জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসা

সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি

০৪. জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসা

*** আমাদের সামনে দুই ধরনের সামাজিক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, তা-ই হচ্ছে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব। এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির দুটা দ্বন্দ্ব। জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব— এই দুটি ভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য আমাদের প্রথমে অবশ্যই বুঝতে হবে ‘জনগণ’ বলতে কি বুঝায় এবং শত্রু’ বলতে কি বুঝায়।… বর্তমান পর্যায়ে, সমাজতন্ত্র গঠনের সময়ে যে সমস্ত শ্রেণিস্তর ও সমাজগোষ্ঠী সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্য অনুমোদন করে, সমর্থন করে এবং তাতে যোগদান করে, তারাই জনগণের আওতায় পড়ে; যে সমস্ত সমাজ-শক্তি ও সমাজগোষ্ঠী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিরোধ করে, সমাজতান্ত্রিক গঠনের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয় এবং তা বানচাল করার কাজে লিপ্ত হয়, তারাই জনগণের শত্রু। ঐ

*** আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায়, জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক শ্রেণির ভেতরকার দ্বন্দ্ব, কৃষক শ্রেণির ভেতরকার দ্বন্দ্ব, বুদ্ধিজীবীদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, শ্রমিক ও কৃষক এই দুটি শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব, শ্রমিক-কৃষক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, শ্রমিক শ্রেণি-অন্যান্য শ্রমজীবী জনগণ ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব, জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির ভেতরকার দ্বন্দ্ব এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের জনগণের সরকার সত্যিকারভাবে জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে এবং জনগণের সেবা করে, তবুও সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে কোনো না কোনো দ্বন্দ্ব আছে। এই ধরনের দ্বন্দ্বের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রাষ্ট্রস্বার্থ, যৌথস্বার্থ ও ব্যক্তিগত স্বার্থের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীকতার মধ্যকার দ্বন্দ্ব, পরিচালক ও পরিচালিতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থায় কোনো কোনো কর্মচারীর আমলাতন্ত্রবাদী রীতি ও জনসাধারণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এই ধরনের দ্বন্দ্বও হচ্ছে জনগণের ভেতরকার একটা দ্বন্দ্ব। সাধারণভাবে বলতে গেলে, জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে জনগণের স্বার্থের মৌলিক একত্বের ভিত্তির উপর দ্বন্দ্ব। ঐ

*** আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে বৈরী দ্বন্দ্ব। জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, শ্রমজীবি জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বলতে গেলে, অবৈরী দ্বন্দ্ব; শোষিত শ্রেণি ও শোষক শ্রেণির মধ্যে বৈরী দিক ছাড়া অবৈরী দিকও রয়েছে। ঐ

*** আমাদের দেশের জনগণের রাজনৈতিক জীবনে আমাদের কথায় ও কাজে কেমন করে ভুল এবং নির্ভুলের পার্থক্য করা উচিত? আমরা মনে করি, আমাদের শাসনতন্ত্রের মূলনীতি অনুসারে, আমাদের দেশের জনগণের বিরাট সংখ্যাধিক্যের ইচ্ছা অনুসারে এবং আমাদের দেশের রাজনৈতিক পার্টি ও গ্রুপগুলো কর্তৃক বারংবার বিঘোষিত অভিন্ন রাজনৈতিক অভিমত অনুসারে এই ধরনের মানদণ্ড মোটামুটি নিম্নরূপ :

(১) গোটা দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করা উচিত, বিভক্ত করা নয়;

(২) সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরে ও সমাজতান্ত্রিক গঠনে হিতকর হওয়া উচিত, ক্ষতিকর নয়;

(৩) জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বকে সুসংবদ্ধ হতে সাহায্য করা উচিত, তাকে ক্ষতি বা দুর্বল করা নয়;

(৪) গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে সুসংবদ্ধ হতে সাহায্য করা উচিত, তাকে ক্ষতি বা দুর্বল করা নয়;

