শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম

সভাপতি মাও সেতুং-এর উদ্ধৃতি

২. শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম

*** শ্রেণি সংগ্রাম – কতকগুলো শ্রেণি জয়লাভ করে, আর কতকগুলো বা ধ্বংস হয়। এটাই ইতিহাস, এটাই হাজার হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, এই দৃষ্টিকোণের বিপক্ষে দাঁড়ানোই হচ্ছে ঐতিহাসিক ভাববাদ। “ভ্রম ত্যাগ করো, সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হও” (১৪ আগস্ট, ১৯৪৯)

*** শ্রেণি সমাজে, প্রত্যেকেই একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির সদস্য হিসেবে বাস করে, তাই ব্যতিক্রমহীনভাবে প্রত্যেক প্রকারের চিন্তাধারার উপর শ্রেণির ছাপ থাকে। অনুশীলন সম্পর্কে (জুলাই ১৯৩৭)

*** সমাজের পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে প্রধানত সমাজের ভেতরকার দ্বন্দ্বের বিকাশ, অর্থাৎ উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং নতুন ও পুরাতনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব; এই সব দ্বন্দ্বের বিকাশই সমাজকে সামনে ঠেলে দেয় এবং নতুনের দ্বারা পুরনো সমাজকে বদলাবার প্রেরণা দেয়। দ্বন্দ্ব সম্পর্কে, আগস্ট ১৯৩৭

*** কৃষকদের প্রতি জমিদারশ্রেণির নিষ্ঠুর অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক উৎপীড়ন জমিদার শ্রেণির শাসনের বিরুদ্ধে বারংবার বিদ্রোহ করতে কৃষকদের বাধ্য করেছিলো। … … চিনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কেবলমাত্র এই ধরনের কৃষকদের শ্রেণিসংগ্রাম, কৃষক বিদ্রোহ এবং কৃষক যুদ্ধই হলো ঐতিহাসিক বিকাশের প্রকৃত চালিকা-শক্তি। চিনা বিপ্লব ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টি, ডিসেম্বর ১৯৩৯

*** চূড়ান্ত বিশ্লেষণে জাতীয় সংগ্রাম হচ্ছে শ্রেণিসংগ্রামেরই একটা সমস্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে কেবলমাত্র প্রতিক্রিয়াশীল শাসক চক্রই নিগ্রোদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তারা কোনো ক্রমেই শ্রমিক, কৃষক, বিপ্লবি বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য প্রগতি-ভাবাপন্ন লোকদের নিয়ে গঠিত শ্বেতাঙ্গদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্ণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে মার্কিনী নিগ্রোদের ন্যায্য সংগ্রামের সমর্থনে বিবৃতি, ৮ আগস্ট, ১৯৬৩

*** জনগণকে সংগঠিত করাটা আমাদের উপর নির্ভর করে। চিনের প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের উৎখাত করার জন্য জনগণকে সংগঠিত করা নির্ভর করে আমাদের উপর। প্রতিটি প্রতিক্রিয়াশীল বস্তুই এক, তাকে আঘাত না করলে সে পড়বে না। এটা যেন ঝাড়ু দেবার মতো, ঝাড়ু না দিলে ধুলোও নিজ থেকে সরে যাবে না। জাপানবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের পরের পরিস্থিতি ও আমাদের নীতি, ১৩ আগস্ট, ১৯৪৫

*** শত্রু নিজ থেকে বিলুপ্ত হবে না। কি চিনের প্রতিক্রিয়াশীলরা, কি চিনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হামলাকারী শক্তি, কেউই আপন ইচ্ছায় ইতিহাসের মঞ্চ থেকে নেমে যাবে না। বিপ্লব শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাও (৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮)

