লেনিনবাদী দৃষ্টিতে সুবিধাবাদ কী এবং কেন বর্জনীয়

সুবিধাবাদ (ইংরেজি: Opportunism) বলতে বোঝায় শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনে এমন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, যা প্রলেতারিয়েতের যথার্থ স্বার্থের বিরোধি এবং বুর্জোয়ার সংগে শ্রমিক শ্রেণিকে একটা আপস-রফায় পৌঁছানোর প্ররোচনা যোগায়। এটি মূলত বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি এবং শ্রেণিসংগ্রামপ্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের বিরোধি। শ্রেণিগত সামাজিক চরিত্রের বিবেচনায় সুবিধাবাদ হলো পেটি-বুর্জোয়া ভাবাদর্শ ও কর্মনীতির একটা অভিব্যক্তি, আর তত্ত্বীয় বিবেচনায়, কখনো সংশোধনবাদ, কখনওবা অন্ধবিশ্বাস। লেনিন সুবিধাবাদের মতাদর্শিক ভিত্তি প্রসঙ্গে লিখেছেন যে,

শ্রেণী সমঝোতার ওকালতি করা; সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণা এবং সংগ্রামের বিপ্লবী পদ্ধতি পরিত্যাগ করা; বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া; জাতীয়তা ও দেশের সীমানাগুলো যে ঐতিহাসিকভাবে ক্ষণস্থায়ী এই সত্য নজর থেকে সরে যাওয়া; বুর্জোয়া বৈধতাকে পূজনীয় করে তোলা; ‘জনগণের ব্যাপক অংশ’ (মানে পেটিবুর্জোয়া)-এর বিরূপ হয়ে ওঠার ভয়ে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রেণী সংগ্রামকে বর্জন করা– নিঃসন্দেহে এগুলো হলো সুবিধাবাদের মতাদর্শগত ভিত্তি।’’[১]  

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে আত্মসেবা করার প্রবণতাকেই সুবিধাবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন ব্যক্তি নিজেরটাকে ভাল বোঝে এবং অন্যের প্রয়োজন, সমাজের প্রয়োজনকে উপলব্ধি করতে পারে না তখনই বিচ্ছিন্নতা বাড়ে এবং সুবিধাবাদিতা বাড়ে। পুঁজিবাদী বাজারের কর্মকাণ্ড সব কিছুতেই নানাভাবে সুবিধাবাদকে জাগিয়ে তোলে। সেই অর্থে সুবিধাবাদ কোনো ব্যক্তির আকস্মিক অধপতন বা পাপ বা বিশ্বাসঘাতকতা নয়। সুবিধাবাদ ক্ষুদে-বুর্জোয়া অরথনিতির ফল। লেনিন এ-সম্পর্কে বলেছেন;

“সুবিধাবাদ কোনো ব্যক্তিবিশেষদের ক্ষেত্রে দৈবাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, কোনো পাপকর্ম, পদস্খলন কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপার নয়, একটা গোটা ঐতিহাসিক কালপর্বের সামাজিক সৃষ্টি এটা।[২]  

যখন শ্রেণিসংগ্রাম, শ্রেণিযুদ্ধ ও ন্যায়যুদ্ধ চলে তখন যেমন সুবিধাবাদ থাকে তেমন শান্তির সময়েও সুবিধাবাদ থাকে। তবে লড়াকু যোদ্ধা এবং তার প্রস্তুতিকালে সুবিধাবাদবিরোধী লড়াই অনবরত চালাতে হয়। যুদ্ধই যোদ্ধাকে তৈরি করে, শ্রেণিযুদ্ধ ও ন্যায়যুদ্ধ না ক্ষুদে মালিকানার পূজারি মধ্যবিত্ত বাড়তে থাকে। বিশ শতকে লাল ঝাণ্ডা দিয়ে লাল ঝাণ্ডা ঠেকানোর কাজটি মূলত সুবিধাবাদের ফল। ফলে সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন, এবং তাদের প্রতারণা সরানোটাও একটা রাজনীতি, আর এইজন্যই সুবিধাবাদ সম্পর্কে লেনিন, স্তালিন, মাওসেতুং কী বলেছিলেন সেই উদ্ধৃতিগুলো জানা প্রয়োজন। ভি. আই. লেনিনের মতে

