পাকরা পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Clamator jacobinus সমনাম: Cuculus jacobinus Boddaert, 1783 বাংলা নাম: পাকরা পাপিয়া, পাপিয়া (অ্যাক্ট), ইংরেজি নাম: Jacobin Cuckoo, (Pied Cuckoo). জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Clamator, Kaup, 1829; প্রজাতি/Species: Clamator jacobinus (Boddaert, 1783)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Clamator গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. খয়রাপাখ পাপিয়া ও ২. পাকরা পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে পাকরা পাপিয়া।

বর্ণনা: পাকরা পাপিয়া বা কালো বুলবুল হচ্ছে দীর্ঘ লেজের ঝুটিয়াল পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ৬৫ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি., ঠোঁট ২.৬ সেমি., পা ২.৭ সেমি., লেজ ১৬ সেমি.)। পিঠ কালো ও দেহতল সাদা। ডানার প্রাথমিক পালকের গোড়ায় সাদা পট্টি রয়েছে। লেজের পালকের আগার সাদা অংশের অধিকাংশ ওড়ার সময় চোখে পড়ে। চোখ বাদামি ও ঠোঁট শিঙ-কালো রঙের। পা ও পায়ের পাতা শ্লেট-ধূসর এবং নখর কালো। খাটো, মসৃণ ঝুঁটি কাত হয়ে মাথার পিছনে পড়ে থাকে। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ধূসর-বাদামি। পেটে পীতাভ এবং গলা ও বুকের উপরিভাগে ধূসর আমেজ রয়েছে। ঠোঁট ফ্যাকাসে। মাথায় ক্ষুদ্র ঝুঁটি ও ডানায় সাদা ছোট পট্টি আছে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. j. pica বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: পাকরা পাপিয়া বন, আবাদি জমি, গাছপালা পরিপূর্ণ এলাকা, বাগান, খামার ও ঝোঁপে বিচরণ করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় ও কখনও বা ৫-৬টি পাখির ছোট্ট দলে থাকে। ঘন পাতা ঘেরা গাছের চাঁদোয়া, বনতলের গুল্ম, ঝোপ ও ক্ষুদ্র ঝোঁপে লুকিয়ে খাবার খায়। খাবারের মধ্যে শুঁয়োপোকা, উই, পিঁপড়া, ছারপোকা ইত্যাদি রয়েছে। পরিযায়ন কালে সাধারণত একই জায়গায় একই দিনে বছরের পর বছর ফিরে আসে। জুন-আগস্ট মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি সুমধুর সুরে ডাকে: পীউ পিউ-পিউ(পিউ)-(পিউ): পী-ইউ; পিউ। বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া কিংবা ছানা পালন করে না। মেয়েপাখি Turdoides ছাতারের বাসায় একটি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়।

আরো পড়ুন:  দাগি তামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: পাকরা পাপিয়া বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মকালে সকল বিভাগের গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়; শীতকালে পূর্ব আফ্রিকায় থাকে। আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ইরান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়।

অবস্থা: পাকরা পাপিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই পাকরা পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: পাকরা পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ জ্যাকোবিন-এর তীক্ষ্ণকণ্ঠ পাখি (ল্যাটিন: clamator = আর্তনাদকারী পাখি, jacobinus = জ্যাকোবিন, Dominican friars)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Clamator jacobinus“, http://www.iucnredlist.org/details/22683800/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!