স্বপ্ন হচ্ছে বয়স নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রায় নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা

স্বপ্ন (ইংরেজি: Dream) বয়স নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রায় নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। ‘নিদ্রার মধ্যে চেতনার একটি প্রকাশ’ বলে স্বপ্নের একটি সংজ্ঞা দেওয়া চলে। সাধারণভাবে একথা সত্য যে, নিদ্রার মধ্যে দেহের সচেতন কার্যাবলী বন্ধ বা স্থগিত থাকে। নিদ্রার মধ্যে আমরা কোনো দ্রব্যকে চোখ দিয়ে দেখি না। হাত নেড়ে কোনো কাজ করি না। পা দিয়ে হাঁটি না। তাই মনে করা হয়, নিদ্রার মধ্যে মস্তিষ্ক বিশ্রাম করে নিজের ক্ষয়কে পূরণ করে জাগরিক হয়ে পুনরায় কার্যে নিবদ্ধ হয়। কিন্তু নিদ্রার মধ্যে মস্তিষ্ক যে একেবারে নিষ্ক্রিয় থাকে না তারই পরিচয় বহন করে মানুষের স্বপ্ন। আমরা বলি মানুষ স্বপ্ন দেখে। অবশ্যই আমরা চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখি না। কিন্তু স্বপ্নের মধ্যে সচেতন সময়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের একরূপ অভিজ্ঞতা ঘটে।

‘স্বপ্ন’ ব্যাপারটাকে পূর্বে ঐশ্বরিক এবং রহস্যজনক ব্যাপার বলে মনে করা হতো। যেমন প্রাচীনকালে তেমনি এখনো সাধারণ মানুষ তাদের স্বপ্নের তাৎপর্য উদঘাটনের জন্য ধর্মীয় পুরুষ তথা পীর দরবেশ সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হয়। কিন্তু আধুনিককালে স্বপ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিকগণ, বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানীগণ বিশেষ গবেষণা সম্পাদন করার চেষ্টা করেছেন।

সাধারণভাবে আজকাল স্বপ্নকে বাস্তব জীবনের অপূর্ণ কামনা বাসনার একরকম পূরণ বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা দিনের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে স্বপ্নের বিষয়ের সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশুদের বেশিরভাগ স্বপ্নই তাদের সচেতন অবস্থার নানা আদর আবদার আঘাতের সঙ্গে জড়িত। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এরূপ সম্পর্ক সহজে ধরা না গেলেও, যে কামনা বাসনা মানুষ তার সচেতন সামাজিক জীবনে নানা বাধা নিষেধ সংকোচ ও সংস্কারে পূরণ করতে পারে না সেসব কামনা বাসনা প্রত্যক্ষরূপে না হলেও পরোক্ষ এবং নানা প্রতীকে নিদ্রার মধ্যে যে তাকে কিছুটা তৃপ্ত করতে পারে, এ অভিমত আজ সাধারণভাবে স্বীকৃত।

স্বপ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় বিংশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে ইউরোপের চিকিৎসাবিদ ও মনোবিজ্ঞানী সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের গবেষণা ও প্রকাশনায়। ফ্রয়েড এবং তাঁর অনুসারী মনোবিজ্ঞানীগণ মনকে চেতন, অবচেতন ভাগে ভাগ করে বিবেচনা করেন। তাঁদের মনের চেতন ভাগ তেমন বৃহৎ নয়।

আরো পড়ুন:  জনিত পদ্ধতি হচ্ছে বস্তু বা বিষয়ের উদ্ভব এবং বিকাশের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত গবেষণার পদ্ধতি

মানুষের আপাত বিস্মৃত এবং অবদমিত চিন্তা, ভাবনা, উদ্বেগ, কামনা অবচেতনা এবং অচেতনে নিক্ষিপ্ত হলেও তারা বিলুপ্ত হয়ে যায় না। প্রত্যেকটি কামনা একটি শক্তি বা এনারজিবিশেষ। যে –কোন ভাবে প্রকাশের মাধ্যমে তার পূর্তি না ঘটলে তার বিলোপ ঘটে না। ফ্রয়েড স্বপ্নকে মানুষের অবচেতন এবং অচেতন জগতের রহস্য উদ্ধারের একটি চাবিকাঠি বলে গণ্য করেন। এই তত্ত্বের উপরই আধুনিক মনঃসমীক্ষণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৩৯-১৪০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!