ভারতের ইতিহাস হচ্ছে ভারতে মানুষের আগমনের পর থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিস্তৃত

ভারতের ইতিহাস হচ্ছে আফ্রিকা হতে ভারতে মানুষের আগমনের পরে থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত আনুমানিক প্রায় ৫৫,০০০ বছর থেকে ৭৩,০০০ বছরের ইতিহাস। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতাগুলির একটির উৎপত্তি ঘটে ভারতে। এখানেই গড়ে ওঠে অত্যন্ত উচুস্তরের উন্নত এক সংস্কৃতি যা এই দেশের পরবর্তী বিকাশের ক্ষেত্রে এবং সমগ্রভাবে গােটা প্রাচ্যের, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ও দূর প্রাচ্যের বহু, জাতির সংস্কৃতির অগ্রগতিতে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার, ইত্যাদির ফলে এখন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মানবসমাজের একেবারে আদিতম কাল থেকেই ভারতে জনবসতি বর্তমান ছিল।[১]

ভারতের বহু অঞ্চল থেকেই প্রত্নপ্রস্তরযুগের নিম্নতর ভূ-স্তরের আমলে তৈরি পাথরের হাতিয়ার, ইত্যাদি পাওয়া গেছে। পরস্পর-নিরপেক্ষ ভাবে নিম্নতর প্রত্নপ্রস্তরযুগীয় সংস্কৃতির দুটি কেন্দ্র উদ্ভূত হয়েছিল একদা: উত্তরে সােন-নদী তীরবর্তী সংস্কৃতি (বর্তমান পাকিস্তানের সোন নদীর তীর বরাবর) এবং দক্ষিণে দাক্ষিণাত্য-অঞ্চলে তথাকথিত মাদ্রাজি সংস্কৃতি। এই দুটি প্রত্নপ্রস্তরযুগীয় কেন্দ্রই মনুষ্যবাসের পক্ষে অধিকতর অনুকূল নদী-উপত্যকায় অবস্থিত ছিল। এদের মধ্যে প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৮৬৩ সালে মাদ্রাজ এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রটি। একারণে দক্ষিণ ভারতে নিম্নতর প্রত্নপ্রস্তরযুগের বৈশিষ্ট্যসূচক কুঠার, ইত্যাদি যে-হাতিয়ার পাওয়া গেছে তাইই মাদ্রাজি কুঠার নামে পরিচিত হয়ে আসছে। 

দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নতর প্রত্নপ্রস্তরযুগীয় খননক্ষেত্রগুলিতে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের হাতিয়ার পাওয়া গেছে, যেমন পাথরের নড়ি কাটার বড়-বড় গাের হাতিয়ার। এই হাতিয়ার ইংরেজি ‘চপার’ শব্দটি দিয়ে চিহ্নিত হয়ে আসছে। প্রত্নপ্রস্তর যুগের হাতিয়ার ইত্যাদি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও, যেমন মধ্য ও পশ্চিম ভারতেও, অতঃপর আবিষ্কৃত হয়েছে।

উত্তর পশ্চিম দিক দিয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০-১০০০ শতকের আর্যভাষীদের ভারত আগমনের পূর্বে ভারতে যে সমস্ত জাতির লোক বাস করত তাদেরকে সাধারণত অনার্য বলে আখ্যায়িত করা হয়। পূর্বে ভারতের ইতিহাসের পরিচয় আর্যদের আগমন থেকে দেওয়া হতো। তার পূর্বযুগকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হতো। কিন্তু বিংশ শতকের গোঁড়ার দিকে সিন্ধু নদীর উপকূলে হরপ্পা এবং মহেনজাদারো নগরীর ধ্বংসাবশেষ খননের পরে ভারতের ইতিহাস আর্যপর্ব অতিক্রম করে খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বৎসর পর্যন্ত বিস্তারিত হয়ে গেছে।

আরো পড়ুন:  বঙ্গ দেশের পশ্চিমদিকের ভূখণ্ডটি পশ্চিমবঙ্গ যা বর্তমানে দিল্লির অধীন একটি অঙ্গরাজ্য

