ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যা হচ্ছে মহামানব, বা অতিপ্রাকৃত বিধাতার ইচ্ছাতে পরিবর্তন

ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যা (ইংরেজি: Idealistic Understanding of History) হচ্ছে বিধাতার নির্বাচিত সম্রাট ও মহামানবগণ সমাজ ও সভ্যতার মূল চালক হিসাবে কাজ করেন। তাঁদের ইচ্ছাতেই সমাজ ও সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ কিংবা বিলয় ঘটে। সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের কাহিনী নিয়ে রচিত হয় ইতিহাস। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য তাই আবশ্যক ইতিহাস অর্থাৎ সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের মূল শক্তি কি তা জানার।

ইতিহাসের পরিবর্তন কে সংঘটিত করে? যুগের মহামানব, মানুষের চেতনা, অতিপ্রাকৃত বিধাতা? অথবা সমাজ ও সভ্যতা পরিবর্তন হয় সামাজিক কোন বিধান বলে? এই প্রশ্ন মনুষ্য সমাজের উদ্ভবকাল হতে চলে আসছে। এ প্রশ্নের দুটি প্রধান জবাবের সাক্ষাত ইতিহাসে পাওয়া যায়। এর একটি হচ্ছে: সমাজ ও সভ্যতার মূল চালক হচ্ছে মানুষের চেতনা। এই চেতনার মূলে আছেন বিধাতা।

সম্রাট ও মহামানবগণের আগমন ও তিরোধান এবং বৃহৎ বৃহৎ সামাজিক গোষ্ঠী বা সাম্রাজ্যের উত্থান পতন আদিকাল হতে সাধারণ মানুষের কাছে রহস্যজনক এবং দুর্বোধ্য বলে বোধ হয়েছে। বিরাট ও বিপুল কিছুর তাৎপর্য্য চিন্তা ও যুক্তির মারফত বিভিন্ন ঘটনার সংশ্লেষণ ব্যতীত সাক্ষাৎভাবে উপলব্ধি করা ব্যক্তিমাত্রের পক্ষে দুঃসাধ্য। এই দুঃসাধ্যতার সুযোগ গ্রহণ করে প্রত্যেক সমাজের প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের রাষ্ট্র ও শিক্ষাযন্ত্র ইতিহাসের ব্যাখ্যাকে রহস্যাবৃত করে রাখার চেষ্টা করেছে। ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যা এই চেষ্টারই পরিপোষক।

ফরাসি বিপ্লবের পূ্র্ব পর্য্যন্ত সমাজ ও ইতিহাসের ব্যাখ্যার এটিই ছিল প্রধান ধারা। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ফরাসি বিপ্লব এই ব্যাখ্যাকে অসার প্রতিপন্ন করে মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ককে ইতিহাসের মূল চালক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। কোনো বিশেষ যুগের ও সমাজের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যে কোনো ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না, তা যে ঐশ্বরিক কোনো বিধানও নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মার্কসবাদী সমাজতাত্ত্বিকগণ তা বিশ্লেষণ করে দেখান। মার্কসবাদ বা দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ হচ্ছে ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যার বিরোধী অপর প্রধান ব্যাখ্যা।

আরো পড়ুন:  বেনেদেত্তো ক্রোচে ছিলেন আধুনিককালের প্রখ্যাত ইতালীয় দার্শনিক

তথ্যসূত্র:

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২১০-২১১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!