জালযামানি উদ্ভিদের ১০টি ঔষধি ব্যবহার

এর বৈজ্ঞানিক নাম: Cocculus hirsutus . পরিবার Menispermaceae. এই পরিবারের ২০টি প্রজাতি ভারতবর্ষে পাওয়া যায়।

রোগ প্রতিকার:

১. এর প্রধান কাজ urinary system-এর উপর- প্রস্রাবের সময়, যেকোনো কারণেই হোক, যদি জ্বালা ও জ্বালাবোধ হয়, সেক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ গ্রাম কাঁচা পাতাকে থেতো করে আধ পোয়া আন্দাজ জলে সেটাকে চটকে ছেকে অল্প চিনি দিয়ে সকালে বা বিকালে খেলে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকে না; এটা গণোরিয়াকেও উপশমিত করে। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা চলে।

২.প্রস্রাবের পূর্বে বা পরে কিছু ক্ষরতি হতে থাকলে (লালামেহ বা শুক্রমেহ রোগে spermatorrhoea) এর পাতা উপরিউক্ত নিয়মে সরবত করে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ব্যবহারবিধি সহজ করতে গেলে এটাকে শুকিয়ে গুড়ো করে ৬ বা ৮ গ্রেণ (৩ থেকে ৪ রতি) মাত্রায় সকালে বা বিকালে সুবিধে মতো সময়ে একবার দুধ বা জল দিয়ে খেতে হয়; এটাতে দাস্তও ভাল পরিষ্কার হয়।  

৩. স্বপ্নদোষ: এই পাতার সরবত বা গুড়ের সঙ্গে ৪ থেকে ৫ গ্রেণ কাবাবচিনির গুঁড়া বা ২ থেকে ১ দানা কর্পূর মিশিয়ে দুধের সঙ্গে খেলে এটার হাত থেকে একেবারে পরিত্রাণ পাওয়া না গেলেও সীমিত থাকে। এটা বৃদ্ধ বৈদ্যের অভিজ্ঞতা।

৪. শুক্র তারল্য এবং ক্ষীণতায়: পূর্বোক্ত নিয়মে একটু বেশিদিন খেতে হয়।

৫. রক্ত দৃষ্টিতে: সালসার (Sarsaparila) ন্যায় কাজ করে। এই গাছের মূল এবং অন্যান্য রক্ত-পরিষ্কারক ওষধির সঙ্গে গ্রহণ করে থাকেন ভারতের অন্যান্য প্রদেশের চিকিৎসকগণ। এছাড়া পুরাতন বাত রোগের ক্ষেত্রেও এই মূলের উপযোগিতা আছে।

৬. শুক্র একজিমায় (Dry Eczema), বাহ্য প্রয়োগ (External uses): যে একজিমায় রস গড়ায় না, অথচ চুলকায়, সেক্ষেত্রে এটাকে জলে রগড়ে ঘন দইয়ের মতো করে লাগিয়ে থাকেন কোনো কোনো প্রদেশের সাধারণ লোক।

৭. চোখের পার্শ্বে ক্ষতে: জালযামানি গাছের পাতার দইয়ের ফোঁটা দিলে আরাম হয়।

আরো পড়ুন:  কেলেলতা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ প্রজাতি

৮. চুলকনায়: এটা শিশুদের হলে জালযামানি গাছের পাতার দুই গায়ে লাগালে চুলকণা কমে যায়, তবে দুপুরের দিকে (স্নানের পুর্বে) লাগানো ভাল, নইলে দুর্বল শরীরে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

৯. বিষ ফোড়ায়: জ্বালা বা প্রদাহে জালযামানি গাছের পাতা বেটে ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে জ্বালা ও প্রদাহ দুয়েরই উপশম হয়; আবার কোনো কোনো অঞ্চলে আগুনে পোড়ায় এটার দই লাগিয়ে থাকেন সাময়িক জ্বালা নিবৃত্তির জন্য, কারণ ও ক্ষেত্রে শৈত্য প্রয়োগ যেমনি নিষিদ্ধ তেমনি উষ্ণবীর্য, শীতবিপাক স্নেহ ভিন্ন অন্য কিছু প্রয়োগও ঠিক নয়।

১০. জিহ্বা ক্ষতে: এই গাছের মূলটা ঘষে অথবা মূল বেটে ঘিয়ের সঙ্গে পাক করে জিভে লাগালে ক্ষত সেরে যায়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Alkaloids viz., coclaurine, trilobine, isotrilobine, menisarine, tetraadrine.

(b) Quaternery base viz, cocsamine, 10-ethoxy-1, 2, 9-trimethoxyaporphine.

(c) Alkaloid glycosides.

(d) Sterols.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৮০-১৮২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!