“সুবিধাবাদের অর্থ হলো সাময়িক ও আংশিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে মৌলিক স্বার্থগুলি বিসর্জন দেয়া।”[৩]  

সুবিধাবাদীরা সরাসরি সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাওবাদ এবং শ্রেণিসংগ্রাম ও প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের কথা বলেন না। তারা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আগডুম ব্যাগডুম বিভিন্ন কথা বলেন। বাংলাদেশে সুবিধাবাদী আর সংশোধনবাদীরা পিচ্ছিল কথাবার্তার খনি বলা যায়। এই চর্চা দীর্ঘমেয়াদে হবার ফলে এখানে সাধারণ সহজ প্রশ্নেরও পিচ্ছিল প্যাঁচানো উত্তর দেয় অনেকে। এইসব সুবিধাবাদী গ্রুপগুলো সমাজবিজ্ঞান, প্রকৃতিবিজ্ঞান বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দূরবর্তী বিভিন্ন শাখার কথা বলে লোকজনকে শিক্ষিত করতে চায়; কিন্তু সরাসরি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ শেখাতে চায় না; সুবিধাবাদীরা ভয় পায় সরাসরি মার্কসবাদ শেখাতে গেলে তাঁর অনুসারী অনুগামীরা পালিয়ে যাবে অন্যত্র। ভি. আই. লেনিন সুবিধাবাদ সম্পর্কে আরো লিখেছেন, 

“আমরা যখন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলি তখন প্রত্যেকটি পরিক্ষেত্রে সমগ্র বর্তমানকালীন সুবিধাবাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন, তার অস্পষ্টতা, বিক্ষিপ্ততা, কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমাদের কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। একজন সুবিধাবাদি, খোদ তার স্বভাব প্রকৃতি অনুযায়ীই, সবসময় একটি বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে ও নিশ্চিতরূপে সূত্রায়িত করাটা কৌশলে এড়িয়ে যায়, সে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে চায়, দুটি পারস্পরিকভাবেই স্বতন্ত্র মতামতের মধ্যে সে সাপের মতোই মোচড়ে মোচড়ে চলে, উভয় মতের সাথে ‘একমত’ হওয়ার চেষ্টা করে এবং তুচ্ছ সংশোধনী উপস্থাপনা, সংশয় প্রকাশ, নিরপেক্ষতা অবলম্বন এবং সহজ সরল পরামর্শ প্রদান, ইত্যাদি ইত্যাদির মধ্যে তার মত-পার্থক্যকে নামিয়ে আনে।[৪]       

ভি. আই. লেনিনের এই কয়েকটি কথা সম্পর্কে জে. ভি. স্তালিন লিখেছেন, 

“একজন সুবিধাবাদির ছবি এখানে পরিস্ফুট, যে সুস্পষ্টতা ও সুনিশ্চয় হওয়াকে ভয় করে এবং যে প্রকৃত অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার, পার্টির মধ্যে প্রকৃত মত-পার্থক্যকে উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করে।”[৫]   

সুবিধাবাদীরা মতানৈক্যকে আড়াল করে, মতাদর্শিক পার্থক্যরেখাকে মুছে ফেলে, পার্থক্যরেখাগুলোকে অস্বীকার করে, যে কোনো বস্তু ও পরিস্থিতির বিশ্লেষণে অনাগ্রহী থাকে, বাগাড়ম্বর দিয়ে পার্থক্য ও বিভাজনকে ঢেকে দেয়। তারা বাস্তব সংখ্যা প্রকাশ করে না, বাস্তব তথ্য দেয় না, তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে। নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করে না, মনের দিক থেকে দোদুল্যমান থাকে, বিপ্লবী ও প্রতিবিপ্লবী দুইদিকেই যোগাযোগ রাখে। এছাড়া সুবিধাবাদের কর্মনীতি সম্পর্কে জে. ভি. স্তালিন লিখেছেন,   

