গোত্রভিত্তিক বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের ধারাবাহিক কাজের মূল্যায়ন

বাসদ বা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল নামের একটি সংগঠন সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদমতান্ধতাবাদের পারস্পরিক কলহে বিভিন্ন সময়ে টিকে থেকেছে এবং ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই সংগঠনের অভ্যন্তরে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বিরাজ করায় কখনোই কোনো কার্যকরী দৃশ্যমান ঐক্য গড়ে উঠেনি। বাসদ তার যাত্রা আরম্ভের শুরু থেকেই ছিল মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদবিরোধী একটি সংগঠন।[১] ফলে এই সংগঠনটি কখনোই পার্টি হিসেবে নিজেকে গঠনের প্রক্রিয়ায় না গিয়ে গোত্রপনার ভাববাদী বিলাসে মত্ত থেকেছে।

বাসদ নামের এই সংগঠনটি চালু হবার শুরু থেকেই আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্কগুলোতে মার্কসবাদের মৌলিক শিক্ষাগুলো যথা_ শ্রেণিসংগ্রাম, শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, সামাজিক বিপ্লব, দ্বান্দ্বিকঐতিহাসিক বস্তুবাদ, প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব, প্রলেতারিয়েতের আন্তর্জাতিকতাবাদ, শ্রমিকশ্রেণির রাজনৈতিক দল, দলের নীতি ও কৌশল, উদ্বৃত্ত-মূল্য তত্ত্ব ইত্যাদিকে আঁকড়ে ধরা হয়নি। ফলে সংগঠনের আলোচনাগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছিল মূলত সংগঠনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার লড়াই। ফলে এই সংগঠনের আলোচনায় তাই আমরা পার্টি বিকশিত হবার বা পার্টির সঠিক লাইন নির্ধারণ করার তেমন কোনো আলোচনা দেখি না।

সংগঠনের অভ্যন্তরে স্তরভিত্তিক আলোচনা, আলোচনা-সমালোচনা-ঐক্যের নীতি সর্বস্তরে প্রয়োগ না করা, গোত্রাধিপতিদের কমিটিতে আলোচনাকে আটকিয়ে রাখা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা এবং ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে ঐক্য’, শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন বর্গের অবস্থান, ‘সংগঠনের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা’[২] এবং বাসদের মার্কসবাদবিরোধী চিন্তার তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে শিবদাস ঘোষকে নিয়ে মতবিরোধের কারণে বাসদের নেতাকর্মীরা ২০১৩ সালের দিকে সর্বশেষ ভাঙনের কবলে পড়ে।

বাসদের সংগঠনপ্রভুদের মনোমালিন্য মূলত ব্যক্তিবাদি লড়াই, স্বমত বাস্তবায়নের চেষ্টা এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে কিছুটা সম্পত্তি ভাগ করার ঝগড়া। কেননা এই ঘটনার পরপরই দেশের তিনটি জেলার আঞ্চলিক অফিসের দখল নিয়ে কোন্দল শুরু হয়। যারা সংসদ ভবনের মতো সুন্দর ভবনটির দখল নেবার চেষ্টা না করে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দখল নিতে উঠে পড়ে লাগে তারা কী শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব নিয়ে ভাবছেন, তারা কী শ্রেণিসংগ্রাম নিয়ে চিন্তিত, তারা কী মার্কসবাদ নিয়ে ভাবছেন? তারা সর্বহারার একনায়কত্ব থেকেও কী লক্ষ যোজন দূরে অবস্থান করছেন না? কার্যালয় দখল ছাড়াও ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকার শেয়ার কেলেঙ্কারিতে[৩] জড়িয়ে পড়ার খবর। সাংগঠনিক বাড়ি (অধিপতিদের বিলাসভবন) ও সাংগঠনিক কার্যালয় ক্রয় এবং অর্থ সংগ্রহের নীতি নিয়ে অতীতে প্রশ্ন তুলে অনেকেই দল থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন।   