(৫) কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকে সুসংবদ্ধ হতে সাহায্য করা উচিত, তাকে প্রত্যাখ্যান বা দুর্বল করা নয়;

আরো পড়ুন:  গণফৌজ

(৬) সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ঐক্যের এবং সারা দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় জনগণের আন্তর্জাতিক ঐক্যের পক্ষে হিতকর হওয়া উচিত, ক্ষতিকর নয়।

এই ছয়টি মানদণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক পথ ও পার্টির নেতৃত্ব। ঐ

*** প্রতিবিপ্লবীদের নির্মূল করার সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সংগ্রামের সমস্যা। জনগণের ভেতরে কোনো কোনো লোক এই সমস্যাটা কিছুটা ভিন্নভাবে দেখেন। দুই ধরনের লোকের মতামত আমাদের থেকে ভিন্ন। দক্ষিণঝোঁকী চিন্তাধারার লোকেরা আমাদের ও শত্রুদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না এবং শত্রুকে আমাদের নিজেদের লোক বলে ধরে নেন। ব্যাপক জনসাধারণ যাদের শত্রু বলে মনে করেন ঠিক তাদেরকে তারা বন্ধু বলে মনে করেন। বামঝোকী চিন্তাধারার লোকেরা আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে এমন পরিমাণে অতিরঞ্জিত করে তোলেন যে, তারা জনগণের ভেতরকার কোনো কোনো দ্বন্দ্বকে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বলে ধরে নেন এবং কোনো কোনো লোক যারা আসলে প্রতিবিপ্লবী নন তাদেরকেও প্রতিবিপ্লবী হিসেবে ধরে নেন। এই দুটো মতই ভুল, এ দুয়ের কোনোটাই প্রতিবিপ্লবীদের নির্মূল করার সমস্যাটা সঠিকভাবে মীমাংসা করতে পারে না এবং আমাদের প্রতিবিপ্লবীদের নির্মূল করার কাজে নির্ভুল মূল্যায়নও করতে পারে না। ঐ

*** গুণগত বিভিন্ন দ্বন্দ্বগুলোকে কেবলমাত্র গুণগত বিভিন্ন পদ্ধতির দ্বারাই সমাধান করা যেতে পারে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, সর্বহারা শ্রেণির ও বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পদ্ধতির দ্বারা মীমাংসা করা হয়; ব্যাপক জনসাধারণ ও সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যকার দ্বন্দ্ব গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পদ্ধতির দ্বারা মীমাংসা করা হয়; উপনিবেশগুলোর ও সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব জাতীয় বিপ্লবী যুদ্ধের পদ্ধতির দ্বারা মীমাংসা করা হয়; সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষক শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব কৃষির যৌথকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের পদ্ধতির দ্বারা সমাধান করা হয়, কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরকার দ্বন্দ্ব সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার পদ্ধতির দ্বারা মীমাংসা করা হয়; সমাজের ও প্রকৃতির মধ্যকার দ্বন্দ্ব উৎপাদন শক্তির বিকাশ সাধনের দ্বারা মীমাংসা করা হয়।… বিভিন্ন দ্বন্দ্বের মীমাংসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে এমন একটা মূলনীতি, যা মার্কসবাদী-লেনিনবাদীদের অবশ্যই কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। “দ্বন্দ্ব সম্পর্কে” (আগস্ট, ১৯৩৭)

*** আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের প্রকৃতি ভিন্ন, তাই মীমাংসার পদ্ধতিও ভিন্ন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, পূর্বেরটা হচ্ছে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য টানার ব্যাপার এবং পরেরটা হচ্ছে নির্ভুল ও ভুলের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য টানার ব্যাপার। নিশ্চয়ই, আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার পার্থক্যও নির্ভুল ও ভুলের সমস্যা। উদাহরণ স্বরূপ, সাম্রাজ্যবাদ, সামন্ততন্ত্র ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ—এসব অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী ও আমাদের মধ্যে কে নির্ভুল, কে ভুল, এটাও হচ্ছে নির্ভুল ও ভুলের সমস্যা, কিন্তু জনগণের ভেতরকার নির্ভুল ও ভুলের সমস্যার প্রকৃতি থেকে এটা ভিন্ন ধরনের। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** যে কোনো মতাদর্শগত প্রকৃতির সমস্যার এবং জনগণের ভেতরকার বিতর্কমূলক সমস্যার মীমাংসায় কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, কেবলমাত্র আলোচনা, সমালোচনা, বুঝিয়ে বলার ও শিক্ষা দেবার পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, বাধ্য করা ও চাপ দেয়ার পদ্ধতি নয়। ঐ

আরো পড়ুন:  বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণ কাকে বলে?

*** কার্যকরীভাবে উৎপাদন ও অধ্যয়ন করার জন্য এবং সুশৃঙ্খলভবে জীবনযাপন করার জন্য জনগণ দাবি করেন যে, তাদের নিজেদের সরকার এবং উৎপাদন পরিচালক, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্থাসমূহের পরিচালকরা বাধ্যতামূলক প্রকৃতির বিবিধ উপযুক্ত প্রশাসনিক নির্দেশ জারী করুন। এটা সাধারণ জ্ঞানের কথা যে, এইরূপ প্রশাসনিক নির্দেশ ছাড়া সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। প্রশাসনিক নির্দেশ এবং জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব মীমাংসার ব্যাপারে বুঝিয়ে বলার ও শিক্ষা দেবার পদ্ধতি পরস্পরের পরিপূরক। সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে জারীকৃত প্রশাসনিক নির্দেশের সাথে বুঝিয়ে বলার ও শিক্ষা দেবার ব্যবস্থাও অবশ্যই থাকতে হবে, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র প্রশাসনিক নির্দেশের উপর নির্ভর করলে চলবে না। ঐ

*** বুর্জোয়া শ্রেণি ও ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণির নিজস্ব ভাবাদর্শ অবশ্যই প্রতিফলিত হবে। অনিবার্যভাবেই নানা উপায়ে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রশ্নে তারা তাদের নিজেদেরকে একগুয়ের মতো প্রকাশ করবে। তাদেরকে প্রতিফলিত ও প্রকাশিত হতে না দেওয়া অসম্ভব। দমনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাদেরকে নিজেদের প্রকাশ করতে না দেওয়া আমাদের উচিত নয় বরং তাদের তা করতে দেওয়া উচিত এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাথে বিতর্ক করা ও তাদের যথাযোগ্য সমালোচনা করা উচিত। নিঃসন্দেহে, আমরা নানা প্রকারের ভ্রান্ত চিন্তাধারাকে অবশ্যই সমালোচনা করবো। সমালোচনা না করা ও সর্বত্র ভ্রান্ত চিন্তাধারাকে বন্যার মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখাটা এবং অবাধে তাদের বাজার দখল করতে দেওয়াটা নিশ্চয়ই চলবে না। ভুল থাকলে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে, বিষাক্ত আগাছা থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। কিন্তু এই ধরনের সমালোচনা গোঁড়ামিপূর্ণ হওয়া উচিত নয়, তাতে আধিবিদ্যক পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত নয় বরং দ্বন্দ্ববাদী পদ্ধতি প্রয়োগ করার চেষ্টা করা উচিত। যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি। ঐ

*** জনগণের ক্রটির সমালোচনা করা প্রয়োজন,… কিন্তু তা করতে গিয়ে অবশ্যই সত্যি সত্যি জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে, এবং তাদেরকে রক্ষা এবং শিক্ষিত করার জন্য প্রাণঢালা আগ্রহের সাথে কথা বলতে হবে। কমরেডদের সঙ্গে শত্রুদের মতো ব্যবহার করার অর্থ শত্রুদের পক্ষে দাঁড়ানো। “সাহিত্য ও শিল্পকলা সম্পর্কে ইয়েনান ফোরামে প্রদত্ত ভাষণ” (মে, ১৯৪২)

*** দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম হচ্ছে সর্বব্যাপী ও স্থায়ী। কিন্তু দ্বন্দ্বের মীমাংসা পদ্ধতি, অর্থাৎ সংগ্রামের রূপ, দ্বন্দ্বের প্রকৃতি বিভিন্নতার জন্য ভিন্নতর হয়। কোনো কোনো দ্বন্দ্বে রয়েছে প্রকাশ্য বৈরীতা, অন্যগুলোতে নয়। বস্তুর নির্দিষ্ট বিকাশানুসারে কোনো কোনো দ্বন্দ্ব যা শুরুতে অবৈর কিন্তু পরে বৈর দ্বন্দ্বে বিকশিত হয়; আবার কোনো কোনো দ্বন্দ্ব যা শুরুতে বৈর পরে অবৈর দ্বন্দ্বে বিকাশ লাভ করে। “দ্বন্দ্ব সম্পর্কে” (আগস্ট, ১৯৩৭)

*** সাধারণ অবস্থায়, জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বৈর নয়। কিন্তু তা যদি যথাযথভাবে মীমাংসিত না হয় অথবা আমরা যদি সজাগ না হই কিংবা সম্পূর্ণ অমনোযোগী হই, তাহলে বৈরীতার উদ্ভব হতে পারে। সমাজতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের অবস্থা সাধারণত কেবলমাত্র আংশিক এবং অস্থায়ী প্রকৃতির হয়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছে। সমাজতান্ত্রিক দেশে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং জনগণের স্বার্থও মূলত এক। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

আরো পড়ুন:  শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম

*** আমাদের দেশে শ্রমিক শ্রেণির ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের অন্তর্ভুক্ত। শ্রমিক শ্রেণি ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যে যে শ্রেণিসংগ্রাম চলছে, সাধারণভাবে বলতে গেলে, তা হচ্ছে জনগণের ভেতরকার শ্রেণিসংগ্রাম, এর কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বৈতচরিত্র। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সময়ে তাদের চরিত্রে একটা বিপ্লবী দিক ছিল এবং একটা আপোসমূলক দিকও ছিল। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সময়ে তাদের চরিত্রের একটা দিক হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ করে মুনাফা অর্জন করা, অপর দিকে শাসনতন্ত্রের সমর্থন ও সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর গ্রহণ করার ইচ্ছাও আছে। সাম্রাজ্যবাদ, জমিদার শ্রেণি ও আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া শ্রেণি থেকে জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি ভিন্ন। শ্রমিক শ্রেণি ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে শোষক ও শোষিতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, স্বভাবতই এটা বৈর দ্বন্দ্ব। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তব অবস্থায় যদি এই দুই শ্রেণির বৈর দ্বন্দ্ব যথাযথভাবে মীমাংসিত হয়, তাহলে অবৈর দ্বন্দ্বে রূপান্তরিত করা সম্ভব এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই দ্বন্দ্ব মীমাংসা করা সম্ভব। যদি আমরা এটা যথাযথভাবে মীমাংসা না করি এবং জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঐক্য, সমালোচনা ও শিক্ষাদানের নীতি অবলম্বন না করি অথবা যদি জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি আমাদের এই নীতিটা গ্রহণ না করে, তাহলে শ্রমিক শ্রেণি ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্বটা আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে পরিবর্তিত হবে।

*** সমাজতান্ত্রিক দেশের ভেতরকার প্রতিক্রিয়াশীলরা সাম্রাজ্যবাদীদের যোগসাজশে জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রকে হাসিল করার উদ্দেশ্যে অনৈক্যের ও মতভেদের উস্কানি দেয় এবং উচ্ছল তরঙ্গের সৃষ্টি করে। হাঙ্গেরীর ঘটনার এই শিক্ষার প্রতি সকলের নজর দেওয়া উচিত। ঐ

Leave a Comment

error: Content is protected !!