হাসান ফকরী বাংলাদেশের একজন কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক

হাসান ফকরী (জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৯৫২) বাংলাদেশের একজন সাম্যবাদী কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারাকে জনগণের জীবনের বহু দিকে নিয়ে গেছেন। তাঁকে আমাদের মতো অনেকেই শ্রদ্ধা করেন। আমার এখন তাকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে। তার কথা মনে হলে কিছু সাম্যবাদীর মুখের ছায়া চোখের দিগন্তে ভেসে ওঠে যারা জনগণের জন্য অবিশ্রাম লড়াই করছেন।  

হাসান ফকরী সারা জীবন নির্ভীক ছিলেন, কারো করুণাপ্রার্থী তিনি ছিলেন না।। যৌবনের উত্তাল দিনগুলোতেও নিশ্চয় নির্ভীকতার দরুণ সাম্যবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হতে পেরেছিলেন। যে সময়ে তরুণেরা টাকা নামক নোংরা বস্তুটির পেছনে লাটিমের মতো দিবারাত্র ঘুরছিল সেই সময় হাসান ফকরী সমতার গান গাইতে গাইতে হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন। আর সেই কলম আমাদেরকে উপহার দিয়েছে নানান নাটক, গান, কবিতা আর প্রবন্ধ।

হাসান ফকরী যখন শ্রেণিযুদ্ধের জন্য জনমত তৈরির চেষ্টা করতেন তখন দেখেছি কিছু ভুয়া-কমিউনিস্ট আবোল-তাবোল বকে কর্মীদের সুবিধাবাদ আর সংশোধনবাদের ভিতরে নিক্ষেপ করতে চাইছে। যখন তিনি শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব কায়েমের পক্ষে কথা বলছেন তখন দেখেছি সেসব ভুয়া-কমিউনিস্টের প্রলেতারিয় একনায়কত্ব ও সর্বহারা শ্রেণির ক্ষমতা দখলের কথা শুনলেই হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। সেইসব হাঁটু-কাঁপা ভুয়া-কমিউনিস্টদের থেকে নানাভাবেই আলাদা ছিলেন হাসান ফকরী। কর্মসূচী, জনমত ও গণলাইনকে তিনি সর্বদাই গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে সেসব কাজ হয়ত যথাযথভাবে করতে পারেননি।

ইউটিউবে দেখুন হাসান ফকরী কবিতা

গীতিকার হিসেবে হাসান ফকরী

মজার বিষয় তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কাজী হায়াৎ পরিচালিত চাঁদাবাজ চলচ্চিত্রটি ১৯৯৩ সালে বিএনপির দুঃশাসনামলে মুক্তি পায়, এবং পরের বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষিত হলে এই সিনেমার মুক্তিযোদ্ধা কোথায় তুমি গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার লাভ করেন হাসান ফকরী। শ্রেষ্ঠ সুরকার ও শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কারও জিতে নেন গানটির সুরকার ও শিল্পী আজাদ রহমান।

হাসান ফকরীর লেখালেখির কারণে ১৯৬৯ থেকেই সম্পর্ক প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, জনপ্রিয় সুরকার আজাদ রহমানের সাথে পরিচিতি ঘটে। ১৯৭৫ সাল থেকে প্রায় ৩৫ বছর সার্বক্ষণিক ভাবে কাজ করেছেন আজাদ রহমানের সাথে।

তাঁর কয়েকটি গ্রন্থের নাম হলো:

কবিতা: মুঠো মুঠো কান্না (১৯৭০), হাসান ফকরীর কবিতা ও গান (২০০২); দ্রোহের পাঁচালি (২০১৭), দেশটা কী তোর বাপের (২০২০) এবং নির্বাচিত কবিতা (২০২২)।

নাটক: বাঁচতে চাই (১৯৭২), এপোয়েন্টমেন্ট লেটার (১৯৭৫), সারেঙ লঞ্চ ঘোরাও (১৯৮০), তানোর এখন সারা দেশ, (১৯৮০); ক্রাশ ফারাক্কা (১৯৭৬), একখণ্ড বাংলাদেশ (১৯৭২), রাক্ষুস সাবধান (১৯৭৭), খর বায়ু বয় (১৯৮৩), যদি এমন হতো (১৯৮২), ভোটের ভ্যাট (১৯৮৬)

কাব্যনাট্য: প্রেয়সীরা চায় রক্তশাড়ী (১৯৭৬) একুশের গান গা’ক মেশিনগান, (১৯৭৪), ঈদ পাখিটার মাংস খাবো (১৯৭৫), সব শতাব্দীর ঈশ্বর আমি (১৯৭৫)।

প্রবন্ধ ও গবেষণা: প্রকৃত শিক্ষা কী (১৯৭৬), প্রগতিশীল সাহিত্য ও শিল্পের সংকট এবং সম্ভাবনা (১৯৯৪), পলিটিকস বনাম পলিট্রিকস, (১৯৯৯)। ধর্ম ও ঈশ্বর অস্বীকারে বাধা কোথায় (২০০৭) এবং এসো বিদ্রোহ করি (২০০৯)।

হাসান ফকরীর নাটক প্রসঙ্গে

১৯৭৫ সালে হাসান ফকরী লিখেছেন সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ বিরোধী নাটক ক্রাশ ফারাক্কা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দ্বন্দ্ব ও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের নানারকম ষড়যন্ত্রকে তুলে ধরা হয়েছিল নাটকে। মুন্সিগঞ্জ রিকাবী বাজারে কাদামাটি সাহিত্য সংস্কৃতি গোষ্ঠী প্রথম মঞ্চস্থ করে সেই নাটক। পরে ১৯৭৭ সালে মে দিবসে রাজধানীর ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতির মিলনায়তনে বেশ ক’টি শ্রমিক, ছাত্র- যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে মঞ্চস্থ হয়। তখন খুব আলোড়ন জাগিয়েছিল ক্রাশ ফারাক্কা।

এরকম এক মানুষ হাসান ফকরীকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি সবটুকু উজাড় করে এদেশের শ্রমিক-কৃষকদের জন্য আজীবন কাজ করে যাবেন এই আস্থা আমাদের আছে।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

error: Content is protected !!