বাসদের ভাঙনকে বুঝতে হলে বাসদ ও এসইউসিআই[৪]-কে বোঝা দরকার। বাসদ ও এসইউসিআইয়ের গঠন বৈশিষ্ট্যে গোত্র[৫] প্রবণতাকে প্রাধান্যে রেখে পার্টি গঠনের উদ্দেশ্য নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ফলে যখন একজন কর্মী নেতৃত্বে যান তখন তার গোত্রপতিদের প্রতি আনুগত্যে পাস নম্বর অর্জন করলেই সেটা সম্ভব হয়। যখন আনুগত্য কমে যায় এবং চিন্তার পার্থক্য তৈরি হয় তখন সেই নেতাকে কোণঠাসা করা হয়। সংগঠনের অধিপতিদের দ্বারা সবচেয়ে কোণঠাসা হয়ে ৫ পৃষ্ঠার সুসাইডাল নোট লিখে ১০ এপ্রিল, ২০০৮ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন এসইউসিআই-এর পশ্চিমবংগ রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বিধান চ্যাটার্জি।[৬] আমরা এই ঘটনাটিকে এসইউসিআই ও বাসদের ভেতরে ভিন্নমত দমনের সর্বোচ্চ বিশেষীকৃত রূপ হিসেবে দেখতে পারি। ফলে সংগঠন ভাঙার পরে দলত্যাগি ও দলের পদ আঁকড়ে থাকা অধিপতিরা যেসব অভিযোগ করেন তা ঠিক ‘মতাদর্শিক সংগ্রাম’ বিষয়ক আলোচনার ভেতরে পড়ে না, যদিও তারা ‘মতাদর্শিক সংগ্রাম’ শব্দটিকেই বিতর্কে ব্যবহার করেন।

এসইউসিআই ও বাসদের এই গোত্রবদ্ধতা এসেছে শ্রমিকশ্রেণির রাজনৈতিক দল[৭] না বোঝার কারণে। পার্টি হতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটি, পলিটবুরো, জনগণের বাহিনী, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, গণসংগঠন, উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম, শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি, কার্য-প্রণালী, দলের অভ্যন্তরে ও দলের বাইরে ঐক্য ও সংগ্রাম প্রক্রিয়া ইত্যাদি থাকতে হবে। এসব বিষয়ের চর্চা এবং বিতর্ক না করে বাসদের গোত্রাধিপতিরা প্রায় চার দশক কাটিয়েছেন সাংস্কৃতিক মান উন্নত করার চেষ্টা করে।

বাসদের দুই গোত্রাধিপতি সদস্য মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও খালেকুজ্জামান ভুঁইয়ার সংগঠন বা কথিত পার্টি সংক্রান্ত চিন্তা এসেছে পশ্চিমবঙ্গের সংশোধনবাদী শিবদাস ঘোষ থেকে। ঘোষ পার্টি সংক্রান্ত চিন্তায় অমার্কসবাদী থাকার ফলে জোরপূর্বক পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাইতেন। সুবিধাবাদ ও সংশোধনবাদের  বিরুদ্ধে লড়াই না চালিয়ে শিবদাস ঘোষ কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের অপচেষ্টা সারা জীবন চালিয়েছিলেন এবং যাতে কোনোভাবেই এসইউসিআই একটি মার্কসবাদী পার্টি হিসেবে গড়ে না ওঠে সেই চেষ্টা চালিয়েছেন। বাসদের গোত্রাধিপতিরা ২৯ বছর সময় নিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রিয় কমিটি গঠন করতে। তদুপরি সেই কেন্দ্রিয় কমিটিতে সদস্য ছিলেন মাত্র ৮ জন। এইভাবে তারা ২৯ বছর চালিয়েছিলেন একটি সামাজিক সংগঠন দিয়ে। অথচ তখন ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও ১০-১৫ সদস্য বিশিষ্ট পলিটবুরো হতে পারতো। আবার এই কেন্দ্রিয় কমিটি গঠনের ঘটনা ২৫ বছর আগেই হতে পারতো এবং এখন অন্তত ৪টি কংগ্রেস হতে পারতো সংগঠনটির। পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে নেতাদের বুর্জোয়া পার্টি এবং মার্কসবাদী পার্টি বা এককথায় পার্টিবিরোধী ভুমিকায় নিজেদেরকে নিমজ্জিত রাখার ফলে। এটা এসইউসিআই-তেও ঘটেছে। ফলে বাসদ আগাগোড়াই ছিল এবং এখনো আছে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে।

১৯৮০ সালেই তারা একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের প্রক্রিয়ায় নামলেও ২৯ বছর ধরে কাজ চালিয়েছিলেন আহবায়ক কমিটি দিয়ে। কংগ্রেস ছাড়া রাজনৈতিক দল কী করে হতে পারে? লেনিন কয় বছরের ভেতরে কংগ্রেস করেছিলেন? ফলে বাসদ আগাগোড়াই থেকে গেছে একটি মার্কসবাদ-লেনিনবাদবিরোধী সংগঠন। মুবিনুল এবং খালেক কুচক্রীরা যে সারা জীবন একটি পার্টি বানানোর গল্প শুনিয়েছেন তার মূলে রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি না গড়ার স্বৈরাচারী মানসিকতা। যারা চার দশকে কংগ্রেস করতে পারে না তারা দল সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি রাখে তা লেনিন, মাও সেতুং-এর পার্টি সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লক্ষ যোজন দূরে।  

