সমাজদর্শন বা সামাজিক দর্শন হচ্ছে সমাজ সম্পর্কিত দার্শনিক চিন্তাভাবনা

সমাজদর্শন বা সামাজিক দর্শন (ইংরেজি: Social Philosophy) হচ্ছে সমাজ সম্পর্কিত দার্শনিক চিন্তাভাবনা। অন্য কথায় সমাজদর্শন হচ্ছে সামাজিক আচরণ এবং সমাজ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যামূলক সম্পর্কের চেয়ে নৈতিক মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রশ্নের গবেষণা। সমাজতত্ত্ব সমাজের সামগ্রিক আলোচনা হলেও তাকে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা বলা যায় না। সমাজ বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজতত্ত্ব বস্তুনিষ্ট মূল্য-নিরপেক্ষ।

সমাজতত্ত্বে বিভিন্ন সামাজিক সম্বন্ধগুলো—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি সম্বন্ধগুলোকেই কেবল আলোচনা করা হয়, তাদের মূল্যনির্ধারণ করা হয় না অর্থাৎ তারা ‘ভালো’ অথবা ‘মন্দ’ বিচার করা হয় না। এজন্য, সমাজ সংক্রান্ত আলোচনাকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য, সমাজদর্শনের প্রয়োজন হয়। কেননা দর্শন তাঁর আলোচনাকে কেবল বাস্তব ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না, যা ঘটা উচিত অর্থাৎ আদর্শ সম্পর্কেও একটা সুম্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যসূচক বা আদর্শবোধক।

সমাজতত্ত্ব যেসব সামাজিক সম্বন্ধ নিয়ে আলোচনা করে তা সমাজের গতি-প্রকৃতির, পরিবর্তন ও বিবর্তনের উপায়মাত্র, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু উপায় ও আদর্শ পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। উপায়কে উপেক্ষা করলে যেমন উদ্দেশ্য লাভ হয় না, তেমনি উদ্দেশ্য বা আদর্শকে অস্বীকার করলে উপায় হয় অর্থহীন। সমাজদর্শন সমাজের আলোচনায় উপায়কে যেমন গ্রহণ করে তেমনি লক্ষ্য বা আদর্শের প্রেক্ষিতে সেইসব সম্বন্ধকে ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি রূপেও বিচার করে। এ প্রকার দার্শনিক আলোচনা না হলে সমাজের আলোচনা পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। এজন্যই গিসবার্ট বলেন যে, ‘সমাজদর্শন হলো সামাজিক বিজ্ঞান ও দর্শনসমূহের সুবর্ণ মুকুটস্বরূপ’।

সমাজতত্ত্ব বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে আর সমাজদর্শন তাদের বাস্তব সিদ্ধান্তগুলোকে আদর্শের প্রেক্ষিতে উচ্চতর সমন্বয়ের দিকে আকর্ষণ করে কাজেই বলা যায় যে, সমাজদর্শনের স্থান সমাজতত্ত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কেননা তার কাজ হলো উচ্চতর সমন্বয় সাধন। সমাজতত্ত্ব কখনও সমাজদর্শনের স্থান অধিকার করতে পারে না।

Leave a Comment

error: Content is protected !!