খয়রাপাখ পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Clamator coromandus সমনাম: Cuculus coromandus Linnaeus, 1766 বাংলা নাম: খয়রাপাখ পাপিয়া, ইংরেজি নাম: Chestnut-winged Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Clamator, Kaup, 1829; প্রজাতি/Species: Clamator coromandus (Linnaeus, 1766)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Clamator গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. খয়রাপাখ পাপিয়া ও ২. পাকরা পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে খয়রাপাখ পাপিয়া।

বর্ণনা: খয়রাপাখ পাপিয়া লম্বা লেজের ঝুটিওয়ালা পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৭ সেমি., ওজন ৭০ গ্রাম, ডানা ১৬ সেমি., ঠোঁট ২.৫ সেমি., পা ২.৭ সেমি., লেজ ২৪ সেমি.)। তামাটে ডানা ও ঘাড়ের পিছনের দিকের সাদা গলাবন্ধ ছাড়া পিঠ চকচকে ধাতব কালো। থুতনি, গলা ও বুকে গোলাপি আমেজ ব্যতীত দেহতল সাদাটে। মসৃণ কালো মাথায় লম্বা ঝুটি পিছনের দিকে কাত হয়ে পড়ে থাকে। কালো লেজের আগা সাদা। চোখ লালচে-বাদামি। কালচে ঠোঁটের নিচের অংশের গোড়া হলদে, মুখ স্যামন ও পাটল বর্ণে মেশানো এবং ঠোঁটের সঙ্গমস্থল ফ্যাকাসে। পা ও পায়ের পাতা স্লেট -বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি, ম্যান্টল, স্ক্যাপুলার ও ডানার কোর্ভাটের প্রান্তদেশে লাল রঙ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। লেজের আগা পীতাভ, ঝুটি বেশ খাটো ও গোলাকার, ঠোঁট ফ্যাকাসে এবং গলা ও বুক সাদাটে।

স্বভাব: খয়রাপাখ পাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনভূমি ও ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে। একা, জোড়ায় বা ৩-৪টি পাখির বিচ্ছিন্ন দলে থাকে। ডাল থেকে ডালে লাফ দিয়ে গাছের চাঁদোয়ায় ও ঝোপে ঘন পাতার আড়ালে খাবার খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত শুঁয়ো পোকা রয়েছে। দ্রুত পাখা ঝাপটে গাছ থেকে গাছে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণত প্রজনন ঋতুর বাহিরে নীরব থাকলেও প্রজনন ঋতুতে বেশ গান গায়। এপ্রিল-আগস্ট প্রজনন ঋতু। উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে ডাকে: পীপ-পীপ…। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো কিংবা ছানা পালন করে না। মেয়েপাখি পেঙ্গা, বিশেষ করে মালাপেঙ্গার বাসায় ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম নীল, ২.৬ × ২.২ সেমি.।

আরো পড়ুন:  বউকথাকও পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: খয়রাপাখ পাপিয়া বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে ও প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: খয়রাপাখ পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই খয়রাপাখ পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: খয়রাপাখ পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডেল-এর তীক্ষ্ণকণ্ঠ পাখি (ল্যাটিন: clamator = তীক্ষ্ণকণ্ঠে চিৎকার, coromandus = করোম্যান্ডেল উপকূল, চেন্নাই, ভারত)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Clamator coromandus“, http://www.iucnredlist.org/details/22683816/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!