আরো পড়ুন:  পুঁজিপতি বামনদের কালে অমৃতের বিশ্বকে তৈরির ডাক দিয়ে যাই

যখন তখন যেনতেন প্রকারেণ নতুন পার্টি গঠন করার চিন্তা লেনিনবাদবিরোধি। কোনো পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটিতে সংশোধনবাদিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে বিপ্লবীদের উচিত সংশোধনবাদিদের পরাজিত করে কেন্দ্রিয় কমিটি পুনঃদখল করা। আর কেন্দ্রিয় কমিটিতে যদি সংশোধনবাদিরা ৮০-৯০% হয় তবে সেটি সংশোধনবাদি পার্টিই। কিন্তু যারা কংগ্রেস, কেন্দ্রীয় কমিটি করে না, তারা যে মার্কসবাদ- লেনিনবাদবিরোধী তা বুঝতে একজন সমাজবিজ্ঞানের অ-আ-ক-খ জানা ছাত্রই বুঝবেন। 

বাংলাদেশে সংগঠন ভাঙার পর ভাঙনকারিরা বলে দেশের সবগুলা পার্টিই সংশোধনবাদি আর শুধু আমরাই সঠিক_এই কথাটাই বস্তু বিশ্লেষণে ভুল করছে। ‘বিশুদ্ধ প্রপঞ্চ বলতে কিছুই নেই’[৮], সব বস্তুই ১০০% সঠিক হয় না; দ্বান্দ্বিক বিকাশ অর্থ ক্রমান্বয়ে বিকাশ, ভুলকে বর্জন করে, বেঠিক লাইনকে বর্জনের মাধ্যমে বিকাশ। এই জন্যেই কমিউনিস্ট দলগুলো দুই লাইনের সংগ্রাম চালায়। কিন্তু ‘মনোলিথিক চিন্তাধারী’রা এই দুই লাইনের সংগ্রামের বিরোধী।

মার্কসবাদবিরোধী শব্দ ব্যবহারে পারঙ্গম ব্যক্তিরা জড়ো হয়েছে বাসদে। যেমন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ‘জীবনসংগ্রাম’ শব্দটি বিভিন্ন লেখায় লিখছেন এবং বলছেন; এই জীবনসংগ্রাম কি চিজ তা তিনি এখনো লিখিত আকারে প্রকাশ করেননি। শ্রেণিসংগ্রামের সাথে জীবনসংগ্রামের সম্পর্কও ব্যাখ্যা করেননি।  মুবিনুল হায়দার চৌধুরী লিখেছেন,   

“কমরেড শিবদাস ঘোষ পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে লেনিনের তত্ত্বকে আরও উন্নত করলেন, সমৃদ্ধ করে দিয়ে গেলেন। লেনিনের তত্ত্বের মধ্যে ইনএ্যাডিকোয়েসি ছিল বলেই তো করতে হলো। অর্থাৎ বর্তমান যুগে লেনিনের ওই তত্ত্ব দিয়ে আর চলবেনা- এটা আমার কথা, শিবদাস ঘোষ এটা বলেননি।…আজ পৃথিবীতে কোনও দেশে কমরেড শিবদাস ঘোষের এই চিন্তা ছাড়া এগোনো যাবে না।”[৯]  

সুবিধাবাদের ঝাণ্ডাধারী হায়দারের এই কথার পরে পার্টি সংক্রান্ত আলোচনায় লেনিনবাদ বাদ না হলেও যথার্থতা হারায়। কিন্তু আমরা কী ভুলে যেতে পারবো কমরেড জে. ভি. স্তালিন লেনিনবাদের ভিত্তি নামে একখানা কিতাব লিখেছিলেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সেই বইটিও একটু বাতিল করা দরকার। সমস্যা হলো লেনিনের রচনাবলী ৩৮ খন্ডের যা সর্বমোট ৫৪০২৭ পৃষ্ঠা। আর হায়দার জীবনের প্রথম কোনো লেখা লিখছেন এইবার।[১০]