*** বিপ্লব কোনো ভোজসভা নয়, বা প্রবন্ধ রচনা কিংবা চিত্র অংকন অথবা সূচিকর্মও এটা নয় । এটি এতো সুমার্জিত, এতো ধীর-স্থির ও সুশীল, এতো নম্র, এতো দয়ালু, বিনীত, সংযত ও উদার হতে পারে না ।বিপ্লব হচ্ছে একটি অভ্যুত্থান- উগ্রপন্থী প্রয়োগের কাজ, যার দ্বারা এক শোষিত শ্রেণি, অন্য শোষক শ্রেণিকে উত্‍খাত করে। হুনান কৃষক আন্দোলনের তদন্ত রিপোর্ট (মার্চ, ১৯২৭)

*** চিয়াং কাইশেক জনগণের কাছ থেকে ক্ষমতা ও লাভের প্রতিটি বিন্দু পর্যন্ত কেড়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা? আমাদের নীতি হচ্ছে আঘাতের প্রতি আঘাত, প্রতি ইঞ্চি ভূমির জন্য লড়াই করা। আমরা চিয়াং কাইশেকের পদ্ধতি অনুসারে কাজ করি। চিয়াং কাইশেক সর্বদা জনগণের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেবার অপচেষ্টা করে, তার বাম হাতে একটা অসি, ডান হাতে আর একটা। তার পদ্ধতি অনুসারে আমরাও অসি ধারন করি। … … এখন চিয়াং কাইশেক তার অসিতে ধার দিচ্ছে, অতএব, আমাদেরও অবশ্যই অসিতে শান দিতে হবে। জাপানবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের পরের পরিস্থিতি ও আমাদের নীতি, ১৩ আগস্ট, ১৯৪৫

আরো পড়ুন:  রাজনৈতিক দল কী, কাকে বলে ও কেন প্রয়োজন

*** কারা আমাদের শত্রু? কারা আমাদের বন্ধু? এটাই হলো বিপ্লবের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। চীনের অতীতের সমস্ত বিপ্লবী সংগ্রামগুলো কেন এত অল্প সাফল্য অর্জন করেছে, তার মূল কারণ হচ্ছে, প্রকৃত শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য প্রকৃত বন্ধুদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারা। বিপ্লবী পার্টি হচ্ছে জনসাধারণের পথপ্রদর্শক, বিপ্লবী পার্টি যখন তাঁদের ভ্রান্ত পথে চালিত করে, তখন কোনো বিপ্লবই সার্থক হতে পারে না। আমাদের বিপ্লবকে আমরা ভ্রান্ত পথে চালিত করবো না এবং অবশ্যই সফল হবো, এ বিষয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রকৃত শত্রুদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে প্রকৃত বন্ধুদের ঐকবদ্ধ করতে মনোযোগী হতে হবে। প্রকৃত শত্রুদের ও প্রকৃত বন্ধুদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য চীনা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বিপ্লবের প্রতি তাদের মনোভাবের সাধারণ বিশ্লেষণ অবশ্যই আমাদের করতে হবে। চীনা সমাজের শ্রেণী বিশ্লেষণ” (মার্চ , ১৯২৬)

*** সাম্রাজ্যবাদের সংগে যোগসাজসে লিপ্ত সমস্ত যুদ্ধবাজ, আমলাতান্ত্রিক, বিদেশী পুঁজিবাদের দালাল শ্রেণি, বড় জমিদার শ্রেণি এবং তাদের উপর নির্ভরশীল বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশই হলো আমাদের শত্রু। শিল্পীয় সর্বহারা শ্রেণিই আমাদের বিপ্লবের পরিচালক শক্তি। সমস্ত আধা-সর্বহারা শ্রেণি এবং ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণি আমাদের নিকটতম বন্ধু। দোদুল্যমান মাঝারি বুর্জোয়া শ্রেণির দক্ষিণপন্থিরা আমাদের শত্রু এবং বামপন্থিরা আমাদের মিত্র হতে পারে_ কিন্তু আমাদের সর্বদাই সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে আমাদের ফ্রন্টের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া উচিত নয়। “চীনা সমাজের শ্রেণী বিশ্লেষণ” (মার্চ , ১৯২৬)