হরপ্পা এবং মহেনজাদারোতে প্রাচীন ভারতের একটি সুবিকশিত সভ্যতার আভাস পাওয়া গেছে। এই সমস্ত প্রাচীন নগরীতে পোড়া ইট দ্বারা বাড়ি তৈরি করা হতো। নগরীর রাস্তাঘাট পরিকল্পনার ভিত্তিতে তৈরি করা হতো। প্রত্যেক বাড়িতে পানির কূপ এবং গোছলখানার ব্যবস্থা ছিল। অনেকে মনে করেন দক্ষিণ ভারতের আর্যপূর্ব দ্রাবিড় সভ্যতা এবং সিন্ধু উপকূলের এই সভ্যতার মধ্যে যোগসূত্র ছিল। সিন্ধু নদীর সভ্যতা দ্রাবিড় সভ্যতার বিস্তার। আর্যপূর্ব ‘অনার্য’ ভারতীয় অধিবাসীদের মধ্যে একেবারে প্রাচীনকালের পুরাতন প্রস্তর যুগের মানুষ থেকে নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

আধুনিককালে ভারতের সাঁওতাল পরগণাসমূহে ছোটনাগপুর এবং মধ্যভারতের পার্বত্য অঞ্চলে কোল বা মুন্ডা নামক যে উপজাতিদের রেশ দেখা যায়, ঐতিহাসিকদের মতে তারা নব্যপ্রস্তরযুগের ভারতীয়দের উত্তর পুরুষ। আর্যপূর্ব হিসেবে দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় জাতিকেও অনার্য বলা যায়। বর্তমানের তামিলের প্রাচীন নাম দ্রাবিড়। দ্রাবিড় বলতে তামিল, তেলেগু, কানাড়ি, মালয়লাম প্রভৃতি ভাষাভাষীদের পূর্বপুরুষদের বুঝায়। বালুচিস্তানের ব্রাহুই ভাষী অধিবাসীদেরও দ্রাবিড় জাতিভুক্ত মনে করা হয়। বালুচিস্তান ভারতের উত্তর পশ্চিমে। বালুচিস্তানে দ্রাবিড় ভাষার গোষ্ঠীভুক্ত ভাষার সাক্ষাৎ থেকে এরূপ অনুমান করা হয় যে, দ্রাবিড়গণ ভারতের আদি মানুষ নয়। তারাও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল। এই দ্রাবিড়দের মধ্যে পরবর্তীকালে আগত আর্যদের লড়াই হয়। এই লড়াই এ দ্রাবিড়গণ পরাজিত হয়ে আর্যদের দাসে পরিণত হয়।[২]

অনার্যদের মধ্যে প্রাচীনকালে উত্তরপূর্ব দিক থেকে ভারতে আগত জনগোষ্ঠীকেও ধরা হয়। ভোটিয়া, নাগা, লেপচা, কিরান্তি প্রভৃতি উপজাতি প্রাচীনকালে উত্তর পূর্ব দিক থেকে আগতদের উত্তর পুরুষ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম রণাঙ্গনের পাশাপাশি মেসােপটেমিয়া, গ্যালিপলি, ফিলিস্তিন, পূর্ব আফ্রিকা ও মিশরের নানা স্থানে নিযুক্ত করা হয় ব্রিটিশ-ভারতীয় বাহিনীকে। ফ্রান্সে পাঠানাে ৭০ হাজার ভারতীয় সৈন্যের প্রায় ৫ হাজার নিহত হয়, আহত হয় ১৬ হাজারের বেশি। জেনারেল লর্ড কিচেনারের নেতৃত্বাধীন এ বাহিনীর সিংহভাগই ছিল ভারতের নানা স্থানে নিরাপত্তার কাজে নিয়ােজিত ব্রিটিশ। পাশাপাশি গােলন্দাজ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছিল বেশ কিছু সংখ্যক জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক।[৩]

আরো পড়ুন:  মোগল আমল ও দাক্ষিণাত্য দখল নানা অভিযান

তথ্যসূত্র:

১. কোকা আন্তোনভা, গ্রিগরি বোনগার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভস্কি; অনুবাদক মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়; ভারতবর্ষের ইতিহাস, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, প্রথম সংস্করণ ১৯৮২, পৃষ্ঠা- ১১।
২. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৯৬।
৩. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৩৫-৪০; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855

Leave a Comment

error: Content is protected !!