উৎপাদনের সাথে সম্পর্কহীন মানুষদের পরগাছা বলা হয়; বাসদের নেতারা উৎপাদনের সাথে কীভাবে জড়িত? মাও সেতুং বলেছেন, “মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে; সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণীসংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা– এই তিনটি অনুশীলন থেকেই সেগুলো আসে।”[১১] তাহলে উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রামের অনুশীলন না করলে নেতারা কী করেন? মার্কসবাদে সেটাই ভুলচুক চিন্তার আখড়া, যার অন্য অর্থ মার্কসবাদবিরোধী সংশোধনবাদিতা।

জাসদ ভেঙে গঠিত হয় বাসদ। অথচ জাসদ জন্মলগ্ন থেকেই ছিল একটি অ-মার্কসবাদী দল; কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্রকে বাতিলের মার্কসবাদী পুরোনো বিতর্কটিকে জাসদ ১৯৭২ সালে পুনরায় জাগিয়ে তোলে; আর এখন যে সাম্রাজ্যবাদের শেখানো বুলি, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করে আওয়ামি লিগকে সমর্থনের ধারায় জাসদ চলছে তা সুস্পষ্টরূপেই লেনিনবাদবিরোধি।

এছাড়াও জাসদের বিপ্লবী অংশটি ৭৪-৮০ সাল পর্যন্ত গণবাহিনীর মাধ্যমে শ্রেণিযুদ্ধ চালাচ্ছিলেন। আর একই সময়ে বাংলাদেশে শ্রেণিযুদ্ধ চালাচ্ছিলেন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি। সেই সময়ে জাসদের গণবাহিনীর এবং পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় ৪০,০০০ নেতাকর্মী আওয়ামি লিগ ও রক্ষী বাহিনীর দ্বারা খুন হন। সেই ভয়ংকর জটিল পরিস্থিতিতে শ্রেণিযুদ্ধের ধারাটির বাইরে জাসদের অভ্যন্তরের মধ্যপন্থি ধারাটির একজন তাত্ত্বিক দরকার ছিল যিনি এই শ্রেণিযুদ্ধের বাইরে গিয়ে হালকা বোলচালে সমাজতন্ত্রের কথা বলবেন। এবং এই মধ্যপন্থি ধারাটি পেয়েও যান হালকা বোলচালের সমাজতন্ত্রী শিবদাস ঘোষকে। গড়ে ওঠে শ্রেণিসংগ্রামের বাইরে জীবনের সর্বক্ষেত্র ব্যাপিয়া মার্কসবাদের চর্চাকারী জীবনসংগ্রামী দল বাসদ।

বাসদ গড়ে ওঠার সময়ে জাসদ-বাসদ কোনো পক্ষে না গিয়ে লক্ষ্মীপুরের কিছু নেতাকর্মী আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা ‘জাসদ-বাসদের ভ্রান্ত দোদুল্যমান ও বিভ্রান্তিকর রাজনীতি প্রসঙ্গে’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইয়ে তারা জাসদ সম্পর্কে ১১টি এবং বাসদ সম্পর্কে ৫টি বিষয়ে প্রশ্ন ও আলোচনা উপস্থাপন করেন। বাসদ সম্পর্কে গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব একত্রে সম্পন্ন করার ভ্রান্ত তত্ত্ব, দুই বিপ্লব একত্রে সম্পন্ন করার ভ্রান্ত তত্ত্বের পক্ষে জাসদীয়-বাসদীয় যুক্তি, মতাদর্শগত সংগ্রাম সম্পর্কে বাসদ নেতাদের বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব, এবং বাসদ নেতাদের সর্বপ্রথম দলিল সর্বহারা শ্রেণির দল গঠনের সমস্যা প্রসঙ্গে তারা সেই বইয়ে আলোচনা করেন। সেসব আলোচনা ও প্রশ্নের বেশিরভাগের জবাব বাসদের গোত্রাধিপতিরা কোনোদিনই দেননি। যেমন তারা একটি প্যারায় লিখেছেন,

“মুখে লেনিনকে স্বীকার করলেও_ ট্রটস্কিবাদী ধ্যান-ধারনায় পুষ্ট জাসদ-বাসদ নেতারাও বর্তমান বিশ্বের দেশে দেশে জাতীয় বুর্জোয়া ও মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ার চরিত্র ও উদ্দেশ্যের মধ্যে মোটেই পার্থক্য দেখেন না। ফলে জাসদ-বাসদ নেতারাও পশ্চাৎপদ দেশগুলোতে, বিশেষ করে, নয়া উপনিবেশিক দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বুর্জোয়া শ্রেণিকে জাতীয় বুর্জোয়া কল্পনা করার পক্ষপাতী।”[১২]     

