এশীয় শ্যামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Chrysococcyx maculatus সমনাম: Trogon maculatus (Latham, 1790) বাংলা নাম: এশীয় শ্যামাপাপিয়া ইংরেজি নাম: Asian Emerald Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Chrysococcyx, Boie, 1826; প্রজাতি/Species: Chrysococcyx maculatus (Gmelin, 1788)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Chrysococcyx গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. এশীয় শ্যামাপাপিয়া ও ২. বেগুনি পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে এশীয় শ্যামাপাপিয়া।

বর্ণনা: এশীয় শ্যামাপাপিয়া খুদে পাখি ও ছেলেপাখির চেহারা মেয়ে থেকে ভিন্ন (দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি., ডানা ১১ সেমি., ঠোঁট ১.৫ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৬.৭ সেমি.)। ছেলেপাখির পিঠ, থুতনি, গলা ও বুকের উপরিভাগ উজ্জ্বল পান্না-সবুজ। বুকের নিচের অংশ থেকে অবসারণী পর্যন্ত সাদার ওপর ধাতব বাদামি-সবুজ ডোরা রয়েছে। মেয়েপাখির পিঠ ব্রঞ্জ-সবুজ, মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনটা লালচে-কমলা। সাদা দেহতলের পুরোটায় ধাতব বাদামি-সবুজ ডোরা ও ব্রঞ্জ-সবুজ লেজের আগা সাদা। ছেলে ও মেয়েপাখি উভয়ের চোখ ও চোখের পাতা গাঢ় লাল, কমলা-হলুদ ঠোঁটের আগা কালো এবং পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ম্যান্টল ও ডানার লালচে-কমলা ডোরা ও মাথার চাঁদির ডোরা ছাড়া দেখতে মেয়েপাখির মত। যুবা পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনের পান্না-সবুজ রঙ বাদ দিলে স্ত্রীপাখির মত দেখায়।

স্বভাব: এশীয় শ্যামাপাপিয়া চিরসবুজ বন, অপ্রধান বন এবং নিচু ভূমি ও ১৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পাহাড়ি ঘেরা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা, জোড়ায় বা ৪-৬টি পাখির ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। গাছের মগডাল থেকে বাতাসে ভেসে শিকার ধরে খায়। খাবার তালিকায় উড়ন্ত পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা ও অন্য কোমল দেহের ছারপোকা রয়েছে। ওড়ার সময় একে অন্যকে ডাকে। কম্পিত সুরে ডাকে: চী..। এপ্রিল-জুলাই প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি সারাদিন ও পূর্ণিমা রাতে ডাকে। অনুক্রমিকভাবে পর্যায়ক্রমে উচ্চ থেকে নিচু স্বরে ডাকে: কী-কী-কী-কী…। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন করে না। মেয়েপাখি মৌটুসি ও মাকড়মারের বাসায় ডিম পাড়ে এবং পালক পিতামাতার বাসার ক্ষুদ্র প্রবেশ পথে ডিম পেড়ে দেয়। ডিম সাদাটে, মাপ ১.৬×১.২ সেমি.।

আরো পড়ুন:  করুণ পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: এশীয় শ্যামাপাপিয়া বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়; উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল। ভারত, নেপাল ও ভূটানের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: এশীয় শ্যামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই এশীয় শ্যামাপাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: এশীয় শ্যামাপাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তিলা সোনাপাপিয়া (গ্রীক: khrusos = সোনা, cuculus = পাপিয়া; ল্যাটিন: maculatus = চিতি ওয়ালা)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Chrysococcyx maculatus“, http://www.iucnredlist.org/details/22684000/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!