দ্বন্দ্ববাদের উদাহরণ

(বিমূর্ত সংকলন)
১৯৫৯

১. বিশ্লেষণ বোঝা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ বোঝা

বিশ্লেষণ বোঝা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ বোঝা। লেনিন বলেন, দ্বন্দ্ববাদকে বিপরীতের একত্বের মতবাদ হিসেবে সার সংকলিত করা য়ায়। এটা যখন সত্য, দ্বন্দ্ববাদের সারকে তড়িত আঁকড়ে ধরা যেতে পারে। কিন্তু এই মতবাদকে ব্যাখ্যা ও বিকশিত করা প্রয়োজন। বিপরীতের একত্ব হচ্ছে শর্তসাপেক্ষ, অস্থায়ী, উতক্রমনমূলক,আপেক্ষিক ও পারস্পরিক বিপরীতধর্মী। অপরদিকে, বিপরীতের সংগ্রাম হচ্ছে পরম, যেমন বিকাশ ও গতিও হচ্ছে পরম। তাই সাম্যব্যবস্থা হচ্ছে অস্থায়ী এবং তা ভেঙ্গে যেতে পারে, আর আমাদের কর্তব্য হচ্ছে প্রতিদিন অধিক দ্রততার সাথে সাম্যাবস্থা  অর্জন করা। এটা কোন ব্যক্তির সামর্থ যতটুকু আছে সে অনুসারে সে হাঙ্গেরীয় ও পোলীয় ঘটনার উদ্ভব ঠেকাতে পেরেছে কিনা তার উপর নির্ভর করেনা, বরং ঘটনার উদ্ভবের পর সমস্যাকে সমাধানের উপায় ও পথ তার রয়েছে কিনা তার ওপর।

২. সবকিছুতে দুই পদ্ধতির তুলনাকে উপস্থিত করার জন্য দ্বন্দ্ববাদ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্য ও চীনের নির্দিষ্ট অনুশীলনের একত্ব হছে বস্তুবাদ। উভয়ে হচ্ছে বিপরীতের একত্ব, যা হচ্ছে দ্বান্দ্বিকতা। কুটতর্কে জিদ ধরা কেন? সরলভাবে  দ্বান্দিকতার আলোচনাকে এড়িয়ে যেতে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজ করার নিজস্ব ধরণ রয়েছে। সোভিয়েত অভিজ্ঞতা হচ্ছে একদিক, চীনের অভিজ্ঞতাও হচ্ছে আরেক দিক। এটা হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত তার অভিজ্ঞতার ভালগুলোকে বের করে আনা এবং তা অনুসরণ করা আর খারাপ দিকগুলোকে বের করে তা বর্জন করা। সোভিয়েত অভিজ্ঞতাকে বিচ্ছিন্ন করা আর চীনা অভিজ্ঞতার সাথে তা একীভূত না করা হচ্ছে ভাল অভিজ্ঞতাসমূহকে বের করে না আনা আর তা অনুসরণ না করা। কেউ যদি একটা পত্রিকা বের করে আর প্রাভদার মতো মতামত রাখে, যা বিশ্লেষণাত্মক নয়, সে হবে একটা তিন বছরের শিশুর মতো, যার সর্বদিকে সমর্থন দরকার যে অনুপাতে সে স্বাধীন চিন্তা হারিয়েছে। সবকিছুতে, তুলনার জন্য দুই পদ্ধতি তুলে ধরা দরকার। এটা হচ্ছে দ্বান্দ্বিকতা। অন্যথায় তা হবে অধিবিদ্যা।

৩. দ্বন্দ্ববাদ হচ্ছে প্রধান প্রবণতা ও পার্শ্ব ইস্যুসমূহকে, সার ও বহিরঙ্গের অধ্যয়ণের জন্য

দ্বন্দ্ববাদ হচ্ছে প্রধান প্রবণতা ও পার্শ্ব ইস্যুসমূহকে, সার ও বহিরঙ্গের অধ্যয়ণের জন্য। দ্বন্দ্বে প্রধান দ্বন্দ্ব ও গৌণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। অতীতে, অতি-সতর্ক অগ্রযাত্রার মতো ভুলসমূহ উত্থিত হয়েছিল কারণ আমরা প্রধান দ্বন্দ্ব ও সারকে আঁকড়ে ধরিনি এবং গৌণদ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং পার্শ্ব ইস্যুকে প্রধান প্রবণতা হিসেবে গ্রহণ করেছি এবং সারকে আঁকড়ে ধরিনি। রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল ও কেন্দ্রিয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরো সভা অনুষ্ঠিত করেছে এবং বহু বিচ্ছিন্ন সমস্যার সমাধান করেছে, কিন্তু তারা জরুরী প্রশ্নসমূহকে আঁকড়ে ধরেনি। এই সভায় আমরা অতীতের বহু প্রশ্নকে শলাপরামর্শ ও সমাধানের জন্য এনেছি।

৪. কোনো প্রশ্নকে পরীক্ষা করতে সার ও প্রধান প্রবণতাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন

মার্কসবাদ বলে যে কোনো প্রশ্নকে পরীক্ষা করতে সার, প্রধান প্রবণতা এবং লাইনকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটা দেখার জন্য যে দেশে সে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ করে কিনা, আন্তর্জাতিকভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিনা এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিকতাবাদের জন্য লড়াই করে কিনা। এই তিন উপাদান একটা লাইন গঠন করে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে, আমরাও একটা পার্টি যা সাম্রাজ্যবাদকে বিরোধিতা করে এবং সমাজতন্ত্র ও আন্তর্জাতিকতাবাদের জন্য কাজ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্য সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহও তাই। এই দিকসমূহ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী লাইনের সারকে তুলে ধরে। তারা দৃঢ় কিনা তা দেখার জন্য আমরা একটা তুলনা করতে পারি। টিটোর কথা ধরুন। সে কি দৃঢ়? আমার কাছে মনে হয় সে যা করে তার মধ্যে তিন দিকের সবকটির অভাব রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার কোনো অংশ সে চায় না। সে সর্বদাই বলছে যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ কত ভাল আর সোভিয়েত ইউনিয়ন কত খারাপ।

৫. বিপরীতের একতা এবং পারস্পরিক রূপান্তর

সকল প্রদেশ, পৌরসভা এবং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের উচিত প্রতি দুইমাসে একবার সভা ডাকা তাদের কাজের পর্যালোচনা ও সারসংকলন করতে। তাদের উচিত কতিপয় লোকের অথবা এক ডজন অথবা এরকম লোকের ছোটখাট সভা ডাকা। সমন্বয় ও সহযোগিতার দিক থেকেও তারা প্রতি দুই অথবা তিন মাসে একটা সভা ডাকতে পারেন। একটা আন্দোলনে বহু পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং তথ্য আদান প্রদান সর্বাংশে প্রয়োজন। সভাগুলো হচ্ছে উতপাদনের ছন্দে সুরারোপ করার উদ্দেশ্যে। কাজ ও উতপাদনের ছন্দ থাকতে হবে। একটা ঢেউ চুড়ায় উঠলে আরেকটা আসে। এটা হচ্ছে উচ্চ গতি ও নিম্ন গতির বিপরীতের একত্ব। সার্বিকভাবে এগিয়ে চলা, উচ্চ লক্ষ্যসহকারে অধিকতর, দ্রুততর, অধিকতর ভাল এবং অধিক অর্থনৈতিক ফলাফল অর্জনের সাধারণ লাইনের অধীনে তরঙ্গাকারে অগ্রগমণ হচ্ছে উচ্চ গতি ও নিম্নগতির বিপরীতের একত্ব এবং শ্রম ও বিশ্রামের মধ্যেকার বিপরীতের একত্ব। যদি কেবল উচ্চ গতি এবং শ্রম থাকে তা হবে একতরফা। যদি কেবল শ্রম থাকে এবং কোন বিশ্রাম না থাকে, কেমন করে তা হবে। কোন কিছু করার সময় উচ্চ গতির একটা পর্যায়কাল এবং নিম্নগতির একটা পর্যায়কাল থাকতে হবে। অতীতে কোন যুদ্ধ করার সময় সুসংহতকরণ, পুনসংঘটন এবং দুই অভিযানের মধ্যে বিশ্রামের পর্যায়কাল থাকতে  হতো। এক অভিযানের পর আরেক অভিযান চালানো অসম্ভব হতো। একটা যুদ্ধ করার মধ্যে গতির লয়ও থাকতে হবে। কেন্দ্রিয় সোভিয়েত এলাকা শতকার ১০০ ভাগ বলশেভিকীকৃত। “এটা সংহতকরণে আপত্তি করে আর দৃঢ়তা, নির্ভীকতা, কঠোরতা, সাহসিকতা, বিজয়ে এগিয়ে চলায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া এবং নান-চ্যাঙ[১]-এর উপর প্রত্যক্ষ আঘাত হানার কথা বলে”। কীভাবে তা সম্ভব? কঠিণ যুদ্ধ এবং বিশ্রাম ও সুসংহতকরণ হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। এটা হচ্ছে নিয়ম। এগুলো পারস্পরিক রূপান্তরযোগ্যও। এমন কোন কিছু নেই যা পারস্পরিক রূপান্তরযোগ্য নয়। উচ্চগতি নিম্নগতিতে রূপান্তরিত হয় এবং নিম্নগতি উচ্চগতিতে। শ্রম বিশ্রামে পরিণত হয় এবং বিশ্রাম শ্রমে পরিণত হয়। বিশ্রাম, সুসংহতকরণ এবং কঠিণ যুদ্ধও একইরকম। শ্রম ও বিশ্রাম এবং উচ্চগতি ও নিম্নগতিরও একত্ব রয়েছে। বিশ্রাম, সুসংহতকরণ এবং কঠিণ যুদ্ধেরও একত্ব রয়েছে। ঘুম থেকে উঠা এবং ঘুমাতে যাওয়াও বিপরীতের একত্ব। একটা প্রাচীন প্রবাদ আছেঃ “যে দীর্ঘসময় ধরে ঘুমিয়েছে, সে জাগার কথা ভাবে।” ঘুম জাগরণে রূপান্তরিত হয় এবং জাগরণ ঘুমে। সভার সূচনা সভার সমাপণীতে রূপান্তরিত হয়! একবার একটা সভা সূচিত হলে, শীঘ্রই তা সভার সমাপণীর উপাদানকে আলিঙ্গন করে। ঠিক এটাই ওয়াঙ সি-ফেঙ[২] অর্থ করেছেন যখন তিনি বলেনঃ “যদিও এক হাজার লির জন্য সামিয়ানা টানানো হয়েছিল, কখনোই কোন স্থায়ী ভোজসভা ছিল না।” লিন তাই-ইউ মর্মাহত হলেন যখন কোন ভোজ সভা শেষ হল আর অতিথিরা অন্তনির্হিত হলো। এটা ছিল অধিবিদ্যা। এটা ছিল এই বস্তুগত নিয়মের সম্পর্কে অজ্ঞতা যে যখন কোন সমাবেশ ঘটবে, একটা বিচ্ছিন্নকরণও অবশ্যই থাকতে হবে। ওয়াঙ শি-ফ্যাঙ লিনের পক্ষাবলম্বন করার চেষ্টা করেননি, বরং তিনি বলেন “যদিও এক হাজার লির জন্য সামিয়ানা টানানো হয়েছিল, কখনোই কোন স্থায়ী ভোজসভা ছিল না।” তাই, সেটা ছিল দ্বান্দ্বিকতা। এটাই হচ্ছে সত্য। এটা মানুষের দ্বারা সিদ্ধান্তকৃত নয়। সেটা সত্য কি নয় তার দ্বারা তা নির্ধারিত হতে হবে। একটা সভা শেষ হলে সমস্যা জমা হয় এবং আরেকটা সভার সূচনায় রূপান্তরিত হয়। কিছু সময়ের জন্য ঐক্য প্রয়োগ হবার পর মতের ভিন্নতা দেখা দেবে এবং তা সংগ্রামে রূপান্তরিত হবে। যখন পার্থক্যসমূহ উদ্ভূত হয়, নতুন অনৈক্য সূচিত হয়। প্রতিদিন অথবা প্রতিবছর ঐক্য থাকা সম্ভব নয়। যখন ঐক্যের কথা বলা হয়, তখন অবশ্যই অনৈক্য থাকবে। অনৈক্য হচ্ছে শর্তহীন। কখনো কখনো ঐক্যের কথা বলা হয় অথচ কোনো ঐক্যই থাকে না। তাই, ঐক্য অর্জনের জন্য কিছু করা প্রয়োজন হয়। সবসময় ঐক্যের কথা বলা এবং কখনোই সংগ্রামের কথা না বলা মার্কসবাদ নয়। ঐক্য অর্জিত হবার আগে ঐক্যকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পার্টি, শ্রেণী অথবা জনগণের সারির মধ্যে একই ব্যাপার। ঐক্য সংগ্রামে রূপান্তরিত হয় এবং পুনরায় ঐক্যে। সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের কথা না বলে কেবল ঐক্যের কথা বলা সঠিক নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন নেতৃত্ব ও যাদের নেতৃত্ব প্রদান করা হচ্ছে তার মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা বলে না। দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম ছাড়া কোন পৃথিবী থাকবে না, কোনো বিকাশ থাকবে না, কোন জীবন থাকবে না, কোনো কিছু থাকবে না। সকল সময় ঐক্যের কথা বলা একটা বদ্ধ জলাশয়ের মতো হতে পারে। এটা নিরানন্দময়। আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যের পুরোনো ভিত্তিকে ভেঙে ফেলতে হবে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং একটা নতুন ভিত্তিতে ঐক্য অর্জন করতে হবে। কোনটা ভাল, বদ্ধ জলাশয় না স্রোতস্বিনী ইয়াংসীর সীমাহীন প্রবাহ? পার্টি হচ্ছে এরকম, জনগণ এবং শ্রেণীও তাই। ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য। তখন করার মত কাজ থাকবে। উতপাদন ভোগে রূপান্তরিত হয় এবং ভোগ উতপাদনে। উতপাদন হচ্ছে ভোগের জন্য। উতপাদকরা স্রেফ অন্য শ্রমিকদের জন্য নয়, বরং তারা  নিজেরাও ভোক্তা। মাকর্স বলেছেন যে উতপাদন ভোগের জন্ম দেয়। উতপাদন ও ভোগ এবং গঠন ও ধ্বংস হচ্ছে বিপরীতের একত্ব এবং পরস্পর রূপান্তর যোগ্য। সারাদেশের উতপাদন হচ্ছে ভোগ এবং কয়েক দশকের জন্য যন্ত্রপাতির নবায়ন ও সংস্থাপনের জন্য। বীজবপন ফসল সংগ্রহে পরিনত হয় এবং ফসল সংগ্রহ বীজবপনে। বীজবপন হচ্ছে বীজ ব্যবহারের জন্য। বীজবপন করার পর তারা চারায় বেড়ে ওঠবে। যদি কোনো বীজ বপন করা না হয় কোনো চারা হবে না। ফসল তোলার পর নতুন বীজ বপন করা হয়। জীবন আর মৃত্যুও পরস্পরিক রূপান্তরযোগ্য। জীবন মৃতুতে রূপান্তরিত হয় আর জীবনহীন জিনিস জীবন্ত বস্তুতে পরিনত হয়। আমি মনে করি যে সব লোকেরা ৫০ বছর বয়সে মারা গেছেন তাদের জন্য উতসব করা দরকার। এটা এজন্য যে মানুষ অনিবার্যভাবে মারা যাবে। এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। শস্য হচ্ছে বাতসরিক উদ্ভিদ। প্রতি বছর তারা একবার জন্ম নেয় আর একবার মারা যায। অধিকন্তু, যত বেশি তারা মারা যায়, তত বেশি তারা জন্ম নেয়। যদি শুকরদের জবাই করা না হয়, তারা কমতে থাকবে আর কমতে থাকবে। কে তাদের খাওয়াবে? সেভিয়েত ইউনিয়নের দর্শনের সংক্ষিপ্ত কোষ আমার সাথে ভিন্নমত পোষন করে। তারা মনে করে যে জীবন ও মৃত্যুর রূপান্তর হচ্ছে আধিবিদ্যক এবং যুদ্ধ ও শান্তির রূপান্তর হচ্ছে ভুল। সর্বোপরি, কে সঠিক? দয়া করে প্রশ্ন করুন, যদি জীবন্ত জিনিসসমূহ জীবনহীন বস্তুতে রূপান্তরিত না হয় তারা কোথা থেকে আসবে? পৃথিবী অজৈব ও জৈব পদার্থে গঠিত। সকল জীবন্ত কাঠামো নাইট্রোজেন, হ্ইাড্রোজেন এবং অন্য ১০ উপাদান থেকে রূপান্তরিত হয়। জীবন্ত বস্তুসমূহ ব্যতিক্রমহীনভাবে জীবনহীন জিনিস থেকে রূপান্তরিত হয়। পুত্রেরা পিতায় রূপান্তরিত হয় আর পিতারা পুত্রে। নারীরা পুরুষে রূপান্তরিত হয় আর পুরুষেরা নারীতে। প্রত্যক্ষ রূপান্তর সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের পর যখন পুত্র ও কন্যারা জন্ম নেয়, তা কি রূপান্তর নয়? নিপীড়িত ও নিপীড়কের পারস্পরিক রূপান্তর একদিকে সামন্তপ্রভু ও পুঁজিপতিদের আর অন্যদিকে শ্রমিক ও কৃষকদের সম্পর্কের দিকে দিক নির্দেশ করে। অবশ্যই, নিপীড়ক বলতে আমরা শাসক শ্রেণীকে বোঝাই জনগণকে নয়। আমরা শ্রেণী একনায়কত্বের কথা বলছি, স্বতন্ত্র নিপীড়কদের কথা নয়। যুদ্ধ শান্তিতে রূপান্তরিত হয় আর শান্তি যুদ্ধে। শান্তি হচ্ছে যুদ্ধের বিপরীত। যখন কোনো যুদ্ধ থাকে না, তখন শান্তি থাকে। যখন ৩৮ সমান্তরালে শত্রুতা দেখা দেয়, তা হচ্ছে যুদ্ধ। একবার যুদ্ধ বন্ধ হলে আবারো শান্তি আসে। সামরিক ব্যাপারসমুহ হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের রাজনীতি। যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির সম্প্রসারণ। রাজনীতিও এক ধরনের যুদ্ধ। যে কোন হারে, পরিমাণ গুণে রূপান্তরিত হয় এবং গুণ পরিমাণে। ইউরোপে গোঁড়ামীবাদ তীব্র। যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, রূপান্তর পরমভাবে প্রয়োজন। একইভাবে, আমরা যদি ভাল না করি, আমরাও রূপান্তরিত হবো। যদি সেসময় আমাদের শিল্প পৃথিবীতে প্রথম হয়, আমাদের অহংকারী এবং চিন্তায় স্থবির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অসীম সসীমে রূপান্তরিত হয় এবং সসীম অসীমে। প্রাচীন দ্বান্দ্বিকতা মধ্যযুগীয় অধিবিদ্যায় রূপান্তরিত হয় এবং মধ্যযুগীয় অধিবিদ্যা আধুনিক দ্বান্দ্বিকতায় রূপান্তরিত হয়। বিশ্ব রূপান্তরযোগ্য। সমাজও তাই। পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয় এবং তারপর সাম্যবাদে। সাম্যবাদও নিজেকে রূপান্তর করবে। এরও শুরু ও শেষ আছে। নিশ্চিতভাবে, এটাও স্তরে স্তরে বিভক্ত হবে। সম্ভবত, এর অন্য নাম দেয়া হবে। এটা স্থির হবেনা। যদি কেবল পরিমাণগত পরিবর্তন থাকে এবং কোন গুণগত পরিবর্তন না থাকে তা দ্বান্দ্বিকতার বিরুদ্ধে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোন কিছু নেই যা জন্ম, বিকাশ ও বিলয়ের মধ্য দিয়ে যায়না। শিম্পাঞ্জি মানুষে পরিবর্তিত হল এবং মানুষ জন্ম নিল। মানবজাতির চুড়ান্ত ফল সমগ্রভাবে হচেছ বিলয়। মানুষ সম্ভবত অন্য কিছু জিনিসে পরিবর্তিত হবে। তখন পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবেনা। সূর্য শীতল হয়ে যাবে। এমনকি এখনও সূর্যের তাপ বিবেচনাযোগ্যভাবে শীতল হয়েছে প্রাচীন কালের তুলনায়। বরফ যুগে প্রতি ১২ মিলিয়ন বছরে প্রতিটি পরিবর্তন সংঘটিত হতো। যখন বরফ এলো, বিপুল সংখ্যায় জীবন্ত জিনিস মৃত্যুবরণ করলো। দক্ষিণ মেরুতে কয়লা জমাট বেঁধে আছে। তাই, এটা দেখা যায় যে প্রাচীনকালে এটা খুবই গরম ছিল। ইয়েন-চ্যাঙ কাউন্টিতে জীবাশ্ম খনন করে বের করা হয়েছে তাতে সুঙ রাজবংশের সময়কালের বাঁশের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাচীনকালে, ইয়েন-চ্যাঙে বাঁশ জন্মাতো। এখন সেখানে তা জন্মায়না।