জাসদ সম্পর্কে একই প্রশ্ন ১৯৭২ সালের আগষ্ট মাসে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পরিচালিত পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পক্ষ থেকেও তোলা হয়েছিল।[১৩]

একটি কমিউনিস্ট পার্টি কীভাবে অন্য দলের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবে তা নিয়েও বাসদের ভেতরে স্বচ্ছ ও গভীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় না। তারা যখন-তখন যে-কোনো দলের সাথেই ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ আলোচনায় বসে যান। কার সাথে কোথায় বসছেন সেটি বিবেচনায় নেন না। যেমন গত ৫ জুন ২০১৩ তারিখে তারা মাহমুদুর রহমান মান্নার[১৪] নাগরিক ঐক্যের সাথেও বসেন। সেই সভার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘দুই নেত্রীর হাতে দেশ নিরাপদ নয়, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার এখনই সময়’[১৫]। আমরা জানি, কমিউনিস্টরা নিজেদেরকে প্রথম ও প্রধান শক্তি করতে চায়, সেটাই তাদের নীতি। মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া, দালাল বুর্জোয়াদের ও সাম্রাজ্যবাদকে যদি জনগণের শত্রু বলা যায় তবে কমিউনিস্টরা ১৯৩০ সালের পর থেকেই জনগণের পক্ষের প্রধান শক্তি ছিলো ও আছে। সমস্যা হলো সংশোধনবাদি ও সুবিধাবাদিদের নীতি ও কৌশলের ভুলের কারণে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়নি।

আরো পড়ুন:  জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর সংগ্রামের বিকলাঙ্গ রূপ

শত্রুকে নিরপেক্ষ করা এবং নিরপেক্ষকে মিত্র করার মাধ্যমেই দল এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঐক্য হতে পারে কেবল দলীয় প্রাধান্য বজায় রেখেই। সে বিচারে বাসদ-সিপিবি ও বাসদ-১১ দলের ঐক্য সেভাবে হয়নি। বামপন্থী দলের ভেতরের ডানপন্থী নেতাদেরকে শক্তিহীন করা যাবে এমন অবস্থান সৃষ্টির মাধ্যমেই কেবল তাদের সাথে ঐক্য হতে পারে। এবং সেই ঐক্য হতে পারে কেবল কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিকদের নেতৃত্বে। ১১ দল যে গোবরের ভেতরে ডুবলো তার কারণ ঐক্যে প্রাধান্যকারী দলের ভূমিকা ও দ্বন্দ্বের সংশ্লেষণ না বোঝার কারণে।  

বাসদের সাথে যখন সিপিবির ঐক্য হয়[১৬] তখনই কথা উঠেছিল যে, কেন গণসংহতির স্লোগানকে সিপিবি-বাসদ জোটের স্লোগান হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে! “জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলুন”-এই স্লোগান তো গণসংহতি দেয়! স্লোগানের মাঝখানে নিজস্বের উপরে বিকল্প শব্দ লাগালেই কি সেটা গণসংহতিদের বিকল্প স্লোগান হয়ে যায় নাকি? জনগণের নিজস্ব আবার বিকল্প(!) রাজনৈতিক শক্তি বলতে এখানে ঠিক কি বুঝানো হচ্ছে তা বোঝা যায় না? সিপিবি-বাসদ জোট গড়ার সময় কিন্তু তখন গণতান্ত্রিক বামমোর্চা জোটটি বিরাজ করছিলো। সেই সময় সিপিবি কিন্তু বামমোর্চাতে যেতে চায়নি। সিপিবি বাসদ বামমোর্চার সাথে ‘ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত’[১৭] নেয় জুলাই ২০১৭তে, প্রায় ৫ বছর পর। সিপিবির সাথে ঐক্য করে বাসদও তখন সুবিধাবাদের পথেই পা বাড়িয়েছিল যা বাসদের ভাঙনকে ত্বরান্বিত করেছিল।  