*** যে লোক বিপ্লবী জনগণের পক্ষে দাঁড়ায় সেই বিপ্লবী; যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের পক্ষে দাঁড়ায় সে প্রতিবিপ্লবী। যে লোক কেবল মুখে মুখেই বিপ্লবী জনগণের স্বপক্ষে দাঁড়ায় কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অন্যরূপ, সে বুলিতেই বিপ্লবী। যে কেবল মুখে নয় বরং কাজেও বিপ্লবী জনগণের স্বপক্ষে দাঁড়ায়, সে একজন পুরো বিপ্লবী। “চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শ পরিষদের প্রথম জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রদত্ত সমাপ্তি ভাষণ (২৩ জুন, ১৯৫০)

*** আমি মনে করি, আমাদের পক্ষে, একজন লোক, একটা পার্টি, একটা সৈন্যবাহিনী অথবা একটা বিদ্যালয় যদি না শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে এটা খারাপ, সেক্ষেত্রে এটা অর্থ করে যে, আমরা নিশ্চিতভাবে শত্রুর সম-অবস্থায় পড়ে আছি। যদি আমরা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হই, তাহলে সেটা ভাল, এটা প্রমাণ করে যে, শত্রু ও আমাদের মধ্যে আমরা একটা স্পষ্ট পার্থক্য রেখা টেনেছি। যদি শত্রু আমাদের ক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ করে ও অত্যন্ত কদর্যভাবে চিত্রিত করে এবং বলে যে, আমাদের কোনো সদগুণ নেই, সেটা আরো উত্তম, সেটা প্রমাণ করে যে, আমরা কেবলমাত্র যে শত্রু ও আমাদের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য রেখা টানতে পেরেছি তাই নয় বরং আমাদের কাজেও বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। “শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ভাল, খারাপ নয়” (২৬ মে, ১৯৩৯)

*** শত্রু যার বিরোধিতা করে আমাদের তা সমর্থন করা উচিত এবং শত্রু যা সমর্থন করে আমাদের তার বিরোধিতা করা উচিত। কেন্দ্রিয় সংবাদ-সংস্থা, সাও তাং পত্রিকা ও সিন মিন পত্রিকার তিনজন সংবাদদাতার সংগে সাক্ষাতকার (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯)

*** আমরা সর্বহারা শ্রেণি ও জনসাধারণের স্বপক্ষে দাঁড়াই। কমিউনিস্টদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে যে, পার্টির অবস্থান, পার্টির প্রকৃতি ও পার্টির নীতির স্বপক্ষে তাঁদের দাঁড়াতে হবে। সাহিত্য ও শিল্পকলা সম্পর্কে ইয়েনান ফোরামে প্রদত্ত ভাষণ (মে ১৯৪২)

আরো পড়ুন:  শ্রমিক ও যন্ত্রের বিরোধ এবং অষ্টাদশ ও উনিশ শতকের মহান লুডবাদী আন্দোলন

*** বন্দুকধারী শত্রু নিশ্চিহ্ন করার পরেও বন্দুকহীন শত্রু থাকবেই, তারা অবশ্যই আমাদের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে সংগ্রাম করবে এবং এই শত্রুদের আমাদের কোনো মতেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। যদি এখন আমরা এই সমস্যাকে এইভাবে পেশ না করি এবং এইভাবে উপলব্ধি না করি, তাহলে আমরা মস্ত বড় ভুল করবো। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রদত্ত রিপোর্ট” (৫ মার্চ, ১৯৪৯)