ব্যতিক্রমহীনভাবে, প্রতিটি জিনিসের শুরু ও শেষ আছে। কেবল দুইটি জিনিস অসীমঃ স্থান ও কাল। অসীম সসীম নিয়ে গঠিত। সকল ধরণের জিনিস ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয় ও পরিবর্তিত হয়।

এসকল বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে আমাদের চিন্তা করার জন্য এবং আমাদের চিন্তাধারাকে উতসাহিত করতে। কারুর মস্তিষ্ককে অসংগঠিত রাখা বিপজ্জনক। নেতৃত্বস্থানীয় কেডারগণ এবং কেন্দ্রিয়, প্রাদেশিক, আঞ্চলিক ও কাউন্টি স্তরের কেডারগণ সবাই খুব গুরুত্বপুর্ণ। সকল ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত, কয়েক লক্ষ কেডার রয়েছে। তাদেরকে অধিক চিন্তা করতে হবে। তাদের কেবল সবসময় ধ্র“পদী রচনা অধ্যয়ণ করা উচিত নয়, বরং তাদের মস্তিষ্ককে গতিশীল করা দরকার যাতে তাদের চিন্তাকে প্রাণবন্ত রাখা যায়।

৬. সঠিক লাইন গড়ে ওঠে বেঠিক লাইনের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়

তারপরও ভুল করা হবে। ভুল না করা অসম্ভব। ভুল করা হচ্ছে একটি সঠিক লাইন গড়ে তোলার অপরিহার্য পূর্বশর্ত। একটি সঠিক লাইনের কথা বলা হয় একটি বেঠিক লাইনের প্রেক্ষিতে। এই দুটি হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। একটি সঠিক লাইন গড়ে ওঠে বেঠিক লাইনের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়। ভুল করা এড়ানো যায় আর নিঃখুত সঠিকতা ভুলের ঊর্ধ্বে-একথা বলা হচ্ছে একটা দৃষ্টিভঙ্গী যা মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে লঙ্ঘন করে। প্রশ্ন হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম ভুল করা অথবা ক্ষুদ্রতর ভুল করা। নিঃখুত ও খুত হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। দুই-পয়েন্ট তত্ত্ব হচ্ছে সঠিক আর এক পয়েন্ট তত্ত্ব হচ্ছে বেঠিক। ঐতিহাসিকভাবে, ভুলমুক্ত নিঃখুত সঠিকতার মতো কোন ঘটনা নেই। এটা স্রেফ বিপরীতের একত্বকে অস্বীকার করতে। এই দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে আধিবিদ্যক। যদি কেবল পুরুষ থাকতো, নারী না থাকতো, অথবা অস্বীকার করা হতো নারীর [অস্তিত্ব] আমরা কী করতাম? ন্যুনতম ভুল করতে সচেষ্ট হওয়া সম্ভব। স্বল্পতর ভুল করা যায় এবং করা উচিত। মার্কস ও লেনিন এটা করতে সক্ষম ছিলেন।

৭. সকল জিনিস ব্যতিক্রমহীনভাবে বিপরীতে ধাবিত হয়

সকল জিনিস ব্যতিক্রমহীনভাবে বিপরীতে ধাবিত হয়। গ্রীসের দ্বন্দ্ববাদ, মধ্যযুগের অধিবিদ্যা এবং রেঁনেসাঁ। এটা ছিল একটা নেতিকরণের নেতিকরণ। চীনও এরকম ছিল। যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়কালের মতবাদের শত স্কুলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল দ্বন্দ্ববাদ এবং সামন্ত যুগের ধ্রুপদী শিক্ষা ছিল অধিবিদ্যা। এখন আমরা দ্বন্দ্ববাদের ব্যাপারে কথা বলায় প্রত্যাবর্তন করেছি, তাই নয় কি? কমরেড ফ্যান ওয়েন-লেন, আপনি এর সাথে ভালভাবে পরিচিত। আমি একে যেভাবে দেখি তা হচ্ছে ১৫ বছর পর আমাদের লেজ নিশ্চিতভাবে ফুলে আকাশে উঠবে। অবশ্যই, যেহেতু জিনিসগুলো তাদের বিপরীত দিকে ধাবিত হবে, আমি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা না চালিয়ে পারি না। এমনকি যদি ভবিষ্যতে বৃহত জাত্যাভিমান উদ্ভূত হয়, এটাও বিপরীতে ধাবিত হবে। বৃহত জাতি দাম্ভিকতাকে প্রতিস্থাপনে যদি কোনো সঠিক জিনিস থাকে, ভয়ের কি আছে? সকল সমাজতান্ত্রিক দেশের জাতিদম্ভী হওয়া সম্ভব নয়। লেনিনের দ্বন্দ্ববাদ, স্তালিনের অধিবিদ্যা এবং বর্তমান দিনের দ্বন্দ্ববাদ, এসবও একটা নেতিকরণের নেতিকরণ।

৮. টেনশন রয়েছে আর শৈথিল্য ও সুসংহতকরণও রয়েছে

টেনশন রয়েছে আবার শৈথিল্য ও সুসংহতরণও আছে। অব্যাহত টেনশন থাকলে কাজ হবেনা। টেনশন এবং শৈথিল্য থাকতে হবে। অতিরিক্ত কাজ ভাল নয়। অতি জোর প্রদানে কাজ হবেনা। হোপে ও হুনান প্রদেশে লাল ও দক্ষ স্কুল প্রচুর পরিমাণে সংগঠিত করা হচ্ছে। এটা খুব ভাল। কিন্তু সবকিছু খুবই তীব্র। জনগণ ক্লাশে তন্দ্রাচ্ছন্ন। শিক্ষকেরাও তাই, কিন্তু তারা ঝিঁমুতে সাহস করেননা। আমাদেরকে উভয়তঃ দ্রতগতি ও শ্লথগতি হতে হবে। যদি শৈথিল্য ছাড়া কেবল টেনশন থাকতো, এমনকি [সম্রাটগণ] ওয়েন ও উ [চৌ রাজবংশের] দীর্ঘকাল চালাতে পারতো না। যদি টেনশন ছাড়া কেবল শৈথিল্য  থাকতো, তাহলেও ওয়েন ও উ  দীর্ঘকাল চালাতে পারতো না। ওয়েন ও উ উভয় সম্রাটই ছিল সাধু! তাসত্ত্বেও তারা তা করতে পারতোনা। টেনশন রয়েছে আবার শৈথিল্যও রয়েছে। ঐক্য রয়েছে, আবার সংগ্রামও রয়েছে। কেবল ঐক্য থাকলে এবং কোন সংগ্রাম না থাকলে চলবেনা। আমাদের অবশ্যই সন্দেহকারী থমাসদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যারা পতনের পর হিসেব চুকানো কথা বলে, কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐক্যের জন্য কাজ করা। আহ কিউ যা গভীরভাবে অনুভব করে যে তাকে বিপ্লব করার অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাকে অব্যাহতভাবে সমালোচনা করা আর সংস্কারে সহযোগিতা না করা ভাল নয়। প্রথমত, সংগ্রাম, দ্বিতীয়ত সহযোগিতা। আমাদেরকে হৃদয়বান হতে হবে। হৃদয়বান না হওয়া খারাপ অথবা খারাপ আকাঙ্খা থাকা যা আপনার পতনের আর আমার জয়ের বেশি কিছু ডেকে আনবে না। অনেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি অথবা অতি অল্প স্বতন্ত্র ব্যক্তি কোনটা ভাল? কিছু বেশি লোক থাকা ভাল। আমাদেরকে অবশ্যই সকল ইতিবাচক উপাদানকে আনতে হবে কাজে লাগানেরা জন্য।

৯. বিপরীতের রূপান্তর

চীনের একটা সুবিধা রযেছে। সে দরিদ্র এবং ফাঁকা (সাদা)। এরও একটা দ্বৈত চরিত্র রয়েছে। দরিদ্র বলতে বোঝায় যে বিপ্লব প্রয়োজন। কেবল সীমিত জ্ঞান থাকাটা ভাল নয়। বরং এটা সাদা এক পাতা কাগজের সাথে তুলনীয়। একদিকে লেখা রয়েছে। খুব বেশি লেখার বাকী নেই। অন্য পৃষ্ঠায় লেখা নেই। তা খালি। অনেক কিছু লেখার আছে। কারণ অল্প কয়েক দশক পর আমরা অপরাপর দেশগুলোকে ধরে ফেলবো।

১০. মৃত্যু এবং জীবন সংগ্রামের প্রশ্ন

মৃত্যু এবং জীবনসংগ্রামের প্রশ্ন। মৃত্যু ও জীবনসংগ্রামের ১০,০০০ বতসর কেটে গেছে। মৃত্যুকে কি ঠেকানো উচিত অথবা নয়? কোনো মুত্যু না থাকলে তা কাজে দেবে না। কেবল মৃত্যু থাকলেও তা কাজে দেবে না। ইস্পাত কোটায় যেমন মৃত্যু চাবিকাঠি বিন্দুটির নিশ্চয়তা দেয়, যেখানে জীবন চাবিকাঠি বিন্দুর বাইরে থাকে আর একে প্রতিরোধ করে না। ফ্রি পাবলিক কেয়ার উভয়ত মৃত এবং জীবিতদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে আর প্রত্যেকের যত্ন নেয়। মৃত্যু ও জীবনের দুটি দিক হচ্ছে কেন্দ্রিকরণ ও বিকেন্দ্রিকরণ, যা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং উভয়ই যার রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে, পাবলিক কেয়ারের ব্যবস্থা হচ্ছে মৃত্যু ও জীবনের দ্বন্দ্বের একত্ব। এটাই হচ্ছে আরোপ করার ক্ষমতা ধারণ এবং এর কিছুর বিকেন্দ্রিকরণের নীতি।

