বার সাঙ্গা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সপুষ্পক ঔষধি বৃক্ষ

ফুল

বার সুঙ্গা

বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya koenigii (L.) Spreng., Syst. Veg. 2: 315 (1825). সমনাম : Bergera koenigii L. (1771), Chalcas koenigii (L.) Kurz (1875). ইংরেজি নাম: Curry Leaf, Curry Tree. স্থানীয় নাম: বার সাঙ্গা, গন্ধাল, করিয়াফুলি, ছোটকামিনী, গিরিনিম।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms বর্গ: Sapindales পরিবার: Rutaceae গণ: Murraya. প্রজাতি: Murraya koenigii.

ভূমিকা: বার সাঙ্গা, বার সুঙ্গা, গন্ধাল, করিয়াফুলি, ছোটকামিনী, গিরিনিম (বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya koenigii, ইংরেজি নাম: Curry Leaf, Curry Tree) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের মুরায়া  গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ।  এই প্রজাতি সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট, ছোট বৃক্ষ এটি।

আরো পড়ুন: কারিপাতা বা বারসুঙ্গার ভেষজ গুণ

বার সাঙ্গা-এর বর্ণনা:

বৃহৎ গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু। পত্র সচূড়পক্ষল, ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, বৃন্তক, বৃন্ত ২.৫-৪.০ সেমি লম্বা, পত্রক ১৫-২৭টি, একান্তর, ২-৮ x ১-৩ সেমি, স্পষ্টভাবে অপ্রতিসম, ঝিল্লিময় থেকে কাগজসদৃশ, ডিম্বাকার থেকে বল্লমাকার, গোড়া সূক্ষ্মাগ্র বা তির্যক, শীর্ষ দীঘাগ্র বা ভোঁতা, খাঁজযুক্ত, প্রান্ত বরাবর গ্রন্থিল-গোলাকার দস্তুর।

পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক, করিম্বসদৃশ প্যানিকল, অনেকপুষ্পর্ক, সর্বোচ্চ ৬০টি। পুষ্প কুড়িতে বেলনাকার, সুগন্ধি। বৃতি পিরিচ-আকৃতির, বৃত্যংশ ৫টি, গোড়ায় যুক্ত, ব-দ্বীপ আকার, আশুপাতী। পাপড়ি ৫টি, প্রান্তস্পর্শী, রেখাকারআয়তাকার, ৬-৮ X ১.০-১.৫ মিমি, স্কুল, সবুজাভ-সাদা।

পুংকেশর ১০টি, পুংদন্ড তুরপুনাকার, ৫-৭ মিমি লম্বা, রোমহীন, পরাগধানী পৃষ্ঠলগ্ন, উপবৃত্তীয়, ১ মিমি এর কম লম্বা, সবুজাভ। গর্ভাশয় আয়তাকার-ডিম্বাকার, শীর্ষে সামান্য সরু, ২-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড নিম্নভাগে সরু, গর্ভমুন্ডের নিচে চ্যাপ্টা, প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার, প্রকোষ্ঠ

১-২টি ডিম্বকযুক্ত। ফল ডিম্বাকার বা অর্ধগোলাকার বেরী, প্রায় ৯ x ১০ মিমি, ২-প্রকোষ্ঠী, পাকলে রক্ত-বেগুনি থেকে কালো, রসালো মন্ড সাদাটে, শ্লেষ্মসদৃশ, ১-২ বীজী। বীজ ডিম্বাকার-আয়তাকার, সবুজ, বীজপত্র গ্রন্থিযুক্ত। ফুল ও ফল ধারণ: ফেব্রুয়ারি-মে। [১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৮ [২]

আরো পড়ুন:  সুপারি গাছের ফল, পাতা ও শেকড়ের নানাবিধ ঔষধি প্রয়োগ

বার সাঙ্গা-এর আবাসস্থল ও চাষাবাদ:

এটি মূলত বন জঙ্গলের বৃক্ষ। বার সাঙ্গা আর্দ্র পত্রঝরা বনাঞ্চলে জন্মে। এই গাছ রোপণ করার জন্য পাকা বীজ দরকার এবং সেই বীজ সতেজ হতে হবে। যদি শুকনো অথবা কোঁকড়ানো ফল হয় তাহলে তা রোপনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। সম্পূর্ণ ফলটি রোপণ করা যায়, কিন্তু ফলের শাঁস ছাড়িয়ে নিয়ে যা স্যাঁতসেঁতে জায়গা কিন্তু ভেজা নয় এমন পাত্রে রোপণ করা সবচেয়ে ভালো। এছাড়া নতুন চারার জন্য কলম পদ্ধতিও ব্যবহার করা যায়।

বিস্তৃতি: কারী লিফ ভারত এবং শ্রীলংকার স্বদেশী। এরপর মায়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস এবং দক্ষিণ চীনে বিস্তৃত। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার বনাঞ্চলে বিস্তৃত।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ফল ভক্ষণীয়। পাতা এক ধরনের তীব্র গন্ধযুক্ত উদ্বায়ী তেল উৎপন্ন করে, যা সাবান সুগন্ধি স্থায়ীকরণে ব্যবহৃত হয়। কাঠ কৃষিজ যন্ত্রপাতি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। পাতা চূর্ণ হাড়ভাঙ্গা এবং ফুসকুঁড়িতে বহিভাগে প্রয়োগ করা হয় এবং পাতার সিদ্ধ ক্বাথ জ্বর ও সাপের কামড়ে ব্যবহৃত হয়।

পাতার থেতলানো ক্বাথ বমি বন্ধে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদের মূল হালকা বিরেচক এবং এর রস-কিডনি ব্যথায় ব্যবহৃত হয়। পাতা, বাকল এবং মূল ব্যাক্টেরিয়ারোধী এবং কোষবিষাক্ত করণের বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং টিউমার-রোধী কার্যকলাপ বিদ্যমান (Ghani, 2003). জাতিতাত্বিক ব্যবহার: তাজা পাতা ভারতীয় কারীর উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বার সাঙ্গা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বার সাঙ্গা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৮২-১৮৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  লেবু-এর ২২টি উপকারিতা ও প্রয়োগ

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.

 ৩. এম আমান উল্লাহ: প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮২-১৮৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!