*** সাম্রাজ্যবাদীরা এবং দেশের ভেতরকার প্রতিক্রিয়াশীলরা তাদের পরাজয়কে নিশ্চয়ই মেনে নেবে না, তারা সর্বশেষ মরণ-কামড় দেবে। দেশব্যাপী শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনের পরেও তারা নানা উপায়ে ধ্বংসাত্মক কাজ করবে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে আবার চীনকে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে অপচেষ্টা করবে। এটা অবশ্যম্ভাবী ও সন্দেহাতীত; আমাদের কোনো অবস্থাতেই নিজেদের সতর্কতাকে শিথিল করা উচিত নয়। চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শ পরিষদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণ (২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯)

*** আমাদের দেশে, মালিকানা সম্বন্ধে বলতে গেলে, যদিও সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর মোটামুটিভাবে সম্পন্ন হয়ে গেছে, যদিও পূর্বের বিপ্লবকালীন বিরাটাকার প্রবল ঝড়ের মতো জনসাধারণের শ্রেণিসংগ্রাম মূলত শেষ হয়েছে, তবুও ক্ষমতাচ্যুত জমিদার ও বিদেশী পুঁজিবাদের দালাল শ্রেণির অবশিষ্টাংশ এখনো বিদ্যমান, বুর্জোয়া শ্রেণিও বিদ্যমান, ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণির পুনর্গঠন সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এখনো শ্রেণিসংগ্রামের অবসান ঘটেনি। সর্বহারা শ্রেণি ও বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার শ্রেণিসংগ্রাম, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক শক্তির মধ্যকার শ্রেণিসংগ্রাম, মতাদর্শের ক্ষেত্রে সর্বহারা শ্রেণি ও বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার শ্রেণিসংগ্রাম দীর্ঘতর ও আঁকাবাঁকাভাবে অগ্রসর হবে, কখনো বা অত্যন্ত তীব্র হবে। সর্বহারা শ্রেণি নিজের বিশ্বদৃষ্টিকোণ অনুসারে পৃথিবীর রূপান্তর ঘটাতে চায়, বুর্জোয়া শ্রেণিও নিজের বিশ্বদৃষ্টিকোণ অনুসারে পৃথিবীর রূপান্তর ঘটাতে চায়। এ সম্পর্কে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে কে জিতবে, কে হারবে, সে সমস্যার এখনো প্রকৃত মীমাংসা হয়নি। জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** আমাদের দেশে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে মতাদর্শগত সংগ্রামে কে জিতবে, কে হারবে, সে সমস্যা মীমাংসা করতে এখনো বেশ দীর্ঘ সময় লাগবে। তার কারণ হচ্ছে যে, বুর্জোয়া শ্রেণি এবং পুরনো সমাজ থেকে আসা বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব আমাদের দেশে আরো দীর্ঘদিন থাকবে এবং শ্রেণিগত মতাদর্শ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী হবে। এটা যদি যথেষ্ট উপলব্ধি করা না যায় অথবা আদৌ উপলব্ধি করা না যায়, তাহলে মারাত্মক ভুল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় মতাদর্শগত সংগ্রামকে উপেক্ষা করা হবে। জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** আমাদের দেশে বুর্জোয়া শ্রেণি ও ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণির চিন্তাধারা এবং মার্কসবাদবিরোধী চিন্তাধারা আরো দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে। আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা মূলত কায়েম হয়েছে। উৎপাদন উপকরণের মালিকানার রূপান্তরের ক্ষেত্রে মোটামুটি বিজয়লাভ করেছি, কিন্তু রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত ফ্রন্টে আমরা এখনো সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন করিনি। সর্বহারা শ্রেণি ও বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যে মতাদর্শের ক্ষেত্রে কে জিতবে, কে হারবে, সে প্রশ্নের প্রকৃত মীমাংসা এখনো হয়নি। বুর্জোয়া শ্রেণি ও ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণির চিন্তাধারার বিরুদ্ধে এখনো আমাদের দীর্ঘকালীন সংগ্রাম চালাতে হবে। এটা বুঝতে না পারা এবং মতাদর্শগত সংগ্রাম ত্যাগ করা ভুল। সমস্ত ভ্রান্ত চিন্তাধারা, সমস্ত বিষাক্ত আগাছা, সমস্ত দৈত্য-দানবকে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই তাদের বাধাহীনভাবে বিস্তার লাভ করতে দেওয়া উচিত না। কিন্তু এই ধরনের সমালোচনা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত, বিশ্লেষণাত্মক ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়া উচিত এবং কখনো উগ্র, আমলাতন্ত্রবাদী, আধিবিদ্যক ও গোঁড়ামিপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। প্রচারকার্য সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ, (১২ মার্চ, ১৯৫৭)