১১. সত্য ও মিথ্যা হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক, নিঃখুত খুঁতের সাথে সংগ্রাম থেকে আসে

সত্য আর মিথ্যা হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক। খুঁতের সাথে সংগ্রাম থেকে নিঃখুত আসে। সৌন্দর্য আর কদর্যতা দ্বন্দ্বমূলক। যদি কোনো ভাল মানুষ না থাকে, কোনো খারাপ মানুষ থাকবে না। যদি কোনো খারাপ মানুষ না থাকে, কোনো ভাল মানুষ থাকবে না। যদি কোনো খুব ভাল মানুষ না থাকে, কোনো খুব খারাপ মানুষ থাকবে না। সুগন্ধী ফল আর বিষাক্ত আগাছা। আমরা বিষাক্ত আগাছাকে ভয় পাই না। যখন তারা অতি জন্মাবে, সবাই আসবে এবং সেগুলোকে উতপাটিত করবে। সত্যেরা মিথ্যার সাথে সংগ্রাম থেকে গড়ে ওঠে। এই সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ভাল মানুষ সংখ্যায় বাড়ে আর খারাপ মানুষ কমে। বিষাক্ত আগাছা কি? আমি বুলগানিনের কাছে প্রশ্নটা তুলে ধরেছিলাম। ১০০ বছরেরও বেশি আগে টমেটোরা ইউরোপে বিষাক্ত আগাছা ছিল। আমি আরো বলেছিলাম যে যীশু খ্রীস্ট, গ্যালিলিও, কপারনিকাস,মার্টিন লুথার, সান ইয়াত-সেনের মতো বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বগণ এবং কমিউনিস্ট পার্টি জনগণ কর্তৃক বিষাক্ত আগাছা বিবেচিত হতো। এই শ্রেণী কোনো কিছুকে বিষাক্ত আগাছা মনে করলে ঐ শ্রেণী আশ্বস্ত হয় যে তা সুগন্ধী ফুল। উদাহারণস্বরূপ, জন ফস্টার ডুলেস আমেরিকার বুর্জোয়াদের কাছে ছিল সুগন্ধী ফুল, কিন্তু সমগ্র বিশ্বের জনগণ তাকে বিষাক্ত আগাছা হিসেবে নিয়েছেন। চিয়াং কাই-শেক কী? একটা সময়ের জন্য সে ছিল সুগন্ধী। মহান বিপ্লবের সময় ছিল সে ছিল সুগন্ধী। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় জনগণ চিয়াং কাই-শেক জিন্দাবাদ শ্লোগান দিত। জেনারেল চিয়াং আমার একজন পুরোনো বন্ধু। এসবই বিপরীতের একত্ব, বিপরীতের সংগ্রাম। যখন কোনো তুলনা করা যায়, তখনই কোনো পার্থক্য অঙ্কন করা যায় এবং বিকাশ সংঘটিত করা যায়। যখন কোনো তুলনা থাকে না, কীভাবে তা বিকশিত ও সৃষ্টি করা সম্ভব? মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বুর্জোয়াদের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়।

১২. বিপরীত প্রতিষ্ঠা করো

দুই ধরণের প্রতিষ্ঠিত বিপরীত রয়েছে। এক ধরণ মূলগতভাবে সমাজে অস্তিত্বশীল। উদাহারণস্বরূপ, দক্ষিণপন্থীরা। আমরা তাদেরকে হারতে দেব কিনা তা হচ্ছে একটা কর্মনীতির প্রশ্ন। আমরা যখন একটা আন্তরিক মত প্রচার সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদেরকে বিপরীত হিসেবে সেবা করতে দিলাম, মেহনতী মানুষকে সমাবেশিত করলাম তাদের সাথে বিতর্ক করতে, তাদের বিরোধিতা করতে এবং তাদের পরাজিত করতে। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে বহু দক্ষিণপন্থী ছিল। ৩,০০,০০০ দক্ষিণপন্থীর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রায় অর্ধেক।  ৩,০০,০০০ দক্ষিনপন্থীর মধ্যে বিপরীত অস্তিত্বশীল ছিল। আমরা তাদেরকে হারতে দিলাম জনগণকে শিক্ষিত করতে এবং তাদেরকে বিশ্লেষণ করতে জনগণকে সক্ষম করে তুললাম। অপর ধরনের প্রতিষ্ঠিত বিপরীত প্রকৃতিতে রিরাজ করেনা, কিন্তু তা বস্তুগত শর্তকে ধারণ করে। উদাহারণস্বরূপ, একটা বাঁধ নির্মাণের পর, আমরা কৃত্রিম পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারি বিপরীতকে প্রতিষ্ঠা করতে যাতে শক্তি উতপাদন করতে অথবা নৌকা চালাতে পানির স্তরকে বাড়ানো অথবা কমানো যায়। একটা কারখানা চালানোও হচ্ছে এক কৃত্রিমভাবে প্রতিষ্ঠিত বিপরীত।  আন-শান ইস্পাত কারখানাটি জাপানীদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। চ্যাঙ-চুন মটরযান নির্মাণ প্লান্ট ছিল নতুন। এটা জনগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এক বিপরীত। যা প্রকৃতিতে নেই, তাকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়, কিন্তু এর বস্তুগত ভিত্তি সেখানে থাকতে হবে। মহাশুণ্যে উপগ্রহ উতক্ষেপণ করা হয় কৃত্রিমভাবে। তাদেরকে মহাশুণ্যে পাঠানো যায় একবার যখন তাদের পরিচালক নিয়মসমূহ আবিষ্কৃত হয়। আমরা বস্তুবাদী এবং অপসারণের ভয়ে ভীত নই, কারণ অপসারণ হচ্ছে একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমার মনে হয় ভ্যাচেস্লাভ এম মলোটভের অপসারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সুবিধা হয়েছিল, চেন তু-সিউ, লো চাঙ-লুঙ, চাঙ কুও-তাও এবং কাও কাঙের অপসারণবাদী ততপরতা আমাদের সুবিধা এনে দিয়েছিল, এবং ওয়াঙ মিঙ লাইন কয়েকবার এবং “বাম” বিচ্যুতিবাদী লাইন তিনবার গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের শিক্ষিত করেছে। এই বিপরীতসমূহের সকলের সুবিধা রয়েছে। অবশ্যই, মলোটভ, কাও কাঙ অথবা চেন তু-সিউকে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই আবহাওয়া থাকবে তারা উদ্ভূত হবে। যদিও ভয়ের কিছু নেই। আমাদের অবশ্যই এদেরকে অতিক্রম করতে হবে। তথাকথিত আশাবাদ হচ্ছে আমাদের প্রধান দিক। আমাদের উদ্বেগও রয়েছে। যখন এই দক্ষিণপন্থীরা উদ্ভূত হল কেউ কি উদ্বিগ্ন হননি? আমি কিছুটা উদ্বিুগ্ন ছিলাম। আমার কাছে প্রয়োজন ছিল নেতৃত্বের শৈল্পিকতা সম্পর্কে বলা যাতে একটা খারাপ বস্তুকে ভাল বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায়। যদি পূর্বতন কারো দূরদৃষ্টি থাকতো তিনি এর সংঘটনকে প্রতিরোধ করতে পারতেন অথবা এটা সংঘটিত হওয়ার পর একে একটা ভাল জিনিসে রূপান্তরিত করতে পারতেন। আমরা ভয় পাবনা যদি আমাদের ১ কোটি ২০ লাখ পার্টি সদস্যের মধ্যে ২০,০০০ অথবা ৩০,০০০ জনের সচেতনতা এবং দূরদৃষ্টি থাকে। তাই, ভয়ের কি আছে! ভীত হলে চলবেনা! একটা বিশ্বযুদ্ধ যাতে না লড়তে হয় তার জন্য আমাদের চেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু আমাদের যদি লড়তে হয়,আমরা ভীত হবোনা। সাধারণ কর্মনীতি হচ্ছেঃ “অতীত থেকে সতর্কীকরণ গ্রহণ করা ভবিষ্যতে আরো সতর্ক হতে; রোগীকে বাঁচাতে রোগ সারানো।” যারা ভুল করেছেন তাদেরকে আমাদের অবশ্যই ভুল সংশোধনের অনুমতি দিতে হবে। আজকে আমরা খুবই ঐক্যবদ্ধ। সবকিছু শান্ত। কেন্দ্র ও অঞ্চলে সবকিছুই ভাল। এখন আমরা  অতিসতর্ক অগ্রগমণ সমস্যাকে সমাধান করেছি এবং নতুন ভিত্তিতে নতুন ঐক্য অর্জন করেছি।

১৩. বিপরীত প্রতিষ্ঠা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

জনগণের উদ্যোগ বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল। বিপরীত প্রতিষ্ঠা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি দক্ষিণপন্থীদের হারতে অথবা কথা বলতে অনুমোদন দেই সেটা পরিকল্পনা অনুসারে। আমরা এটা করি বিপরীত প্রতিষ্ঠা করতে। শুদ্ধি অভিযানের পর, কিছু কমরেড শুদ্ধিকরণ ও পুনর্গঠনকে এড়িয়ে গেলেন এবং বড় হরফ দেয়ালপত্র ও ২-বিরোধী আন্দোলন [অপচয় ও রক্ষণশীলতাবাদের বিরুদ্ধে]-এর উপর জোর দিলেন বিপরীতসমূহকে প্রতিষ্ঠা করতে। তথাকথিত বিপরীতসমূহকে প্রতিষ্ঠা করা যায় যদি তারা সেই জিনিস হয় যা বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল হয়। যেসব জিনিস বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল নয়, তাদেরকে বিপরীত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

১৪. বিপরীতের মতামত শুনুন

বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদকে সম্মান করা হচ্ছে বিতর্ককে উতসাহিত করা। আমাদের অবশ্যই বিপরীতসমূহের মতামত শুনতে হবে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে হবে এবং বিপরীতসমূহকে উন্মোচন করতে হবে।

১৫. দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নসমূহকে অধ্যয়ন করুন

আমি জানি না কোন কমরেড চেঙ চৌ সম্মেলনে “বড় যৌথ ও ছোট স্বাধীনতা” প্রশ্নটি এনেছেন। যাই হোক, এটা খুব ভাল। এটা যদি হতো “বড় স্বাধীনতা এবং ছোট যৌথ”, জন ফস্টার ডুলেস, হুয়াঙ ইয়েন-পেই এবং জুঙ ই-জেন একে স্বাগত জানাতো। আমাদেরকে উতপাদন এবং জীবিকাকেও আঁকড়ে ধরতে হবে। এটা হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। দুই পায়ে হাঁটাও বিপরীতের একত্ব। এসবই দ্বন্দ্ববাদের রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত। বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদ সংক্রান্ত কার্ল মার্কসের তত্ত্ব আমাদের দেশে ১৯৫৮ সালে বিরাট উন্নতি সাধন করেছে। উদাহারণস্বরূপ, ভারী শিল্পের বিকাশে অগ্রাধিকার দেয়ার শর্তে আমরা শিল্প ও কৃষির, ভারী শিল্প ও হালকা শিল্পের, জাতীয় শিল্প ও আঞ্চলিক শিল্পের, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের সংস্থাসমূহের, ক্ষুদ্র আদি গ্রুপ ও বড় আধুনিক গ্রুপ এবং আদিম ও আধুনিক পদ্ধতির যুগপত বিকাশ ঘটিয়েছি। এখন প্রশাসনের ব্যবস্থা রয়েছে-কেন্দ্রিয়, ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব এবং আঞ্চলিক স্তর-থেকে-স্তর প্রশাসন। কেন্দ্রিয় সরকার থেকে শুরু করে নীচের দিকে প্রদেশ, অঞ্চল, কাউন্টি এবং কমিউন থেকে উতপাদন টিম পর্যন্ত সবজায়গায় কর্তৃত্ব অবশ্যই বন্টন করে দিতে হবে। তাদের কোনো কর্তৃত্ব না দেয়া উপকার বয়ে আনবে না। এই কতিপয় ধারণা আমাদের পার্টিতে ইতিকৃত হয়েছে এবং এটা খুব ভাল। ক্ষুদ্র আদি গ্রুপ এবং বৃহত আধুনিক গ্রুপও যুগপত বিকশিত করা হচ্ছে। এখনও মাঝারি আধুনিক গ্রুপ রয়েছে। তাঙ-শান এবং লিয়েন-ইয়ুন-কাঙ উদাহারণস্বরূপ কি মাঝারি আকারের নয়? ক্ষুদ্র আধুনিক গ্রুপ কি আছে? হ্যাঁ, আছে। পাশাপাশি, আধুনিক-আদি একীকৃত গ্রুপসমূহ আছে। এক কথায়, এটা খুবই জটিল। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের কিছু দেশে এগুলো অবৈধ ও অননুমতিযোগ্য। আমরা তাদের অনুমতি দেই। আমাদের মতো হতদরিদ্র দেশগুলিতে কিছু ক্ষুদে আদি গ্রুপকে সংগঠিত করা খুবই ভাল!  বৃহত আধুনিক গ্রুপসমূহ সংগঠিতকরণে মনোযোগ কেন্দ্রিভূতকরণ খুবই একঘেয়েও হবে। কৃষিতেও, এটা খুবই জাটিল। উচ্চ উতপাদন এবং নিম্ন উতপাদন রয়েছে। উচ্চ ও নিম্ন উতপাদন যুগপত অস্তিত্বশীল। “তিন তৃতীয়র ব্যবস্থা”র কর্মনীতি চাষাবাদে এখন যে বিপুলভাবে প্রযুক্ত হচ্ছে তা ছিল জনগণের একটা সৃষ্টি। পেই-তাই-হো সম্মেলন কর্তৃক এটা আঁকড়ে ধরা হয়েছিল যা নির্ধারিত করেছিল এক তৃতিয়াংশ জমিতে খাদ্যশস্য উতপাদন, এক তৃতিয়াংশ জমি অনাবাদী রাখা এবং এক তৃতিয়াংশ জমিতে গাছপালা জন্মানো। এটা সম্ভব যে তা কৃষি বিকাশের প্রবণতায় পরিনত হবে। পেই-তাই-হো সম্মেলন আরো নিয়ে এল “কৃষির জন্য আট পয়েন্ট সনদ”-সেচ, সার, জমির উন্নতি, বীজ, ঘনিষ্ঠ চারারোপন, শস্যরক্ষা, খামার যন্ত্রপাতির সংস্কার এবং মাঠ ব্যবস্থাপনা। সেচ মানে পানি দেওয়া। মানুষ পানি ছাড়া বাঁচেনা। একইভাবে, চারাগাছও পানি ছাড়া বাঁচেনা।