সংগঠনের ঐক্য প্রসঙ্গে লেনিনবাদী নীতিকে বাসদের অধিপতিরা চুলায় ঢুকিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে বাজে বকুনির এক পিরামিড তৈরি করেছে। সংগঠনের ন্যূনতম নীতিমালা তারা মেনে চলেনি, সংগঠনে গোপন ব্যালটে ভোট নেয়ার মেরুদণ্ড কখনোই নেতাকর্মীদের ছিলো না। ফলে বাসদের ঐক্য সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির ভেতরে অনৈক্যের চর্চা অবিরামভাবে ছিলো ও আছে। ২০১৩ সালেও ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে সংখ্যালঘিষ্ঠের নতিস্বীকার’[১৮] না করে তারা সকলে মিলে সংগঠনকে ভেঙে দিয়েছিল। এই কাজ তারা করতে পারলেন বিশাল কর্মী বাহিনীর ভালোমানুষীর কারণে। আর এইসব ভালোমানুষীর উপরে বিরক্ত হয়েই লেনিন তাদেরকে গালাগাল করতেন। “লেনিন সোজা লোক ও বদমায়েশদের একই সাথে গাল দিয়েছেন। কারণ সোজা লোকেরা সহজেই বদমায়েশদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে পারে এবং তারা অজ্ঞাতসারেই বদমায়েশদের সহায়তা এবং বিপ্লবের ক্ষতি সাধন করতে পারে।”[১৯]

বাসদের সুবিধাবাদি আর মতান্ধতাবাদী অংশটিকে আমরা কী দৃষ্টিতে দেখব? তারা এতোদিন কেন, কিসের শক্তিতে টিকে ছিলেন? এর জবাব হচ্ছে, দলের ভেতরে অলস আমলাতন্ত্রীরা দলের ক্ষমতা আকঁড়ে থেকেছেন। আলস্য দলের অভ্যন্তরে শিকড় গেড়েছে দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই। জুলাই, ১৯৮৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় খালেকুজ্জামান ও মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেছিলেন, “আমাদের মধ্যে চিন্তার ঐক্য নেই, সুতরাং পণ্ডশ্রম করে আর একত্রে দল করার কোনো যুক্তি নেই।”[২০]  এই বাক্য থেকে আমরা শিখলাম নেতাদের চিন্তার ঐক্য না থাকলে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টাকে মার্কসবাদে ‘পণ্ডশ্রম’ বলা হয়, এবং সেই পণ্ডশ্রম খালেকুজ্জামানের করার কোনো যুক্তি নেই। জুলাই, ১৯৮৩ সালের সেইদিনের সভায় তারা পরবর্তী ‘তিন মাস সবাই চিরায়ত মার্কসীয় দর্শন (Marxist classics) পড়ে পারস্পরিক মত বিনিময় করা’ এবং ‘চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির ঐক্য’ গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগী হন। কিন্তু তারপর চার দশক কেটে গেল, চিরায়ত মার্কসীয় দর্শন আর পড়া হলো না।[২১] যেমন ২০১৩ সালে বাসদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার আগে “চক্রান্তের পথে বিপ্লবী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায় না” শীর্ষক অনুচ্ছেদে খালেকুজ্জামান লিখেছেন,  

“সতর্কতার অভাব ও মার্কসবাদী সাহিত্যের উপর ব্যাপক জানাশোনা ও চর্চার ঘাটতির কারণে এবং শিবদাস ঘোষের আলোচনায় রেফারেন্স না থাকার কারণে প্রতিটি বক্তব্যই তাঁর নিজের বলে মনে হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে বিবেচনা থেকেও স্বীকৃতিমূলক বক্তব্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এখন যখন বিতর্ক এসেছে আমরা খোঁজ করতে গিয়ে দেখি যেগুলিকে শিবদাস ঘোষের মৌলিক সৃষ্টি মনে করা হতো তা বাস্তবে মার্কসবাদী নেতৃত্বের বক্তব্যের সম্প্রসারণ”।[২২]   

বাসদের এই উদ্ধৃতির সহজ ব্যাখ্যা হলো শিবদাস ঘোষের কথাগুলোকে আমরা এতদিন তার নিজের বলেই মনে করতাম; কিন্তু খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেলো সেগুলোর সবই মার্কস-লেনিন-স্তালিন-মাও আগেই বলে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে চার দশক কেটে গেল, কোনো নেতাই মার্কসবাদী পুস্তক না পড়েই শিবদাস ঘোষকে কেন অন্ধ অনুসরণ করলেন? এই অলস আমলাতন্ত্রীরা এভাবেই বাসদের ক্ষমতা চার দশক যাবত কুক্ষিগত করে রেখেছেন।

