চালকুমড়া এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি

সবজির প্রজাতি

চালকুমড়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Benincasa hispida (Thunb.) Cogn. in DC., Monog. Phan. 3: 513 (1881). সমনাম: Cucurbita hispida Thunb. (1784), Benincasa cerifera Savi (1818). ইংরেজি নাম: Wax Gourd, White Gourd. স্থানীয় নাম: চালকুমরা বা চালকুমড়া বা জালিকুমড়া
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants শ্রেণী: Eudicots উপশ্রেণি: Rosids বর্গ: Cucurbitales পরিবার: Cucurbitaceae উপপরিবার: Cucurbitoideae গণ: Benincasa প্রজাতি: Benincasa hispida (Thunb.)

ভূমিকা: চালকুমড়া বা চালকুমরা বা জালিকুমড়া বা জালি (বৈজ্ঞানিক নাম: Benincasa hispida) কিউকারবিটাসি পরিবারের বেনিনকাসা গণের একটি লতানো সপুষ্পক উদ্ভিদ সবজি প্রজাতি। এদের কাঁচা ও পাকা জনপ্রিয় সবজিরূপে খাওয়া হয়। মোরব্বা তৈরির জন্যও এটি জনপ্রিয়, তবে মোরব্বায় একটু বেশি পরিপক্ক ফলের ব্যবহার হয়।

বিবরণ: চালকুমড়া সবজি গাছ দৃঢ়, আরোহী, শক্ত রোমশ যুক্ত বীরুৎ। কান্ড শাখান্বিত, বিস্তৃত। আকর্ষ সরু। পত্র বৃক্কাকৃতি গোলাকার, ১০-২৫ x ১০-২৫ সেমি, গভীর ভাবে তাম্বুলাকার, উপরের পৃষ্ঠ অসৃমণ, নীচের পৃষ্ঠ শক্ত রোমযুক্ত। ৫-৭ খন্ডিত, প্রান্ত তরঙ্গিত, দন্তুর, শিরা খররোমাবৃত, বৃন্ত শক্ত, ৫-২০ সেমি হলদে বাদামী, রোমশ বা অতিরোমশ। উদ্ভিদ সহবাসী।

পুংপুষ্প একল, বৃন্ত ৫-১৫ সেমি লম্বা, ঘন রোমশ। মঞ্জরীপত্র ডিম্বাকার বা প্রশস্ত দীর্ঘায়ত, ৬-১৫ x ৫-১০ মিমি, শীর্ষ সূক্ষাগ্র। বৃতিনল ১২-১৫ মিমি, ব্যাস যুক্ত, ঘন রোমশ, খন্ড ভল্লাকার, ৮-১২ x ৩-৫ মিমি। দলমন্ডল হলুদ, খন্ড ৩-৬ x ২.৫-৩.৫ সেমি, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ। পুংকেশর ৩টি, মুক্ত, বৃতিনলের অভ্যন্তরে নিহিত, পুংদন্ড শক্ত রোম যুক্ত, ২-৩ সেমি লম্বা, মূলীয় অংশ প্রসারিত, পরাগধানী ৪ মিমি লম্বা, অর্ধ-ত্রিখন্ডিত। স্ত্রীপুষ্প একল, বৃন্ত ৫ সেমি লম্বা, হলদে বাদামী রোম যুক্ত। গর্ভাশয় ডিম্বাকার বা বেলনাকার, কোমল রোম যুক্ত, গর্ভদন্ড ২-৩ সেমি লম্বা, গর্ভমুন্ড ৩ টি, ১২-১৫ মিমি লম্বা, দ্বি-ওষ্ঠাকার।

এদের ফল ৫০-৬০ x ১০-১৫ সেমি, বেরি সদৃশ, রসালো, তরুণ অবস্থায় রোমশ, পরিপক্ক অবস্থায় মোমতুল্য সাদা। বীজ চাপা, ডিম্বাকার, হলদে সাদা, কিনারা প্রশস্ত, ১০-১২x ৫-৭ মিমি লম্বা ও ২ মিমি পুরু। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে থেকে নভেম্বর মাসে।

আরো পড়ুন:  আলু বোখারা রোজাসি পরিবারের প্রুনুস গণের ভেষজ গুণে ভরা রসালো ফল

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (McKay, 1930).