সামাজিক ব্যবস্থার দিক থেকে, সমাজতান্ত্রিক স্তরে দুই ধরনের মালিকানা রয়েছে যারা পাশাপাশি অস্তিত্বশীল এবং বিপরীতের একত্ব। যৌথ মালিকানা সমগ্র জনগণের কমিউনিস্ট মালিকানার উপাদানকে ধারণ করে। ইউ-চিন সম্প্রতি বলেন যে এই মত রাখায় চীন সঠিক যে যৌথ মালিকানা কমিউনিস্ট উপাদানকে ধারণ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ মালিকানা এবং সমগ্র জনগণের মালিকানাও কমিউনিস্ট উপাদানসমূহকে ধারণ করে। পুঁজিবাদী সমাজ সমাজতান্ত্রিক যৌথ’র উতপাদন পদ্ধতি সংগঠিতকরণে অনুমোদন দেয়না, বরং কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্বের অধীনে সমাজতান্ত্রিক সংস্থাসমূহে কমিউনিস্ট উপাদানসমূহের বৃদ্ধির অনুমোদন দিতে হবে। তিন ধরণের মালিকানা যথা, যৌথ মালিকানা, সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানা এবং সমগ্র জনগণের কমিউনিস্ট মালিকানাকে পরম বলায় এবং তাদের নির্দিষ্টভাবে পৃথক ব্যাখ্যা দেয়ায় স্তালিন ছিলেন ভুল। উপরের জিনিসগুলো কি দ্বন্দ্ববাদের বিকাশ গঠণ করে অথবা নয়? চেংচৌ সম্মেলন “বড় যৌথ ও ছোট স্বাধীনতা” এবং “উতপাদন আঁকড়ে ধরো এবং জীবিকা আঁকড়ে ধরো” শ্লোগান তুলে ধরে। এটা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদের সম্প্রসারণ। উ-চ্যাঙ সম্মেলন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সাথে উদ্যমের সম্মিলনের প্রশ্নটি তুলে ধরেছে। একটা পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে, যা গরম ও ঠাণ্ডা উভয়ই ছুঁড়ে দিতে পারে, শুধু বিরাট প্রতিজ্ঞা ও উদ্যম থাকলেই চলবেনা, বরং বিবেচনাযোগ্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থাকতে হবে। অবশ্যই, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মনে হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য এই সিদ্ধান্তের প্রচার দেরিতে করা ভাল। এখনকার জন্য আমরা কেবল একটা ইশতেহার প্রচার করবো। আগামী বছর, মার্চে, জাতীয় গণ কংগ্রেস সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে প্রচার করবে। এভাবে তা সমগ্রভাবে আমাদের প্রতিজ্ঞা ও উদ্যমের সাথে সংগতিপূর্ন হবে। এটা ১৯৫৮ সালের মহান অগ্রগামী উলম্ফনের ফল হিসেবে আত্মস্থকৃত কিছু অবাস্তব প্রবনতাকে এড়িয়ে যাবে। এটা অধিকতর কর্তৃত্বমুলক এবং অধিকতর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনমূলক হবে। এক সময় আমি আগামী বছর ৩ কোটি টন ইস্পাত উতপাদনের পক্ষে ছিলাম। উ-চ্যাঙে আসার পর আমি মনে করলাম এটা মোটের উপর তেমন চমতকার ধারনা নয়। তার পূর্ব পর্যন্ত আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম কেবল এ প্রশ্নে যে একটা প্রয়োজন ছিল এবং তা সম্ভব ছিল কিনা তা বিবেচনা করিনি। পরে, সম্ভাবনার প্রশ্নটি হিসেবে নিলাম। এবছর ১ কোটি ৭ লক্ষ টন উতপাদন ইতিমধ্যে আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে রয়েছে। পরবর্তী বছর ৩ কোটি টন, তারপরের বছর ৬ কোটি টন এবং ১২ কোটি টন  ১৯৬২- তে একটা ভ্রান্ত সম্ভাবনা এবং বাস্তব সম্ভাবনা নয়। এখন স্থিরকৃত উতপাদন কোটার কিছু কাঁটছাঁট আমাদের কারা প্রয়োজন এবং একে ততটা উচ্চ স্থির করা উচিত না। আমাদের কিছু ভর্তুকি দেওয়া উচিত এবং জনগণের অনুশীলণকে আমাদের পরিকল্পনাকে অতিক্রম করতে দেওয়া উচিত।এটাও দ্বান্দিকতার একটা প্রশ্ন। আমাদের নেতৃস্থানীয় কেডারদের প্রচেষ্টাও জনগনের অনুশীলনের অন্তর্ভূক্ত। আমরা যদি কোটা একটু নীচে নামাই এবং অনুশীলন যদি তাকে বাড়ায়, তা সুবিধাবাদ নয়। মুিক্তর পর ইস্পাত উতপাদন বারংবার দ্বিগুন থেকে দ্বিগুন হয়েছে। এই পৃথিবীতে, প্রাচীন কাল থেকে কখনো তা ঘটেনি।একে কিভাবে সুবিধাবাদ বলা যায়? এখানে একটা আর্ন্তজাতিক যোগাযোগ রয়েছে। সেভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক শিবির সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেনির আর্ন্তজাতিক সংহতির সাথে যুক্ত। এ প্রশ্নে, আমরা অবশ্যই লাইনে প্রথম হতে চেষ্টা করবোনা। আজকাল, কিছু দেশ শ্রেষ্টত্বের জন্য সংগ্রামরত। বস্তুত, আমরা যদি কমিউনজিমে সর্বাগ্রে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে প্রবেশ করি, সেটা হবে আন-শান ইস্পাত কারখানা, ফু-শান, লিওআওনিং প্রদেশ, সাংহাই অথবা তিয়েনসিন। মনে হয় সর্বাগ্রে কমউিনিজমে প্রবেশ করা চীনের জন্য লজ্জাজনক হবে। তাছাড়া, সম্ভাবনা আছে কি নেই সেটাও একটা প্রশ্ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ, কয়েক মিলিয়ন উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন বুদ্ধিজীবি এবং ৫ লক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে, এইসব মার্কিন যুক্তরাষ্টের চেয়ে বেশি। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিমধ্যেই ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টন ইস্পাত রয়েছে, যেখানে আমাদের এখনও এই যতসামানা রযেছে কেবল। তাদের সঞ্চয় বেড়েই চলেছে যেখানে আমরা সবে শুরু করেছি। সে কারণে সম্ভাবনাও একটা প্রশ্ন।ক্রুশ্চেভ এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন যে সেভিয়েত ইউনিয়ন এখন থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কমিউনিজমে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দুই ধরনের মালিকানা ক্রমান্বয়ে একীভূত হবে।এটা খুবই ভাল জিনিস।এমন কি আমাদের পক্ষে যদি সর্বাগ্রে  কমিউনিজমে প্রবেশ সম্ভব হয় আমাদের তা করা উচিত হবে না। অক্টোবর বিপ্লব ছিল লেনিনের উদ্যোগ। আমরা সবাই কি লেনিন থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না? তাড়াহুড়ার চিন্তাটা কী? এটা কার্ল মাকর্সের কাছে গিয়ে পুরস্কার চাওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। যদি তাই হয়, সম্ভবত আমরা আর্ন্তজাতিক প্রশ্নে একটা ভুল করবো। এটাও একটা সমস্যা। আমাদের উচিত পারস্পরিক উপকারের ব্যাপারে কথা বলা। দ্বদ্বতত্ত্ব সঙ্গতিপুর্ন ভাবে বিকশিত হয়েছে এবং এটা আশুভাবে এসমস্যার সাথে জড়িত।

১৬. আমাদের কমরেডদের সাথে ব্যবহারে আমাদের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি গ্রহন করা উচিত

আমাদের কমরেডদের সাথে ব্যবহারে, তারা যেই হোননা কেন, যতক্ষন পর্যন্ত তারা শত্রুভাবাপন্ন অথবা অন্তর্ঘাতক উপাদান নন, আামাদের আধিবিদ্যক পদ্ধতির বদলে ঐক্যর মনোভাবের দ্বান্দিক পদ্বতি গ্রহন করা উচিত। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি বলতে কি বোঝায়? এর অর্থ হচ্ছে আমাদের অবশ্যই সবকিছুকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে যে মানুষ ব্যতিক্রমভাবে ভুল করে এবং ভুল করার কারণে তার সবকিছুকে নেতিকরণ করা যাবেনা। লেনিন একদা বলেছিলেন যে পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে ভুল করেনি। আমি অনেক ভুল করেছি।এইসব ভুল আমার জন্য উপকারী হয়েছে এবং আমাকে শিক্ষিত করেছে। যে কোন ব্যক্তির অন্যদের সমর্থন দরকার। “একজন ভাল কর্মীর তিনজন সাহায্যকারী দরকার, একটা বাঁশের বেড়াঁরও তিনটা খুঁটি দরকার।“ এটা হচ্ছে একটা চীনা প্রবাদ। আরেকটা  চীনা প্রবাদ বলে “যদিও আপনার জলপদ্ম ভাল ও সুন্দর, তথাপি তার দাড়িয়ে থাকার জন্য সবুজ পাতার দরকার।”আপনি ক্রুশ্চেভ, যদিও আপনার জলপদ্ম ভাল ও সুন্দর, তথাপি তাকে দাঁড়ানোর জন্য সমর্থন দরকার। আমার জলপদ্ম খুব ভাল নয়, এর সমর্থনের সবুজ পাতার প্রয়োজন ততোধিক। চীনে আমাদের আরেকটি প্রবাদ আছে যা এরকমঃ “তিন মুচি তাদের বুদ্ধিসহযোগে চু-কো লিয়াঙ-এর সমান হতে পারে, যে হচ্ছে মূল” [৩] আমরা যৌথ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করছি। একা চু-কো লিয়াঙ পুর্ন নয় এবং সর্বদাই সীমাবদ্ধতা থাকবে। কেউ নিজেকে সবজান্তা এবং ইশ্বরের মত সর্বশক্তিমান বললে তা আমার কাছে দুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি মনে হয়। তাই ভুল করেছেন যেসব কমরেড তাদের প্রতি আমরা কী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করবো? আমাদেরকে বিশ্লেণাত্মক হতে হবে এবং আধিবদ্যিক পদ্ধতি নয়, দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের পার্টি পূর্বে অধিবিদ্যা-গোড়ামীবাদ -এ ডুবে গেছিল সেইসব লোকদের ধ্বংস করে যাদেরকে সে পছন্দ করেনি। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আমরা গোড়ামীবাদকে সমালোচনা করি এবং দ্বান্দ্বিকতা শিখি একটু একটু করে। দ্বান্দ্বিকতার মৌলিক দৃষ্টিকোণ হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। এই দৃষ্টিকোণকে স্বীকৃতি দেয়ার পর আমরা সেসব কমরেডকে নিয়ে কী করবো যারা ভুল করেছে? প্রথমত সমগ্রভাবে সমালোচনা করতে আমরা সংগ্রাম চালবো এবং তার ভ্রান্ত মতাদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে অপসারণ করব। দ্বিতীয়ত, আমরা তাকে সাহায্য করবো। এক, সংগ্রাম করা দুই সহযোগিতা করা। এ থেকে শুরু করে, আমরা তাকে সাহায্য করবো তার ভুল সংশোধনে যাতে সে একটা সমাধান খুঁজে পায়।

আরেক ধরনের লোকেদের সাথে ব্যাবহারে তা হবে ভিন্ন। টিটো এবং চীনের নিজস্ব চেন-তু-সিউ। তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব গ্রহণ করার কোনো উপায় নেই, তারা সংশোধনরে বাইরে। হিটলার, চিয়াং কাই-শেক এবং জারের মতো লোকেররা অসংশোধনীয় এবং তাদেরকে উতখাত করা ব্যতিত অন্য কোন কিছু করার নেই। কারণ, যতদুর আমরা বুঝি তারা দ্বৈত চরিত্রের নয়, বরং একটি পরম প্রকৃতির। চুড়ান্ত বিশ্লেষণে, সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সম্পর্কেও একই রকম। শেষে নিশ্চিতভাবে তারা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বারা অপসারিত হবে। মতাদর্শের ক্ষেত্রেও একই। আমরা ভাববাদকে বস্তুবাদ দ্বারা এবং আস্তিক্যবাদকে নাস্তিক্যবাদ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবো। এটা রণনৈতিক বক্তব্য। কৌশলগত ভাবে তা হবে ভিন্ন। আপোষ করার প্রয়োজন হবে। কোরিয়াতে, ৩৮ সমান্তরালে, আমরা কি আমেরিকানদের সাথে আপোষ করিনি? ভিয়েতনামে ফরাসীদের সাথে কি [আমরা] আপোষ করিনি? প্রতিটি কৌশলগত স্তরে সংগ্রাম চালাতে এবং একই সাথে আপোষ করতে দক্ষ হতে হবে। এখন আসুন আমরা কমরেডদের মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নে ফিরে যাই। আমি পরামর্শ দেই যে যেখানে কমরেডদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, তাদের উচিত আলাপ আলোচনা শুরু করা। কিছু লোক মনে হয় এটা বিশ্বাস করেন যে একবার তারা সাম্যবাদে প্রবেশ করলে কোনো মতানৈক্য ও সীমাবদ্ধতা ব্যতীত তারা সাধুতে পরিণত হবেন। যখন কেউ বিশ্লেষণ করতে পারেন না তখন তিনি যেন  একটা লৌহ থালার মতো যা সুষমভাবে তৈরি, যেখানে কোনো আলাপ আলোচনার প্রয়োজন নেই। এটা এরকম যে একবার আমরা সাম্যবাদে পৌঁছলে আমাদের শতকরা ১০০ ভাগ মার্কসবাদী না হলে চলবে না। বাস্তবে, বিভিন্ন প্রকরণের মার্কসবাদী রয়েছে। শতকরা ১০০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৯০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৭০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৬০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৫০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে। কিছু লোক কেবল ১০ ভাগ অথবা ২০ ভাগ মার্কসবাদী। একটা ছোট চক্রের মধ্যে ধরুন, দুই অথবা কতিপয় ব্যক্তির ভেতর আমরা আলাপ আলোচনা করতে পারি অথবা পারি না? আমরা কি ঐক্য থেকে যাত্রা করে ও সহানুভূতির চেতনা থেকে আলাপ আলোচনা করতে পারি কিনা? এগুলো অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে দরকষাকষি নয় বরং কমিউনিস্ট জনগণের সারির মধ্যে দরকষাকষি। এই সময়, আমরা এবং অন্য ১২ দেশ দরকষাকষি করছি কিনা? আন্তর্জাতিকভাবে, ৬০-এর অধিক দেশ দরকষাকষি করছে কিনা? বস্তুত তারা দরকষাকষি করছে। তাই বলা যায়, মার্কসবাদ-লেনিনবাদে অহংকারী না হওয়ার নীতির অধীনে আমাদের অন্যদের কিছু গ্রহণযোগ্য মতামত গ্রহণ করা উচিত এবং আমাদের কিছু বর্জনযোগ্য মতামতকে বর্জন করা উচিত। এভাবে আমাদের দুই হাত থাকবে। একহাতে আমরা সেই কমরেডদের সাথে সংগ্রাম চালাবো যারা ভুল করেছে এবং অন্যহাতে আমরা তার সাথে ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলবো। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মতবাদের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়ার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম। এটা হচ্ছে একহাত। অন্য হাতটি হচ্ছে ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলার। ঐক্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে একটা সমাধানের পথ করে দেওয়া এবং তার সাথে আপোষ করা। একে বলা হয় নমনীয়তা। নীতি ও নমনীয়তার একীকরণ হচেছ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের এক মতবাদ। এটাই হচ্ছে বিপরীতের একত্ব।

