বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের।
রাই আমাদের রাই আমাদের
আমরা রাইয়ের রাই আমাদের।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণ মদনমোহন।
শারী বলে আমার রাধা বামে যতক্ষণ;
নৈলে শুধুই মদন।
শুক বলে আমার কৃষ্ণ গিরি ধরেছিল।
শারী বলে আমার রাধা শক্তি সঞ্চারিল;
নৈলে পারিবে কেন?
শুক বলে আমার কৃষ্ণের মাথায় ময়ুর পাখা।
শারী বলে আমার রাধার নামটি তাতে লিখা;
ঐ যে যায় গো দেখা।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণের চুড়া বামে হেলে।
শারী বলে আমার রাধার চরণ পাবে বলে;
চূড়া তাইতে হেলে।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণের বাঁশী করে গান।
শারী বলে সত্য বটে, বলে রাধার নাম;
নৈলে মিছে সে গান।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণ জগতের গুরু।
শারি বলে আমার রাঁধা বাঞ্ছাকল্পতরু;
নৈলে কে কার গুরু।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণ জগতের কালো।
শারী বলে আমার রাধার রূপে জগত আলো;
নৈলে আঁধার কালো।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণের শ্রীরাধিকা দাসী।
শারী বলে সত্য বটে সাক্ষী আছে বাঁশী;
নৈলে হ’ত কাশীবাসী।।
শুক বলে আমার কৃষ্ণ জগতের প্রাণ।
শারী বলে আমার রাধা জীবন করে দান;
থাকে কি আপন প্রাণ?
শুক শারী দুজনার দ্বন্দ্ব ঘুচে গেল
রাধা কৃষ্ণের প্রীতে একবার হরি হরি বল।
(বলে বৃন্দাবনে চলো)।।
লোপামুদ্রা মিত্রের গাওয়া এই গানটির কথাগুলো কিছুটা আলাদা। এখানে নিচে লোপামুদ্রা মিত্রের গাওয়া কথাগুলো দেয়া হলো:
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
রাই আমাদের রাই আমাদের, আমরা রাইয়ের
শ্যাম তোমাদের, রাই আমাদের। (২)
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
শুক বলে আমার কৃষ্ণ মদনমোহন।
আহা শুক বলে আমার কৃষ্ণ মদনমোহন।
আর শারী বলে, (২)
আমার রাধা বামে যতক্ষণ নইলে শুধুই মদন।
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
শুক বলে আমার কৃষ্ণের চূড়া বামে হেলে।
আহা শুক বলে আমার কৃষ্ণের চূড়া বামে হেলে।
আর শারী বলে,
আমার রাধার চরণ পাবে বলে, চূড়া তাইতে হেলে।
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
শুক বলে আমার কৃষ্ণের মাথায় শিখির পাখা।
আহা শুক বলে আমার কৃষ্ণের মাথায় শিখির পাখা।
আর শারী বলে, (২)
আমার রাধার নামটি তাতে লেখা, সে যে যায় না দেখা।
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
শুক শারী দুজনার দ্বন্দ্ব ঘুচে গেল।
আহা শুক সারী দুজনার দ্বন্দ্ব ঘুচে গেল।
রাধা কৃষ্ণের নামে এবার হরি হরি বলো,
বৃন্দাবনে চলো।
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের। (২)
রাই আমাদের রাই আমাদের, আমরা রাইয়ের
শ্যাম তোমাদের, রাই আমাদের। (২)
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের (৪)
এই গানটি এবং গানটির গীতিকার গোবিন্দ অধিকারী সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি কাজী মোতাহার হোসেন রচনাবলী থেকে। আবদুল হক (১৯১৮-৯৭) সম্পাদিত বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত প্রথম খণ্ডের ৭১-৭২ পৃষ্ঠাতে গানটির যে লিখিত ভাষ্যটি কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১) তাঁর ‘বাঙ্গালীর গান’ প্রবন্ধে দিয়েছেন তা এখানে দেয়া হলো। অবশ্য সেখানে গানটির অংশবিশেষ কাজী মোতাহার হোসেন উল্লেখ করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে গানটি অনেক বড় ছিলো। কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কীর্তনটি ১৯৫২ সালে রেকর্ড করেন। গোবিন্দ অধিকারীর আরেকটি গান হচ্ছে ‘চম্পক বরণী বলি, দিলি যে চমক কলি’।
আপনারা যারা ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের’ গানটি শোনেননি তারা ইউটিউবে লোপামুদ্রা মিত্রের গাওয়া গানটি শুনতে পারবেন এই লিংক থেকে এবং কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি শুনতে পারবেন এই লিংক থেকে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।