বিস্তৃতি: চালকুমড়া পৃথিবীর উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলীয় দেশসমূহে জন্মে। লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারতবর্ষের সর্বত্র ব্যাপক বিস্তৃত। চীন দেশে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে Benincasa hispida এর চাষাবাদ চলছে।

চালকুমড়ার অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

তরুণ ও পরিপক্ক ফল সবজিরূপে খাওয়া হয়। পরিপক্ক ফল টুকরা করে কেটে চিনির সাথে মিশিয়ে ক্যান্ডি তৈরি করা হয়। বীজ ভেজে খাওয়া হয়। ফল রক্তস্রাবরোধী, টনিক, পুষ্টিকারক ও মূত্রবর্ধক রূপে বিবেচিত। অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সমূহের রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে ও যক্ষ্মারোগ নিরাময়ের জন্য উপকারী।

চালকুমড়ার অবলেহ তিন মাস ধরে নিয়মিত খেলে মুখমণ্ডলে একটা তেজস্বী ভাব আসে, হজম শক্তি বাড়ে। এ ছাড়াও এই অবলেহ খেলে পিত্তজ্বর, তৃষ্ণা, শরীর জ্বালা করা, দুর্বলতা, গা-বমি করা বা বমি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, হার্টের গোলমাল, ক্ষয়রোগ, গলা ভেঙে যাওয়া, স্ত্রীরোগ সারে। এই অবলেহ খুব পুষ্টিকর। নিয়মিত খেলে শরীরে বল হয়। বিশেষ করে শিশুদের ও বৃদ্ধদের পক্ষে শীতকালে তিন মাস ধরে এটি খাওয়া খুবই ভাল। এতে হার্ট ও ফুসফুস ভাল থাকে। মেধারও পুষ্টি হয়। সকালে ও সন্ধ্যেবেলায় এক টেবিল চামচ করে খেলেই উপকার হবে।[২] চালকুমড়ার ভেষজ গুনাগুণ এবং অবলেহ ও মোরব্বা তৈরি সম্পর্কে জানতে পড়ুন

চালকুমড়া বা জালিকুমড়ার ১১টি ঔষধি গুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: উত্তর ভারতে ফলের রসালো অংশ উপযুক্ত আকারে কেটে চিনির জলের সাথে সিদ্ধ করে ‘পিথে’ তৈরি করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ফলের রসালো অংশ দ্বারা সুপ তৈরি করা হয়। চীনে পদ্ম ফুলের বীজ, মাশরুম ও বাঁশের কচি বিটপের সাথে ফল একত্র করে রান্না করা হয়।

চাষ পদ্ধতি: চালকুমড়া সবজি গাছের বংশ বিস্তার ঘটে বীজে। বাংলাদেশের সর্বত্র বাড়ির বাগান সমূহে এই উদ্ভিদ চাষ করা হয়। পরিমিত শুষ্ক অঞ্চল, যেখানে মাটিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব পদার্থ বিদ্যমান সেসব স্থানে ভাল জন্মে।

আরো পড়ুন:  আকনাদি বা দই পাতা বা মাকান্দি বা আকন্দি লতার সাতটি ভেষজ গুণ

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে (আগস্ট ২০১০) চালকুমড়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র সংকেটর কারণ নেই এবং এটি বাংলাদেশের বর্তমান মান অবস্থায় আশংকা মুক্ত (lc)। এটি বাংলাদেশে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন।

তথ্যসূত্রঃ

১. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৩-৩০৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা, ৮৬-৯০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!