যে বিশ্বই হোক না কেন, নির্দিষ্টত একটা শ্রেণী সমাজ, অবশ্যই সর্বদাই তা দ্বন্দ্বে পুর্ণ। কিছু লোক বলেন যে একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে দ্বন্দ্ব “খুঁজে পাওয়া” সম্ভব। আমার কাছে এমন বিবৃতি ভুল। যখন বিশ্ব সেগুলোতে (দ্বন্দ্বে) পরিপুর্ণ, কেউ দ্বন্দ্ব “খুঁজে পাওয়া” বলতে পারেন না। বলতে পারেন না যে কোথাও দ্বন্দ্ব বিরাজ করে না, কোনো ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করা যায় না। যদি কোন ব্যক্তিকে অবিশ্লেষণযোগ্য হিসেবে মনে করা হয় তা হচ্ছে অধিবিদ্যা। একটা পারমাণবিক বোমার ভেতরে তাকান। এটা দ্বন্দ্বে পরিপুর্ণ এবং দ্বন্দ্বের একত্বে পুর্ণ। পারমাণবিক নিউক্লিয়াস এবং ইলেক্ট্রনসমূহ-এই দুই বিপরীতের একত্ব রয়েছে। নিউক্লিয়াসের ভেতরে নিউট্রন ও প্রোটনের বিপরীতের একত্ব রয়েছে। প্রোটনের ভেতরে রয়েছে প্রোটন ও এ্যান্টি-প্রোটন এবং একটা নিউট্রনের ভেতরে রয়েছে নিউট্রন ও এ্যান্টি-নিউট্রন। সংক্ষেপে, বিপরীতের একত্বসমূহ হচ্ছে সীমাহীন। বিপরীতের একত্বের এবং দ্বন্দ্ববাদের দৃষ্টিকোণে ব্যাপারে আমাদেরকে প্রচুর প্রচার চালাতে হবে। আমাদের দ্বন্দ্ববাদকে দার্শনিকদের চক্র পরিত্যাগ করতে হবে এবং ব্যাপক জনগণের মধ্যে যেতে হবে। আমি পরামর্শ দেই, আমরা যেন এই সমস্যাকে রাজনৈতিক ব্যুরোর সভায় আলোচনা করি এবং প্রতিটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির পুর্ণাঙ্গ অধিবেসনে এবং স্থানীয় পার্টিকমিটিসমূহের বিভিন্ন স্তরে আলোচিত হোক। বস্তুত, আমাদের শাখা সম্পাদক দ্বন্দ্ববাদ বোঝেন। যখন তিনি শাখা কংগ্রেসের প্রতি তার রিপোর্ট প্রস্তুত করেন, তিনি তার ছোট নোটবুকে প্রায়শই দুই পয়েন্ট লিখে রাখেন। প্রথমটি হচ্ছে ভাল দিকসমূহ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে খারাপ দিকসমূহ-যা হচ্ছে একের দুইয়ে বিভক্তি। এটা হচ্ছে একটা সার্বজনীন প্রক্রিয়া। এটা মূর্তভাবে হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ।

১৭. সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে সম্পর্ক

পার্টির ভেতরে অথবা বাইরে আমাদের অবশ্যই সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। একটা গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে সেইসব লোকেদের বোঝাপড়া করা যারা ভুল করেছে। সঠিক দৃষ্টিকোণ হচ্ছে প্রত্যেককে বিপ্লব করতে দেওয়া। যখন তিনি কোন ভুল করবেন, এই সাধারণ কর্মনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজনঃ “অতীত থেকে সতর্কীকরণ গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য অধিকতর যতনবাণ হওয়া এবং রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো,” এবং ভুল সংশোধনে তাকে সাহায্য করা। “আহ কিউ-এর সত্য গল্প” হচ্ছে চমতকার একখণ্ড লেখা। আমি পরামর্শ দেবো যারা এটা পড়েছেন তাদের পুনপঠনে এবং যারা এটা পড়েননি তাদের যতনের সাথে পড়তে। এই গল্পে লু শুন পশ্চাদপদ ও অসচেতন কৃষকদের সম্পর্কে লিখেছেন যারা অন্যের সমালোচনাকে সর্বাধিক ভয় পেত এবং যে তাকে সমালোচনা করতো তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতো। তার ঝুঁটিতে কিছু কিছু জায়গায় দাউদের ক্ষত ছিল। আহ কিউ নিজে এই ক্ষতগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে চাইতোনা এবং এই ভয়ে ভীত ছিল যে অন্যেরা এই নিয়ে কথা বলবে। সে যত এমন আচরণ করতো, মানুষ তত বলতো। শেষে আহ কিউ আত্মরক্ষায় চলে যেত। যাহোক, লু শুন বিশেষভাবে “বিপ্লব থেকে বাদ পড়া” শিরোনামে একটা অধ্যায় লেখেন যাতে ম্যাজিস্ট্রেট চাওকে বলা হয়েছে আহ কিউকে বিপ্লব থেকে বিরত রাখতে। প্রকৃতপক্ষে, আহ কিউ যাকে বিপ্লব বলেছেন তা ছিল স্রেফ নিজের জন্য কিছু জিনিস লুট করা। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট চাও এমনকি তাকে এভাবে বিপ্লব করতে দেননি। হুয়াঙ আই-ফেঙ এবং চ্যাঙ সিউ ইউনের মতো কমরেডরা যারা ভুল করেছেন, তাদের প্রতি কিছু লোক বলেন যে আমাদেরকে দেখতে হবে তারা সংস্কার করেন কিনা। আমি বলি যে স্রেফ দেখায় কাজ হবেনা। আমাদের এখনো তাদের সংশোধনে সহযোগিতা করতে হবে। তাই বলা যায়, প্রথমে দেখা এবং দ্বিতীয়ত, সহযোগিতা করা। যেসব লোকেদের পর্যাপ্ত “সাহায্য” করা হয়নি, তাদের মতাদর্শ সঠিক হতে পারেনা। যদি লোকেরা ভুল করে আর আপনি তাদের দুর্যোগ দেখে আনন্দ পান, সেটা সংকীণতাবাদ। এখানেই কাও কাঙের পতন ঘটেছে, উল্টানো ঘটেছে। তিনি ঘটনাকে সাজিয়েছেন চার লোক চক্র এবং দুই বাজার স্টল হিসেবে। এগুলোকে সত্যি মনে করে তার উচিত ছিল প্রথমত, দেখা এবং দ্বিতীয়ত সহযোগিতা করা। কিন্তু তিনি তা করতে প্রস্তুত ছিলেননা। শেষে তিনি এত কঠিণভাবে পতিত হলেন যে আর উঠতে পারলেননা। বিপ্লবের ব্যাপারে যতদূর বলা যায়, সর্বদাই কিছু বেশি লোক থাকা ভাল। হাতে গোনা কতিপয় লোক যারা ভুলে লেগে থাকে অথবা যখনই কোন ভুল ঘটে তাতে অংশীদার হয়, তারা বাদে জনগণের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যারা ভুল করেছেন তাদের সংশোধন সম্ভব। তারা ঠিক সেইসব লোকেদের মতো যারা টাইফয়েড জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগমুক্তি ঘটেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভবিষ্যতে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে ভাল। বিপরীতে, সেসব লোক যারা কখনই ভুল করেননি, তারা বিশেষত সেসবে প্রবৃত্ত, কারণ তারা অতি অহংকারী। আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে যে যদি কেউ ভুলকারী লোকদের অতি শুদ্ধিকরণ করেন তা শেষমেষ নিজেদের শুদ্ধিকরণে পরিণত হয়। আমরা যদি আন্তরিকভাবে বোঝাপড়া করি সেইসব লোকেদের যারা ভুল করেছে, আমরা জনপ্রিয় সমর্থন এবং জনগণের সঙ্গে সংহতি অর্জন করতে পারি। ভুল করেছে যেসব কমরেড তাদের বোঝাপড়ায় একটা বৈরি অথবা সাহায্যকারী দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা তা হচ্ছে সহৃদয় লোক আর অসত লোকের মধ্যে পার্থক্যকরণের বৈশিষ্ট্য। রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো হচ্ছে সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার সাধারণ কর্মনীতি। আমাদের এই সাধারণ কর্মনীতিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।

১৮. দশ আঙুলের প্রশ্ন

আবেগ জাগরিত করা অনুমোদনীয়, কিন্তু তাতে নিমজ্জিত হওয়া উচিত নয়। অনেক সময়, অনভিজ্ঞতাজনিত কারণে আমরা জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনি। এক সময়, অনেকগুলো প্রশ্নে ভুল হয়েছে। উদাহারণঃ এমন লোকেরা ছিল যারা বললো অত্যধিক সমবায় সংগঠিত করা হয়েছে এবং তারা তার মধ্যে ১০,০০০ ছেঁটে ফেলতে চাইলো। দুই চাকার দুই ফালের লাঙলের একটা বদনাম করা হয়েছে দক্ষিণে। এখন কামুক লোকের লম্পট কাব্যের কথা ধরুন উদাহারণস্বরূপ। সুঙ ইউ একটা পয়েন্টে আক্রমণ করলো আর বাকীগুলোতে সংক্ষিপ্তকরণ করলো। পদ্ধতিটা ভাল নয়। কিন্তু ঠিক এই পদ্ধতিতেই দক্ষিণপন্থীরা আমাদের আক্রমণ করলো। একজন লোকের ১০ আঙুল রয়েছে। যদি কোনটির ওপর ফোস্কা পড়ে, তাকে এর চিকিতসার জন্য ডাক্তার ডাকতে হবে। তিনি এটা কেটে ফেলতে পারেন না। অন্য নয়টি আঙুল এখনো ভাল। ভাললোকও কখনো কখনো একে একইভাবে দেখে থাকেন এবং কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন লোকেরা রয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যই হোক, আর গণতান্ত্রিক পার্টির অথবা বাণিজ্য চক্রের অথবা উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন বুদ্ধিজীবিই হোক, জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নতি করতে পারেন। এমনকি দক্ষিণপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠও পুনরায় ভাল হতে পারেন। আপনি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আপনি আস্থা হারিয়েছেন্ এবং জনগণের আদর্শে আস্থা হারানো ভাল নয়। আজ শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শোষক শ্রেণীর পরিবার থেকে এসেছে। কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা এদের মধ্যে কেবল শতকরা ২ থেকে ৩ ভাগ। স্বতন্ত্র ঘটনা বাদ দিলে তারা বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতত হবে না। এমন কর্মনীতি প্রয়োগ করে, আমরা তাদের সংস্কার করতে পারি।

১৯. নয় আঙুল এবং এক আঙুলের প্রশ্ন

আমাদের কমরেডরা প্রায়ই তাদের ১০ আঙুল নিয়ে বিভ্রান্ত। যখন কোনো কিছু ভুল হয়, তারা দশ আঙুলের কথা ভুলে যান। যখন শ্রমজীবি জনগণের সারিতে সীমাবদ্ধতা উদ্ভুত হয়, তা নয় আঙুল ও এক আঙুলের প্রশ্ন। যখন আমাদের কমরেডরা ভুল করেন, এটাও সেরকম। এখানে আমি কু তা-সু’ন, লি শিহ-নুঙ, প্যান ঢঢ, চন সাই-লি এবং লি ফেঙের কথা বলছি না। কমরেড উ পু-চিহ চমতকার এক বক্তৃতা দিয়েছেন। আনহেই প্রাদেশিক প্রতিনিধি দল কেন তাদের বক্তৃতায় লি শিহ-নুঙের কথা বলেন না? চেকিয়াঙ প্রাদেশিক প্রতিনিধি দল শা ওয়েন-হানের কথা বলেন, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। তাদের উচিত তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করা আর প্রত্যেককে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিনিময় করতে দেওয়া। কেন তারা এসব লোকের কথা বলেন না? এইসব লোকেরা এক আঙুল ও নয় আঙুলের প্রশ্ন নয়। শা ওয়েন-হান হচ্ছে দশটি কালো আঙুলের লোক। চেন সাই-লিও তাই। লি শিহ-নুঙের নয়টি কালো আঙুল রয়েছে, কেবল একটি আঙুল তার পরিষ্কার। যেসকল কমরেড ভুল করেছেন এবং যাদেরকে আমি নয় আঙুল ও এক আঙুল হিসেবে চিহ্নিত করেছি, তারা ঝড়ো সময়ে দুলেছেন, কিন্তু এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন। আমি ঐসব লোকেদের কথা বলছি না। আমাদেরকে বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তাদেরকে রক্ষা করতে হবে এবং অব্যাহতভাবে রক্ষা করে যেতে হবে। তারা ভুল করলেও তারা হচ্ছেন কর্মী। পুর্ণ ও আন্তরিক মত প্রকাশের সময়কালে নিজেদের দোষারোপ করতে তারা ছিলেন ভীত। আমরা যদি তাদের রক্ষায় জিদ ধরি। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাদের ভুল হচ্ছে কেবল এক-দশমাংশ। শুদ্ধিকরণ অভিযানে, অব্যাহতভাবে তাদেরকে আমাদের রক্ষা করে যেতে হবে। ক্যাডারদের রক্ষা করার প্রশ্নটি সিঙ-তাও সম্মেলনের দলিলপত্রে উল্লেখিত হয়েছে। অতীতের মতো, শ্রমজীবি জনগণের সারির মধ্যেকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে ব্যাপকভাবে নয় আঙুল ও এক আঙুলের মধ্যে সম্পর্ক, স্বতন্ত্র ঘটনাগুলি বাদ দিলে। বুর্জোয়া মধ্য পথিকদের মধ্যে মৃত কেন্দ্রের মধ্যেকারগুলি হচ্ছে পাঁচ ও পাঁচ আঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস, কেন্দ্রের মধ্যে বামেরা হচ্ছে ছয় থেকে সাত ভাল আঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস এবং কেন্দ্রের মধ্যেকার ডানেরা হচ্ছে ছয় থেকে সাত খারাপ আঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস। তারা জনগণের মতাদর্শকে এত দীর্ঘকাল যাবত বিরোধিতা করেছে যে তারা একবারে নিজেদের পরিষ্কার করতে পারে না এবং বারংবার তাদের পরিষ্কারকরণ প্রয়োজন। বুর্জোয়া মতাদর্শ তারপরও পুনঃপ্রতিষ্ঠা কামনা করবে। বড় কোনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় কিন্তু ছোট পুনঃপ্রতিষ্ঠা খুবই সম্ভব। লো ঢঢ বলেন যে প্রতিবিপ্লবী পুনঃপ্রতিষ্ঠা তারপরও আসবে এবং গণলাইনের উল্লেখ করেন। তিনি ভাল বলেন। সত্যিই, বুর্জোয়ারাও একটা ঝড় বইয়ে দিতে সক্ষম। গ্রেড ১২ টাইফুনের মুখে আমাদের অনেক কমরেড তখনও দোদুল্যমান হবে। যখনই উত্তেজনা দেখা দেবে, পুনঃপ্রতিষ্ঠা তাকে অনুসরণ করবে। কিন্তু সমগ্র পার্টি গত বছরের অভিজ্ঞতাসমেত আরেকটি বছরের ইস্পাতকরণের মধ্য দিয়ে গেছে এবং বাতাস ও ঢেউ সত্ত্বেও পার্টিকে মাছ ধরা নৌকায় শক্তভাবে বসে থাকতে সক্ষম হতে হবে। পোলীয় ও হাঙ্গেরীয় ঘটনাসমূহের সময় আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এবং যদিও গত বছরের ঝড় ছিল খুবই বড় আমাদের নৌকা উল্টোয়নি। অনেকে বলেন যে “এটা কেন” শিরোনামে আমাদের সম্পাদকীয় অতি আগেভাগে লেখা হয়েছে। এটা ততটা আগেভাগে ছিল না। আমরা দীর্ঘসময় দেরী করলে বামপন্থীদের মধ্যে অনেকে পঁচে যেত। বস্তুত, গত বছরের ডিসেম্বরের পর, আমরা তখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ১,০০,০০০ দক্ষিণপন্থী উন্মোচন করেছি যারা সারাদেশের ৩,০০,০০০ দক্ষিণপন্থীদের অর্ধেক। তারা তখন আমাদের ওপর উন্মত্ত আক্রমণ চালাচ্ছিল। এটা কি কেউ বলেনি যে চ্যাঙ ও লো দক্ষিণপন্থীদের যখন পরিষ্কারভাবে ঘেরাও দিল, তারা আর আমাদের আক্রমণ করবে না? তারা একইভাবে আক্রমণ করলো। যতক্ষণ তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট ডিগ্রীতে পৌঁছেছে, ঘটনা একইভাবে আগের মতো ঘটবে। নয় আঙুল ও এক আঙুলের কথা ভুলো না। ১৯৫৬ সালের হঠকারী অগ্রযাত্রা বিরোধী আন্দোলনের সময় মূর্তভাবে আমরা এই প্রশ্নটি ভুলে গেছিলাম। আমাদের অবশ্যই কোন সমস্যার সারে…। আমাদের এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

