বাংলাদেশের বন্যপ্রাণ (ইংরেজি: Wildlife of Bangladesh) বা বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য বলতে বোঝানো হয় প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশে আছে বা ছিল। এই ১২ হাজার প্রজাতির ভেতরে উদ্ভিদ আছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার এবং প্রাণী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার প্রজাতি।
জীববৈচিত্র্য কেবল মানুষের কল্যাণ এবং জীবিকাতে তার অবদান রাখে না, এটি তার অবদানের চেয়ে বেশি লোককে উপকৃত করে। টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য। এটি সর্বাধিক মৌলিক প্রয়োজনগুলির জন্য পণ্য এবং পরিষেবাও তৈরি করে – পরিষ্কার বাতাস, মিঠা জল এবং আশ্রয়ের উপকরণ সরবরাহ করে। এটি বিনোদনমূলক, মনস্তাত্ত্বিক, সংবেদনশীল এবং আধ্যাত্মিক আনন্দযুক্ত লোকদেরও উপাদান সরবরাহ করে। আমাদের খাদ্য উদ্ভিদ থেকে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে আসে। গাছপালা মানুষের দ্বারা খাওয়া খাদ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে। ফলমূল, বাদাম, মাশরুম, মধু, মশলা এবং অন্যান্য খাবার যা মানুষ এবং বন্যজীবন গ্রহণ করে তা প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান থেকে উদ্ভূত। বেশিরভাগ বাড়ি, আসবাব এবং এমনকি অনেকগুলি কাপড় কাঠ, তেল, ধূপ, মোম, আঠা এবং তন্তু সহ প্রাকৃতিক পণ্যগুলি আসে প্রাণবৈচিত্র্য থেকে। রেশম মথ মূল্যবান রেশম তৈরির শিল্পের ভিত্তি। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, স্থিতিস্থাপকতা, সামাজিক সম্পর্ক, স্বাস্থ্য এবং পছন্দ এবং কর্মের স্বাধীনতায় অবদান রাখে।
বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে ’১৮-এ অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে আরো বেগবান করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে বিভিন্ন প্রটোকল ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যেমন, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশন (CBD), পরিযায়ী প্রজাতির সংরক্ষণ সম্পর্কিত কনভেনশন (CMS), মহাবিপদাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কনভেনশন (CITES) ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বন, অভ্যন্তরীণ জলাভূমি এবং বঙ্গোপসাগরে রয়েছে বিপুল জীববৈচিত্র্যের সমাহার, রয়েছে কতিপয় বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সমস্ত প্রাকৃতিক আবাস থেকে হ্রাস পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হ্রাস অব্যাহত রয়েছে কারণ দেশে বিবদমান নীতিমালা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বর্তমান রাজনৈতিক বা বাজার ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেনি এবং দেশে অনেকগুলি সুরক্ষার নীতি পুরোপুরি প্রয়োগ হয়নি।
বাংলাদেশের উদ্ভিদ
সমষ্টিগতভাবে এবং স্বতন্ত্রভাবে বন ক্ষয়ের জন্য দায়ী অনেক শক্তি। এই শক্তিগুলো প্রবণতাগুলি খুব জটিল। বাংলাদেশের বন অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো কৃষি সম্প্রসারণ, কাঠ ও অ-কাঠ সম্পদের অতিরিক্ত আরোহণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি, জনবসতি, নগরায়ন এবং অনুপযুক্ত পরিচালনা পদ্ধতি। বাংলাদেশে বনভূমির অবক্ষয় দুঃখজনক অবস্থায় রয়েছে এবং এর প্রধান কারণগুলি বৈচিত্র্যময় ও জটিল।
উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ১৯৮৮ প্রজাতির শৈবাল, ২৭৫ প্রজাতির ফানজাই, ২৪৮ প্রজাতির মস জাতীয় উদ্ভিদ, ১৯৫ প্রজাতির ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ, ৭ প্রজাতির নগ্নবীজি এবং ৩ হাজার ৬১১ প্রজাতির গুপ্তবীজি (২৬৩৩ প্রজাতির দ্বি-বীজপত্রী এবং ৯৮৮ প্রজাতির একবীজপত্রী) উদ্ভিদ রয়েছে।
বাংলাদেশের মেরুদণ্ডী প্রাণী
মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রায় ১৬০০ প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত। প্রাণী জগতের মধ্যে রয়েছে ৬৫৩ প্রজাতির মাছ যার মধ্যে ২৫১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং ৪০২ প্রজাতির লোনা পানির মাছ। রয়েছে ৭৯০ প্রজাতির পাখি, ৬৩ প্রজাতির উভচর, ১৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
বাংলাদেশের অমেরুদণ্ডী প্রাণী
এছাড়াও রয়েছে ১৭৫ প্রজাতির প্রোটোজোয়া, ২৯ প্রজাতির পরিফেরা, ১০২ প্রজাতির নিডারিয়া, ১০ প্রজাতির টেনোফোরা, ৭৬ প্রজাতির রোটিফেরা, ১২৬ প্রজাতির প্লাটিহেলমেনথিস, ১৭৬ প্রজাতির নেমাটোড, ৪৭৯ প্রজাতির মোলাস্ক, ৪৬ প্রজাতির একিনোডার্মাটা এবং ৫০০০-এর অধিক আথ্রোপোডা।
অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, বন উজাড়, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, দূষণ, বন্যপ্রাণী শিকার ও হত্যার ফলে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে। একসময় বাংলাদেশের প্রায় ১৭টি জেলায় বাঘ ছিল। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র সুন্দরবনে বাঘ সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে এক শিংওয়ালা গন্ডার, ময়ূর, বুনো গরু, বুনো মহিষ মিঠা পানির কুমিরসহ ১৩ প্রজাতির প্রাণী।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
Execelent