উদয়ী বামনরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Ceyx erithaca সমনাম: Alcedo erithacus (Linnaeus, 1758); Aleco tridactyla Pallas, 1769; Ceyx tridactylus (Pallas, 1769); Ceyx microsoma Burton, 1837; Ceyx rufidorsa Strickland, 1847 বাংলা নাম: উদয়ী বামনরাঙা, বানিয়ো মাছরাঙা (আই), ইংরেজি নাম: Oriental Dwarf Kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: alcedinidae গণ/Genus: Ceyx, Lacepede, 1799; প্রজাতি/Species: Ceyx erithaca Linnaeus, 1758[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Ceyx গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৭টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ও আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে উদয়ী বামনরাঙা।

বর্ণনা: উদয়ী বামনরাঙা বা উদয়ী বামন মাছরাঙা হচ্ছে আগুন রঙের মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি, ডানা ৫.৭ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ০.৮ সেমি, লেজ ২.২ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, মাথার চাঁদি ও ঘাড় কমলা রঙের; পিঠ, কাঁধ-ঢাকনি, ডানা-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনি নীলচে কালো; কোমর ও লেজ কমলা রঙের; গলা সাদা ও চোখের উপরে বা ঘাড়ের পাশে সাদা ফুটকি আছে; পেট কমলা-হলুদ যা ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে ফ্যাকাসে হয়েছে। এর চোখ গাঢ় লাল এবং ঠোঁট ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল বা উজ্জ্বল ভার্মিলিয়ন। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা অতি কমলা রঙের ও চোখ বাদামি; অনুজ্জ্বল দেহ ও বুকে কমলা ফেটা আছে ও দেহতল হালকা নীল। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. e. erithaca বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: উদয়ী বামনরাঙা পাতাঝরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও চিরসবুজ বনের ছায়াময় ছোট নদীতে বিচরণ করে; সাধারণত একা ঘুরে বেড়ায়। পানির কাছে এরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে এবং সুযোগ এলে পানি থেকে শিকার ধরে খায়; খাবার তালিকায় রয়েছে ছোট মাছ, পোকামাকড়, কাঁকড়া ও শামুক। পানির উপরে ঝুলে থাকা লতাপাতায় ঢাকা পাথর অথবা ডালে লুকিয়ে বসতে এরা পছন্দ করে; দ্রুত ডানা চালিয়ে তাড়াতাড়ি ও সোজা ওড়ে চলে; ওড়ার সময় তীক্ষ্ম কণ্ঠে ডাকে: চিচিচী…। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে নদীর খাড়া পাড়ে ১০০ সেমি. লম্বা গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৭টি, মাপ ১.৮ × ১.৫ সেমি।

আরো পড়ুন:  নীলকান মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: উদয়ী বামনরাঙা বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; গ্রীষ্মকালে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে চোখে পড়ে। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: উদয়ী বামনরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই উদয়ী বামনরাঙাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: উদয়ী বামনরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রূপান্তরিত মাছরাঙা (গ্রীক Ceyx = কীস, গ্রীক পৌরাণিক গল্পে যে মাছরাঙায় রূপান্তÍরিত হয়েছিল; ল্যাটিন: erithaca = এরিথকাস, প্লিনির মতে শীতের এই পাখিটি গ্রীষ্মে অন্য পাখিতে রূপান্তরিত হয়)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও  এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৫১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Ceyx erithaca“, http://www.iucnredlist.org/details/61658565/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!