কমিউনিস্ট পার্টির সমস্ত লড়াইকেই হতে হয় শ্রেণিসংগ্রামের অধীনস্থ। সব ধরনের লড়াইকেই চালাতে হয় শ্রেণিসংগ্রামের অধীনস্ত করে। লেনিন বলেছেন, “বাস্তবক্ষেত্রে প্রলেতারিয়েত তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে কেবল প্রজাতন্ত্র সমেত সমস্ত গণতান্ত্রিক দাবির জন্য তার যে সংগ্রাম সেটাকে বুর্জোয়া উচ্ছেদের জন্য তার সংগ্রামের অধীনস্থ করে।”[২৩] আর সেটি যদি না হয় তবে দলের সব কাজই বুর্জোয়াদের পক্ষে চলে যায়। কমিউনিস্ট কর্মীরা আর কতদিন তাদের অর্জনকে বুর্জোয়াদের ঘরে তুলে দেবে? আর বাসদদের কর্মীগণ কী আগামিতে শ্রেণিসংগ্রামকে আঁকড়ে ধরে সাম্যবাদের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে পারবে?

তথ্যসূত্র ও টীকাঃ

আরো পড়ুন:  হুগো শ্যাভেজ-এর কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্ধৃতি

১. এই বিষয়ে পড়ুন, অনুপ সাদি, ১০ অক্টোবর, ২০১৩, “মার্কসবাদ লেনিনবাদবিরোধী বাসদ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের জন্য তার ঐতিহাসিক শিক্ষা”, রোদ্দুরে ডট কম, ইউআরএল, https://www.roddure.com/politics/left-wing-politics/spb/

২. প্রতিবেদক নিজস্ব. “গণজাগরণ মঞ্চ, সিপিবি ও সম্পদ প্রশ্নে মতবিরোধ বাসদ আবার ভাঙছে” দৈনিক প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল, ২০১৩, archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-12/news/344304.

৩. শেয়ার কেলেংকারির বিষয়টি পাওয়া গেছে যে বিও আইডি থেকে;- ব্যক্তির নামঃ ব. র. ফিরোজ; ঠিকানাঃ ২৩/২ তোপখানা রোড, ঢাকা। Transaction Period: 2 January 2005_ 20 March 2011; B O ID: 1201520009663809; Deposit: 54,50,000

৪. সোস্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইণ্ডিয়া; সংক্ষেপে এসইউসিআই; প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪৮ সাল। শিবদাস ঘোষ কর্তৃক সৃষ্ট ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনমুখি গোত্রভিত্তিক সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন। এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় শিবদাস ঘোষ মারা যাবার ১০ বছর পর ১৯৮৬ সালে। দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। মার্কসবাদের শত্রু প্রভাস ঘোষ বর্তমান গোত্রাধিপতি।   

৫. এখানে গোত্র শব্দটি ইংরেজি Clan এবং বাংলা কৌম, আরবি কওম এবং ইংরেজি কমিউনাল শব্দের পরিপূরক। ইংরেজিতে যে গ্রুপ শব্দটি রয়েছে এটি তা নয়। বাসদের নেতা ও কর্মীদের যে পারস্পরিক সম্পর্ক তা পুঁজিবাদ-পূর্ব গোত্রসমূহের বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রাধান্যে রেখে চলে। যদিও তাদের কিছু পারিবারিক ও কিছু এনজিওর বৈশিষ্ট্য আছে। রাজনৈতিক দল ধারণাটি পুঁজিবাদ-উত্তর কালের। সর্বহারার পার্টির বৈশিষ্টকে ধারণ না করে অন্য কিছু করতে গেলে যে বিচ্যুতি হয় বাসদ-এসইউসিআই’র এই চর্চার ফলে তাই হয়েছে।   

৬. Bureau, Our. “SUCI Leader Hangs Himself in Puri – Body Found Two Days after Suicide Threat to Protest ‘Corruption’ in Party.” The Telegraph, 11 Apr. 2008, www.telegraphindia.com/1080411/jsp/bengal/story_9123750.jsp.

৭. এ বিষয়ে পড়ুন অনুপ সাদির প্রবন্ধ “কমিউনিস্টদের পার্টি বিষয়ক ধারণায় দুই লাইনের সংগ্রাম নাকি মনোলিথিক পার্টি?” রোদ্দুরে ডট কম, ৮ অক্টোবর, ২০১৩, ইউআরএল: https://www.roddure.com/literature/essay/two-lines-struggle/.

