[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Cacomantis passerinus সমনাম: Cuculus passerinus (Vahl, 1797) বাংলা নাম: মেটেপেট পাপিয়া ইংরেজি নাম: Grey-bellied Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Cacomantis, Muller, 1843; প্রজাতি/Species: Cacomantis passerinus (Vahl, 1797)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Cacomantis গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৮টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. করুণ পাপিয়া, ২. মেটেপেট পাপিয়া ও ৩. দাগি তামাপাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে মেটেপেট পাপিয়া।
বর্ণনা: মেটেপেট পাপিয়া সাদা অবসারণী ওয়ালা কালচে ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ২৩ সেমি., ডানা ১২ সেমি., ঠোঁট ২.২ সেমি., পা ১.৮ সেমি., লেজ ১১ সেমি.)। সামান্য কিছু অংশ ছাড়া ছেলেপাখির দেহের পুরোটাই কালচে ধূসর। তলপেট, অবসারণী ও লেজের নিচের কোর্ভাট পীতাভ-সাদা। ডানার কোর্ভাট ও উড্ডয়ন পালক কালচে ধূসর, ধূসর-কালো লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকে সাদা ডোরা রয়েছে। মেয়েপাখির দু’ধরনের চেহারা থাকে। এক ধরনের চেহারা ছেলেপাখির মত। আরেক ধরনের চেহারাকে বলে কলজে চেহারা। পিঠ কালো ডোরাসহ লালচে-বাদামি ও দেহতল লালচে গলা ও বুকসহ আবছা কালোয় ঢেউ খেলানো। ছেলে ও মেয়ে উভয় পাখির চোখ বাদামি, মুখ উজ্জ্বল কমলা এবং পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ কলজে চেহারা ছাড়া ভূসায় ঢাকা কালচে ধূসর রঙের হয়, যা প্রাপ্তবয়স্কের মত। তবে প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে কালচে বাদামি।
স্বভাব: মেটেপেট পাপিয়া খোলা বন, কুঞ্জবন, বনভূমি ও অবাদী জমিতে বিচরণ করে। সাধারণত একা ও জোড়ায় বিচরণ করে। গাছের চাঁদোয়ায় ও উঁচু ঝোঁপে গাছ থেকে গাছে দ্রুত ওড়ে খাবার খায়। খাবার তালিকায়: কোমল পোকামাকড়, ছারপোকা ও লোমশসহ শুঁয়োপোকা রয়েছে। জুন-সেপ্টেম্বর প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি ভোরে ও গোধূলিতে, মেঘাচ্ছন্ন দিনে এবং পূর্ণিমা রাতে ডাকে। শোকাতুর কণ্ঠে অনুক্রমিকভাবে ডাকে: টীর টীর টীর পীপিপি; পিউয়ী পী পিউয়ী…। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো এমনকি ছানার পরিচর্যাও করে না। মেয়েপাখি ছোট পাখি প্রধানত ফুটকি ও প্রিনার বাসার ডিম পাড়ে। ডিম সরু, ডিম্বাকার ও মাপ ১.৯×১.৪ সেমি.। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়।
বিস্তৃতি: মেটেপেট পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগে বিচরণ করে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অনিয়মিত দেখা গেছে, উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল এমন তথ্য রয়েছে। কেবলমাত্র ভারত উপমহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: মেটেপেট পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই মেটেপেট পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: মেটেপেট পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অশণিসঙ্কেতের চড়ূই (গ্রীক:kakos = অশণিসঙ্কেত, mantis = মহাপুরুষ; ল্যাটিন: passerinus = চড়–ইয়ের মত) ।
তথ্যসূত্র:
১. ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Cacomantis passerinus“, http://www.iucnredlist.org/details/22683920/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।