২০. দশ আঙুলের প্রশ্ন

দশ আঙুলের প্রশ্ন। মানুষের রয়েছে দশ আঙুল। আমাদের অবশ্যই কেডারদের শিক্ষা দিতে হবে কীভাবে এক আঙুল থেকে নয় আঙুলকে অথবা সংখ্যালঘু আঙুল থেকে সংখ্যাগুরু আঙুলের পার্থক্যকরণ শিখতে ভাল হওয়া যায়। নয় আঙুলের সাথে এক আঙুলের একটা পার্থক্য আছে। এই জিনিসটি দেখতে সরল, কিন্তু বহু লোকই এটা বোঝেন না। আমাদের অবশ্যই এই দৃষ্টিকোণকে প্রচার করতে হবে। সাধারণ পরিস্থিতি ও স্থানীয় পরিস্থিতির মধ্যে, সাধারণ ও স্বতন্ত্রের মধ্যে এবং প্রধান প্রবণতা ও পার্শ্ব ইস্যুর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। প্রধান প্রবণতা আঁকড়ে ধরায় আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। ভুল জিনিসকে আঁকড়ে ধরলে আমরা চিতপটাঙ হবো নিঃসন্দেহে। এটা হচ্ছে চিনতে পারার একটা প্রশ্ন এবং যুক্তিরও একটা প্রশ্ন একইসাথে। আমরা বলি এক আঙুল এবং নয় আঙুল, কারণ এটা কথা বলার জীবন্ত একটা পথ এবং আমাদের কাজের পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। মৌলিকভাবে ভুল দেখা না দিলে, আমরা সর্বদাই আমাদের কাজে বড় বড় অর্জনের জাল বুনেছি। যা হোক, এই ধরণের কথা বলা কিছু লোকের জন্য প্রযোজ্য হয় না। উদাহারণস্বরূপ, দক্ষিণপন্থীদের, যাদের মধ্যে অনেকেই অতি দক্ষিণ, প্রায় ১০ আঙুলই পঁচে গেছে। ছাত্রদের মধ্যে, সাধারণ দক্ষিণপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠেরই একের বেশি আঙুল পঁচে গেঁছে। তথাপি, তাদের সকল আঙুল পঁচছে না। সেকারণে এখনো তারা স্কুলে থাকতে পারে।

“একটি অথবা কয়েকটি পয়েন্টে আক্রমণ করো, যতটুকু পারো বাড়িয়ে বলো এবং বাকীগুলো সংক্ষেপিত করো।” এটা হচ্ছে একটা আধিবিদ্যক পদ্ধতি, যা হচ্ছে প্রকৃত পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থীরা যখন ১৯৫৭ সালে সমাজতন্ত্রের ওপর উন্মত্ত আক্রমণ চালালো তারা এই পদ্ধতিই ব্যবহার করেছে। ঐতিহাসিকভাবে, আমাদের পার্টি এমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটা সেসময় যখন গোঁড়ামীবাদ পরমভাবে রাজত্ব করেছে। লি লি-সান লাইনও ছিল এরকম। সংশোধনবাদ অথবা ডান সুবিধাবাদও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। চেন তু-সিউ লাইন এবং জাপান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়কালে ওয়াঙ মিঙ লাইনও ছিল এরকম। ১৯৩৪ সালে চাঙ কুও-তাওও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।

২১. দ্বন্দ্ববাদ সমস্যাকে বিপরীত ও একত্বের মাধ্যমে দেখে, তাই সামগ্রিকভাবে

জীবন ও মৃত্যু, যুদ্ধ ও শান্তি হচ্ছে বৈর ও দ্বন্দ্বমূলক। তা সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে একটা আন্তঃসংযোগ রয়েছে। তাই, এই বিপরীতসমূহ কখনো কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সমস্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে, আমরা কেবল একদিকে তাকাতে পারি না। এর সারের মধ্য দিয়ে দেখার জন্য আমাদের উচিত একটা সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা। তাই, যতদূর একজন ব্যক্তিকে বিচার করা যায় তিনি একেবারে সম্পূর্ণ ভাল অথবা কোনো ভাল দিক ছাড়া সম্পূর্ণ খারাপ হতে পারেন না। আমাদের পার্টি কেন সঠিক? এর কারণ হচ্ছে, সকল সমস্যার মূল্যায়নে ও সমাধানে আমরা বস্তুগত বাস্তবতা থেকে যাত্রা করতে পারি। এইভাবে এটা আপেক্ষিকভাবে সম্পূর্ণ হবে এবং পরম নয় ।

২২. অব্যাহত বিপ্লবের তত্ত্ব এবং স্তরে স্তরে বিপ্লবের তত্ত্ব

সমবায়ের বিকাশের জন্য উন্নতি হতে হবে তরঙ্গাকারে-একটার পর আরেকটা তরঙ্গ, মাঝখানে অবনতি, দুই পর্বত শিখরের মাঝে উপত্যকার মতো।

নেতৃত্বকে নৌকা সাজাতে হবে বাতাসের অনুসারে এবং পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এবং যখন পরিস্থিতি প্রতিকুল, তাদের সাথে সাথেই ব্রেক কষা উচিত। একটা সুবিধাজনক মুহূর্তের, মাথা ব্যাথা হলে জনগণের মাথা টিপে দিতে হবে, যা হচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় কাজ। কিছু লোক প্রশ্ন করেন যে আমাদের চিন্তাভাবনা করার অথবা বিধি-নিষেধের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। আমাদের প্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা অথবা বিধি-নিষেধের প্রয়োজন রয়েছে। চু-প-শিয়েহ (Pigsy) [মিঙ রাজবংশের উপন্যাস “পশ্চিমের দিকে তীর্থযাত্রা”র চরিত্র]-রও তিন নিষেধ ও পাঁচ বিধি ছিল। আমাদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, প্রয়োজনীয় থামা, প্রয়োজনীয় ব্রেক কষা অথবা দরজা বন্ধ করা প্রয়োজন। জনগণ যখন তাদের লেজ ফুঁলিয়ে ধরেন তখন যে পদ্ধতির চেষ্টা করতে হবে তা হচ্ছে তাদের জন্য নতুন কাজ দেওয়া, যেমন আমরা এখন গুণগত প্রতিযোগিতা চলুক তুলে ধরছি, যাতে তাদের অহংকারী হওয়ার সময় না থাকে।

২৩. একতরফাবাদ হচ্ছে দ্বৈত চরিত্রের

দুই ধরণের একতরফাবাদ রয়েছে: গোঁড়ামীবাদ এবং সুবিধাবাদ (সংশোধনবাদ)। লু তিঙ-ই এক নিবন্ধে এরকম বলেছেন। গোঁড়ামীবাদীরা সবকিছুকে ইতিকরণ করতে চায় আর তারা শতকরা ১০০ ভাগ বলশেভিক। পরে আমরা কিছু চেকিং করলাম। ১০ বছর পর (১৯৩৫-১৯৪৫), তারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেল। গোঁড়ামীবাদীরা চীনে আছে, বিদেশেও। একতরফা মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে উপস্থাপন করতে তারা একে অধিবিদ্যা থেকে ব্যাখ্যা করে। কাজের ক্ষেত্রে তারা আপনাকে ভাল দিক সম্পর্কে বলতে দেয়, খারাপ দিক সম্পর্কে নয়। আপনি কেবল প্রশংসা করতে পারেন, সমালোচনা নয়। “ওয়াঙ মিঙের ঘেরাও দমন”-তে আমিও প্রচুর পরিমাণ তথ্য দিয়েছি। এখন আসুন ওয়াঙ মিঙকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ঘেরাও তোলা যাক। তার লেখাতে ত্রুটি ছিল, কিন্তু তিনি কি আমলাতন্ত্রবাদকে সমালোচনা করেননি, যেমনটি তিনি করেছিলেন, অথবা দাপ্তরিক সার্কেলের লোকেদের সম্পর্কেও বলেছিলেন? অতীতে নিশ্চিতভাবে শ্রেণীসংগ্রাম সম্পর্কে কথা বলতে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। কিন্তু আমরা কিছু অতিসরলীকরণ ও প্রশাসনিক ডিক্রী জারি করেছিলাম। আগে, বিপ্লবী সংগ্রাম সংগঠিতকরণের জরুরিত্বের কারণে নিশ্চিতভাবে আমরা সমস্যার একটা সমাধান বের করতে যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি। ক্ষমতা দখলের সময়কালে সেটা ছিল আমাদের কাজের ধারা। কিছু কমরেড কাজের এই স্টাইলকে আবাদ করেছেন। এটা তাদের কাছে সহজ কেবল যাদের এই ধরণের অভিজ্ঞতাই রয়েছে, কেবল এই ধরণের কাজের ধারার সাথেই পরিচিত, বিশেষত যারা দীর্ঘকাল বাহিনী কাজে জড়িত ছিলেন তাদের পক্ষে এমন ভুল করা সহজ। ওয়াঙ মিঙের ঘেরাও দমন ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ঘেরাও করতে মুক্তিবাহিনী যে অল্পকিছু রেজিমেন্ট বদলী করছিল তার মতো। আরেক ধরণের একতরফাবাদ হচ্ছে “সবকিছুকে নেতিকরণ করা”-শ্রমিক ও কৃষকদের উদ্যোগের নেতিকরণ, কয়েক দশক কোটি জনগণের সংগ্রামকে নেতিকরণ, যাতে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং সবকিছু অন্ধকার দেখে। এটা বাস্তরের সাথে মেলে না। সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের মহা কর্তব্যের সবকিছু ভাল, তাও বাস্তবের সাথে মেলে না। চলচিত্র কাজের সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করে চুঙ তিয়েন-ফেই এক ভাল জিনিস করেছেন! যেসব সীমাবদ্ধতা ইতোমধ্যে উন্মোচন করা হয়েছে তার সংশোধনে আমাদের অবশ্যই যত্নবান হতে হবে,কিন্তু আমাদের অবশ্যই একতরফা দিকগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। চে’ন চি’-তু’ঙ ও অন্য তিনজনের নিবন্ধ ভুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। আজকে আমি তাদের মুখের ওপর অবশ্যই বলবো। আমি সেই নিবন্ধের সাথে খুবই মতানৈক্য পোষণ করি। আমি বলেছি যে পার্টি ও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থকে রক্ষার প্রচেষ্টায় তাদের কর্তব্যপরায়ণতা হচ্ছে বিষাক্ত আগাছার বিরুদ্ধে ঘৃণার সেন্টিমেন্ট। কিন্তু কেবল কয়েক মাস পরের “প্রস্ফুটিত হওয়ার” পরেই ওয়াঙ মিঙ ও অন্য দৈত্য ও দানবেরা বেরিয়ে এল। এই মত ব্যক্ত করা হয়েছে যে অর্জন হচ্ছে স্বল্প আর ভুল হচ্ছে বহু। “আমার প্রভুর নিকট রিপোর্ট, একটা ধ্বংসাত্মক কিছূ ঘটে গেছে! একটা ভূত আবির্ভূত হয়েছে!” পরিস্থিতি এমন যে, নিশ্চিতভাবে এমন মনে হয় না যে দিনের শেষ এটা ছুঁতে পারবে। এখন, এটা পরিস্থিতির একটা ভুল মূল্যায়ন এবং পার্টির সাধারণ কর্মনীতি সম্পর্কে সন্দেহের একটা প্রকাশ। এখানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তা হচ্ছে অতিসরলীকরণ। এর প্ররোচিত করার ক্ষমতা নেই। ওয়াঙ মিঙকে সমালোচনা করায় যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তা হচ্ছে “সংক্ষিপ্ত আহতকরণ” পদ্ধতি। এটা পাঠকদের অনাশ্বস্ত করে। আমি অনাশ্বস্ত। ওয়াঙ মিঙের সাথে আমি কোনো সম্পর্ক পাতাইনি। এমন না যে আমার কোনো পুত্র অথবা কন্যার সাথে তার কোনো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমি অনাশ্বস্ত। গোঁড়ামীবাদ ও সুবিধাবাদ হচ্ছে দুই ধরণের একতরফাবাদ। একটা সবকিছুকে ইতিকরণ করে এবং অন্যটি সবকিছুকে অস্বীকার করে। গোঁড়ামীবাদীরা ও সুবিধাবাদীরা উভয়ই আধিবিদ্যক। যাহোক, আমাদের অবশ্যই তাদের ভুল সংশোধনে সহযোগিতা করতে হবে। এটা কেবল তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। তারা বিপুল সংখ্যক জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কমিউনিস্ট্ পার্টি সদস্যদের মধ্যে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা রয়েছে। কেউ কি পার্টির বাইরে? পঞ্চাশ লক্ষ জনগণের মধ্যে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা আছেন। কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর “বামপন্থী” ও দক্ষিণপন্থীরা আছে। এর অর্থ হচ্ছে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা আছেন। কিছু লোক বলেন লেখায় একতরফা না হওয়া অসম্ভব। এই বিবৃতিতে কিছু একটা আছে। আমি যা এইমাত্র বলেছি তা হচ্ছে প্রচুর মার্কসবাদী চিন্তাধারা, যা প্রত্যেকের কাছে একতরফাবাদ পরিহার দাবী করে। এটা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। বস্তুত, সমালোচনা করার ক্ষেত্রে, প্রত্যেকে নিজ নিজ অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কথা বলেন এবং একদিকে দাঁড়িয়ে। কিন্তু অপরদিকে, একতরফাবাদ দ্বন্দ্ববাদের বিরুদ্ধে যায়। আমরা কি আরেকটু বেশি দ্বন্দ্ববাদ ব্যবহারের জন্য আহ্বান করতে পারি না? দ্বন্দ্ববাদকে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়করণ করা যায় কিনা যাতে ক্রমান্বয়ে আরো বেশি দ্বন্দ্ববাদ ব্যবহৃত হবে। আমি মনে করি, তা পারা যায় এবং করা উচিত। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আরো জনগণ, আরো লেখকগণ এবং অধ্যাপকগণ হবেন যারা সমস্যার প্রতি অধিকতর সামগ্রিকতা নিয়ে দেখবেন। তাই, আমি বলি যে, একতরফাবাদের অস্তিত্ব হচ্ছে একটা ঘটনা। কিন্তু, আমি আহ্বান করি, একতরফাবাদকে অতিক্রম করা হোক ক্রমান্বয়ে। ভবিষ্যতে একতরফাবাদ থাকবে কি থাকবে না? তখনো থাকবে। এমনকি ১০,০০০ বছর পরও একতরফাবাদ থাকবে। আমাদেরকে দ্বন্দ্ববাদ জনপ্রিয় করতে হবে এবং দ্বন্দ্ববাদকে বিকশিত করতে হবে। এককথায়, আমি আহ্বান করি দ্বন্দ্ববাদকে ধাপে ধাপে জনপ্রিয় করা হোক যাতে আমাদের ৬০ কোটি দ্বন্দ্ববাদী হয়। জনগণের সারির মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রদান প্রয়োজন, গালিগালাজের ওপর নির্ভরতা নয় বরং দ্বন্দ্ববাদ অনুশীলন প্রয়োজন। লেখায়, আমাদের প্ররোচক হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে, আমাদের নিজেদের আমলাতান্ত্রিক অহংকারী হওয়া উচিত নয় অথবা আমলাতান্ত্রিক আচরণ করা উচিত নয় এটা মনে করে যে আমরা হচ্ছি মন্ত্রিপরিষদের, ব্যুরো অথবা বিভাগের প্রধান। এই ধরণের আচরণ আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ভুলে যেতে হবে যে আমরা কর্মকর্তা, আমাদেরকে অবশ্যই সবার সাথে সমান আচরণ করতে হবে। আপনার পদ উচ্চ হতে পারে, কিন্তু আপনি যখন ভুল করেন তা কোন কাজে দেবেনা। স্তালিনের পদ কি যথেষ্ট উচ্চ ছিলনা? যখন তিনি ভুল করলেন তা কোনো কাজে দিল না। কিছূ লোক প্রবীণ অভিজ্ঞর অহংকার নিয়ে বলেনঃ “আপনি যখন বিপ্লব করছিলাম, তুমি তখন টেবিলের নীচে গড়াগড়ি খাচ্ছিলে।” আপনি যদি এই লাইন প্রয়োগ করেন জনগণ তা শুনতে পছন্দ করবে না। দ্বন্দ্ববাদ একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে অধিবিদ্যা একটু একটু করে কমে যায়। এটা একতরফাবাদ থেকে ক্রমান্বয়ে মুক্ত করবে।

