প্রাচীন দর্শন (ইংরেজি: Ancient philosophy) হচ্ছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের প্রাচীনকালের দর্শন। পশ্চিমা দর্শনে, রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্মের বিস্তারকে হেলেনীয়বাদী দর্শনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে এবং মধ্যযুগীয় দর্শনের সূচনা করে, যদিও প্রাচ্য দর্শনে আরব সাম্রাজ্যের মাধ্যমে ইসলামের বিস্তারটি পুরানো ইরানি দর্শনের সমাপ্তিকে চিহ্নিত করেছিল এবং প্রাথমিক ইসলামী দর্শনের সূচনা করেছিল।
প্রাচীন গ্রিক দর্শন
পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের অবদানকে প্রাচীন গ্রিক দর্শন বলা হয়। এই প্রাচীন দর্শনের বিকাশ ঘটে দাসের শোষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত গ্রিক সমাজে খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে এবং খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে রোমের দাসভিত্তিক সাম্রাজ্য। দর্শনের এই প্রাচীন পর্যায়ের বিস্তার খ্রিষ্টিয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত ধরা যায়। এই প্রাচীন পর্যায়ের ইতিহাসের গোড়ার দিকে গ্রিক দর্শনের বৈশিষ্ট্য ছিল প্রকৃতিবাদী।
সক্রেটিসের পূর্বে গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন থেলিস, এ্যানাক্সিমেণ্ডার, এ্যানাক্সিমেনিস এবং হেরাক্লিটাস। জগৎ ও জীবনের বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখ্যায় এই সমস্ত দার্শনিক প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে এদের ব্যাখ্যায় নানাপ্রকার রূপক, উপাখ্যান এবং কল্পনার সাক্ষাৎ মিললেও এই যুগের দার্শনিকগণ সমস্ত অস্তিত্বের মূল হিসাবে জল, বায়ু, অগ্নি, মাটি প্রভৃতির একটি কিংবা একাধিক বস্তুকে গ্রহণ করেছেন।
হিরাক্লিটাসের দর্শন কেবল বস্তুবাদী ছিল না। তার মতে সমস্ত অস্তিত্বের মধ্যে নিরন্তর পরিবর্তন চলছে। পরিবর্তন সত্য; আপাতঃদৃশ্য স্থিরতা বা পরিবর্তনহীনতা সত্য নয়। কিন্তু অপরিণত বস্তুবাদী চিন্তার বিকাশে ক্রমান্বয়ে ভাববাদী বৈশিষ্ট্যেও উদ্ভব ঘটতে থাকে। সক্রেটিস এবং প্লেটোর দার্শনিক আলোচনায় এক শক্তিশালী ভাববাদী দর্শনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।
দাস এবং অপরাপর শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের শোষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন নাগরিকদের নগররাষ্ট্রে অসংগতি ও সংকট যত বৃদ্ধি পেতে থাকে তত সক্রেটিস, প্লেটো এবং এ্যারিস্টটলের ন্যায় প্রভু শ্রেণীভুক্ত চিন্তাবিদগণ তাদের রাষ্ট্র এবং সমাজকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দৃশ্যের পেছনে অদৃশ্য সত্তা, চরম উত্তম, ধর্ম, অবস্থার অপরিবর্তনীয়তা প্রভৃতি বিশ্লিষ্ট দার্শনিক ভাবসূত্রের জাল বিস্তার করতে শুরু করেন।
প্রাচীন দর্শনের বস্তুবাদী ধারার অধিকতর বিকাশ এমপিডকলিস, এ্যানাক্সগোরাস লিউসিপাস এবং ডিমোক্রিটাসের চিন্তাধারায় দেখা যায়। বস্তুত দর্শনের সমগ্র ইতিহাসে ভাববাদ ও বস্তুবাদের যে মূল দুটি ধারার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তার সূত্রপাত প্লেটো এবং ডিমোক্রিটাসের দর্শনেই ঘটে। লেনিন দর্শনের ইতিহাসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, দর্শনের ইতিহাসের মূল ধারার একটিকে প্লেটোর ধারা, অপরটিকে ডিমোক্রিটাসের ধারা বলেও আখ্যাত করা চলে।
তথ্যসূত্র
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩১১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।