
বর্ণনা: নাগলিঙ্গম লিসিথিডাসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই গাছ ২০-২৫ মিটার উঁচু হয়। কয়েকবার পাতা ঝরায় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই আবার পাতা গজায়। ১৫ সেমি লম্বা বড় বড় পাতা। গাছের কাণ্ড ও ডাল থেকে ঝুলন্ত লম্বা লম্বা ডাঁটায় কয়েকটি ফুল ফোটে বছরে কয়েকবার। ফুল ৭-৮ সেমি চওড়া, সুগন্ধি, হলুদ-গোলাপি বা লাল, মাঝখানে সাপের ফনার মতো চ্যাপ্টা ও বাঁকা সাদাটে রঙের যুক্ত পরাগ গুচ্ছ। ফল গোলাকার, ১৫ সেমি চওড়া, বাদামি, শাসালো, তাতে অনেক বীজ। শাঁস দুর্গন্ধী। বীজ থেকে চারা হয়। গোলাকার বড় বড় ফল গুলো কামানের গোলার মতো। তাই তার ইংরেজি নাম ক্যানন বল (Cannonball tree)।
শিবলিঙ্গম বা নাগলিঙ্গম নামকরণের মূলে রয়েছে এর ফুলের গড়ন। ফুলের ছয়টি পাপড়ি, সাপের ফণার মত আকৃতিতে মাঝখানের একটি শিবলিঙ্গ আকৃতির গর্ভকে ঘিরে রাখে। ভারতে ধর্মীয় আচারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে এটা সরাসরি শিবলিঙ্গম নাম ধারণ করেছে যা বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম।
অন্য গাছে সচরাচর যেমন ফুল আসে শাখা ডালের প্রান্ত থেকে, কিন্তু এক্ষেত্রে নাগলিঙ্গম একটু আলাদা। নাগলিঙ্গমের গোড়া থেকে শীর্ষ পর্যন্ত মোটা কাণ্ড থেকে হয় বাহারি রঙের ফুল। গাছের ফুল হয় গোলাপি-লাল, সরাসরি কাণ্ড থেকে, যেমনটি হতে দেখা যায় চাল-মুগরা গাছে। এই ফুল থেকে রাতের বেলা অদ্ভূত সুগন্ধ বের হয়।
নাগলিঙ্গমের ফলগুলি দেখতে বড় আকারের কদবেল (কদর্য বেল) এর মত, প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার ব্যাসের হবে। কেউ কেউ এই ফল খেতে পারলেও এটা সুস্বাদু নয়। এই ফলের বীজের ভেতরে একপ্রকার তেল থাকে বলে ফলটা তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয়ে দীর্ঘদিন গাছে ঝুলে থাকে। পুরোনো গাছে এ কারণে প্রায়ই কিছু ফল ঝুলতে দেখা যায়। ফলটা যথেষ্ঠ শক্ত খোলস সম্বলিত হওয়ার কারণে জংলী মানুষ একসময় একে পাত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
অবস্থান: নাগলিঙ্গম ত্রিনিদাদ ও ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। বাংলাদেশে বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, টংগী, বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারাদেশে অনধিক ৫০টি গাছ রয়েছে। এই গাছ বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি, যদিও বহিরাগত।
ব্যবহার: নাগলিঙ্গমের ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মানের পারফিউম তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই গাছের কাণ্ড পুরু হলেও ভেতরে তেমন সার হয় না, কাঠ হিসেবে আদৌ কাজের নয়, এর ফল-ফুল-পাতা বা শেকড় কতটা কাজের তা এখনো সৌখিন গবেষণাগারের পরীক্ষাধীন। আপাতত এর বাণিজ্যিক মূল্য না থাকলেও, ফুলের অদ্ভূত সৌন্দর্য এবং ঘ্রাণ এই গাছকে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বা জাতীয় বাগানে জায়গা দিয়েছে। এই গাছটি প্রকৃতির দারুণ সহচর। অনেক পতঙ্গ ও পাখি এই ফুলের রেণু ও ফুল খেয়ে বাঁচে। গাছ যেহেতু অনেক বড় হয়, ফলে একটি বৃহৎ গাছ নানা প্রজাতির পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ ও অনেক বুনো প্রাণীর আবাসস্থলও। অনেকে এ গাছকে পবিত্র বৃক্ষ মনে করেন। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সব নতুন ও পুরনো নাগলিঙ্গম গাছের সুরক্ষা জরুরি। এর প্রাকৃতিক বিকাশও জরুরি। নগরের শোভা বাড়ানোর জন্য এ গাছ বেশি প্রয়োজন।
এই গাছ রোপণকারীদের জন্যে একটি সাবধানবাণী হলো, রাস্তার পাশে এই গাছ থাকা বেশ বিপজ্জ্নক কারণ হঠাৎ অনেক উঁচু থেকে এত বড় ভারী ফল কারো মাথায় পড়লে মৃত্যুও হতে পারে।