“যথার্থভাবে মতানৈক্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া, পার্টির অভ্যন্তরীণ প্রকৃত পরিস্থিতিকে ঢাকা দিয়ে রাখা, স্বীয় অবস্থানকে পর্দাবৃত করে রাখা এবং পার্টির পক্ষে পরিপূর্ণ স্পষ্টতা অর্জন অসম্ভব করে তোলার প্রয়াসই হলো সুবিধবাদের কর্মনীতি।”[৬] 

একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি কেউ যদি তৎকালীন প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করেন, তাহলে তিনি আগডুম-বাগডুম বলবেন, ভীতি ছড়াবেন, আত্মসমর্পণ চাইবেন। এসব করে সুবিধাবাদীরা জনগণের শক্তিকে হেয় করবেন এবং লড়াকু দৃষ্টিভঙ্গিকে, বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গিকে উল্টে দেবেন। সুবিধাবাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাও সেতুং আরও বলেছেন,                                 

“শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতায় আমরা এই ধারণায় উপনীত হয়েছি যে, রণনীতির দিক থেকে সমস্ত শত্রুকে আমাদের তুচ্ছ করে দেখতে হবে, যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে শত্রুদেরকে অবশ্যই আমাদের তুচ্ছ করে দেখতে হবে, কিন্তু এক একটা বিশেষ প্রশ্নে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। যদি আমরা সামগ্রিকভাবে শত্রুদেরকে তুচ্ছ করে না দেখি, তাহলে আমরা সুবিধাবাদের ভুল করবো। মার্কস, এংগেলস যখন কেবল দুজনমাত্র ছিলেন, তখনই তারা ঘোষণা করেছিলেন যে, সমগ্র পৃথিবীতে পুঁজিবাদের উচ্ছেদ হবেই। কিন্তু বিশেষ বিশেষ প্রশ্নে, এক একটা প্রশ্নে, যদি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তাদের না দেখি, তাহলে আমরা হঠকারিতাবাদের ভুল করবো”।[৭]  

সামগ্রিকভাবে রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদিদেরকে তুচ্ছ করে না দেখার ফলেই বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২০০৪ সালের পর ভয় পেয়ে আওয়ামি সুবিধাবাদি নৌকায় উঠেছিলো, আওয়ামি লিগকে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে সংশোধনবাদকে পার্টির রাজনৈতিক লাইন হিসেবে গ্রহণ করেছিলো। সুবিধাবাদি আর সংস্কারবাদিদের পাকাপোক্ত স্থান পার্টিতে থাকলে কোনো শ্রমিক শ্রেণির পার্টি বিকশিত হতে পারে না। এ বিষয়ে স্তালিনের মতটি হলো,

“নিজেদের মধ্য থেকে সুবিধাবাদি এবং সংস্কারবাদিদের, সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারি সাম্রাজ্যবাদী আর জঙ্গি জাতিয়তাবাদিদের, ভণ্ড দেশপ্রেমের ধ্বজাধারি আর শ্রেণি-শান্তিকামিদের দূর করে দিয়েই শ্রমিকশ্রেণির পার্টিগুলি বিকাশ লাভ করে, শক্তিশালি হয়ে উঠে। সুবিধাবাদিদের বিতাড়ন করেই পার্টি শক্তিশালী হয়।”[৮]

সুবিধাবাদকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং ভাগ দুটি হচ্ছে দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ এবং বামপন্থী সুবিধাবাদ।

