শ্বেত চন্দন গাছের ষোলোটি ঔষধি ব্যবহার

শ্বেত চন্দন (বৈজ্ঞানিক নাম Santalum album) সান্টালাসি পরিবারের সান্টালুম গণের একটি ছোট, চিরহরিৎ, রোমহীন বৃক্ষ।  ১৫ থেকে ১৮ মিটার উঁচু হয়। শ্বেত চন্দনের পুষ্প সুগন্ধি, ক্রীমসদৃশ সাদা, পরবতীতে লাল এবং রক্ত-বেগুনি। শ্বেত চন্দন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

শ্বেত চন্দন এশিয়ার বাণিজ্যিক বৃক্ষ

এখানে শ্বেত চন্দনের ঔষধি ব্যবহার উল্লেখ করা হচ্ছে

১. জ্বরে: পিপাসা, শরীরে জ্বালা অথবা শুধু পিপাসা থাকলে চন্দন ঘষা আধ চা-চামচ থেকে এক চা-চামচ (বয়স এবং অবস্থা বিবেচনায়) কচি ডাবের জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে দুই-ই প্রশমিত হয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বরও কমে যায়; তবে সর্দির প্রকোপ বেশি থাকলে না দেওয়াই সমীচীন।

২. যখন পেনিসিলিনের আবিষ্কার হয়নি, তখন গণোরিয়ার (ঔপসর্গিক পুর্ব-মেহের) জ্বালা-যন্ত্রণা, পুজ পড়া ইত্যাদির প্রশমনে পাশ্চাত্য চিকিৎসক গোষ্ঠীর বিশেষ ঔষধই ছিল চন্দনের তেল এবং তার সঙ্গে আরও দুই-একটা জিনিষ মিশিয়ে ‘ইমালসান’ করে খেতে দেওয়া। এটাও হয়তো অনেক চিকিৎসকের মনে আছে যে, ফ্রান্স থেকে চন্দন তেল ভরা জিলোটিনের বটিকা আসতো, তার নাম ছিল Santal midi এটি সে সময়কার শ্রেষ্ঠ ঔষধ; আর ইউনানি সম্প্রদায় চিনির সঙ্গে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা করে খাঁটি চন্দনের তেল খেতে দিতেন, আর বৈদ্যকগোষ্ঠী এটিকে ব্যবহার করতেন অন্যান্য ভেষজের সঙ্গে আসব বা অরিষ্ট করে; তবে চন্দনের কাঠেরই বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।

এখানে আর একটু, বলে রাখি ঢেঁকিতে ছাটা চাল ধুয়ে সেই জলে চন্দন ঘষে ওর সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খাওয়ালে যে কোনো কারণে প্রস্রাবে জ্বালা অথবা আটকে যাওয়া, এমনকি প্রস্রাবেও উপকার পাওয়া যায়।

৩. নারীর ক্ষেত্রে:  যাঁদের ঋতুস্রাবে দুর্গন্ধ, পুজ বা মজ্জাবৎ স্রাব হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে চন্দন ঘষা অথবা ঐ কাঠের গুঁড়ো গরম জলে ভিজিয়ে রেখে সেটা ছেঁকে নিয়ে দুধে মিশিয়ে খেতে হয়।

আরো পড়ুন:  কফি-এর চারটি প্রজাতির প্রজাতির পরিচয়

৪. অপষ্মার রোগে (Epilepsy): প্রাচীন বৈদ্যগণ ঔষধের অনুপান হিসেবে চন্দন ঘষা ব্যবহার করেন; তবে যদি রোগের প্রাবল্য না থাকে, দেখা যায় যে শুধু, চন্দন ঘষা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেই অনেকটা ভাল থাকেন।

৫. বমিতে: আমলকির রস অথবা শুকনো আমলকি ভিজানো জলে চন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।

৬. শীতল পানীয়:  গ্রীষ্মকালে শরীরে স্নিগ্ধতা আনার জন্য ঘষা চন্দন ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়; এটাতে পেটও ঠাণ্ডা থাকে।

৭. হিক্কায়:  চালধোয়া জলের সঙ্গে চন্দন ঘষা মিশিয়ে ঐ জল দু’ ঘণ্টা অন্তর একটু একটু করে খাওয়ালে হিক্কা বন্ধ হয়। এমন কি দুধে ঘষে (ছাগদগ্ধ হলে ভালো হয়) নস্য নিলেও হিক্কা বন্ধ হয়।

৮. বসন্তরোগে:  পিপাসা থাকলে মৌরীভিজান জলে চন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিয়ে থাকেন এ রোগের স্পেশালিষ্টরা।

৯. বিষফোড়ায়:  ঘষা চন্দনে গোল মরিচ ঘষে সেটা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর ৩।৪ বার লাগালে ব্যথা কেটে যায়।

১০. অস্বাভাবিক ঘমে:  ঘাম বেশি হলে এই ঘষা চন্দনের সঙ্গে বেনামূল বেটে একট, কর্পূর মিশিয়ে গায়ে মাখলে উপকার হবে।

১১. ঘামাচি:  সাদা চন্দন ঘষার সঙ্গে হলুদবাটা ও অল্প একটু কর্পূর মিশিয়ে অথবা চন্দন ও দুরহরিদ্রা একত্রে ঘষে মাখলে মরে যায়।

১২. মাথা ধরা: যখন মাথা ধরার ঔষধ বেরোয়নি, তখন চন্দন ঘষার সঙ্গে একটু কর্পূর মিশিয়ে কপালে লাগাতে হতো।

১৩. শরীরে বসন্ত দেখা দিলে: হেলেঞ্চা (Enhydra luctuans) শাকের রসে শ্বেতচন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিলে গুটি শীঘ্র বেরিয়ে পড়ে ও তার ভয়াবহতা চলে যায়।

১৪.  নাভিপাকা:  শিশুদের নাভি পাকলে শ্বেত চন্দন ঘষে পুরু করে লাগিয়ে দিলে জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায় এবং সারেও।

১৫. শিশুদের মাথায় ঘা:  ২ বা ৩ মাসের শিশুর মাথায় এক ধরণের চাপড়া ঘা হয় সে ক্ষেত্রে শুধ, শ্বেতচন্দন ঘষা লাগিয়ে দিলে অচিরেই সেরে যায়।

আরো পড়ুন:  ক্ষেতরাঙ্গা দক্ষিণ এশিয়ার বহুবর্ষজীবী ভেষজ বিরুৎ

১৬.শূল রোগে: চন্দন ঘষা এবং বেনামুলের ক্বাথ (প্রত্যেকবার ১০ থেকে ১২ গ্রাম হিসাবে) ব্যবহার করলে বুকের আকস্মিক শূল রোগ (বায়ুজন্য) উপশমিত হয়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Santalol 89-96%. (b) Allo-hydroxyproline. (c) Anthocyanins. (d) Phenols. (e) Tannins. (f) Essential oil.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৮২-৮৪।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj

Leave a Comment

error: Content is protected !!