প্রাণীজগতের শ্রেণিবিন্যাস বা শ্রেণিবিভাগ হচ্ছে সমস্ত প্রাণী জগতের সম্পর্ক বোঝার বিন্যাস

সমস্ত প্রাণী কীভাবে সম্পর্কিত তা বোঝার জন্য প্রাণীজগতের শ্রেণিবিন্যাস (ইংরেজি: Animal Classification) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। লিনিয়াস পদ্ধতির ভিত্তিতে, ভাগ করা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রজাতিগুলিকে সচরাচর বিভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়।

বিচিত্র ধরনের অসংখ্য প্রাণীর আবাসভূমি আমাদের এ পৃথিবী। এককোষী প্রাণী এ্যামিবা থেকে শুরু করে বহুকোষী বিশালদেহী তিমির মত নানা আকৃতি ও প্রকৃতির প্রাণী বসবাস করছে বিভিন্ন পরিবেশে। এসব প্রাণীর বেশির ভাগই আমাদের উপকার করে। তবে কোন কোন প্রাণী ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। পৃথিবীতে প্রায় ১০ লক্ষ প্রাণী আছে বলে জানা গেছে। এ বিপুল সংখ্যক প্রাণীর গঠন প্রকৃতি সম্বন্ধে সহজে ধারণা লাভের একমাত্র উপায় হল এদের শ্রেণিবিভাগ করা।

প্রাণীর শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি

লক্ষ করুন আপনার ঘাড় থেকে শুরু করে কোমরের শেষ পর্যন্ত পিঠের ঠিক মাঝখানে ছোট ছোট হাড়ের নমনীয় দণ্ড রয়েছে, এটি মেরুদণ্ড। গরু, ছাগল, পাখি, টিকটিকি আপনার চেনা এসব প্রাণীর মেরুদণ্ড আছে, এরা মেরুদণ্ডী প্রাণী। প্রজাপতি, ঘাসফড়িং, কেঁচো, মশা এসব আপনার অতি পরিচিত প্রাণী। এদের দেহে হাড় বা মেরুদণ্ড নেই। এরা হল অমেরুদণ্ডী প্রাণী। মেরুদণ্ডের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে সমস্ত প্রাণী জগতকে অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণী- এ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পাঁচটি দলে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো

মেরুদণ্ডী প্রাণী:

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছেঃ

(ক) মৎস্যকুল: এ দলের প্রাণীরা পানিতে বাস করে। দেহ আঁশ দিয়ে ঢাকা। ফুলকার সাহায্যে শ্বাস কাজ চালায়। যেমন- রুই, কাতল, পুঁটি।
(খ) উভচর প্রাণী: এসব প্রাণী পানিতে এবং ডাঙ্গায় বসবাস করে। জীবনচক্রের একটা অংশ এদের পানিতে বিকাশ লাভ করে। যেমন- ব্যাঙ।
(গ) সরিসৃপ: এরা বুকে ভর দিয়ে চলাফেরা করে। যেমন- কুমির, টিকটিকি।
(ঘ) পাখি: এসব প্রাণীর দেহ পালকে ঢাকা থাকে। যেমন- ময়না, টিয়া, ঘুঘু।
(ঙ) স্তন্যপায়ী প্রাণী: এসব প্রাণী মায়ের দুধ পান করে। যেমন- বাদুড়, তিমি, মানুষ।

আরো পড়ুন:  ক্রোকোডিলিয়া হচ্ছে আধাজলজ মাংসাশী সরীসৃপের বর্গ

অমেরুদণ্ডী প্রাণী:

অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে

১. প্রোটোজোয়া: এরা এককোষী আদি প্রাণী। যেমন- অ্যামিবা, ম্যালেরিয়া জীবাণু।
২. পরিফেরা: এসব প্রাণীর দেহ অসংখ্য ক্ষুদ ক্ষুদ্র ছিদ্র যুক্ত। এরা জলে বাস করে। যেমন স্পনজিলা।
৩. সিলেনটারেটা: এ পর্বের বেশির ভাগ প্রাণী সমুদ্রে বাস করে। এদের দেহের মেলো দিকটা মুখ হিসেবে কাজ করে। মুখের চারদিকে টেন্টাকল আছে। যেমন- হাইড্রা, জেলীফিস।
৪. প্লাটিহেলমিনথিস: এ পর্বের অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদের দেহ ফিতার মত চ্যাপ্টা। এরা সাধারণত পরজীবী। যেমন- ফিতাকৃমি।
৫. নেমাথেলমিনথিস: এ পর্বের প্রাণীদের দেহ নলাকৃতি ও অখণ্ডিত। এরা সাধারণত: পরজীবী। যেমন- কেঁচোকৃমি।
৬. অ্যানিলিডা: এ জাতীয় প্রাণীদের দেহ নরম এবং রিং বা বলয়ের মত খণ্ড খণ্ড অংশ দিয়ে গঠিত। যেমন- কেঁচো, জোঁক।
৭. আর্থোপোডা বা সন্ধিপদী: এ পর্বের প্রাণীদের দেহ শক্ত আবরণে ঢাকা এবং এদের সন্ধিযুক্ত পা রয়েছে। যেমন- চিংড়ি, তেলাপোকা।
৮. একাইনোর্ডামাটা: এসব প্রাণী সমুদ্রে বাস করে। এদের দেহ কাটাযুক্ত। যেমন তারা মাছ।
৯. মলাস্কা: এ পর্বের প্রাণীদের দেহ নরম কিন্তু শক্ত খােলস দিয়ে আবৃত। যেমন- শামুক, ঝিনুক।

শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা

শ্রেণিবিন্যাসের ধারণা থাকলে অল্প আয়াসে এবং কম সময়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের সদস্যসমূহের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্য সহজে নিরূপণ করা যায়। সহজে উদ্ভিদ ও প্রাণীকে শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে চেনা যায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যবহার ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে শ্রেণিবিভাগের জ্ঞান কাজে লাগানো যায়। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিবর্তনের ধারা সহজে জানা যায়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!