ক্ষমতা দখল করতে হবে বলশেভিকদের

রাশিয়া সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক শ্রমিক পার্টির (বলশেভিক) কেন্দ্রীয় কমিটি, পেত্রগ্রাদ ও মস্কো কমিটির নিকট চিঠি

উভয় রাজধানীর শ্রমিক ও সৈনিক প্রতিনিধিদের সোভিয়েতে সংখ্যাধিক্য পাওয়ায় বলশেভিকরা স্বহস্তে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিতে পারে এবং নেওয়া উচিত।

পারে, কেননা জনগণকে টেনে আনা, প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ জয় করা, তাকে চূর্ণ করা, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তা ধরে রাখার পক্ষে উভয় রাজধানীতে জনগণের বিপ্লবী অংশগুলির সক্রিয় সংখ্যাধিক্যই যথেষ্ট। কেননা, তৎক্ষণাৎ গণতান্ত্রিক শান্তির প্রস্তাব দিয়ে, তৎক্ষণাৎ কৃষকদের জমি দিয়ে, কেরেনস্কি কর্তৃক বিপর্যন্ত বিধবন্ত গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনরুদ্ধার করে বলশেভিকরা এমন সরকার গড়বে যা কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না।

জনগণের অধিকাংশ আমাদের পক্ষে। সেটা দেখা গেছে ৬ মে থেকে ৩১ আগস্ট এবং ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, দীর্ঘ ও দুরূহ ঘটনাপ্রবাহে। রাজধানী শহরগুলির সোভিয়েতে সংখ্যাধিক্য হলো আমাদের পক্ষে জনগণের চলে আসার ফলশ্রুতি। সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি ও মেনশেভিকদের দোলায়মানতা, তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিকতাবাদীদের শক্তিবৃদ্ধিও একই বিষয় সপ্রমাণ করে।

গণতান্ত্রিক সম্মেলন (১) বৈপ্লবিক জনগণের অধিকাংশের প্রতিনিধি নয়, ওটা শুধু আপসপরায়ণ পেটি-বুর্জোয়া শীর্ষাংশ। নির্বাচনের তথ্য দিয়ে নিজেকে প্রতারিত হতে দেওয়া চলে না। ব্যাপারটা নির্বাচন নিয়ে নয়। পেত্রগ্রাদ ও মস্কোর নগর কাউন্সিল নির্বাচনের সঙ্গে সোভিয়েতগুলির নির্বাচনের তুলনা করে দেখুন। মস্কোতে নির্বাচন আর ১২ আগস্ট মস্কো ধর্মঘটের তুলনা করুন। জনগণকে যারা চালিত করছে সেই বিপ্লবী অংশগুলির অধিকাংশ সম্পর্কে এই হলো বাস্তব তথ্য। গণতান্ত্ৰিক সম্মেলন প্রবঞ্চিত করছে কৃষকদের। এটা তাদের শান্তি বা জমি কিছুই দিচ্ছে না।

কেবল বলশেভিক সরকারই কৃষকদের তুষ্ট করবে।

 * * *

কেন ঠিক এখনই বলশেভিকদের ক্ষমতা দখল করতে হবে ?

কারণ পেত্রগ্রাদের আসন্ন আত্মসমর্পণের প্রেক্ষিতে আমাদের ঝুঁকি শতগুণ বাড়বে।

আর কেরেনস্কি অ্যান্ড কোং-র হাতে ফৌজের নেতৃত্ব বিধায় পেত্রগ্রাদের আত্মসমপর্ণে বাধা দেবার শক্তি আমাদের নেই।

আর সংবিধান সভার ‘অপেক্ষায়’ থাকাও চলে না, কেননা পেত্রগ্রাদের ওই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে কেরেনস্কি অ্যান্ড কোং সেই সভা যে-কোনো সময় বানচাল করতে পারে। ক্ষমতা দখল করে কেবল আমাদের পার্টিই সংবিধান সভার আহবান নিশ্চিত করতে পারে। অতঃপর এটি অন্যান্য পার্টিকে গড়িমসির দোষে অভিযুক্ত করবে এবং সেই অভিযোগ সপ্রমাণ করতে পারবে।

আরো পড়ুন:  আমাদের বিপ্লবের কথা

ব্রিটিশ ও জার্মান সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে পৃথক চুক্তিতে বাধা দেওয়া উচিত এবং তা সম্ভব, তবে কেবল দ্রুত ব্যবস্থা নিলেই।

মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারিদের দোলায়মানতায় জনগণ  ক্লান্ত। রাজধানী দুটিতে কেবল আমাদের বিজয়ই কৃষকদের আমাদের সপক্ষে টেনে আনবে।

 * * *

প্রশ্নটা অভ্যুত্থানের ‘দিন’ নিয়ে, সঙ্কীর্ণ অর্থে তার ‘মুহুর্ত’ নিয়ে নয়। যারা শ্রমিক ও সৈনিকদের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সাধারণ ইচ্ছাই কেবল তা নির্ধারিত হবে।

প্রশ্নটা হলো এই যে আমাদের পাটি এখন কার্যত নিজেদের কংগ্রেস পাচ্ছে গণতান্ত্ৰিক সম্মেলনেই এবং এই কংগ্রেসকে (চাক বা না চাক) বিপ্লবের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে।

প্রশ্নটা হলো পার্টির কাছে কর্তব্যটা পরিষ্কার করে তোলা। এখনকার অবশ্য কর্তব্য হবে পেত্রগ্রাদ ও মস্কোতে (তার বিভাগীয় অঞ্চল সমেত) সশস্ত্র অভ্যুত্থান, ক্ষমতা দখল, সরকার উচ্ছেদ। সংবাদপত্রে ততটা প্রকাশ না করে এজন্য কীভাবে আন্দোলন সম্ভবপর তা-ই ভাবতে হবে।

অভ্যুত্থান সম্পর্কে মার্কাসের উক্তি : ‘অভ্যুত্থান হলো একটা শিল্পকলা’ (২), ইত্যাদি স্মরণীয় ও বিচার্য ।

‘আনুষ্ঠানিক’ সংখ্যাধিক্যের জন্য অপেক্ষা করা বলশেভিকদের পক্ষে বাতুলতা হবে: কোনো বিপ্লবই তার অপেক্ষা করে না। কেরেনস্কি অ্যান্ড কোং ও তার অপেক্ষায় নেই এবং তারা পেত্রগ্রাদের আত্মসমর্পণের আয়োজন করছে। ‘গণতান্ত্রিক সম্মেলনের’ করুণ দ্বিধাই পেত্রগ্রাদ ও মস্কোর শ্রমিকদের সহ্যের বাঁধ ভাঙবে ও ভাঙছে! এখন ক্ষমতা দখল না করলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না ।

কোনো শাসনযন্ত্র নেই? একটি শাসনযন্ত্র আছে: সোভিয়েতগুলি এবং গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলি। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ঠিক এখনই, ব্রিটিশ ও জার্মানদের মধ্যে পৃথক শান্তিচুক্তির প্রাক্কালে, আমাদের পক্ষেই। ঠিক এখনই সমস্ত জাতির কাছে শান্তির প্রস্তাব দেওয়া জয়লাভেরই নামান্তর।

একইসঙ্গে মস্কো ও পেত্রগ্রাদে (কে শুর করবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন কি মস্কোও শুরু করতে পারে) ক্ষমতা দখল করে আমরা অবশ্যই এবং নিঃসন্দেহে জয়লাভ করব।

ন, লেনিন

টিকাঃ

১. গণতান্ত্রিক সম্মেলন (সারা-রাশিয়া গণতান্ত্রিক সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয় ১৯১৭ সালের ১৪-২২ সেপ্টেম্বর (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর) পেত্রগ্রাদে। মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারিদের আহত এই সম্মেলনে যোগ দেয় দেড় হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি। সমাজতান্ত্ৰিক বিপ্লব পরিপক্ক করে তোলার অননুকূল জনমতকে হতোদ্যম করা এবং রাশিয়ায় সংবিধান প্রথা চাল হতে চলেছে এটা দেখানোর জন্য গণতান্ত্রিক সম্মেলন একটি প্রাক-পার্লামেণ্ট (প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী কাউন্সিল) গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কার্যত, অস্থায়ী সরকারের গৃহীত আইন অনুসারে এই প্রাক-পার্লামেণ্ট একটি উপদেষ্টা সংস্থায় পর্যবসিত হয়েছিলো।

আরো পড়ুন:  শ্রমিক, সৈনিক এবং কৃষকদের প্রতি

২. দ্রষ্টব্য: ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস ৷ ‘জার্মানিতে বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব’, ১৭ অধ্যায়।

১৯১৭ সালের ১২-১৪ (২৫-২৭) সেপ্টেম্বরে লিখিত

৩৪ খণ্ড ২৩৯-৪১ পৃঃ

Leave a Comment

error: Content is protected !!