স্পেন শিল্প ও কৃষিসমৃদ্ধ ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দেশ

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরীয় উপদ্বীপের চার-পঞ্চমাংশের বেশি এলাকা স্পেনের অন্তর্ভুক্ত। এই দেশটি ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত উন্নত অর্থনীতির রাষ্ট্র। এই বিশাল দেশটি লোহা, তামা, সীসা, দস্তা, টাংস্টেন, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য আকরিকসমৃদ্ধ। তার পারদ মজুদের পরিমাণ পুজিবাদী বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম। ইউনস্কোরে ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলির সংখ্যা বিবেচনায় ইতালির পরে দ্বিতীয় স্থান স্পেনের। এখানে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা আছে; যার কারণে পর্যটকদের ভ্রমণের তালিকায় এই দেশের নাম থাকে। স্পেন নানা সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলাগত ঐতিহ্যপূর্ণ।

কিন্তু অনগ্রসর সমাজব্যবস্থা ও ফাশিস্ট একনায়কত্বের দীর্ঘস্থায়িত্ব দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে ব্যাহত করেছে। শুধু এই কয়েক বছর আগে, বিদেশী, বিশেষত মার্কিন পুঁজির অনুপ্রবেশের ফলে তার অর্থনীতিতে ও সর্বোপরি শিল্পে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

স্পেন একটি শিল্প-কৃষিসমৃদ্ধ দেশ। উৎপাদনের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসাবে বিকাশমান এখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহাজনির্মাণ, মোটরগাড়ি, বিমান ও মেশিন টুলস শিল্পের স্থানই অগ্রগণ্য। স্পেন বছরে প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ টন ইস্পাত, ১৯০ হাজার টন পর্যন্ত অ্যালুমিনিয়াম ও ৩ হাজার টনের বেশি পারদ উৎপাদন করে। ধাতুশিল্পের একাংশ দেশের চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয় এবং সে পারদ ও অন্যান্য কয়েকটি ধাতু বিদেশে রপ্তানি করে।

আমদানিকৃত অশোধিত তৈলের ভিত্তিতে তার তৈলশোধন শিল্প বিকশিত হচ্ছে। এর উৎপাদ তৈল-রাসায়নিক শিল্পের বিকাশ ঘটাচ্ছে। দেশে উৎপন্ন বার্ষিক এক কোটি টনের বেশি কয়লা এবং আমদানিকৃত খনিজ জালানি বিদ্যুৎশিল্প ব্যবহার করে থাকে। এখানকার বার্ষিক উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ ৮০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টার বেশি।

রাজধানী মাদ্রিদ সহ বার্সেলনা, বিলবাও ও অন্যান্য শহরগুলি প্রধান শিল্পকেন্দ্র। বিক্রয় সমস্যার জন্য স্পেনের হালকা শিল্প ও খাদ্যশিল্পে বদ্ধাবস্থা বিরাজিত।

স্পেনের কৃষি অনগ্রসর। সামন্তবাদী সম্পর্কের অস্তিত্ব এবং যন্ত্রীকরণের অনুন্নত অবস্থার জন্যই তার চাষাবাদ ও পশুপালনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় নি। এদেশ গমে স্বনির্ভর নয়, কিন্তু উষ্ণতাপ্রিয় ফলের বাগানে সে সমৃদ্ধ। স্পেন প্রচুর পরিমাণে লেবুজাতীয় ফল ও অলিভ তৈল রপ্তানি করে।

আরো পড়ুন:  গ্রিস দক্ষিণপূর্ব ইউরোপে অবস্থিত পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী গণনিপীড়ক শোষণমূলক রাষ্ট্র

১৯৭৫ সালে একনায়ক ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর থেকে স্পেনে গুরত্বপূর্ণ রদবদল ঘটেছে: নতুন সংবিধান প্রণীত ও ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের বুনিয়াদ ভেঙ্গে শাসকচক্র স্পেনকে নাটোর আওতায় এনেছে এবং বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২০৩-২০৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!