ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী

ব্রহ্মপুত্র নদ বা ব্রহ্মপুত্র নদী (ইংরেজি: Brahmaputra) এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য। আবার তিব্বতে এই নদী সাংপো বা জাঙপো নামে পরিচিত, এবং আসামে তার নাম দিহাঙ। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা হচ্ছে অসমের বর্ধিষ্ণু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের মূল স্রোত দিক পরিবর্তিত হয়ে যমুনা নদী মূল প্রবাহপথ গ্রহণ করে। সেই হিসেবে ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য ২৮৫০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্র নদের সর্বাধিক প্রস্থ ১০৪২৬ মিটার (বাহাদুরাবাদ)। এটিই বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার উত্তর ঢাল ও কৈলাস পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত তিব্বতের মানস সরোবর থেকে কিছু পূর্ব পাশে চীন নেপাল সীমান্তে অবস্থিত হিমালয়ের চাংলা হিমবাহ থেকে। ইয়ারলুং সাংপো নামে এই নদী হিমালয় থেকে বের হয়ে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার হিমালয়ের সমান্তরালভাবে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর এই নদী নামচে পর্বতকে ঘিরে দক্ষিণ দিকে বাঁক নিয়েছে ও হিমালয় পর্বতমালা ভেদ করে চীন ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেছে। সিয়াং ও পরে ডিহং নামে প্রায় চারশত কিলোমিটারের এই খাড়িপথে ব্রহ্মপুত্র নদ ৩৫০০ মিটার উচ্চতা থেকে মাত্র ২০০ মিটার উচ্চতায় নেমে এসে আসামের পাছিঘাটের কাছে সমভূমিতে পড়েছে। এর কিছু ভাটিতে সাদিয়ার কাছে ডিবং ও লোহিত নদ এর বামতীরে এসে পড়েছে।

তিব্বতের মানস সরোবর তিনটি বড় নদের উৎস। এই হ্রদের এলাকাটি সাটলেজ নদীর অববাহিকার মধ্যে পড়ে। এর কিছু পশ্চিম দিক থেকে সিন্ধু নদের উৎপত্তি হয়েছে। বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের ইয়ারলুং সাংপো নামের প্রথম অংশ তিব্বতে আটকে ছিলো। ময়মনসিং গেজেটিয়ার ১৯৭৮ এর পৃষ্ঠা ৭ এ লেখা আছে, ইয়ারলুং সাংপো নামের এই নদ ১৭৮০ সালে হিমালয় ভেদ করে আসামে প্রবেশ করে। তবে ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত মেজর জেমস রেনেলের মানচিত্রে এর নিদর্শন নেই। তাই অতীতের কোন একটি সময় এভাবেই ঘটনাটি ঘটলেও তা কবে ঘটেছিল সঠিক বলা যায় না। লক্ষণীয় যে, আসামে ব্রহ্মপুত্রের অপর নাম লোহিত যা পূর্বের প্রবাহ পথের পরিচিতি বহন করে।

আরো পড়ুন:  আত্রাই নদী বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

সমভূমিতে পতনের পর আসামের তিনসুকিয়া জেলার সদিয়ার কাছ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দক্ষিণ পশ্চিম দিকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত স্পর্শ করেছে। এই পথে ব্রহ্মপুত্র তার ডান তীরে লখিমপুর জেলায় সুবনসিরি, তেজপুর জেলায় ভারেলী, বরপেটা জেলায় মানস ও ধুবড়ি জেলায় সংকোশ নদের সাথে মিলিত হয়েছে। এই পথে ব্রহ্মপুত্র নদ তার বাম তীরে তিনসুকিয়া জেলায় বুড়ি ডিহিং, গোলাঘাট জেলায় ধানসিড়ি এবং নগাঁও জেলায় কোপিলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ এরপর এক প্রশস্ত ও ছড়ানো প্রবাহপথে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীরে ভূটান থেকে আসা সংকোশ ও তার শাখা গদাধর, দুধকুমার, ধরলা, চন্ডিজান ও তিস্তা নদীর প্রবাহ গ্রহণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ তার বামতীরে মেঘালয়ের তুরা পাহাড় থেকে আসা জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদের প্রবাহ গ্রহণ করেছে।

ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে। এই অংশটির পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দেয়া নাম হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী। এক কালের প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্রের এই অংশটি বর্তমানে শীর্ণকায়।

তথ্যসূত্র:

১. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন, ঢাকা, প্রথম সংস্করণ, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৫২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!