মুক্তি গেরিলা

নিজেকে ঘর হতে অতি কষ্টে বের করে আনি,

পরিবার পরিজন ছলোছলো চোখে দেখে নেয়

অন্তরঙ্গ পরিবেশ দশদিকের অন্ধকার হিমবাহ,

হালকা কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম বোধ হয়,

তখনি মনে পড়লো প্রিয়তমা তোমার গতকালের

হাসির রঙিন আভাটুকু, মনে পড়লো আমাদের সঙ্গে

যেই মেয়েরা লড়ছে তাদের হাসিও;

 

অতি দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হলাম;

 

আমার রক্তে শুধু অগ্নিস্রোতের লাভা,

আমাদের রক্তে শুধু লাভার অগ্নিস্রোত;

হয়তো পেছনে ফেউ লেগে আছে_অলিগলি ঘুরে

অতি সন্তর্পণে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে যাই

নবীন জীবনের আকাঙ্খায় গোপন জীবনে,

নির্দেশ ছিলো অপারেশনের_ হয়তো এতক্ষণে

পৌঁছে গেছে খবর সঠিক জায়গায়,

আমার পথই এখনো অনেক বাকি

তোমাকে মনে পড়ছে প্রিয়তমা,

তোমার কাছে হয়তো কোনোদিনই পৌঁছুতে পারবো না;

একটি ট্রাক কড়া হেডলাইট জ্বেলে চলে গেলো

রাস্তা ও আমাকে পিছনে ফেলে।

দূরের গ্রামের আলো ও তোমার

চোখের দ্যুতি আমার চোখে এসে পড়ছে প্রিয়তমা।

নতুন পতাকা উড়ছে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে,

কী হবে আরেকটি দেশে সপ্তর্ষিমন্ডল আলো দিলে;

কী হবে আরেকটি দেশের পতাকা স্বাধীনতায়।

জনগণ ব্যর্থ হয়েছে বলে কী

তারা হবে না মুক্তি পাখি, হবে না গেরিলা;

 

ইতিহাস মনে রাখে কতশত আলোর নিশান।

 

অপেক্ষা করে আছে মায়েরা ছাদের উপর,

সন্তানকে অভ্যর্থনা দেবে বুক ভরে_  

এমন দৃশ্য মানস চক্ষে কতবার দেখতে পাই

কিংবা অগনিত মানুষ পথের ধারে অপেক্ষা করছে

কেননা আজ আসছে আমার বন্ধুরা।

 

অলিগলি পেরিয়ে চলে যাই,

পৌঁছে যাই সহযোদ্ধাদের বিঘোষিত মুক্তাঞ্চলে,

প্রতিদিন খবর আসে সাফল্য বা ব্যর্থতার,

এগোনো বা পিছোনোর, কিন্তু প্রিয়তমা,

তুমি কেবল সাদা আর কালোতে বিশ্বাস করোনি,

তুমি জানতে আরো হাজারো রঙ আছে,

আমরাও জানি তোমারই মতো,

মুক্তি এক কঠিন পাথর, সে পাথরে

চুমো খায় তারুণ্যের হৃদয়ভেদি চোখ।

 

নদীতে সাঁতরিয়ে ভালোবাসতে শিখেছি মাছেদের সাঁতার,

আরো পড়ুন:  অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ চাই

জলপোকাদের উড়ে যাওয়া দোলা লাগায়

রাইফেলের

নলে,

চোখে ভাসে মায়ের শুকনো করুণ মুখ,

তার কিশোরি জীবনে নগরীর ফুটপাত,

বস্তির খুপরি ঘর, অন্যের ফাই ফরমাশ,

বাবার কাশির ওষুধ, হঠাৎ আকাশজুড়ে মেঘ,

হাতব্যাগ শূন্য, পলিথিনের মতো উড়ছে ঘৃণা,

প্রিয়তমা, ছেড়াঁ জীবনের সুত্র পাওয়া সহজ নয় রাষ্ট্রের প্রতিকূলে,

রাষ্ট্র শুধু জানে সাইরেন বাজিয়ে তোমার আমার পথে ব্যারিকেড দিতে,

তোমাকে কেড়ে নিয়ে যেতে পারে স্বৈরাচারি রাইফেল উঁচিয়ে,

তোমাকে মেরেও ফেলতে পারে তারা,

তদুপরি প্রিয়তমা ………।

 

আমি কী ক্লান্ত প্রিয়তমা, আমি কী দাঁড়িয়েছি পথপাশে,

হ্যাঁ, এইতো মনে পড়ছে, আমি দাঁড়িয়ে আছি_ 

শুধু নেই পথ পাশে ছোটোবেলার

বসন্তের লাল ফুলে ছাওয়া শিমুল গাছটা,

গাছের নিচের নিঃসঙ্গ ঘরটা, ঘরের ভেতরেকার

চরকায় সুতা কাটা, বুড়োর গায়ে হরিজনের পোশাক,

নেতাজির রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতাপিণ্ড দেবার প্রতিশ্রুতি;

হায়

তবুও স্বাধীনতা, তবুও মাতৃভাগ, তবুও সন্তানভাগ,

মুছে ফেলা জন্মদাগ।

 

মুক্তাঞ্চলের সীমানায় পাহারারত অবস্থায়

ভেবেছি কোনো একদিন ভোরবেলা কবুতরের

বাকবাকুম ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেলে

দেখবো মিষ্টান্নের দোকানে থরে থরে সাজানো

হীরকদ্যুতি, সাদা গোলাপ ও প্রেমপত্র,

দেয়ালে লাগানো পোস্টারে তরুণ তরুণীরা

হেঁটে হেঁটে পার হয়

স্বর্ণের প্রলেপ জড়ানো কাঠের সাঁকো;

হাতে তাদের স্বপ্নখণ্ড রাশি রাশি।

 

আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি শিল্পী আলবার্ট বেইরস্টাড (১৮৩০-১৯০২)অংকিত। চিত্রটির নাম গেরিলা যুদ্ধ এবং চিত্রটি ১৮৬০ সালে ভার্জিনিয়ার পটভূমিতে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আঁকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!