তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

তৃতীয় আন্তর্জাতিক বা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক বা কমিন্টার্ন বা সাম্যবাদী আন্তর্জাতিকের শততম বার্ষিকী উদ্যাপনের মূল অনুষ্ঠান গত ১৫ নভেম্বর ২০১৯ বিকেল চারটায় এক সভা শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’র আহ্বায়ক বিপ্লবী কবি কমরেড হাসান ফকরী।

উক্ত আলোচনা সভায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদে আস্থাশীল বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীক। কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিক গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। উপস্থিত ব্যক্তিগণ দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিকের সাথে কণ্ঠ মেলান।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন খনন পত্রিকার সম্পাদক বাদল শাহ আলম, প্রগতিশীল লেখক ও মঙ্গলধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক শাহেরীন আরাফাত, জ্বালানি গবেষক বি ডি রহতউল্লাহ, বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, মার্কসবাদী লেখক অনুপ সাদি, মার্কসবাদী চিন্তক শাহজাহান সরকার, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন সাঈদ বিলাস এবং আশিক আকবর। 

অনুষ্ঠানে বক্তাগণ কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ইতিহাস তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, মহান কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৯ সালে, আজ থেকে ১০০ বছর আগে বিশ্বের কমিউনিস্ট সংগঠনগুলোর ঐক্য সংগঠন ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ গড়ে উঠেছিল। মহান কমরেড এঙ্গেলসের মৃত্যুর পর ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক’-এর নেতৃত্ব করায়ত্ব করে ফেলে সুবিধাবাদীরা। এমতাবস্থায় মার্কস-এঙ্গেলসের উত্তরসূরি কমরেড লেনিন সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র মতাদর্শগত সংগ্রাম গড়ে তোলেন। মতাদর্শগত সংগ্রামের সেই প্রক্রিয়াতেই ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়। কালক্ষেপন না করে লেনিন বিশ্বের বিপ্লবী কমিউনিস্টদদের নিয়ে ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক’ গড়ে তোলেন।

বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক’-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট আদর্শ বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে। চীনসহ বহু দেশে বিপ্লব হয়। আমাদের উপমহাদেশেও সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের বার্তা বয়ে আনার ক্ষেত্রে ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক’-এর ভূমিকাই প্রধান।

অনুপ সাদি তার আলোচনায় বলেন কমিউনিস্টদের চাই আন্তর্জাতিক ঐক্য, যা পুঁজির আন্তর্জাতিক শক্তিকে ধ্বংসে ভূমিকা রাখবে। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক ছিলো রুশ বিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রুশ বিপ্লবের লক্ষ্যকে রক্ষা করা এবং সমাজতন্ত্রের লড়াইকে নেতৃত্ব দিয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে দিতে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকই ছিল অপরিহার্য ও একমাত্র হাতিয়ার। বিশ্বের সর্বহারা শ্রেণির সামনে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক তুলে ধরেছিল রুশ বিপ্লব ও দুনিয়াজুড়ে বিপ্লবী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষার সংকলিত রূপ, যা সাম্যের লড়াইয়ে পরের প্রজন্মের জীবন্ত ও আবশ্যক পথপ্রদর্শক। রোজা লুক্সেমবুর্গের কথায় ‘আন্তর্জাতিক’ হলো শ্রমিক শ্রেণির পিতৃভূমি।

আরো পড়ুন:  স্নায়ুযুদ্ধের কতিপয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সোভিয়েত মার্কিন প্রভাবিত বিশ্ব ব্যবস্থার স্বরূপ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ হচ্ছে আজকের যুগের মার্কসবাদ। যাকে ধারন না করলে আজকের সময়ে সঠিক বিপ্লবী থাকা যায় না। তাই আজকের যুগে মাওবাদীরাই/মালেমাবাদীরাই পারে তৃতীয় আন্তর্জাতিকের গুরুত্ব ও তার অবদানকে সঠিকভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। সেই হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিলুপ্ত হওয়ার কারণ নিয়ে ইতিহাস বিচারে বক্তব্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে আজকের যুগে কমিউনিস্ট আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার জন্য চতুর্থ আন্তর্জাতিক গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন ‘তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’ যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা আন্তর্জাতিক ঐক্য গড়তে সহায়তা করবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!