আরো পড়ুন:  সমাজ গণতন্ত্র হচ্ছে একটি সংস্কারবাদী বিপ্লববিরোধী মতবাদ

দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদঃ দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ হলো কতিপয় তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত নীতির সমষ্টি যা স্বতস্ফূর্ত শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষপাতি এবং পুঁজিবাদের ক্রমশ সমাজতন্ত্রে রূপান্তরের একটি সংশোধনবাদি প্রবণতা। দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ মূলত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও শ্রমিক শ্রেণি দ্বারা ক্ষমতা দখলকে প্রত্যাখ্যান করে। মাও সেতুং দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ সম্পর্কে লিখেছেন,  

“প্রায়ই দেখা যায়, চিন্তা বাস্তবের পিছনে পড়ে আছে, এর কারণ মানুষের জ্ঞান বহু রকম সামাজিক অবস্থার দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। বিপ্লবী বাহিনীর মধ্যে আমরা গোঁড়াদের বিরোধি, তাদের চিন্তা পরিবর্তনশীল বাস্তব পরিস্থিতির সংগে সংগে এগিয়ে যেতে পারে না এবং ঐতিহাসিকভাবেই দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।”[৯]

লেনিন উল্লেখ করেছেন যে বামপন্থী সুবিধাবাদ দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদের চেয়ে কম ক্ষতিকর, কেননা ১৯২০ সালের দিকে বামপন্থী সুবিধাবাদ ছিলো একেবারেই নবীন একেবারেই সদ্যোজাত একটি ধারা।[১০]   

বামপন্থী সুবিধাবাদঃ বামপন্থী সুবিধাবাদ হলো কতগুলি অতিবিপ্লবি ও হঠকারি নীতির সংমিশ্রণ; এবং এটির ভিত্তি হচ্ছে বৈপ্লবিক বলপ্রয়োগ-এর সর্বশক্তিমত্তা সম্পর্কে স্বতপ্রবৃত্ত ধারনা। বামপন্থী সুবিধাবাদ সামাজিক বিকাশের পর্যায়সমূহ অস্বীকার করে এবং শ্রমিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক হঠকারিতা ও অনর্থক ক্ষয়ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়।

সুবিধাবাদীরা শুধু একটা পথ, শুধু সোজা পথটাই মানতে চায়, তারা মহড়া সমঝোতা আপোস স্বীকার করে না; এইভাবে চলতে গিয়ে তারা সাম্যবাদের গুরুতর ক্ষতি করে, ভুলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ কেবল পুরনো রূপকেই স্বীকারের জন্য জেদ করে, নতুন অন্তর্বস্তুটা লক্ষ্য করে না। বামপন্থী সুবিধাবাদীরা জেদ করে নির্দিষ্ট সাবেকী রূপগুলোর শর্তহীন নাকচে, লক্ষ্য করে না যে নতুন অন্তর্বস্তু সমস্ত ও সবকিছু রূপের মধ্য দিয়েই পথ করে নিচ্ছে।[১১]

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের পার্টিগুলোতে সুবিধাবাদ জেঁকে বসেছিলো। ‘নেতা’ ও ‘জনগণের’ মধ্যে বিচ্ছেদ যতগুলো কারণে ঘটে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই সুবিধাবাদী প্রবণতা। ইংল্যান্ডের উদাহরণ থেকে মার্কস ও এঙ্গেলস বহুবার এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইংল্যান্ডের একচেটিয়া ব্যবস্থার ফলে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ‘জনগণ’ থেকে আলাদা হয়ে যায় আধা মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী ‘শ্রমিক অভিজাত’। লেনিন লিখেছেন যে “এই শ্রমিক অভিজাতদের নেতারা ক্রমাগত চলে যান বুর্জোয়ার পক্ষে, প্রত্যক্ষে অথবা পরোক্ষে তারা ছিলেন বুর্জোয়ার ভরণপোষণে। খোলাখুলি তাদের বেইমান বলে ধিক্কার দিয়ে মার্কস এই হারামজাদাদের আক্রোশের পাত্র হবার সম্মান অর্জন করেন।” বিশ শতকে সাম্রাজ্যবাদী অনেকগুলো অগ্রসর দেশ একচেটিয়া সুবিধাভোগী অবস্থায় পৌঁছেছিল এবং তার ভিত্তি থেকেই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সর্বত্র উদিত হয়েছিল ‘সুবিধাবাদী, সামাজিক জাত্যাভিমানী, নিজেদের বৃত্তির, নিজেদের শ্রমিক আভিজাত্যের স্তরটুকুর স্বার্থ-রক্ষক বেইমান-নেতাদের ধরন’। দেখা দিয়েছিল ‘জনগণ’ থেকে, অর্থাৎ মেহনতিদের ব্যাপকতম স্তরটা থেকে, তাদের অধিকাংশের কাছ থেকে, সবচেয়ে কম বেতনভোগী শ্রমিকদের কাছ থেকে সুবিধাবাদী পার্টিগুলোর বিচ্ছিন্নতা। লেনিন এইসব কথা দেখিয়ে দিয়েছেন এবং জোর দিয়েছেন যে, ‘এই অভিশাপটার বিরুদ্ধে না লড়ে, সুবিধাবাদী, সমাজতন্ত্রের প্রতি বেইমান এই নেতাদের স্বরূপ উদ্ঘাটন, হতমান ও বিতাড়ন না করে বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের বিজয় অসম্ভব”।[১২]