২৪. দুই ধরণের একতরফাবাদ

কমিউনিস্ট পার্টির সারির ভেতর সবধরণের লোক রয়েছে। মার্কসবাদীরা রয়েছে যারা ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু তা মারাত্মক নয়। একটা অংশ গোঁড়ামীবাদী ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এধরণের লোক পার্টি ও দেশের প্রতি বিশ্বস্ত। কেবল সমস্যার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে “বাম”-এর একতরফাবাদ। যখন তারা এই ধরণের “একতরফাবাদ” থামিয়ে দেবে, তারা একটা বড় ধাপ সামনে এগিয়ে যাবে। আরেক অংশ লোক দক্ষিনপন্থী সুবিধাবাদী অথবা সংশোধনবাদী ভ্রান্ত ধারণা লালন করে। এই লোকগুলো তুলনামূলক বিপজ্জনক, কারণ তাদের চেতনা হচ্ছে পার্টির মধ্যে বুর্জোয়া মতাদর্শের প্রতিফলন। তারা বুর্জোয়া উদারতাবাদের জন্য লালায়িত হয় এবং সবকিছূকে নেতিকরণ করে, এবং সমাজের বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবিদের সাথে তাদের সম্পর্ক অতি-জটিল। এখন কয়েক মাস যাবত জনগণ গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনা করছেন, কিন্তু সংশোধনবাদকে বাদ দিয়েছেন। গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হতে হবে। যদি গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনা না করা হয়, অনেক ভ্রান্ত ধারণাই সংশোধন করা যাবেনা। এখন আমাদের এটা দেখতে শুরু করতে হবে যে সংশোধনবাদ সমালোচিত হচেছ। গোঁড়ামীরা বিপরীতে ধাবিত হতে পারে, অর্থাত হয় মার্কসবাদ নয়তো সংশোধনবাদ।  আমাদের পার্টির অভিজ্ঞতার আলোকে, অধিক অধিক গোঁড়ামীবাদীরা মার্কসবাদে ধাবিত হবে, যেখানে সংশোধনবাদে যাবে অল্প বিচ্ছিন্ন। কারণ, তারা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর একটা মতাদর্শিক উপদল যারা পেটি বুর্জোয়ার হিংস্র দৃষ্টিকোণের স্বীকারে পরিণত হয়েছে। কিছু “গোঁড়ামীবাদী” যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা বস্তুত সেইসব লোক যারা তাদের কাজে ভুল করেছে। আক্রমণের স্বীকার কিছু “গোঁড়ামীবাদী” যারা  বস্তুত  মার্কসবাদী; তারা কিছু লোকের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে যারা তাদের ভুলভাবে “গোঁড়ামীবাদী” মনে করেছে। প্রকৃত গোঁড়ামীবাদীদের এটা মনে করার একটা যুক্তি আছে যে “বাম” ডানের চেয়ে ভাল। কারণ হচ্ছে তারা বিপ্লব করতে চান। যাহোক, বিপ্লবের বাস্তব ক্ষতির দিক থেকে “বাম” ডানের চেয়ে ভাল নয়। তাই, একে দৃঢ়ভাবে সংশোধন করতে হবে।

২৫. লাল ও শ্বেত আনন্দদায়ক ঘটনার প্রশ্ন

— আকস্মিক পরিবর্তন হচ্ছে মহাবিশ্বের সর্বাধিক মৌলিক নিয়ম —

লাল ও সাদা আনন্দদায়ক ঘটনার প্রশ্ন। অতীতে যখন আমরা সম্ভাব্য আকস্মিক মহা পরিবর্তনের মোকাবেলার কথা বলেছিলাম, আমরা প্রধানতঃ যুদ্ধ অথবা পার্টির মধ্যকার গোলযোগের দিকেই নির্দেশ করেছি। চীনা জনগণ বিয়েকে লাল আনন্দদায়ক ঘটনা এবং অন্তেষ্টিক্রিয়াকে সাদা আনন্দদায়ক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন। মনে হয় এখানে কিছু একটা আছে। চীনা জনগণ দ্বন্দ্ববাদ বোঝেন। কারণ তারা বিয়ে করার পর সন্তান সন্ততি হবে, মায়েরা তিন অথবা দুইয়ে বিভক্ত হবে, অথবা এমনকি দশ অথবা আটের মতো, একেবারে একটা এয়ারক্রাফ্ট বহনকারীর বিমানসমূহে বিভাজনের মতো।

অত্যধিক সন্তানসন্ততিও ভাল নয়। যখন একজন মানুষ একজন মানুষ জন্ম দেয় তা একটা আনন্দদায়ক ঘটনা। এক দুইয়ে পরিণত হয়, দুই চারে। মৃত্যুতে মানুষ চিরকাল কাঁদবে এবং অন্তেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান করবে। এটাও একটা আনন্দদায়ক ঘটনা। মানুষ ব্যতিক্রমহীনভাবে মারা যাবে। যদি কনফুসিয়াস এখনো বেঁচে থাকতেন এবং এখানে হুয়েই-জেন-তা’ঙ (বদান্যতার হল)-এ উপস্থিত থাকতেন তিনি ২,০০০ বতসর বয়সী হতেন। সেটা খারাপ হতো। দ্বান্দ্বিকভাবে বললে, কোনো মৃত্যু না থাকাটা বেঠিক এবং অধিবিদ্যা। যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে তাকে এক ধরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া (Phenomenon) বলতে হবে। আকস্মিক পরিবর্তন হচ্ছে মহাবিশ্বের সর্বাধিক মৌলিক নিয়ম। জন্ম হচ্ছে একটি আকস্মিক পরিবর্তন, মৃত্যুও তাই। যদি চিয়াং কাই-শেক মারা যায়, আমরা হাত তালি দিতে পারি। জন ফস্টার ডুলেস মারা গেলে আমরা কোনো অশ্রু বিসর্জন দেব না। কিন্তু যখন কোনো নতুন জিনিস মারা যায়, যেমন ১৯০৫ রুশ বিপ্লবের পরাজয় অথবা দক্ষিণে আমাদের ঘাঁটিগুলোর ক্ষয়ক্ষতি, তখন সেটা ভাল নয়। যখন চারাগাছগুলো ঝড় অথবা তুষারপাতে ভেঙে পড়ে, তা নিশ্চয়ই ভাল নয়, কারণ চারাগাছগুলোর প্রতিস্থাপনের প্রশ্ন আশুভাবে সামনে আসে। আমাদের কমিউনিস্ট পার্টি আশা করে ঘটনাগুলি…

