ফলের জন্য গ্রীষ্মমন্ডলের অনেক দেশে ব্যাপক চাষ হয়। কামরাঙার নানান জাত যেমন- গোল্ডেন স্টার, আর্কিন, বি ১-১০, ফুউঙ টুঙ ইত্যাদি। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হাওয়াই, ফ্লোরিডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় চাষ করা হয়। বাংলাদেশে এই উদ্ভিদটি বসতবাড়ির বাগানে বা বাড়ির আঙিনাতে এ গাছ লাগানো হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ইহার ফল ভিটামিন-সি, অক্সালিক এসিড এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। পুষ্পে রুটিন এবং কোয়ার্সেটিন গ্লুকোসাইড বিদ্যমান এবং টাটকা অবস্থায় ও কাসুন্দির সাথে খাওয়া হয়। ইহার ফল জন্ডিসের রোগীকে এবং পিপাসায় খাওয়া হয়। উদ্ভিদটিতে এন্টিসকর্বিউটিক গুণাবলী বিদ্যমান। পাকা ফল রক্তঝরা পাইলস এর একটি উত্তম নিরাময়ক (Ghani, 2003).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ফল ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য কিডনি রোগীর জন্য কামরাঙা ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ডে ৯ম(আগস্ট ২০১০)   কামরাঙ্গা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কামরাঙ্গা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]

আরো পড়ুন:  ফলসা গাছের দশটি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

তথ্যসূত্র:

১.  এম. এ হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৭০-৩৭১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!