আরো পড়ুন:  নেপালের সাধারণ নির্বাচন শেষে সংশোধনবাদী বামপন্থিরা এগিয়ে

তথ্যসূত্র:

১. ভি. আই. লেনিন, The Position and Tasks of the Socialist International, রচনা সংকলন, খন্ড ২১, পৃষ্ঠা ৩৫-৪১, ইংরেজী সংস্করণ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭৪।

২. ভি. আই. লেনিন; দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের অবসান; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো-১৯৭৬; পৃষ্ঠা-৫৬।

৩. আর-সি-পি(বি)-এর মস্কো সংগঠনের অ্যাক্টিভিস্টদের সভায় প্রদত্ত বক্তৃতা, ৩১ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১২

৪. ভি. আই. লেনিন; এক পা আগে দুই পা পিছে, ফেব্রুয়ারি-মে ১৯০৪।

৫. জে. ভি. স্তালিন; সি.পি.এস.ইউ.(বি.)তে দক্ষিণ বিচ্যুতি; এপ্রিল, ১৯২৯।

৬. জে. ভি. স্তালিন; সি.পি.এস.ইউ.(বি.)তে দক্ষিণ বিচ্যুতি; এপ্রিল, ১৯২৯।

৭. বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক পার্টির মস্কো সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ; ১৮ নভেম্বর, ১৯৫৭।

৮. জে. ভি. স্তালিন; লেনিনবাদের ভিত্তি ও সমস্যা; এনবিএ, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর ২০০৮; পৃষ্ঠা ৭৬।

৯. মাও সেতুং; অনুশীলন সম্পর্কে; নির্বাচিত রচনাবলী, প্রথম খন্ড; চলন্তিকা বই ঘর; ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩০১।

১০. ভি. আই. লেনিন; কমিউনিজমে বামপন্থার শিশুরোগ; এপ্রিল, ১৯২০, রচনা সংকলন, চার ভাগে সম্পূর্ণ, চতুর্থ ভাগ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ১২৪

১১. ভি. আই. লেনিন; কমিউনিজমে বামপন্থার শিশুরোগ; এপ্রিল, ১৯২০, রচনা সংকলন, চার ভাগে সম্পূর্ণ, চতুর্থ ভাগ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ১২৫-১২৬

১২. দেখুন ভি. আই. লেনিন; কমিউনিজমে বামপন্থার শিশুরোগ; এপ্রিল, ১৯২০, রচনা সংকলন, চার ভাগে সম্পূর্ণ, চতুর্থ ভাগ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯

প্রবন্ধটির রচনাকাল ৩০ জানুয়ারি, ২০১৩ এবং ওইদিন প্রাণকাকলিতে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০-২৪ নভেম্বর ২০১৭ সময়কালে রোদ্দুরেতে প্রকাশের জন্য পরিবর্ধন করা হয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!