২৬. …

২৭. দুই সম্ভাবনার প্রশ্ন

দুই সম্ভাবনার প্রশ্ন। ভোজনালয়, নার্সারী ও কমিউনগুলো সুসংহত হতে সক্ষম হবে কিনা? মনে হয় তারা সুসংহত হতে সক্ষম হবে। কিন্তু তাদের কারো কারো ধ্বংসের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। দুই সম্ভাবনাঃ সুসংহতকরণ ও ধ্বংস একইসঙ্গে অবস্থান করে। আমরা যদি প্রস্তুত না থাকি, আমরা সম্পূর্ণত ব্যর্থ হবো। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে তাদের সুসংহত হতে সক্ষম করে তোলার জন্য। তাদের কিছু যদি ধ্বংস না হয়, তাহলে সুসংহতকরণ ভালভাবে করা যাবেনা। উদাহারণস্বরূপ, কিছূ শিশু নার্সারীতে মারা গেছে এবং কিছু বৃদ্ধ লোক সুখী গৃহে (হ্যাপিনেস হোম)-এ মারা গেছে। যখন সুখী গৃহে সুখ না থাকে,তখন কোন দিক দিয়ে তাদের ভাল বলা যায়? ভোজনালয়ের এটা গ্রুপও ব্যর্থ হবে যদি তারা ঠান্ডভাত অথবা ভাতের সাথে অপরিহার্য অন্যকিছু খাবার সরবরাহ না করে। কেউ ব্যর্থ হবেনা এটা মনে করা বাস্তরের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয়। তারা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ হয়। এটা খুবই যুক্তিযুক্ত। সমগ্রভাবে, ব্যর্থতা হবে আংশিক এবং অস্থায়ী। সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে বিকাশ ও সংহতকরণ। আমাদের পার্টিরও দুই সম্ভাবনা রয়েছে। একটা সম্ভাবনা হচ্ছে সুসংহতকরণ, অপরটা হচ্ছে বিভক্তি। সাংহাইয়ে এক কেন্দ্রিয় কমিটি দুটিতে বিভক্ত হলো। লঙ মার্চের সময়কালে, চাঙ কুও-তাও এক কেন্দ্রিয় কমিটিকে দুটিতে বিভক্ত করলো। কাও কাঙ এবং ঝাও শু-শিহ আংশিক বিভক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। আংশিক বিভক্তি প্রায়ই ঘটে। গত বছর হতে, দেশের অর্ধেক প্রদেশের নেতৃত্ব গ্রুপের মধ্যে বিভক্তি ঘটেছে। মানুষের শরীরে দেহকোষগুলো প্রতিদিন মারা যায়। শৈশব থেকে এই প্রক্রিয়া ঘটে। কেবল এভাবেই বৃদ্ধি লাভবান হয়। যদি কোন মৃত্যু না থাকে মানুষ আর বাঁচবেনা। মানুষ মৃত্যুবরণ করবেনা তা সম্ভব নয়। মৃত্যু উপকারী হতে পারে, তাথেকে সার সৃষ্টি হতে পারে। আংশিক বিভক্তি ঘটে প্রতিদিন। সামগ্রিক বিলোপ ও ঐতিহাসিক অনিবার্যতা। সর্বেসর্বা উভয়তঃ পার্টি ও রাষ্ট্র-যারা শ্রেণীসংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে সেবা করেছে, অবশ্যই ধ্বংস হবে। কিন্তু পার্টির ঐতিহাসিক কর্তব্য সম্পন্ন হওয়ার আগে এটা হচ্ছে সুসংহতকরণের প্রশ্ন। আমরা বিভক্তির আশা করিনা, কিন্তু সেসবের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত। আমরা যদি প্রস্তুত থাকি, আমরা বড় বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হতে পারি। বড় ও মাঝারি বিপর্যয় হচ্ছে সাময়িক। হঙ্গেরীয় ঘটনা ছিল একটা বড় বিভক্তি, যেখানে কাও ও মো ঘটনা ছিল মাঝারি বিভক্তি। প্রতিটি পার্টিশাখা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সদস্যকে বহিষ্কার করা  হচ্ছে , কিছূ সদস্যকে গ্রহণ করা হচ্ছে। কেউ কেউ খুব ভাল কাজ করছে, কেউ কেউ ভুল করছে। কোন পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কখনো না যাওয়া অসম্ভব। লেনিন প্রায়ই বলেন যে প্রতিটি জিনিসের দুই সম্ভাবনা রয়েছেঃ হয় বিজয় অথবা ধ্বংস। আমাদের চীনা গণপ্রজাতন্ত্রেরও দুই সম্ভাবনা রয়েছেঃ বিজয়ের পর বিজয় অথবা ধ্বংস। যেহেতু লেনিন ধ্বংসের সম্ভাবনার কথা ধামাচাপা দেননি, গণপ্রজাতন্ত্রের এমন সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা উচিতনা। আমাদের কোন পারমাণবিক বোমা নেই। যদি শত্রু পিকিং, সাংহাই এবং উহান দখল করে, আমরা পাহাড়ে চলে যাবো এবং গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হবো। আমরা ১০/২০ বছর পেছনে চলে যাবো এবং ইয়েনানের সময়কালে ফিরে আসবো। তাই, আমাদের প্রচণ্ড প্রস্তুতি নিতে হবে, তিন অথবা চার বছরের মধ্যে কোটি কোটি টন ইস্পাত উতপাদনে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং একটা শিল্পভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে আমরা এখনকার থেকে অধিকতর সুসংহত হতে পারি। বর্তমানে আমাদের নাম সারাবিশ্বে পুরোপুরি বিখ্যাত। এক, কুয়েময়ের বোমাবর্ষণের কারণে; দুই গণকমিউনসমূহের কারণে; এবং তিন, ১ কোটি ৭ লাখ টন ইস্পাতের জন্য। মনে হয় এই কয়েকটি বিষয়ের কারণে আমাদের খ্যাতি বিরাট। কিন্তু আমাদের শক্তি বিরাট নয়। আমরা এখনো গরীব ও খালি। আমরা আমাদের হাতে এক ইঞ্চি হাতিয়ার অর্জন করেছি এবং যদিও আমাদের এক ইঞ্চি লোহা আছে, আমরা কিছু সম্পাদন করিনি, আমাদের দেশ প্রকৃতপক্ষে দুর্বল। রাজনৈতিকভাবে আমরা ক্ষমতাশালী দেশ। অর্থনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে আমরা দুর্বল দেশ। তাই, দুর্বলতাকে সবলতায় রূপান্তরের কর্তব্য আমাদের সামনে রয়েছে। তিন বছরের মধ্যে আরো ভালোর জন্য একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। তিন বছরের মধ্যে আমরা কেবল একটা আংশিক পরিবর্তন আনতে পারি, মৌলিক কোন পরিবর্তন নয়। আরো চার বছর পর অর্থাত মোট সাত বছর পর সবকিছু আরো ভাল হবে এবং আমাদের খ্যাতি বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হবে। এখন আমাদের খ্যাতি বিরাট এবং আমাদের সামর্থ্য তাতপর্যহীন। একে আমাদের সমগ্রভাবে উপলব্ধি করতে হবে। ফুলে ওঠবেননা যখন আপনি কোন বিদেশী কর্তৃক প্রশংসিত হন অথবা যখন আপনি সংবাদপত্রের পাতা খুলে দেখেন যে তা আমাদের উচ্চ উদ্যম ও আশ্চর্য কীর্তির হিসাবে পুর্ণ। বস্তুত, ভাল ইস্পাত কেবল ৯০ লক্ষ টন। রল্ড ইস্পাত উতপাদন শতকরা ৩০ ভাগ কম হতে হবে, তাই কেবল ষাট লক্ষ টন। আমাদের নিজেদের প্রতারিত করা উচিত নয়। প্রচুর শস্য উতপাদিত হয়েছিল। যখন কাঁটছাঁট অনুমোদিত হল, সমস্ত স্থানে উতপাদন ছিল ৮৬০ বিলিয়ন ক্যাটি। আমরা বলেছিলাম ৭৫০ বিলিয়ন ক্যাটি। তাই বলতে গেলে, তারা এখানে ওখানে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা বাড়িয়েছে। যে ১১০ বিলিয়ন ক্যাটি তারা বাড়িয়েছেন তা হিসেবে নেওয়া হয়নি। কেউ ভুগবেনা যদি আমাদের প্রকৃতই থাকে কিন্তু সেই ১১০ বিলিয়ন ক্যাটি হিসেব না করা হয়। জিনিসগুলো তখনো সেখানে থাকবে। আমরা কেবল ভীত ছিলাম যে আমরা পাবনা তাই আমরা কাঁটছাঁট করেছিলাম। ৮৬০ বিলিয়ন ক্যাটি ছিল এটা স্বীকৃতি দিয়ে এক চতুর্থাংশ উতপাদন আলূ জাতীয় শস্য করার জন্য আমাদের জন্য ভর্তুকী দিতে হবে। আমরা এবিষয়টি পরিষ্কার করতে পারি। প্রতিটি প্রদেশ, অঞ্চল অথবা কাউন্টিতে বিষয়টি আলোচনা করতে সভা করতে হবে। কিছু লোক আমি যা বলছি তা শুনতে চায়না। কিন্তু আমি এই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপারটিতে কথা বলতে জিদ ধরি। কমিউন অথবা গণভোজনালয়ের ধ্বংস, পার্টির বিভক্তি, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা, মার্কিনের দখলদারিত্ব, জাতির পরাজয় অথবা গেরিলাযুদ্ধ-যাই হোকনা কেন, আমাদের  একটা মার্কসবাদী নীতি আছে, যা সবকিছূর তত্ত্বাবধান করে। আর তা বলে যে, এসকল দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে অস্থায়ী ও আংশিক। ঐতিহাসিকভাবে, আামদের অনেক পরাজয় এই বিষয়টি প্রমাণ করেছে। লঙ মার্চের সময়, আমাদের বাহিনী সদস্য ৩,০০,০০০ থেকে কমে ২০,০০০-এর সামাণ্য কিছু বেশি হয়েছিল এবং পার্টি সদস্য ৩০,০০০ থেকে কমে অল্প কয়েক হাজারে পরিণত হওয়ার ঘটনাও সবই ছিল অস্থায়ী ও আংশিক। বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংস স্থায়ী, যাইহোক। সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়, পরাজয় অথবা অথবা ধ্বংস হবে অস্থায়ী কারণ দীর্ঘসময়ের আগেই তা পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি যদি পুনপ্রতিষ্ঠা পরাজিত হয়, তাও অস্থায়ী হবে। ১৯২৭ সালের মহান বিপ্লব পরাজিত হবার পর, আমরা পুনরায় অস্ত্র হাতে নিলাম গেরিলা যুদ্ধ করতে। “অভূতপূর্ব বাতাস ও মেঘ আকাশে হঠাত দেখা দিতে পারে। সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য ঘটতে পারে।” আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। “প্রাচীন কাল থেকে সত্তুর বছরের মানুষ বিরলভাবে দৃশ্যমান।”মানুষ নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে। একজন ব্যক্তি সর্বদাই মারা যাবে। তিনি ১০,০০০ বছর বাঁচতে পারেননা। মারা যাওয়ার আগেই মানুষের উচিত তার সকল কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করা। এসবই দুঃখের কথা। সকল মানুষই মারা যাবে। কিন্তু সমগ্রত মানবজাতি বাড়বে এবং সমৃদ্ধিশালি হবে। যদি আমাদের মরতেই হয়, আমরা মারা যাবো। সমাজতন্ত্রের জন্য এখনও আরো বেশি কিছু বছরের জন্য আমরা আমাদের অবস্থান বজায় রাখতে চাই…   …

২৮. দুই ধরণের ব্যবহারিক সম্ভাবনা

দুই ধরণের ব্যবহারিক সম্ভাবনা রয়েছে। একটা হচ্ছে বাস্তব সম্ভাবনা এবং অপর ধরণটি হচ্ছে অবাস্তব সম্ভাবনা। এখন যদি কেউ মঙ্গল গ্রহে যেতে চায়, এটা একটা অবাস্তব সম্ভাবনা। যাহোক, ভবিষ্যতে এটা বাস্তব সম্ভাবনা হতে পারে। সম্ভাবনা দুই ধরণের। যদি একে বাস্তবে রূপান্তরিত করা যায় তা বাস্তব সম্ভাবনা। অন্য ধরণের সম্ভাবনা হচ্ছে এমন যাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। অতীতের গোঁড়ামীবাদ যেমন, তা কি শতকরা ১০০ ভাগ প্রমাণিত ছিলনা? এটা কি সর্বত্র বর্জিত হয়নি? আমার কাছে মনে হয় প্রতি মৌ-তে ৮,০০,০০০ ক্যাটি উতপাদন না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করাও একটা অবাস্তব সম্ভাবনা।

২৯. তরঙ্গাকৃতি অগ্রগমন হচ্ছে অনিবার্য

অর্থনৈতিক বিনির্মাণ এমন জিনিস নয় যে যার সামান্যতম অগ্রগতি ও পশ্চাদগতি নেই, বরং যা নিশ্চিতভাবে ও দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়। বিনির্মাণও কখনো আকারে একটু বেশি হয় কখনো একটু কম। একটা ঘোড়া কখনো একটু দ্রুত দৌঁড়ায়, কখনো একটু আস্তে। কখনো কেউ ঘোড়াকে ধরে ফেলে, কখনো ঘোড়া ছুঁটে যায়। এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সম্ভব। এর কারণ হচ্ছে, প্রথমত, আমরা অনভিজ্ঞ, এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনৈতিক বিনির্মাণ পরিস্থিতির সাথে জাড়িত। উদাহারণস্বরূপ, অতীতে অর্থনৈতিক বিনির্মাণ অনেকটা দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ হয়েছিল, কারণ সেসময় যুদ্ধ পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল। যদি যুদ্ধ আসন্ন হয়, তখন বৃহত্তর মাত্রায় ভারী শিল্প বিকাশ করা জরুরী হবে। অর্থনেতিক বিনির্মাণ তরঙ্গাকারে ঊর্ধ্বগতি ও নিম্নগতিসহকারে অগ্রসর হবে এবং এক তরঙ্গ আরেকটিকে আঘাত করে। বলা যায়, সাম্যাবস্থা, বিশৃংখলা এবং বিশৃংখলার পর সাম্যাবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্যই, তরঙ্গাকৃতি অগ্রগতি অতি বৃহত হতে পারেনা। যদি অতি বৃহত হয় হঠাত এটা একটা হঠকারী অগ্রগমণে পরিণত হবে এবং হঠাত এটা একটা রক্ষণশীল অগ্রগমণে পরিণত হবে। তাসত্ত্বেও এটা অনিবার্য যে অর্থনৈতিক বিনির্মাণ তরঙ্গাকৃতি অগ্রগমনের নিয়ম অনুসরণ করবে এবং উন্নতি করবে। আপনি যদি বিষয়টি স্বীকার করেন, তাহলে এটা আর আপনাকে আশ্চর্যান্বিত করবেনা যে এবছর আমরা হঠকারী অগ্রগমন ঘটাই এবং পরবর্তী বছর আরেকটু কম সংঘটিত করি। এই হচ্ছে ব্যাপার। সমগ্রভাবে এটা বলতে গেলে, আমাদের পঞ্চাবার্ষিক পরিকল্পনা সঠিক ছিল।

৩০. সব জিনিসের রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা

এখন আসুন কেন্দ্রিভূত নেতৃত্বের অধীনে প্রতিটি কারখানার স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলি। সব জিনিসের রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা। মানুষেরও রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা। এখন যে সভা চলছে, এটা হচ্ছে ঐক্য। সভা শেষ হলে এটা হচ্ছে স্বাধীনতা। কিছু লোক হাঁটতে বের হবে, কেউ যাবে বই পড়তে, কেউ যাবে খাওয়া দাওয়া করতে। প্রত্যেকের রয়েছে স্বাধীনতা। শৃংখলার জ্ঞান আর অ-শৃংখলার জ্ঞান হচ্ছে পরস্পর দ্বান্দ্বিক। শৃংখলার জ্ঞান থাকার দরকার রয়েছে, সেইসাথে অ-শৃংখলার জ্ঞানও থাকার দরকার রয়েছে। যুথবদ্ধতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি “উদারতাবাদ”-এরও প্রয়োজন। সভা শেষে আমরা যদি কোন ব্যক্তিকে সভা শেষে স্বাধীনতা, অ-শৃংখলার জ্ঞান এবং “উদারতাবাদ” না দেই, বরং বিরতি ও সমাপ্তিহীনভাবে সভাকে চলতে দেই, সকল মানুষ কি মারা যাবে না? তাই, প্রতিটি কারখানা, প্রতিটি সমবায়, প্রতিটি ব্যক্তির অবশ্যই স্বাধীনতা থাকতে হবে-একটা স্বাধীনতা ঐক্যের সাথে জড়িত। আমাদের অবশ্যই কারখানায় শমিকদের এবং যৌথ খামারে কৃষকদের দেখাশুনা করতে হবে। এটা একটা বড় সমস্যা যা ষাট কোটি মানুষের মাথাব্যাথা। আমাদের অবশ্যই এ সমস্যার প্রতি পার্টির মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

৩১. আমরা ঐক্য চাই এবং বিশিষ্টতাও

আমরা ঐক্য চাই এবং বিশিষ্টতাও। প্রতিটি স্থানের স্বতন্ত্র বিশিষ্টতা থাকতে হবে যা স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাবে স্থানীয় উদ্যোগকে পুর্ণভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে। এই বিশিষ্টতাগুলো কাও কাঙের ধরণের বিশিষ্টতা হবেনা, বরং যৌথের স্বার্থের বিশিষ্টতা এবং জাতীয় ঐক্যের শক্তিশালিকরণে অপরিহার্য।

৩২. আমাদের যথাযথ উদ্যোগ ও যথাযথ স্বাধীনতা থাকতে হবে

আমাদের সকলের যথাযথ উদ্যোগ ও যথাযথ স্বাধীনতা থাকতে হবে। সকল প্রদেশ, অঞ্চল, কাউন্টি, এলাকা ও শহরের তা থাকতে হবে। কেন্দ্রিয় সরকারের উচিত নয় প্রদেশ ও পৌরসভাগুলিকে অতি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা এবং প্রদেশ ও পৌরসভাগুলির উচিত নয় অঞ্চল, কাউন্টি, এলাকা ও শহরগুলিকে অতি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা। যে সকল জিনিসকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ করতে হবে; যে সকল জিনিসকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় না, তাদেরকে জোর করে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে না। বিভিন্ন অঞ্চলকে এই অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে এবং আঞ্চলিকতাবাদের লেবেল পাওয়ার ভয় করলে চলবে না। এই অধিকারের জন্য এ ধরণের সংগ্রাম দেশের সমগ্র স্বার্থ থেকে আসে, স্থানীয় স্বার্থ থেকে নয়। একে আঞ্চলিকতাবাদ বলা যায় না। কেন্দ্রিয় সরকারের থেকে বরাদ্দকৃত স্বাধীনতা হচ্ছে যথাযথ স্বাধীনতা। একে চাপানো স্বাধীনতা বলা যায় না।

নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৩, পৃ ১৭৭-২২০ (১৯৬৫, পিকিং)

নোট

১. ৩০-এর শুরুর দিকের সময়কালে সিপিসির “বামপন্থী” লাইনের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। এসম্পর্কে “আমাদের পার্টির ইতিহাসের কিছু সিদ্ধান্তবলী ও কিছু সমস্যাবলী” দেখুল।
২. পাথরের গল্প -এর একটি চরিত্র
৩. শু হান অথবা ছোট হান রাজবংশের প্রধানমন্ত্রী চু-কো লিয়াঙ (১৮১৮-২৩৪) ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত সামরিক রণনীতি বিশারদ। তিনি ছিলেন তিন রাজ্যের রোমান্স এর কেন্দ্রিয় চরিত্র এবং যেমনটা মাও বলেন, সারা জীবন তার পরিণামদর্শিতা ও দূরদর্শিতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মাও সেতুংয়ের এই লেখাটি অনলাইনে প্রথম প্রকাশিত হয় রোদ্দুরে ডট কমে ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে। পরবর্তীতে ২ আগস্ট ২০২২ তারিখে ফুলকিবাজ ডট কমে হুবহু প্রকাশিত হয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!