ফুলের বাগান প্রসঙ্গ ও বাগানের প্রকারভেদ

বাগানের সনাতন সংজ্ঞা হচ্ছে, একটি ভবনের পাশে আলংকারিক উদ্ভিদ জন্মাবার উদ্দেশ্যে বেড়া দিয়ে ঘেরাওকৃত ভূমিখণ্ড। সময়ের সাথে বাগানের ধারণা ও বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটেছে। বাগান এখন অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। ব্যবহার অনুযায়ী বাগান মূলত দুরকমের যথা ব্যক্তিগত (পারিবারিক বা সংস্থার মালিকানাধীন) এবং সরকারি। সরকারী বাগান আবার দুপ্রকার। শহর থেকে দূরে মনোরম নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানে বৃহৎ এলাকা নিয়ে যেসব উদ্যান তৈরি করা হয় সেগুলোকে বলে জাতীয় উদ্যান (ইংরেজি: national park)। জাতীয় উদ্যানে স্থানীয় গাছপালার প্রাধান্য থাকে, আলংকারিক উদ্ভিদের চাষ সেখানে মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। জাতীয় উদ্যানের জন্য এমন সব স্থান নির্বাচন করা হয় যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমনিতেই আকর্ষণীয়। শহরের ভেতরে বা পাশে জনসাধারণের বিনোদনের উদ্দেশ্যে যেসব বাগান তৈরি করা হয় সেগুলোকে বলা হয় পার্ক বা গণোদ্যান (ইংরেজি: park)। গবেষনার উদ্দেশ্যে অথবা নিছক সখের বশে যে স্থানে নানা প্রকার উদ্ভিদের সমাবেশ ঘটানো হয় তার নাম botanical garden. বোটানিক্যাল গার্ডেন সরকারি বা বেসরকারি হতে পারে।

অবস্থান আয়তন এবং উদ্ভিদ জন্মানোর ব্যবস্থা অনুযায়ী বাগান নানা প্রকারের হয়ে থাকে। নিম্নবর্ণিত কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Roof garden বা ছাদ বাগান: ঘরের ছাদে টবে এবং কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বিবিধ কাঠামো (structure) ব্যবহার করে আলংকারিক উদ্ভিদ জন্মানো হয়।

Terrace garden: সিঁড়ির আদলে ধাপে বিভক্ত ভূমিখণ্ড বা নির্মিত কাঠামোর নাম টেরাস। কোনো কোনো সময় বড় বড় দালানের উপরিভাগ টেরাসের আকারে নির্মিত হয়। আশপাশ অপেক্ষা উঁচু জমিতে ভবন নির্মাণ করলে ভবনের কিনারা ও নিচু জমির মাঝখানের ঢালু অংশ ধাপের আকারে বিন্যস্ত করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ধাপযুক্ত স্থানে উদ্ভিদ জন্মানো যায়। তাই টেরাস গার্ডেনের অবস্থান মাটিতে অথবা ছাদে হতে পারে। সমতল জমিতে কৃত্রিম উপায়ে টেরাস্ তৈরি করা যেতে পারে।

Rock garden: মাটি ও পাথর খণ্ড দিয়ে তৈরি টিলাবৎ ভূমিখণ্ডে পাহাড়ি উদ্ভিদ জন্মিয়ে শিলা উদ্যান তৈরি হয়। এ জাতীয় উদ্যান শীতপ্রধান অঞ্চলের এবং ভারি বৃষ্টিপাত হয় না এমন স্থানের জন্য অধিক উপযোগী। বাংলাদেশের বেশীর ভাগ এলাকা সমতল বলে শিলা উদ্যান কিছুটা ব্যতিক্রম ধর্মী। সমতল এলাকায় শীলা উদ্যান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল। একঘেয়েমি দূর করার জন্য সাধারণ উদ্যানের এক অংশে ক্ষুদ্রাকার শিলা উদ্যান রচনা করা যেতে পারে ।

আরো পড়ুন:  আলংকারিক উদ্ভিদের ধারণা ও ব্যবহার বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে

Water garden: কৃত্রিম উপায়ে তৈরি অথবা স্বাভাবিক জলাশয়কে কেন্দ্র করে যে উদ্যান তৈরি হয় তার নাম জলা উদ্যান। ইংরেজিতে এ জাতীয় উদ্যান pool garden, bog garden, water garden ইত্যাদি নামে পরিচিত। জলা উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদের কয়েকটি ভাসমান (কচুরীপানা), বাকীগুলো মাটিতে প্রোথিত (পদ্ম, শাপলা ইত্যাদি)। জলাশয়ের কিনারায় লাগানো যথোপযুক্ত উদ্ভিদও জলা উদ্যানের অংশ।

Wild garden: এসব উদ্যানে স্থানীয় গাছপালা এমনভাবে লাগানো হয় যাতে জঙ্গলের মত একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বাংলায় এ জাতীয় উদ্যানকে জংলী উদ্যান বলা যেতে পারে।

Tub garden: পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা বাগান করার জমি না থাকলে মাটির অথবা প্লাষ্টিকের গামলায় আলংকারিক উদ্ভিদ জন্মিয়ে থাকেন। গামলা বাসগৃহের পাশে রাখা এবং প্রয়োজনে স্থানান্তরিত করা হয়।

Bottle garden and Terraruim: স্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে তৈরি ও যথোপযুক্ত মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার উদ্ভিদ জন্মানোর বাক্সের নাম টেরারিয়াম। বড় চ্যাপ্টা বোতলেও উদ্ভিদ জন্মানো যায় যা বোতল উদ্যান নামে পরিচিত। এসব ক্ষুদ্র বাগানের জন্য উদ্ভিদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Window garden: জানালার পাশে টবে জন্মানো আলংকারিক উদ্ভিদের সমষ্টিকে জানালা উদ্যান নামে অভিহিত করা হয়। শীতপ্রধান অঞ্চলে অনেক বাসগৃহেই এ জাতীয় উদ্যান দেখতে পাওয়া যায়।

Greenhouse garden: উন্নত দেশের সঙ্গতিসম্পন্ন লোকেরা আলংকারিক উদ্ভিদ জন্মাবার জন্য বাসগৃহের সাথে বা পাশে কাঁচঘর নির্মাণ করেন। শীতকালে কাচঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং গরমের সময় তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা থাকে। ফলে বছরের যে কোনো সময় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ জন্মানো সম্ভব হয়।

সাধারণ পুষ্পদ্যানকে মৌসুম (spring garden, autumn garden ইত্যাদি), জন্মানো উদ্ভিদের প্রকার (shrub garden, cactus garden) এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীও (Japanese garden, Chinese garden, English garden) ভাগ করা হয়। Taylor’s Encyclopedia of Gardening নামক গ্রন্থে বিভিন্ন প্রকার উদ্যানের বৈশিষ্ট্য ও রচনাশৈলী বর্ণনা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:  বাগানের জন্য উদ্ভিদ নির্বাচনের পদ্ধতি

তথ্যসূত্র:

১. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, ফুলের চাষ, দিব্যপ্রকাশ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ সংস্করণ বইমেলা ২০০৩, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৮

Leave a Comment

error: Content is protected !!