আরো পড়ুন:  কেডার

*** মতান্ধতাবাদ ও সংশোধনবাদ উভয়ই মার্কসবাদের পরিপন্থী। মার্কসবাদ অবশ্যই এগিয়ে যাবে, অনুশীলনের বিকাশের সংগে সংগে অবশ্যই বিকাশ লাভ করবে, এটা অচল থাকতে পারে না। নিশ্চল ও অপরিবর্তিত থাকলে এটা হয়ে পড়বে প্রাণহীন। কিন্তু মার্কসবাদের মৌলিক নীতিকে অবশ্যই লঙ্ঘন করা চলবে না, অন্যথায়, ভুল করা হবে। আধিবিদ্যক দৃষ্টিকোণ দিয়ে মার্কসবাদকে দেখা এবং এটাকে অনড়-অটল কিছু একটা বলে ভাবাই হচ্ছে মতান্ধতাবাদ। মার্কসবাদের মৌলিক নীতিকে অস্বীকার করা ও মার্কসবাদের সার্বিক সত্যকে অস্বীকার করাই হচ্ছে সংশোধনবাদ। সংশোধনবাদ হচ্ছে বুর্জোয়া শ্রেণির চিন্তাধারাই একটা রূপ। সংশোধনবাদীরা সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যকার পার্থক্য এবং সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব ও বুর্জোয়া শ্রেণির একনায়কত্বের মধ্যকার পার্থক্যকে মুছে দেয়। তারা যার ওকালতি করে তা প্রকৃতপক্ষে সমাজতান্ত্রিক লাইন নয় বরং পুঁজিবাদের লাইন। বর্তমান অবস্থায়, মতান্ধতাবাদের চেয়ে সংশোধনবাদই বেশি অনিষ্টকর। মতাদর্শগত ফ্রন্টে আমাদের বর্তমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে সংশোধনবাদের সমালোচনা প্রসারিত করা। প্রচারকার্য সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ, ১২ মার্চ, ১৯৫৭

*** সংশোধনবাদ বা দক্ষিণপন্থি সুবিধাবাদ হচ্ছে এক ধরনের বুর্জোয়া ভাবধারা, এটা মতান্ধতাবাদের চেয়ে আরো বেশি বিপদজনক। সংশোধনবাদী, দক্ষিণপন্থি সুবিধাবাদীরা মুখে মার্কসবাদ আওড়ায়, তারাও “মতান্ধতাবাদকে” আক্রমণ করে। কিন্তু আসলে তারা যার উপর আক্রমণ করছে, সেটাই হচ্ছে মার্কসবাদের সবচেয়ে মৌলিক বস্তু। তারা বস্তুবাদ বা দ্বন্দ্ববাদের বিরোধিতা করে বা তা বিকৃত করে, তারা জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের বিরোধিতা করে বা তা দুর্বল করতে অপচেষ্টা করে এবং সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের ও সমাজতান্ত্রিক গঠনের বিরোধিতা করে বা তা দুর্বল করার চেষ্টা করে। আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মৌলিক বিজয়ের পর সমাজে আরো এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে, তারা মতাদর্শসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমিক শ্রেণির সংগে লড়াই করে। এই সংগ্রামে সংশোধনবাদীরাই হচ্ছে তাদের প্রধান সহায়। জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

Leave a Comment

error: Content is protected !!