৮. ভ ই লেনিন, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের পতন, অনুচ্ছেদ : ৬, প্রগতি প্রকাশন মস্কো, ইংরেজী ভাষায় ৪৫ খন্ডে প্রকাশিত লেনিন রচনাসমগ্রের ২১ তম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৩৬।

৯. মুবিনুল হায়দার চৌধুরী; মতবাদিক বিতর্ক-৪ প্রসঙ্গে কিছু কথা; বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি; ৫ জুন, ২০১৩; পৃষ্ঠা-২০। ২৯ মার্চ-৩ এপ্রিল, ২০১৩ বাসদের আহবায়ক-সমন্বয়ক-সদস্য সচিবদের সভায় এই প্রবন্ধটি পঠিত।

১০. বাসদ ও এসইউসিআই-তে এক গোত্রাধিপতির নামেই সব লেখা প্রকাশিত হয়। ফলে মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর কোনো লেখা এর আগে প্রকাশিত হবার সুযোগ ছিল না। আগের কোনো লেখা থাকলেও আমি দেখিনি।   

১১. মাও সেতুং, মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে; মে, ১৯৬৩।  

১২. আ. ও. ম. শফিক উল্লা ও লক্ষ্মীপুর গ্রুপ; জাসদ-বাসদের ভ্রান্ত, দোদুল্যমান ও বিভ্রান্তিকর রাজনীতি প্রসঙ্গে; প্রকাশকাল ১৯৮১; পৃষ্ঠা- ৭৫।

১৩. অনুপ সাদি, “জাসদ ফ্যাসিবাদ সাম্রাজ্যবাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গণবিরোধী দলের নাম”, রোদ্দুরে ডট কম, ১১ এপ্রিল, ২০১৪, https://www.roddure.com/politics/left-wing-politics/jsd/.   

১৪. মাহমুদুর রহমান মান্না জাসদ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে বাসদের সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৮৩ সালে তিনি বাসদ ছেড়ে ডানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল আওয়ামি লিগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। বর্তমানে আওয়ামি লিগ থেকে সরে গিয়ে ডানপন্থী তৃতীয় শক্তি উত্থানের জন্য কাজ করছেন।

১৫. প্রতিবেদক নিজস্ব. “নাগরিক ঐক্যের আলোচনা সভা ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা তা মোগল সম্রাট বা জারদেরও ছিল না.’” দৈনিক প্রথম আলো, 5 June 2013, archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-06-05/news/357985.

১৬. সুইন নূরনবী সিদ্দিক. “এক হলো সিপিবি-বাসদ.” বাংলানিউজ ২৪, 4 July 2012, www.banglanews24.com/politics/news/bd/123968.details.

১৭. প্রতিবেদক নিজস্ব. “বাম দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ ২৭ জুলাই.” দৈনিক প্রথম আলো, 16 July 2017, www.prothomalo.com/bangladesh/article/1253431/.

১৮. ভি আই লেনিন; ‘ঐক্য প্রসঙ্গে’ প্রবন্ধ থেকে; ‘ত্রুদোভায়া প্রাভদা’, ২নং; ৩০ মে, ১৯১৪; ২৫ খণ্ড, পৃঃ ১৭৭।

১৯. সিরাজ সিকদার; সিরাজ শিকদার রচনা সংগ্রহ, শ্রাবণ, ফেব্রুয়ারি, ২০০৯; পৃষ্ঠা- ৪১৫।

২০. বাসদ-এর মুখপত্র সাম্যবাদ, ১ জানুয়ারি, ১৯৮৪; পৃষ্ঠা ৬-৭। এটি ১৯৮৩ সালের ভাঙনের পর বাসদ (মাহবুব) অংশ কর্তৃক প্রকাশিত। 

২১. পূর্বোক্ত।

২২. শান্ত অনুপম সৈকত. “বাসদের মতবাদিক বিতর্কঃ রঙ্গমঞ্চে ছদ্মনামী ‘বাংলার দৃশ্যপট’এর আবির্ভাব এবং বাসদ(খালেকুজ্জামান) এর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভূমিকা .” Debates of Spb, ওয়ার্ডপ্রেস, 6 June 2013, debatesofspb.wordpress.com/2013/06/06/anupam_2/comment-page-1/. প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, সারাজীবনে তিনি মার্কস, লেনিন, মাও সেতুং রচনাবলী না পড়েই এবং শিবদাস ঘোষের লেখার সাথে না মিলিয়েই কীভাবে নেতা সেজে বসে আছেন।

২৩. ভি. আই. লেনিন; সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার; বাংলা রচনা সংকলন (চার ভাগে সম্পূর্ণ) প্রথম ভাগ; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; পৃষ্ঠা-২১৯।

রচনাকাল ২৪ জুন, ২০১৩

Leave a Comment

error: Content is protected !!